নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন যেমন

রিজওয়ান উল আলম

জীবন আসলেই সহজ, আমরাই জীবনকে কঠিন করে তুলেছি।

রিজওয়ান উল আলম › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রতিরক্ষা খাতে দুর্নীতির ঝুঁকির উপর বৈশ্বিক প্রতিবেদন প্রকা বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাতের অবস্থান Band D-তে

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:৪৯

৮২টি দেশের উপর পরিচালিত এক সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল যুক্তরাজ্য আজ বলেছে দুর্নীতি প্রতিরোধের কৌশলের অনুপস্থিতির কারণে ৭০% শতাংশ দেশের প্রতিরক্ষা খাতে অর্থের অপচয় ও নিরাপত্তা ঝুঁকি ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে।



লন্ডনে ‘দি গভর্নমেন্ট ডিফেন্স এন্টি করাপশন ইনডেক্স’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে টিআই-যুক্তরাজ্য জানায় বৈশ্বিক তালিকায় বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাতের অবস্থান Band D- যা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণী হিসেবে পরিগনিত।



উল্লেখ্য ৭৭টি প্রশ্নের মাধ্যমে ৮২টি দেশকে ৭টি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়: ব্যান্ড A হল অতি নিম্ন ঝুঁকি, ব্যান্ড B = নিম্ন ঝুঁকি, ব্যান্ড C = মাঝারি ঝুঁকি, ব্যান্ড D+ = উচ্চ ঝুঁকি, ব্যান্ড D- = উচ্চ ঝুঁকি, ব্যান্ড E = অতি উচ্চ ঝুঁকি এবং ব্যান্ড F = মারাত্মকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। বিশ্বব্যাপী সামরিক ক্ষেত্রে দুর্নীতির সর্বমোট ২৯টি ঝুঁকি চিহ্নিত করে তাদেরকে ৫টি শ্রেণীতে বিন্যস্ত করা হয়। এই ৫টি ক্ষেত্র হল: ১) রাজনীতি, ২) অর্থ, ৩) জনবল, ৪) পরিচালনা এবং ৫) ক্রয়।



যে ৮২টি দেশ এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সেই দেশগুলি ২০১১ সালে সম্মিলিতভাবে বিশ্বের সামরিক ব্যয়ের ৯৪% নির্বাহ করেছে, অর্থের হিসেবে যার পরিমাণ ১.৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। টিআই-যুক্তরাজ্যের পরিমাপ অনুযায়ী দুর্নীতির কারণে প্রতিরক্ষা খাতে বিশ্বে বৎসরে সর্বনিম্ন ২০ বিলিয়র ডলার ক্ষতি সাধিত হয়ে থাকে। এই অর্থ দারিদ্র্য নিরসনে জি-৮ভুক্ত দেশগুলো ২০০৯ সালে সাহায্যের যে প্রতিশ্রুতি তার সমান।



প্রতিবেদন অনুযায়ী শুধুমাত্র জার্মানী এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর পদ্ধতি চালু রয়েছে। বাংলাদেশের সাথে আরো ১৪টি দেশ Band D- অবস্থান করছে। দেশগুলি হল: বেলারুশ, চীন, ইথিওপিয়া, জর্জিয়া, ঘানা, জর্ডান, কাজাকিস্তান, মালয়শিয়া, পাকিস্তান, প্যালেস্টাইন জাতীয় কর্তৃপক্ষ, রাশিয়া, রোয়ান্ডা, তানজানিয়া এবং তুরস্ক। মারাত্বকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় রয়েছে ৯টি দেশ।



প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিরক্ষা নীতি নেই এবং প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত জনবিতর্ক অনিয়মিত এবং সীমিত। সামরিক বাজেটের খাতওয়ারী বিবরণ প্রকাশ করা হয় না। অস্ত্র ক্রয়ের পরিকল্পনার কোন দালিলিক প্রমাণ প্রকাশ্যে লভ্য নয়। বাংলাদেশ ২০০৭ সালে জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী সনদে যোগ দেয় এবং ২০০৯ সালে এই সনদ বাস্তবায়নের জন্য এক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে।



আর্থিক দুর্নীতির ঝুঁকির ক্ষেত্রে প্রতিবেদনে বলা হয় যে জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত গোপন বিষয়ে সংসদকে জানানো হয় না এবং প্রতিরক্ষা খাতের বার্ষিক অডিট আপত্তি নিয়ে আলোচনার কোন প্রমাণ মেলেনি। এছাড়া ব্যবসায়িক কর্মকান্ডে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হোটেল ব্যবসা থেকে শুরু করে ব্যাংক, খাদ্য পণ্য, বস্ত্র এবং ইলেকট্রনিক্স খাতে জড়িত থাকার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।



জনবল সংক্রান্ত দুর্নীতির ঝুঁকির ক্ষেত্রে প্রতিবেদনে বলা হয় বেতন প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে আধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে। তাছাড়া ভুয়া সৈন্যের অস্তিত্বের ব্যাপারে ব্যাপক সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। একটি সিলেকশন বোর্ডের মাধ্যমে উচ্চ পদে নিয়োগের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে পূর্ববর্তী সরকার কর্তৃক বরখাস্ত অনেক সামরিক কর্তাকে পুনর্বহাল করায় উচ্চ পদের নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনার ঝুঁকির ইঙ্গিত পাওয়া যায় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।



প্রধানমন্ত্রী যিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি দুর্নীতিবিরোধী অনেক বক্তব্য প্রকাশ্যে বললেও প্রতিরক্ষা বাহিনীর দুর্নীতির কোন উল্লেখ কোন বক্তৃতায় করেননি।



২০১১ সালের Whistle Blowers Protection আইনটি বেসামরিক ও সামরিক উভয় ক্ষেত্রের জন্য প্রযোজ্য হলেও অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে জুনিয়র কর্মকর্তারা সিনিয়র কর্মকর্তাদের কাছে কোন কিছু জানাতে চান না বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়।



প্রতিবেদন অনুযায়ী পরিচালনা (অপারেশন্স) সংক্রান্ত ঝুঁকির ক্ষেত্রে দুর্নীতিকে কৌশলগত অপারেশনাল বিষয় হিসেবে গ্রহণ করার কোন সামরিক তত্ত্বের অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয় না। প্রশিক্ষিত পেশাজীবিকে মাঠ পর্যায়ের দুর্নীতির পরিবীক্ষণে নিয়োজিত করার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নি। দুর্নীতিবিরোধী প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান কমান্ডাররা যেন কার্যক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করতে পারেন তেমন কোন কার্যপদ্ধতিও নেই।



প্রতিবেদনে ক্রয় সংক্রান্ত দুর্নীতির ঝুঁকির ক্ষেত্রে বলা হয় সামরিক ক্রয় সংক্রান্ত আইন এবং তা পরিচালনার জন্য একটি পরিদপ্তর রয়েছে। আইনে ক্রয় সংক্রান্ত সকল ধাপের ব্যাপারে বিশদ বর্ণনা রয়েছে। ২০১০ সালে সংসদের এক আলোচনায় সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ১০ বছর মেয়াদী এক উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছিল। তবে জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতির অনুপস্থিতিতে ক্রয় সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের প্রক্রিয়াকে অনুসরণ করা দুরূহ হয়ে পড়ে, যা সুবিধা মাফিক ক্রয়ের সম্ভাবনা থেকে সৃষ্ট ভঙ্গুরতার প্রতি নির্দেশ করে বলে সমীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।



প্রতিবেদনে যে ১০-দফা সুপারিশ পেশ করা তার মধ্যে অন্যতম হলো: দুর্নীতির ঝুকি নিয়ে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে খোলামেলা আলোচনা করা, প্রতিরক্ষা খাতে দুর্নীতির ঝুকির পরিমান নিরুপন এবং পরিকল্পনা প্রনয়ন, প্রতিরক্ষা নীতি ও প্রতিরক্ষা বাজেট প্রকাশ করা, কঠোর আচরণ বিধি প্রনয়ন এবং দুর্নীতি-বিরোধী প্রশিক্ষণের আয়োজন করা, প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত ক্রয়ের ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ন্ত্রণ চালু করা, এবং জনগনের কাছে স্বচছ থাকা।



৮২টি দেশের প্রতিরক্ষা খাত সংক্রান্ত প্রথমবারের মত প্রণীত এই বৈশ্বিক সমীক্ষা প্রতিবেদন সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে: http://government.defenceindex.org এই ঠিকানায়।



উল্লেখ্য টিআই-যুক্তরাজ্য ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর ১২৯টি দেশের সামরিক কোম্পানীর উপর ডিফেন্স কোম্পানীজ এন্টি-করাপশন্স ইন্ডেক্স প্রকাশ করেছিল।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.