নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যা-ই লিখি, কাঠবিড়ালীর মত এখানে জমিয়ে রাখি। https://rimsabrina.blogspot.com/
জার্মানির সব শহরেই ছোট বড় রেল স্টেশন ছাড়াও একটা করে কমলাপুর থাকে। সেগুলোকে বলে হপ্ট-বান-হফ। কেন্দ্রীয়-রেল-স্টেশন। আজকে ট্রেন ধরেছি মিউনিখের কমলাপুর থেকে। গন্তব্য, ইটালির ট্রেন্টো অঞ্চলের রিভা ডেল গার্দা। আল্পাইন পাহাড়ঘেরা গার্দা হ্রদের পাড়ের এক শান্ত শহর এই রিভা। ইটালি পৌঁছে রোভেরেতো নামের এক জায়গায় ট্রেন থামলে সেখান থেকে গাড়ি এসে আমাদের রিভা শহরে নিয়ে যাবে। হোটেল বুকিংয়ের সময় গাড়ির ব্যবস্থা করে যাত্রাপথের হাঙ্গামা কমিয়ে ফেলা হয়েছে।
ট্রেনে ছয় আসনের একটা কামরা ভাড়া নিয়েছি। এক দিকে বসেছে মৌরি আপু আর হাদি ভাই। আরেক দিকে আমরা রুমি আর রিম। মাঝখানে মেঝেতে গড়াগড়ি দিচ্ছে দুই অনু পরিবারের দুইজন পারমানবিক সদস্য। তারা যে যার মত গলা সপ্তমে চড়িয়ে চ্যাঁচাচ্ছে। চেঁচামেচিতে অতিষ্ঠ হয়ে বড়দের ব্যাগ থেকে কলা, রুটি আর কেক উঁকি দেয়া শুরু করেছে। রুটি চিবানোর ফাঁকে ফাঁকে হালের মুরাদ টাকলীয় বাংলিশের একনিষ্ঠ ভক্ত হাদি ভাই আনন্দে আত্মহারা ভঙ্গিতে বলছেন, ‘মগা হাবা, মগা হাবা’ (moga haba, moga haba)। মজা তো হবেই। একঘেয়ে ঘানিটানা প্রবাসজীবনের গোয়াল ফাঁকি দিয়ে দড়ি ছেড়া গরুর পাল আজকে বাছুর সমেত পালিয়েছি যে! সামনের কয়েকটা দিন ছাড়া গরুর মতই মাঠ ঘাট দাপিয়ে বেড়াবো। এই না হলে জীবন। মনে মনে আমিও বললাম, ‘জয় বাবা, মগা হাবা!‘
জানালার বাইরে দৃশ্যপট একের পর এক বদলে যাচ্ছে। কখনো শহরতলী, কখনো ছবির মত সাজানো গ্রাম, কখনো বা তুষারে ঢাকা মাঠের পর মাঠ। সবার ভারী জ্যাকেটগুলো ট্রেনের কামরার হুকের সাথে লটপটিয়ে ঝুলছে। কিন্তু আমি বেচারা জ্যাকেট তো খুলিই নি, বরং চেইনটা গলা পর্যন্ত তুলে, ঢাকা কলেজের উল্টো থেকে কেনা নকল কাশ্মীরি শালটা নিশ্ছিদ্রভাবে পেঁচিয়ে জাঁকিয়ে বসেছি। নিজেকে তিব্বতদেশীয় কল্পিত প্রানী ইয়েতি মনে হচ্ছে। আসল কাহিনী হল, ঠান্ডা লেগে চাট্টিবাট্টি গোল অবস্থা। ঘাড় নাড়াতে পারছি না। পেরিফেরাল ভিউ বলে কিছু নেই আর। যেদিকে তাকাতে চাই, ঘাড়-ধড় এক সাথে ঘুড়িয়ে দাঁড়াতে হয়। সামান্য কাশিটা বেড়ে এমন যক্ষা মার্কা চেহারা নিবে, ভুলেও ভাবি নি। মনীষীরা বোধহয় এমন পরিস্থিতির কথা ভেবেই এর নাম দিয়েছেন, ‘মাইনকা চিপা’।
সেদিন ডাক্তারের চেম্বার থেকে প্যাঁচ মেরে বলা হয়েছে, ঠান্ডাটা কোন ভাইরাল সংক্রমন হতে পারে আবার ব্যাকটেরিয়াজনিতও হতে পারে। সাত দিনে সারতে পারে, আবার এক সপ্তাহও লাগতে পারে। অধৈর্য আমি মুখ ফসকে জানতে চাইলাম, ‘এত যে কাশছি, হুপিং কফ হয়ে গেল না তো আবার?’ চোরের উপর বাটপারির মত ডাক্তারের উপরও খোদকারি করতে নেই। ডাক্তারের হাসিমুখ দপ্ করে নিভে গেল, ‘হুপিং কফ আবার কি?’ তাড়াহুড়া করে বললাম, ‘কেন, ওই যে বললে, পারটুসিস হবার ভয় আছে?’ ডাক্তার চোখে মুখে চরম অবিশ্বাস নিয়ে অন্তর্জালে হামলে পড়ে গোকুল (পড়ুন গুগল) দৈত্যের প্রদীপে ঘষা মেরে বসল। এদিকে আমি স্বেচ্ছায় ভুলভাল বকছি, ‘হুপিং কফ তো মনে হয়ে ধনুষ্টংকার। বিড়ালে কামড়ে যা হয়, তাই না?‘ আমার আমতা কথা উপেক্ষা করে উজ্জ্বল মুখ তুলে ডাক্তার বলল, ‘আরে না, তুমিই ঠিক। যাহাই পারটুসিস, তাহাই হুপিং কফ!‘
তো চিরকালের ল্যাটিন নাম চেনা জার্মান ডাক্তার আমার সম্ভাব্য হুপিং কফের কোন রকম নিদান ছাড়াই বিগলিত হাসিতে বিদায় দিল সেদিন। তার ভরসায় না থেকে আমি দেশে আমার ডাক্তার ভাইকে ফোন লাগিয়ে রোগ লক্ষন জানিয়ে আলমারির দেরাজে খুঁজে পেতে তিন বড়ির একটা অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স শুরু করে দিলাম। আজকে তার প্রথম দিন। তবে অতি স্বাস্থ্যকর ইতালীয় রিভা শহরে গিয়ে একবার পড়লে বায়ু পরিবর্তনের জোরে কাশির গলায় ফাঁসি পড়বেই। আর আমিও সুস্থ হয়ে হাঁপ ছেড়ে বাঁচবো। সেই আশাতেই ডিসেম্বরের এক বিষন্ন ম্যাটম্যাটে শীতের সকাল পেছনে ফেলে টিকেট মিলিয়ে বগি খুঁজে ইটালির ট্রেনে চেপে বসা। (চলবে)
(বি.দ্র. নতুন চাকরির চিপায় পড়ে সময় মিলছে খুব কম। ইচ্ছে ছিল এক বসায় লেখাটা শেষ করবো। সেই অবসর মিলছে না। তাই পর্ব আকারে লেখার চেষ্টা। নাই মামা-কানা মামা কেস আর কি।)
২১ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ৯:৫২
রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: আসলেই ভ্রমন ব্যাপারটাই আলাদা। সুন্দর কথাগুলোর জন্যে ধন্যবাদ।
২| ২১ শে মার্চ, ২০১৯ ভোর ৫:২৫
চাঁদগাজী বলেছেন:
আপনারা কি জার্মানীর বড় শহরে থাকেন?
২১ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ৯:৫৩
রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: সালাম জানবেন। আমরা মিউনিখে থাকি। আর তুমি করে বলবেন।
৩| ২১ শে মার্চ, ২০১৯ সকাল ৭:৪০
রাজীব নুর বলেছেন: ভালো লাগলো পোষ্টটি।
২১ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ৯:৫৪
রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: আপনি আগ্রহী পাঠক। অনেক ধন্যবাদ।
৪| ২১ শে মার্চ, ২০১৯ সকাল ১১:০৩
ম্যাড ফর সামু বলেছেন: অসম্ভব ভালোলাগায় ভরে গেল হৃদয়! শান্ত হ্রদের স্নিগ্ধ শহরের সুন্দর বর্ণনা মনে করিয়ে দিল আমিও ছিলাম আপনাদের দলে!
২১ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ৯:৫৫
রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: ধন্যবাদ। ছিলেন মানে, জার্মানিতে ছিলেন কোন সময়ে?
৫| ২৩ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ৮:৩৯
মলাসইলমুইনা বলেছেন: রিভা ডেল গার্ডার দিকে এখনো ট্রেন চলছে নাকি ফিরে এসে ঘুমিয়ে কাটছে সময় ! উইক এন্ডেও নতুন পর্ব নেই যে ! ডাক্তার, হুপিং কফ আর ধনুষ্টঙ্করের মুখে ছাই দিয়ে আবার লেখা শুরু করে দিন। ভালো থাকুন ।
২৪ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ২:০৯
রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: সপ্তাহান্তে ঘরের কাজের ক্লান্তিতে শিরদাঁড়া পর্যন্ত ব্যথা। তবুও তাগাদা খেয়ে এক কাপ চা হাতে বসেছি ল্যাপটপের ঝাঁপি খুলে। দেখি কিছু এগোয় কিনা। তবে ধন্যবাদ তাগাদাটার জন্যে।
৬| ২৫ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ৩:৫৩
ল বলেছেন: মগা হাবা লেখাটা ---
০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১২:২৩
রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: আপনার মন্তব্যটাও মগা হয়েছে।
৭| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৮:২৪
অন্তরা রহমান বলেছেন: সারাদিন অনেক লেখাই পড়লাম। কিন্তু এই লেখাটা আমাকে ব্লগের সোনালি দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দিল। এ ব্রিলিয়ান্ট স্কিল ইউ হ্যাভ। দারুন লেখা। চালিয়ে যান। ভালো কথা, একজন ডাক্তার হিসেবে আপনার চট করে এন্টিবায়োটিক খাওয়ার তীব্র নিন্দা জানিয়ে গেলাম।
০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১২:২৬
রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: এতখানি উৎসাহ পেয়ে কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে। অনেক কৃতজ্ঞতা।
আর এমন চট করে অ্যান্টিবায়োটিক খাব না।
৮| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৩:৪৯
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
৩য় পর্বের কিছুটা পাঠের পর এখানে আসা
ভাল লাগল অ্রমন পর্ব শুরুর রসালো ভাষা
পরের পর্ব পাঠের তরে মনে জাগল আশা
কেবলী মনে হচ্ছে ভ্রমন পর্বগুলি হবে
মনোহর বিবরণীর সাথে চমকপ্রদ
সব রসালো ভাষায় ঠাসা ।
শুভেচ্ছা রইল
০৭ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১০:৫০
রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: কাব্যের ছন্দে মনোহর মন্তব্যে পুরোপুরি বিমোহিত। পর্ব চার লিখছি। শেষ করার জোর চেষ্টা চলছে ব্যস্ততা ডিঙ্গিয়ে। ভাল থাকবেন।
৯| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১২:২৮
আখেনাটেন বলেছেন: চমৎকার বর্ণনা।
আমার প্রিয় ভ্রমণ লেখকদের মধ্যে সৈয়দ মুজতবা আলী ও হালের মঈনুস সুলতান। তাদের লেখায় যেমন একধরণের সূক্ষ্ম রসবোধ থাকে আপনার লেখাতে কিছুটা তা দেখলুম।
আবারও বলছি ভীষণ ভালো লেগেছে। অন্য লেখাগুলোও পড়ছি এখন।
১৩ ই এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৩:২৩
রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: সব কটা পর্ব কষ্ট করে পড়েছেন দেখলাম। অনেক কৃতজ্ঞতা আর শ্রদ্ধা জানবেন। মঈনুস সুলতানের লেখা পড়ার আগ্রহ জাগছে। কোথায় মিলতে পারে তার লেখা বলবেন একটু? আর মুজতবা আলী তো নিজেই নিজের তুলনা। এক মহাজাগতিক মুক্তপুরুষ।
১০| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ২:০৩
আখেনাটেন বলেছেন: মঈনুস সুলতানের বই রকমারিতে পাওয়া যায়। বেশির ভাগ বই প্রথমা প্রকাশন থেকে বের করা। উৎস প্রকাশও প্রকাশ করেছে।
উনি প্রথম আলোতে নিয়মিত লিখে থাকেন। আরবী, ফারসী, হিন্দি শব্দের প্রচুর ব্যবহার ও বর্ণনায় সৈয়দ মুজতবা আলীর ঢং থাকায় লেখা বেশ লাগে। বর্তমানে জীবিত ভ্রমণ সাহিত্যিকের মধ্যে উনিই এখন মনে হয় সেরা। আর উনার বাড়িরও মুজতবা সাহেবের সিলেটেই।
১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১:৪৮
রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: ওনার "ফরেস্টের চা বাংলো ও স্লাইড প্রজেক্টর'' গল্পটা পড়লাম। গল্পের একটা চরিত্রের নাম রিমঝিম। অনেকে আমাকেও আলগোছে এই নামে ডাকে। মজা পেলাম কাকতালে। আর উনি ব্যক্তি হিসেবে এক দারুন চরিত্র মনে হচ্ছে। আরো জানার চেষ্টা করছি। গুনী মানুষের খোঁজ দেবার জন্যে অনেক কৃতজ্ঞতা। আর নিজের অজ্ঞতার প্রতি তিরস্কার।
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ৩:০৪
মাহমুদুর রহমান বলেছেন: জানালার বাইরে দৃশ্যপট একের পর এক বদলে যাচ্ছে। কখনো শহরতলী, কখনো ছবির মত সাজানো গ্রাম, কখনো বা তুষার ঢাকা মাঠের পর মাঠ।
এই দুটো কথা আমার মন ছুঁয়ে গেল।এই অনুভূতিগুলো সত্যিই খুব বিস্ময়কর!মনের মাঝে এক ভিন্নরকম ভালো লাগা কাজ করে।
শুভকামনা রইলো।