নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ধুলোপড়া চশমার কাঁচ, শার্টের কোনা দিয়ে বুলিয়ে;পৃথিবীকে দেখি রোজ, কথা বলি প্রতিদিন, কাঁদি আর হাসি মাথা দুলিয়ে।

রিয়াজ দ্বীন নূর

ভাসিয়ে দিয়েছি তরী;আকুল হয়ে দিশার খোঁজে পাথার দিয়েছি পাড়ি।

রিয়াজ দ্বীন নূর › বিস্তারিত পোস্টঃ

রক্তচূড়ারা লাল

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৫৯




ঢাকা মেডিকেল কলেজে যাওয়ার পথে শহীদ মিনার।এখানেই এক কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে দাঁড়িয়ে পড়লেন যতীন বাবু।একি? এত রক্ত কেন? গাছের চারদিকে ছোপ ছোপ রক্ত। তাজা রক্ত।উপর থেকে থোকায় থোকায় রক্ত পড়ছে।যতীন বাবুর জামায়, মাথায় এখন শুধুই রক্ত।অজ্ঞান হয়ে পড়েন যান তিনি।

............................................................
সময়টা ছিল পঞ্চাশের দশকের শুরুর দিকের।
আলম,সুধীর আর যতীন।তিন বন্ধু ছিলেন একে অপরের অংশ।মেডিকেল হোস্টেলের একই কামরায় থাকতেন তাঁরা।পড়াশুনা,গল্প-গুজব, হাসি ঠাট্টায় কেটে যেত একেকটি দিন।
-আমার কাছে বসে সিগারেট টানবি না।যতীন রেগে বলেন।
-কেন রে?তোর সমস্যা কোথায়?সুধীর বলে ওঠেন।
-আমার ভালো লাগে না।যতীন বলেন।
ঠিক সেই সময়ে আলমও একটি সিগারেট ধরিয়ে যতীনের সামনে এসে টানা শুরু করেন।আর ধোঁয়া সব যতীনের মুখে ছাড়তে থাকেন।বিরক্ত হয়ে যতীন উঠে চলে যান।
এমনি খুনসুটিতে কেটে যেত তাঁদের দিন।

আলম একটু কবিমনা ছিলেন।হঠাৎ হঠাৎ কবিতা আবৃত্তি করতেন।
- " বদলে গেছে বাবুই পাখির বাস,
বদলে গেছে আমার দীর্ঘ শ্বাস,
ছুটছি আমি হাতে নিয়ে ফাস,
হয়ে গেছে আমার সর্বনাশ।"
-হয়েছে।থাম।তোমার সর্বনাশ তো কবেই হয়ে গেছে।শুধু শুধু আমাদের প্রেশার বাড়িও না।
আলমের কবিমনা চেতনা নিয়ে বরাবরই ঠাট্টা তামাশায় মাতেন যতীন এবং সুধীর।
-ওর মুখে কাপড় গুজে দে আপাতত।পরে আমি কবিতার শ্রাদ্ধ করছি।সুধীর মাঝে ফোড়ন কাটেন।
বলতে না বলতেই আলম নিজের মুখে একটা রুমাল গুজে দিয়ে, বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকেন। ঘরময় হাসির ধ্বনিতে মুখরিত হয়।
সেদিন ছিল ফেব্রুয়ারীর ২০ তারিখ।পোস্টার পেপারে স্লোগান লিখে যাচ্ছিলেন আলম। সেগুলো কাঠের ফ্রেমে আটকাচ্ছিলেন যতীন।সুধীর ছিলেন না। মিটিংয়ে গেছেন।
-দোস্ত,কালকে কী হবে এই ভেবেই ভয় লাগছে।যতীন বলেন।
-ভয় পাওয়ার কি আছে?যা হবার হবে।
-অকালে প্রাণ যায় যদি?
-ধুর,কিছু হবে না।ওরাই উলটো ভয়ে কাঁপবে।
-তবুও,আমাদের দাবী কি ওরা মানবে?
-মানতে বাধ্য করব।
২১ শে ফেব্রুয়ারী সকাল সকাল সবাই জড়ো হতে থাকে ওই আম গাছটির নিচে।ব্যানার উঁচিয়ে স্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে চলে সবাই। কৃষ্ণচূড়া গাছ টির নিচে আসতেই কিছু কান ফাটানো আওয়াজে সব নিশ্চুপ হয়ে যায়।যতীন বাবু দেখেন তারই দুই বন্ধুর নিথর দেহ পড়ে আছে।রক্তের ছোপ ছোপ দাগ এখানে ওখানে।ঝাপসা অন্ধকারে চারপাশ ছেয়ে যায়।
তারপর অনেকদিন কেটে গেছে।ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডাক্তার হিসেবে এখান দিয়ে বহুবার আসা যাওয়া করেছেন। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন আজ।ফাল্গুনের কৃষ্ণচূড়া ফুল দেখে ধোঁকা খেয়েছেন অনেকবার। বার বার পেছনের কথা মনে করে চোখ ভিজিয়েছেন তিনি। ঝাপসা চোখে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে দেখেছেন কেবলি জমাট বাধা রক্ত।
...................................................................
জ্ঞান ফিরেছে যতীন বাবুর।তবে তার অবস্থা বেশি ভাল নয়।'বাঁচে কি মরে 'পরিস্থিতি।তবুও তার অনুরোধে নিয়ে যাওয়া হল সেই কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে।হঠাৎ চেচিয়ে উঠলেন তিনি।
-দেখ।দেখ।কত রক্ত।লাল লাল তাজা রক্ত।
উপস্থিত অন্যান্যরা তাকে বোঝায় যে এগুলো ফুল, রক্ত নয়।
-না।সব রক্ত।সব। কাঁচা রক্ত। ধীরে ধীরে জড়ো হচ্ছে সব। ওকি? ও যে সুধীর। ওই তো।ওই তো আলম। আমায় ডাকছে।
-কোথায় কি? কে ডাকছে স্যার? কেউ তো নেই।
যতীন বাবু উত্তর দেন না। তিনি আবার অচেতন হয়ে পড়েছেন।
পরদিন ভাষা সৈনিক ডাক্তার যতীন কান্তি গুহ মারা যান।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:২৯

অগ্নি কল্লোল বলেছেন: ভালো লাগা রইলো।

২| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৩০

তার আর পর নেই… বলেছেন: এই ছবিটা আমিও ডাউনলোড করছিলাম, তাই ছবিটা দেখে দুঃখ পাইছি।

ভালো লেগেছে লেখা।

৩| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৩৯

রিয়াজ দ্বীন নূর বলেছেন: ধন্যবা

৪| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:০৩

বিজন রয় বলেছেন: সুন্দর লেখা।
+++

৫| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫১

নিরব ঘাতক ফাহিম বলেছেন: ++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.