নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
পশ্চিমবঙ্গের এবারের ভোটের চিত্র একদিনেই বদল হয়নি। বাংলার মানুষ গেরুয়া শিবিরকে বহিরাগত আখ্যা দিয়ে সত্যিই রুখে দিয়েছে। নির্বাচনী ফলাফলের বিশ্লেষণে যাবার আগে একটু পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার ভোটের চরিত্রগুলো নিরীক্ষা করে বোঝার চেষ্টা করা যাক।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ১৯৫২ সালের প্রথম বিধানসভায় জয় পেল কংগ্রেস। ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত বাংলায় কংগ্রেস রাজত্ব করল। এরপর ১৯৬৭ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত ছন্দপতন। এই ৫ বছরে দু'বার নির্বাচন হলো পঞ্চম ও ষষ্ঠ বিধানসভার। ১৯৭২ সালে আবার কংগ্রেস সরকার গঠন করলো। সবমিলিয়ে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত বাংলায় কংগ্রেসের দাপট ছিল।
এরপর ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় এলো। ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা ৩৪ বছর রাজত্ব করলো বামফ্রন্ট। এরপর ২০১১ সালে তৃণমুল কংগ্রেসের উত্থান। ১৫তম ও ১৬তম বিধানসভায় রাজত্ব করার পর এবার ১৭তম বিধানসভায় টিএমসি'র হেটট্রিক বিজয়। আগামী ২০২৬ সাল পর্যন্ত রাজ্য শাসন করবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমুল কংগ্রেস বা টিএমসি!
একটা বিষয় খুব ক্লিয়ার- বাংলার মানুষ একটি দলকে দীর্ঘসময় ক্ষমতায় দেখে পরখ করতে চায়। দলটি বাংলার মানুষের ভাগ্য ফেরাতে কেমন তা নিক্তির হিসেবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে চায়। ভোটের রাজনীতিতে বাংলার মানুষের যেন কোনো তাড়াহুড়ো নাই। ১৯৬৭ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত এই ৫ বছরে তাড়াহুড়ো করে তারা বুঝতে পেরেছিল- স্বল্পমেয়াদী সরকার রাজ্যের উন্নয়নের জন্য এবং মানুষের ভাগ্যের চাকা বদলের জন্য মোটেও কোনো কার্যকর পন্থা নয়। তাই ভোট আসলেই কোনো একটি দলকে আরো সুযোগ দিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করায় বাংলার মানুষের এই প্রবনতা প্রায় স্বতঃসিদ্ধ হয়ে গেছে। তার মানে বাংলার মানুষ তৃণমুল কংগ্রেসকে আরো কয়েকবার সুযোগ দিতে চায়।
একটা জিনিস খেয়াল করুন- বিগত ৭৪ বছরের ইতিহাসে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ভোটের রাজনীতি মোটামুটি এরকম একটি চক্র অনুসরণ করেছে। সেই চক্রে এখন তৃণমুল কংগ্রেস বা টিএমসি-কাল চলছে। শুরুতে ছিল কংগ্রেস-কাল, তারপর বামফ্রন্ট-কাল আর এখন চলছে টিএমসি-কাল।
এবার আসুন বাংলায় রাজনীতিতে দলের উত্থান-পতনের ইতিহাসে। কংগ্রেসের উত্থানকালে অন্য রাজনৈতিক দলগুলো বিরোধীদলে বসতে বাধ্য হয়েছে। এরপর বামফ্রন্টের উত্থান-কালে কংগ্রেস চলে গেল বিরোধীদলে। তারপর ভেতরে ভেতরে কংগ্রেসের ভাঙ্গন থেকেই তৃণমুল কংগ্রেসের উত্থান। আর ২০১১ সালে এসে টিএমসি ক্ষমতায় পাকাপোক্ত হলো।
এবার খেয়াল করুন- টিএমসি'র উত্থানে কংগ্রেস চলে গেল তলানিতে আর বিরোধীপক্ষে রয়ে গেল বামফ্রন্ট। কংগ্রেস বাংলার রাজনীতিতে জিরোতে চলে যাওয়ায় বাংলায় যে ভ্যাকুয়াম তৈরি হয়েছে, সেখানেই গেরুয়া শিবিরের উত্থান। বিগত ১০ বছরে ধীরে ধীরে গেরুয়া শিবির শক্তি সঞ্চয় করছে। ২০১৬ সালের মাত্র ৩টি আসন থেকে এবার এক ধাক্কায় সেটি ৮০তে উন্নীত হয়েছে। এই ধাক্কা ২০২৬-এ হয়তো তিন অংকের কোঠায় যাবে।
আর বাংলার ভোটের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী এই গেরুয়া শিবির যদি এভাবে এই শক্তিমত্তা নিয়ে দাপট দেখাতে থাকে, তাহলে ২০২৬ নয় বরং ২০৩১ সালে গেরুয়া শিবির বাংলায় ক্ষমতায় যেতে পারে! এটি আমার একটি হাইপোথিসিস মাত্র। কারণ ততদিনে তৃণমুল কংগ্রেসের রাজনৈতিক ভুলগুলো বাংলার মানুষের কাছে আরো সুস্পষ্ট হয়ে যাবে। আরেকটা জিনিস খেয়াল করুন- কংগ্রেসের পর বামফ্রন্ট বাংলায় শূন্যের দিকে যাত্রা করেছে। বামফ্রন্টের এই যে কংগ্রেসের মত শূন্যের দিকে যাত্রা, এটা বাংলার ভোটের রাজনীতির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যেরই ফলাফল।
এবার আসুন ১৭তম বিধানসভা নির্বাচনের ভোটের রেজাল্ট নিয়ে একটু বিশ্লেষণ করা যাক। টিমএমসি খুব শক্তভাবেই বাংলার মানুষকে বোঝাতে পেরেছে যে গেরুয়া শিবির বহিরাগত। বাংলার রাজনীতিতে বহিরাগত টকমাটি গেরুয়া শিবিরের জন্য ভালো ফল আনতে পারেনি। বিজেপি বা গেরুয়া শিবিরের প্রধান তিন সেনানি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং যোগী আদিত্যনাথ, এই তিনজনকেই টিএমসি'র নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হুইলচেয়ারে বসে একাই সামাল দিয়েছেন!
মহাভারতে অর্জুনের বাহক ছিলেন স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ। কর্ণের রথের চাকা মাটিতে আটকে গেলে সেই দুর্বল মুহূর্তে শ্রীকৃষ্ণ যুদ্ধনীতি ভঙ্গ করে কর্ণকে আক্রমণ করতে অর্জুনকে উৎসাহ যুগিয়েছিলেন। এবারের ভোটে মমতাজি বারবার হুইলচেয়ারে বসে হুংকার ছেড়েছেন- খেলা হবে! খেয়াল করুন- হুইলচেয়ারের সেই খেলা শেষে বিজয়ী মমতাজি কিন্তু হুইলচেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়েছেন।
বাংলার ভোটে গেরুয়া শিবির কেন্দ্রের ক্ষমতার দাপট দেখাতে চেয়েছে, বাংলার মানুষকে চোখ রাঙানি দিয়ে ভয় দিতে চেয়েছে, নির্বাচন কমিশনে পর্যন্ত দাপট দেখিয়েছে, আর অর্থের লোভ দেখিয়ে বাংলার মানুষকে পকেটবন্দি করতে চেয়েছে। সেই খেলায় বাংলার মানুষ খুব একটা উৎসাহ পায়নি। কারণ বাংলার মানুষ এই রাজ্যের অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্যকে কাবু করতে দেয়নি। বাংলাকে গুজরাট হতে দেয়নি।
এখন আর সাদাকালো যুগ নেই। এখন রঙিন যুগ। রঙিন যুগে গেরুয়া শিবির বাংলাকে যেভাবে মৌলবাদের উত্থান হিসেবে ঘাঁটি করতে চেয়েছিল, বাংলার মানুষ সেটি ভেতরে ভেতরে বুঝতে পেরেছে। ফলে টিমএসি'র হাজারো দুর্নামকে তোয়াক্কা না করে গেরুয়া শিবিরকে রুখে দিয়েছে। খেয়াল করুন- মমতাজি'র উপর বাংলার মানুষের ১০ বছরের যে ক্ষোভ, তা নন্দীগ্রামে প্রকাশ পেয়েছে, কিন্তু তার দলকে বিজয়ী করে গেরুয়া শিবিরকে ঠেকিয়ে দিয়েছে।
এবার আসুন বামফ্রন্টের কথায়। বিগত লোকসভা নির্বাচনে বামফ্রন্টের চরিত্র বাংলার মানুষ হারে হারে বুঝে ফেলেছে। টিএমসিকে হারাতে তারা তখন গেরুয়া শিবিরে নিজেদের ভোট দিয়েছে। অপরের যাত্রা ভঙ্গ করতে নিজের নাক কাঁটার মত ন্যাক্কারজনক কাজ করেছে। এবারও সেই আশংকা থেকে মানুষ বামফ্রন্টকে আস্থায় নিতে পারেনি। বামফ্রন্ট বেশকিছু তরুণ নেতৃত্বকে এবার নমিনেশান দিয়ে মানুষকে ভোলানোর চেষ্টা করেছিল।
বিশেষ করে করোনা মহামারীতে তারা বেশ ভালোই ক্যাম্পেইন করেছিল। জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু বাংলার মানুষ ভোটের রাজনীতিতে একবার বিশ্বাসভঙ্গ হলে তাকে আবার বুকে তুলে নিতে অনেক হিসাব নিকাশ করে। ফলে বামফ্রন্টের এই ভরাডুবি টিমএমসি 'র ভোট নষ্ট করেনি বরং গেরুয়া শিবিরে যে ভোট যেতে পারতো তা রুখে দিয়েছে। ফলে আখেরে বামফ্রন্ট টিএমসিকে ক্ষমতায় রাখতে মমতাজি'র হুইলচেয়ারের শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকা পালন করেছে। এজন্য নিশ্চয়ই টিএমসি বামফ্রন্টকে একটা বড় ধরনের ধন্যবাদ দিতেই পারে।
আবার বামফ্রন্ট যখন আব্বাসের মত একটি অতিডানপন্থী দলকে শরিক করেছে, তখন মানুষ আর বামফ্রন্টকে বিশ্বাস করেনি। লোকসভার মত তারা তলে তলে তারা গেরুয়া শিবিরেও ভেগে যেতে পারে, এরকম আস্থাহীনতার কারণে বামফ্রন্টকে ভোটাররা একদম পাত্তাই দেয়নি। ফলে বামফ্রন্ট এবারের নির্বাচনে কংগ্রেসের মত চরম ভরাডুবিতে একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।
আরেকটা বিষয় খুব খেয়াল করার মত- বামফ্রন্টের নেতারা মনে করেন বাংলার মানুষ তাদের ক্ষমতাচ্যুৎ করে চরম ভুল করেছে। অথচ নিজেদের ভুলগুলো নেতাদের দৃষ্টির আড়ালে রয়ে গেছে। উল্টো তারা জনগণকেই দোষারোপ করে বেড়াচ্ছেন, যা বাংলার মানুষ মোটেও ভালো নজরে নেয়নি। কারণ লোকসভা নির্বাচনেই বামফ্রন্টের ভেলকি দেখে মানুষ তাদের উপর আস্থা হারিয়েছে।
ফলে চূড়ান্ত লড়াইটা হয়েছে সরাসরি টিএমসি বনাম গেরুয়া শিবির। সেই লড়াইতে বাংলার জনগণ চিরায়ত অভ্যাসমত টিএমসি'র উপর আরো ৫ বছরের জন্য আস্থা রেখেছে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সত্যজিৎ, মৃণাল, ঋত্ত্বিক, অমর্ত্য সেনদের বাংলায় গেরুয়া শিবিরের উত্থানকে কঠোরভাবে রুখে দিয়েছে। সত্যজিৎ রায়ের জন্ম শতবার্ষিকীর দিনে তাই বাংলার মানুষেরই জয় হয়েছে। টিএমসি'র কাছে বামফ্রন্টের যেমন ধন্যবাদ পাওনা, তেমনি বাংলার মানুষকেই সবচেয়ে বড় ধন্যবাদ দিতে হবে টিএমসি'র। তাই নরেন্দ্র মোদিজি'র সুরে সুর মিলিয়ে মমতাজিকে অভিনন্দন জানাতে চাই। জয় বাংলা।
২| ০৩ রা মে, ২০২১ সকাল ১১:৪৭
পদ্মপুকুর বলেছেন: ভালো বিশ্লেষণ, তবে আমার মনে হয় বাংলায় বামফ্রন্ট আবারও ঘুরে দাঁড়াবে। আর বিজেপি যদি কেন্দ্রে ক্ষমতায় না আসতে পারে, তাহলে ২০২৬ বা ৩১ এ বাংলায় আসতে পারবে বলে মনে হয় না।
৩| ০৩ রা মে, ২০২১ বিকাল ৩:৩৯
চাঁদগাজী বলেছেন:
পশ্চিম বাংলার মানুষ কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে বামদের আনলো, বামদের বাদ দিয়ে তৃণমুলকে আনলো; এসব আনার পেছনে কি সবাইকে পর্যায়ক্রমে ক্ষমতায় রাখা, নাকি অন্য কোন কারণ আছে? আপনার কথায় তো মনে হচ্ছে যে, এই বদলগুলো হলো সবাইকে বাজিয়ে দেখা মাত্র।
৪| ০৩ রা মে, ২০২১ বিকাল ৫:০১
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
দিদি নিজে তো হেরে গেলেন!
আফসোস!
৫| ০৩ রা মে, ২০২১ বিকাল ৫:০৯
অধীতি বলেছেন: পশ্চিমবঙ্গে বামদের আসাটা দরকার।
৬| ০৪ ঠা মে, ২০২১ রাত ২:৪৫
কামাল১৮ বলেছেন: কংগ্রেস আরেকটু সময় পেলে পশ্চিম বাংলা শিল্পে আরো উন্নত হতো।বামরা মানুষকে সচেতন করেছে কিন্তু শিল্পে উন্নত করতে পারে নাই বরং সুযোগ থাকা সত্তেও গ্রহন করতে না পারায় জনগন তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।তৃন মূল বামেদের পথেই হাটছে।এটাই হয়তো তাদের শেষ সুযোগ।
৭| ০৪ ঠা মে, ২০২১ বিকাল ৪:৫৩
রাজীব নুর বলেছেন: মমতা মানুষ ভালো। পশ্চিম বঙ্গে তাকেই দরকার।
©somewhere in net ltd.
১| ০৩ রা মে, ২০২১ সকাল ১১:২৪
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
গেরুয়া শিবিরের অনেক আশা ছিল এ বার ক্ষমতায় আসবে বিজেপি।
অনেক হিসেব নিকেশ, অনেক পরিকল্পনা করা সত্বেও কাঙ্খিত ফলের
কাছাকাছিও যেতে পারেনি পদ্মের ফল।