নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ধুলোপড়া চশমার কাঁচ, শার্টের কোনা দিয়ে বুলিয়ে;পৃথিবীকে দেখি রোজ, কথা বলি প্রতিদিন, কাঁদি আর হাসি মাথা দুলিয়ে।

রিয়াজ দ্বীন নূর

ভাসিয়ে দিয়েছি তরী;আকুল হয়ে দিশার খোঁজে পাথার দিয়েছি পাড়ি।

রিয়াজ দ্বীন নূর › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলা নামক চেতনার ফুল ও বাঙালীর বাংলা ভুল

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:০৬



অবশেষে একুশে ফেব্রুয়ারীও চলে গেল।অনেক উদযাপন,অনেক প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে পালিত হল আজকের দিনটি।ফেসবুকের পাতায় পাতায় বিভিন্ন কথা,বিভিন্ন অনুভূতি,বিভিন্ন মন্তব্য দেখেছি।বেশ অনেকেই বাংলার প্রতি তাদের দায়িত্ব এবং ভালোবাসা জ্ঞাপন করতে গিয়ে চোখে জল আনা নিবন্ধ লিখেছেন।সেখানকার অজস্র ভুল বানান ও লেখার ভঙ্গি সম্পর্কে নাই বা বলি।তবুও আজকের দিনে সকলের চেতনার জাগরণ দেখে ভালোই লাগল।যদিও এর আগে বা পরে বাংলা সচেতনতা এ দেশীও আমার সহ প্রজন্মের লোকেদের কাছ থেকে খুব কমই দেখা যায়।এ যেন আত্মগোপনকারী চেতনার সম্মুখ দরজা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে, পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া।চেতনার আবির্ভাবের পরে সেই চেতনাকে আপন বক্ষে ঠাই দেওয়ার ইচ্ছা বা ক্ষমতা কোনোটিই আমাদের নেই।

বৈশ্বিক পরিবর্তনের সাথে সাথে এদেশের জীবন-যাত্রা, অভিরুচি, বিনোদন ; সবকিছুতে পরিবর্তন এসেছে।আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আমরা ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ, ভাইবার সহ আরো অনেক যোগাযোগ মাধ্যমের সাথে পরিচিত হচ্ছি।স্যাটেলাইট চ্যানেল এবং এফ এম রেডিওর প্রসার ঘটছে দ্রুত।সেই সাথে বিদেশি সংষ্কৃতির সাথে পরিচিত হচ্ছি।চিনিছি।জানছি।শিক্ষার হার বাড়ার পাশাপাশি ইংরেজি বলার ক্ষমতাও বেড়েছে আগের চেয়ে। যে কারণে কথায় কথায় ইংরেজি বলা আমাদের নিত্যনৈমিত্তিক অভ্যাসে এসে দাঁড়িয়েছে।
"তুমি এত slow কেন?"
"I'm afraid.ও যদি আমায় কিছু বলে?"
"এত competition এর মধ্যে পিছিয়ে পড়লে কিভাবে overcome করব?"

এগুলো প্রাথমিক।আগে তো একটি বাক্যে কয়েকটি ইংরেজি শব্দ থাকত।এখন শিক্ষিত,ইংরেজি জানা ভাই-বোনেরা কয়েকটি ইংরেজি বাক্যের পর একটি বাংলা বাক্য বলেন;তাও তার মধ্যে একটি মিশ্রণ থেকেই যায়।

তৃতীয় উদাহরনে competition অর্থ প্রতিযোগিতা মাথায় আসলেও overcome অর্থ চট করে আমার মাথায় আসেনি।আশংকাজনক হলেও সত্যি যে,আমাদের জৌলুশপূর্ণ বাংলার কিছু কিছু শব্দ এভাবেই ধীরে, অতি সন্তর্পনে ইংরেজির দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে যাচ্ছে।ইদানিং আবার এর পক্ষে একটি দলও তৈরী হয়েছে।যারা বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে কথা বলার এই ভঙ্গিটিকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছে।তাদের ভাষ্য---------
যুক্তি একঃ
"কেউ যদি তার মনের ভাব এইভাবে
বাংলা-ইংলিশ মিলিয়ে অন্যের কাছে
প্রকাশ করে এবং সে কথা যদি উক্ত
শ্রোতা বোঝে, তাহলে ক্ষতি কী?"

যুক্তি দুইঃ
"ভাষা প্রবাহমান নদীর মত।ভাষার
পরিবর্তন হয়।একসময় এই বাংলা
এরুপে থাকবে না।সুতরাং কথা
যেভাবেই বলি,কোনো ক্ষতি নেই।"

যুক্তি তিনঃ
"আমাদেরকে পারিপার্শ্বিকের সাথে তাল
মিলিয়ে চলতে হবে।সে কারণে
বাংলাতে দুই একটি ইংরেজি শব্দ প্রবেশ
করতেই পারে।"

আর শেষ এবং একরোখা যুক্তিঃ
"কে কিভাবে কথা বলবে, তা তার একান্ত
ব্যক্তিগত ব্যাপার।"

যাইহোক,মোটামুটি এই ক'টি যুক্তিই বেশি শোনা যায়।প্রথম এবং তৃতীয়টি ইংরেজি-বাংলার মিশ্রণ সম্পর্কিত।আর দ্বিতীয়টি?তার আগে কিছু কথা----

ফেসবুকে বা অন্যান্য মাধ্যমে বাংলা লেখার যে কি ছিরি! "দেখতেছি, ভাবতেছি, খাইতেছি ; অর্থাৎ ক্রিয়া পদের শেষে তেছি বা তেছে যুক্ত করা হয়।ক্ষেত্র বিশেষে 'ছি'বা 'সি' ও যোগ হয়।যেমনঃ করসি, গেসি।"
আবার বলছি।লেখার সময় এই ধরণের ভাষার ব্যবহার দেখে অবাক হতে হয়।দুইজন ব্যক্তির আলাপের সময় হয়তো এইভাবে লেখা যায়।কিন্তু আপনার লেখা যদি আপনার চারপাশের পরিচিত-অপরিচিত সকলের পড়ার উদ্দেশ্যে হয়,তবে আপনার বিকৃত লেখা অন্য কাউকে প্রভাবিত করল কিনা, তাও তো দেখতে হবে।
ভাষার এমন অপভ্রংশ হওয়া রুপ আমাদের কথ্য ভাষায় প্রচলিত।অর্থাৎ আমাদের কথ্য ভাষাকে সচেতনতার অভাবে ভুলবশত লিখিত রুপ দিয়ে ফেলছি।আবার আমরা সেই ভুল স্বীকার না করে অযথা কিছু অকাট্য যুক্তি তৈরী করছি।যার উত্তর হুট করে দেওয়া সম্ভব না।আমার মত খাতা কলম নিয়ে বসতে হবে।

মনে রাখতে হবে আঞ্চলিক ভাষা আমাদের মায়ের ভাষা।আমরা আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে পারি। সেই অধিকার আমাদের আছে।কিন্তু তাই বলে লেখার সময় আঞ্চলিক ভাষায় বা প্রতিদিন যেভাবে কথা বলি , সেরকম করে লেখা একধরনের অপরাধ।কথ্য ভাষায় লিখলে লেখ্য ভাষার মাধুর্য নষ্ট হয়। সেই অধিকার আমাদের নেই।

প্রথম ও তৃতীয় যুক্তির উত্তরে বলা যায়;বাংলা ভাষায় আগে থেকেই কিছু ইংরেজি শব্দ রয়েছে।এগুলোর সেই ইংরেজি উচ্চারন আমরা করি না।আমরা আমাদের নিজেদের সুবিধা মত তার পরিবর্তন করে নিয়েছি।একটি ভাষায় অন্য আরেকটি ভাষার শব্দ তখনই প্রবেশ করতে পারে, যখন ঐ ভাষায় অন্য ভাষার সেই শব্দটির কোনো নিজস্ব প্রতিশব্দ নেই।এদিক থেকে বাংলা সমৃদ্ধ।কিছু কিছু ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নাম ঐ প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধীকারে থাকে বিধায় তার অন্য ভাষায় প্রতিশব্দ করা যায় না।যদি না সেই প্রতিষ্ঠানের অনুমতি থাকে।যেমনঃ ফেসবুক।
তাই এ ধরনের কিছু শব্দকে ঐ নামেই ডাকতে হবে যে নামে সেগুলো আমাদের কাছে এসেছে।কারন ঐ শব্দগুলোর বাংলা প্রতিশব্দ আগে থেকে ছিল না বা নেই।

তাই বলে যেগুলো আমাদের ভাষার আগে থেকেই সম্পদ, তার স্থলে অন্য ভাষার শব্দ ব্যবহার করা শিক্ষিত সমাজের শিক্ষার গভীরতা বোঝানোর একটি অপচেষ্টা।
প্রশ্ন আসতে পারে, এর ফলে কী হবে?
একদিন বাংলা ভাষার ভান্ডার থেকে কিছু অমূল্য সম্পদ হারিয়ে যাবে এবং আমাদের তখন অন্যের ধনে পোদ্দারি করতে হবে।

শেষ যুক্তির বিষয়ে কিছু বলব না।কারন আমি ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাসী।কারো ইচ্ছা হলে মাথার চুল কাটবে,ইচ্ছা না হলে কাটবে না।জটাধারী ঋষি হয়ে থাকবে।

এফ এম রেডিওতে বাংলা উচ্চারণ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে।তাই সে সম্পর্কে কোনো কথা না বলাই ভালো।কারন যোগ্য শুদ্ধ কথা জানা ব্যক্তিকে এখানে নেওয়া হয় না।জনগন তাহলে তাদের অনুষ্ঠান খাবে না।অতএব দোষ শুধুমাত্র প্রজন্মের উপর চাপালে, তা অন্যায় হবে।

বাংলা নাটকে একসময় আঞ্চলিকতাও ছিল, চরিত্র বিশেষে।তবে এখনকার বাংলা নাটকে সমাজের উঁচু শ্রেণীর মানুষের চরিত্র যেভাবে কথা বলে, তাতে লজ্জা হয়। একসময় হুমায়ুন আহমেদ, মামুনুর রশীদ;এনারা নাটক বানাতেন। কই তখন তো এত বিকৃত উচ্চারন ছিল না!কথার মাঝে এত ইংরেজি থাকত না!চরিত্রের প্রয়োজনে আঞ্চলিক ভাষা থাকত।তাই বলে নাটকে আঞ্চলিকতা আর বিকৃতির যে জোয়ার আমরা আজকাল দেখি, তা ছিল না। এখানেও জনগনের খাওয়া না খাওয়ার যুক্তি আসে বর্তমানের নাট্য নির্মাতাদের কাছ থেকে।

তার পরও একুশে ফেব্রুয়ারী উপলক্ষে বাঙালীর যে চেতনা ফিরে এসেছে।সেই চেতনায় মানুষ বেঁচে থাক আজীবন।একটি চরণঃ
"আজ কি ফাল্গুন?ফেব্রুয়ারীর একুশ?
তাইতো বলি, সবাই কেন উঠছে জেগে
অমানিশার কালো অন্ধকার হতে।
চেতনার জাগরনী বার্তা আজ
ফাল্গুনী বৃক্ষের পাতায় পাতায়।"

আসুন, একুশে ফেব্রুয়ারীতে যে চেতনার ফুল ফুটেছে, তা লালন করি অন্তরের কুঠুরীতে আজীবন, আর তার সৌরভ ছড়িয়ে দিই সমগ্র দেশে, সমগ্র পৃথিবীতে।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৫৩

বিজন রয় বলেছেন: অনেক ভাল লিখেছেন।
++++++

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৫৯

রিয়াজ দ্বীন নূর বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৪৩

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: "আজ কি ফাল্গুন?ফেব্রুয়ারীর একুশ?
তাইতো বলি, সবাই কেন উঠছে জেগে
অমানিশার কালো অন্ধকার হতে।
চেতনার জাগরনী বার্তা আজ
ফাল্গুনী বৃক্ষের পাতায় পাতায়।"

আসুন, একুশে ফেব্রুয়ারীতে যে চেতনার ফুল ফুটেছে, তা লালন করি অন্তরের কুঠুরীতে আজীবন, আর তার সৌরভ ছড়িয়ে দিই সমগ্র দেশে, সমগ্র পৃথিবীতে।

দারুন লিখছেন।
সহমত। +++++++++++++++++++

৩| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৫৩

রিয়াজ দ্বীন নূর বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ, বিদ্রোহী ভ্রাতা। :)

৪| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:১০

গেম চেঞ্জার বলেছেন: পুরাই জগাখিচুড়ি অবস্থা!! কি করা! আমি নিজেও তো এই সংকটে নিপতিত। :(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.