নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজের মন থেকেই লিখি। কাউকে হেয় করার জন্যও না কাউকে উদ্দেশ্য করেও না। মানুষ মাত্রই ভুল, ভুল হলে শোধরিয়ে দিবেন; আশা করি।

রেযা খান

রেযা খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

আধুনিকতার আড়ালে বিদেশিয়ানা

০৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:০৫

বিশ শতকের শেষের দিকে স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ বিত্তক যোগাযোগ ব্যবস্থায় এসেছে বিস্ময়কর ও বৈপ্লবিক অগ্রগতি। এর ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের যোগাযোগ ও সম্প্রচার চ্যানেলগুলোকে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে একটা পরিবারের গন্ডির মধ্যে। ফল সরূপ ইচ্ছা করলে ঘরে বসেই আমরা দেশ-বিদেশের নানা টেলিভিশন অনুষ্ঠান সার্বক্ষণিক দেখার সুযোগ পাচ্ছি। এসব অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ হচ্ছে ডিশ অ্যান্টিনা এবং কেবল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। এসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনের নানা ঘটনা ও সংবাদ সম্পর্কে জানতে পারি, বিভিন্ন দেশের নানা ধরণের বিনোদন, সাংস্কৃতি ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানও উপভোগ করতে পারি। কিন্তু ইতোমধ্যেই এসব অনুষ্ঠান আমাদের সমাজ জীবনে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দু’ই বিপরীতধর্মী প্রভাব ফেলছে। ফলে স্যাটেলাইট টিভির সুফল এর চেয়ে বরং কুফলই বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমার আলোচ্য বিষয়ে আমি এর নেতিবাচক দিকটাই তুলেধরব।

স্যাটেলাইট টিভির মাধ্যমে প্রচারিত অনুষ্টানমালা নানা ভাবে আমাদের মন ও সাংস্কৃতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। স্থুল বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের উত্তেজক নেশা আমাদের পেয়ে বসেছে। বিজাতীয় অনুষ্ঠান তরুণ প্রজন্মের ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের লক্ষণীয় পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। তাদের চুলের ষ্টাইল, পোশাক, বোলচালে ইংরেজি-হিন্দি বুলিসহ বিদেশিয়ানার ছাপ ফেলছে। ইতোমধ্যে বহুল আলোচিত হিন্দি কার্টুন “ডরোমন” দেখে দেখে শিশুরা মাতৃভাষায় কথাবলা ছেড়ে দিয়ে হিন্দিভাষা আয়ত্ত্ব করছে। যদিওবা আমাদের দেশের সরকার কর্তৃক এটা সম্প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিজ ধর্ম, দেশ, ভাষা, সংস্কৃতির আলাদা অস্তিত্ব ও বৈশিষ্ট্য ভূলিয়ে দিচ্ছে এসব অনুষ্ঠান। বিরাজমান বাস্তবতাকে মোকাবেলা করার পথ থেকে সরিয়ে নিয়ে কল্পনা-বিলাসিতার ঘোরে তাদের আচ্ছন্ন করে তুলছে। ভারতীয় চ্যানেল- স্টার প্লাস, স্টার জলসা, জি সিনেমা, জি বাংলা, স্টার ওয়ান, লাইফ ও.কে সহ প্রভৃতি চ্যানেলের মোহনীয় সিরিয়াল উপভোগ করার মাধ্যমে আমাদের মা-বোনেরা দিন দিন নৈতিকতা হারাচ্ছে। সম্প্রতি রোজার ঈদে স্টার জলসায় প্রচারিত সিরিয়ালের পাখি নায়িকার ড্রেস “পাখি” আর কিরণ মালার ড্রেস “কিরণ মালা” কিনতে না পেরে আত্মহত্যা করাটা আমােেদর দেশের জন্য লজ্জার বিষয়।এসব সিরিয়াল গুলোতে লক্ষণীয় কোন বিষয়ই চোখে পড়েনা যা আমাদের জীবন চলার পথে কাজে আসবে বা যা থেকে আমরা কিছু শিখতে পারি। অথচ আমারা গভীরভাবে অবলোকন করতে পারি যে, এসব অনুষ্ঠান উপভোগ করে আমাদের মা-বোনেরা শিখচে শুধু দাম্পত্য কলহের কূটনৈতিক কিছু কৈাশল। যেমন শ্বাশুড়ী কর্তৃক পুত্রবধূকে বধ করার কিছূ সূত্র, স্ত্রী শিক্ষা নেয় স্বামীর পরিবারের সদস্যদের গায়েল করার কিছু কুবুদ্ধি। যার প্রভাব এখন আমাদের সমাজে দেখা যাচ্ছে যেমন যৌথ পরিবার ভেঙ্গে রূপ নিচ্ছে একক পরিবারে, যেন আমাদের পরিবার গুলো হয়ে উঠেছে ভারতীয় সিরিয়াল গুলোর প্রেকটিক্যাল ক্লাশ।বৃদ্ধি পাচ্ছে পরকীয়া প্রেম; ধ্বংস হচ্ছে সুখের সংসার। এছাড়া আমরা যদি বিগত কয়েক বছরের পরীক্ষার পাশের হার দেখি তাহলে দেখা যাবে ছেলেদের চেয়ে ভালো রেজাল্টের দিকে মেয়েরা অনেক পিছিয়ে, তার কারণ কি? তার কারণ হিসেবে বুদ্ধজিবিরা মনে করেন মেয়েরা সব সময় এই হিন্দি সিরিয়াল গুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকে যার ফল স্বরূপ তারা পড়া-লেখার ক্ষেত্রে উদাসীন হয়ে পরেছে। এই সিরিয়াল গুলো প্রচারে ভারতীয়দের কি উদ্দেশ্য আমাদের মা-বোনেরা আজও বুঝতে পারছেনা বলেই তারা এগুলোর মধ্যে মশগুল হয়ে থাকছে। তাদের এই সিরেয়ালের মাধ্যমে তারা অন্য দেশে তাদের পন্যের বাজার সৃষ্টি করছে যেমন-জুয়েলারী, কাপড়, ইলেক্ট্রনিক্স, কসমেটিক্স সহ বভিন্ন রকম পন্য সামগ্রী।এছাড়া তাদের জনগণের জন্য একটা বৃহৎ কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করছে। অপর দিকে আমাদের কী লাভ হচ্ছে বরং আমরা আমাদের দেশীয় পন্যের পরীবর্তে তাদের পন্যের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হচ্ছি এবং তাদের সাংস্কৃতিকে আমাদের সংস্কৃতি মনে করে নির্দ্বিধায় তা গ্রহন করছি।এছাড়া কোন কোন চ্যানেলের অনুষ্টানে দেখা যায় অবাস্তব, অতিপ্রকৃতিক, কল্পনা প্রবন, লোমহর্ষক ঘটনা ও কাহিনী উপস্থাপিত হচ্ছে, এসব অনুষ্ঠান স্থূল যৌনতা, পরকিয়া প্রেম, লোমহর্ষক খুনজখম, হানাহানিময় উত্তেজনা সৃষ্টি করে।এই সব সিরিয়াল দেখেই ঐশীর জন্ম হয়েছে। উঁচুমানের সাহিত্য-সংস্কৃতি ও মানবিক মূল্যবোধ তাতে ঠাঁই পায় না।আমাদের দেশের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের সথে এগুলো পুরাপুরি সংগতিহীন। এসব অনুষ্ঠান প্রচার ও উপভোগের ব্যবস্থা শেষ পর্যন্ত হয়তো সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের রূপ নিতে যাচ্ছে।

মোট কথায় স্যাটেলাইট টিভির কবলে পড়ে আমাদের দেশ সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও বিভ্রন্তির শিকার হচ্ছে। এখন থেকে সচেতন না হলে স্যাটেলাইট টিভির প্রভাব দেশের বর্তমান প্রজন্ম জাতির ঐতিহ্য, নিজস্ব ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক স্বকীয়তা ভুলতে বসবে। নিজস্ব মূল্যবোধের ক্রমিক অবক্ষয় ঘটবে। ফলে অতিরিক্ত বিদেশিয়ানা, রুচিবিকার, সস্তা জীবন মোহের আকর্ষণে তাদের মানবিক মূল্যবোধও হবে বিপর্যস্ত। তাই স্যাটেলাইট টিভির সামাজিক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব সম্পর্কে আমাদের তীক্ষè দৃষ্টি রাখা দরকার। বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতির দরজা-জানলা আমরা অবশ্যই খোলা রাখতে চাই কিন্তু সেটা করতে গিয়ে বস্তাপঁচা অপসংস্কৃতির দুর্গন্ধ আমাদের সমাজ জীবনে ছড়িয়ে পড়–ক এটা আমরা নিশ্চই মানতে পারি না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.