নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হইচই, হট্টগোল এড়িয়ে চুপচাপ, নিরিবিলিতে লুকিয়ে থাকতে ভাল লাগে।

রিম সাবরিনা জাহান সরকার

যা-ই লিখি, কাঠবিড়ালীর মত এখানে জমিয়ে রাখি। https://rimsabrina.blogspot.com/

রিম সাবরিনা জাহান সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

শান্ত হ্রদের স্নিগ্ধ শহরঃ রিভা দেল গার্দা-৫

১০ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৩:৩৩

পর্ব ১
পর্ব ২
পর্ব ৩
পর্ব ৪

৫.
স্কালিজার প্রাসাদ যেমন দেখা হল না, তেমনি অদেখা রয়ে গেল ডি আনুজ্জিও’র জাদুঘর ভিত্তোরিয়ালে। ইটালির ইতিহাসের বিচিত্র চরিত্র গ্যাব্রিয়েল ডি আনুজ্জিও। বিখ্যাত এই কবি একসময়ে ঋনের ভারে ফ্রান্সে পাড়ি দেয়। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের দামামা বেজে উঠলে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসে বটে। কিন্তু এসেই কবিতার খাতা হেলায় ফেলে বিমান উড়িয়ে যুদ্ধে নেমে পড়ে। মাত্র তিনশ যোদ্ধা নিয়ে ফিউমে অঞ্চল (বর্তমানের ক্রোয়েশিয়ায় পড়েছে) এক বছর অবরোধ করে রীতিমত স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়ে বসে আনুজ্জিও। সেখানেও ক্ষ্যাপামির পরিচয় মেলে। সৈনিক কবির একনায়ক রাষ্ট্রে সংবিধানের মূল নীতি ছিল সংগীত! কিন্তু দখল নেয়ার এই মানসিকতা দেখে ফ্যাসিজমের বীজ ঢুকে যায় মুসোলিনি আর হিটলারের মাথায়। তারপর দুনিয়াজুড়ে শুরু হয় ফ্যাসিবাদের ফ্যাসাদ। যাহোক, যুদ্ধে এক চোখ খুইয়ে ফিরে এসে জীবনের শেষ সতেরো বছর গার্দা লেকের পাড়েই কেটেছে আনুজ্জিওর। আলোয়-কালোয় মেশানো খামখেয়ালী লোকটার বিচিত্র সংগ্রহে ঠাসা বাড়িটাই এখন জাদুঘর। আবার সুযোগ হলে যাওয়াটা অবশ্যকর্তব্যের ভেতর পড়ে।

সব শুরুরই শেষ থাকে। সেই নিয়ম মেনে আজকে বাড়ি ফিরে যাব। দুপুরের ট্রেনে চেপে। কিন্তু সকালটাকেই বা বিকিয়ে দেই কি বলে? তাই গুটি গুটি পায়ে সবাই এসে দাঁড়িয়েছি গার্দার তীরে। সোনারঙ্গা রোদের ঝিলিকে খোলামকুচির মত পড়ে থাকা নুড়িপাথরগুলো মনি মুক্তা বলে বিভ্রম হয়। আর কূল ভাসানো গহীন নীল জল দেখে মন ভাবতে চায় এ যেন সাগর পাড়। কিন্তু ঢেউ হয়ে আছড়ে পড়ার তাড়া নেই। অলস রাজহাঁস জলকেলির খুনসুটিতে ব্যস্ত। দূরে পটে আঁকা ছবির মত একটা দুটো নৌকার আনাগোনা। জলে ভাসা এক নন্দনকানন। কে বলবে আমরা সমুদ্রের পিঠ থেকে পঁয়ষট্টি মিটার উঁচুতে বসে আছি?

বড় বড় পাথুরে চাঁইয়ে বসে ভাবছি, আরে আমরা নিজেরাই তো একেকজন হ্রদের মতন। কোথাকার বঙ্গোপসাগরের জল গড়িয়ে গড়িয়ে ভাগ্যের খুঁড়ে দেয়া পথ বেয়ে ভিনদেশের বদ্ধ জলাশয়ে আটকে গেছি। সাগরের মত মহাসাগরের সাথে আর যোগ নেই। তাই জোয়ার ভাটায় বয়ে চলার স্বাধীনতাও নেই।

গাঢ় ভাবনাটাকে জোর করে সরিয়ে দিলাম। তিন দিকে পাহাড়ের প্রহরী সবুজের হাতছানিতে ডাকছে। পাহাড়ের গায়ে সান্তা বারবারা নামের ছোট একটা চ্যাপেল আছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে গড়া। জলবিদ্যুতের স্থাপনা বানাতে গিয়ে ধর্ম ভীরু খনি শ্রমিকরা নিজেরাই হাত লাগিয়ে চ্যাপেলটা বানিয়েছিল। সেটা দেখার আর সময় হল না এবার। তাকে এমনি এমনি দেখা যায় না। জয় করে দেখতে হয়। হেঁটে কি দৌড়ে পেশীতে টান ধরিয়ে তবেই তাকে জয় করা যায়। অসাধারন হাইকিং ট্রেইল আছে ওপরে ওঠার। হাদী ভাই এক দৌড়ে দেখে এসেছিল। আমি সে চেষ্টা করতে গেলে দেখা যেত ফুসফুসটা পাজর ফুঁড়ে বেরিয়ে চার হাতে পায়ে দুড়দাড় করে পালাচ্ছে। অগত্যা নিচ থেকে সান্তা বারবারাকে শ্বেতপায়রার মত চুপ করে আল্পসের কোলে আদুরে ভঙ্গিতে বসে থাকতে দেখে দুধের সাধ ঘোলে মিটাতে হল।

মোটের ওপর এই ভ্রমনে আমরা ছেলে বুড়ো বারো আনার ওপরে ষোল আনা খুশি। আনা-আধুলির কথা বলতে গিয়ে আরেক আনার কথা মনে পড়ছে। জার্মান বান্ধবী আনা। সে প্রায়ই খোঁচা মেরে জিজ্ঞেস করে, ‘শনি-রবি কি করলে?’ কি করে বলি যে চাক্ চাক্ করে আলু কেটে চাইনিজ দোকানের কই মাছ ঝোল করে রেঁধেছি কিংবা তুর্কি দোকানের হালাল মুরগি টমেটো দিয়ে ভুনা করেছি? যেখানে আনার সপ্তাহান্ত কাটে অস্ট্রিয়ার বরফে স্কি করে কিংবা আল্পসের কোথাও হাইকিংয়ে, সেখানে ছুটির দিনগুলোতে আমি মাছ-মুরগির সাথে ধস্তাধস্তি করে কাটিয়ে দেই। দুর্দশা দেখে ছুরির নিচে আলু-টমেটোরাও মুখ টিপে হাসে। কি বিচিত্র জটিল বাঙালি জীবন! তবে এই ক’টা দিনের ঘুরে বেড়ানো সেই দুঃখ খানিকটা ভুলিয়ে দিয়েছে। যাক, এবার ফিরে গিয়ে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে এমন গপ্পো করবো যে জার্মান বান্ধবীর চোখ ট্যাঁ হয়ে যাবে।

ঘড়ির কাটা বেরসিকের মত সময়ের চাবুক মারলো পিঠে। ফিরে যেতে হবে ফেলে আসা কুয়াশায় ঢাকা শীতের শহরে। আমাদের ইবনে বতুতাগিরির এখানেই সমাপ্তি। তবে আনন্দের রেশ রয়ে যাবে অনেকদিন। দিন শেষে স্মৃতিটুকুই অমূল্য। আর বাকি সব জাগতিক বস্তুর মামুলি হিসেব কষা দর আছে। তাই শেষবারের মত শান্ত হ্রদের স্নিগ্ধ শহরের স্মৃতি যতটুকু পারি হাতের আজলায় তুলে নিলাম। যাযাবর মনের মুকুরে যোগ হল আরেকটা পোস্টকার্ড। (সমাপ্ত)

মন্তব্য ১৯ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৯ ভোর ৪:৪২

চাঁদগাজী বলেছেন:


জার্মানীতে আগত সিরিয়ানরা কাজ করে?

১১ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১:১৮

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: সালাম জানবেন। আশার কথা ভাষা আর কারিগরি কাজ শিখে সিরিয়ানদের বড় একটা অংশ জার্মানিতে কাজে লেগে যাচ্ছে। জামাই আদর করার দেশ তো এটা না।

২| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৮:৪২

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বাহ!
জমকালো সমাপনী যেন!

ভ্রমনের সাথে জীবনবোধের পাঁচফোড়নে লেখাটা আরো প্রাণবন্ত হয়েছে।
শুধু ঘোরাঘুরির বর্ণনায় সেই প্রাণ থাকে না।

মুগ্ধ পাঠ।

+++++

১১ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১:২১

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: অনেক কৃতজ্ঞতা জানবেন। খেয়াল করলে দেখবেন, বড় একটা ফাঁকি রয়েছে লেখায়। বেড়ানোর কথা হালকার উপর ঝাপসা বলে পাশ কাটিয়ে নিজের গানই বেশি গাওয়া হয়েছে। তাই একে সার্থক ভ্রমন কাহিনী বলা যাবে না ঠিক।

৩| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৮:৫৪

রাজীব নুর বলেছেন: আহা অতি মনোরম।

১১ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১:২২

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। আপনি আমার সব প্যাঁচাল অনেক ধৈর্য নিয়ে পড়েন। এটা বিরল।

৪| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ১:৩০

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: ছবিগুলো খুবই সুন্দর

১১ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১:২৩

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: ছবি ভাল লেগেছে জেনে খুশি হলাম!

৫| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫৩

অনেক কথা বলতে চাই বলেছেন: ফুলার রোড, টিএসসি....।

বাহ, আমারও ওখানেই জন্ম আর বেড়ে ওঠা! আশি, নব্বই দশকের ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে গেল......

১১ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১:১৬

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: তাই নাকি? নাম বললে চিনতেও পারি হয়তো। আমার জন্ম শহীদুল্লাহ হলে। সেখান থেকে বাবা-মার পয়েন্ট যোগ করে উত্তর ফুলার রোডের বড় বাসায়। তারপর একই পাড়ায় তিন বার বাসা বদল। ফুলার রোড বাংলাদেশের ডিমের কুসুম। জীবনের প্যারা থেকে বহু দূরে। আশৈশব তাই আনন্দে কেটেছে।

৬| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১০:০৮

অনেক কথা বলতে চাই বলেছেন: উদয়নে পড়তাম। পুরাতন, নতুন, ২ই ক্যাম্পাসেই পড়ার সুযোগ হয়েছিল। আমার বেড়ে ওঠা রোকেয়া হলের Teacher'r Quarters-এ। এখনকার নায়ক/গায়ক তাহসানও ছিল সেখানে। ঐ ব্যাটার সাথেও football/cricket খেলতাম রোকেয়া হলের মাঠে। হলের মেয়েদের সাথে badminton-ও খেলতাম।

আসলে, DU অনেক বড় ক্যাম্পাস। আপনি শহীদুল্লাহ হলে আর আমি রোকেয়া হলে, তাই চিনতে না পারার সম্ভাবনাই বেশি।

৭| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১০:২৩

অনেক কথা বলতে চাই বলেছেন: আসলেই ডিমের কুসুম। ভালো বলেছেন। কখনও খাওয়ার পানি, গ্যাস, সমস্যা হয়নি। বন্যার সময় পানি উঠেনি। BTV প্রেমের নাটকের শুটিং ওখানেই হতো। আইয়্যুব বাচ্চুদের ওখানে দেখতে দেখতে বড় হলাম ওই ক্যাম্পাসে। নতুন বিয়ে করে বউ সহ রোকেয়া হলে গিয়েছিল গান গাইতে। পাথ বড়ুয়া গেছিল তার সাথে keyboard বাজাতে। আমি ছিলাম প্রথম সারিতে (যদিও মেয়েদের হল, কিন্তু আমি ও আমার মত teachers পাড়ার ছেলে পেলেদের বিশেষ অনুমতি ছিল, আর আমি সেই বিশেষ অনুমতি enjoy করেছি SSC অবধি।)

১২ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১:০১

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: আহা কি সব দিন মনে করিয়ে দিলেন। এডলিন মালাকার, শিবানী আপা, খালেদা হাবিব, কিলিমাঞ্জারো ডিঙ্গানো টেক্স ম্যাকেঞ্জি ওরফে সাঈদ স্যার, বটবৃক্ষের মত শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী। একটা ইশকুল যে কিভাবে মানুষের কাঁচা মনকে ছাঁচে ফেলে আজীবনের জন্যে গড়ে দেয়...। ভাল থাকবেন অবিরাম।

৮| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৯ ভোর ৫:০১

অনেক কথা বলতে চাই বলেছেন: হায় হায়, আগে বলবেন তো! আপনিও উদয়ন থেকে উদিত! বাহ, অনেকদিন পর একজন উদয়ন সহপাঠীনি পেলাম। অনেক কথা বলতে চাই। সময় করে হয়তো বলবো। যাদের কথা বললেন তাদের সাথে আমার কতো memory! আপনারও আছে অবশ্যই। আমি SSC 94 batch

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১২:৪০

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: খুব দারুন তো!। আমি ২০০১ এর এসএসসি। অবশ্য আমার ভাই ৯৩ এর ছিল। কোন্দিন ভাবি নি যে এত বড় হয়ে যাব আর ইশকুল জীবন একদিন ফুরিয়ে আসবে। অনেক ভাল থাকবেন। আবারো কথা হলে ভাল লাগবে।

৯| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১২:৪৫

আখেনাটেন বলেছেন: যাহ, শেষ হয়ে গেল।

নতুন কোনো কাহিনি নিয়ে আবার আসুন।

জয়তু রিভা দেল গার্দা। :D

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৩:৪১

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: সময় করে নিশ্চয়ই লিখবো। শুভেচ্ছা অবিরাম।

১০| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৯:৪৭

অনেক কথা বলতে চাই বলেছেন: আচছা। ঠিক। কি করে যেন বড় হয়ে গেলাম। ভাল থাকবেন।

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১:১৬

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: আপনিও। অনেক শুভেচ্ছা আর প্রীতি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.