নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হইচই, হট্টগোল এড়িয়ে চুপচাপ, নিরিবিলিতে লুকিয়ে থাকতে ভাল লাগে।

রিম সাবরিনা জাহান সরকার

যা-ই লিখি, কাঠবিড়ালীর মত এখানে জমিয়ে রাখি। https://rimsabrina.blogspot.com/

রিম সাবরিনা জাহান সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ও মাগো, সান ডিয়াগো! -৩

১২ ই মে, ২০১৯ ভোর ৪:৩২


পর্ব ১, ২
৩.
মনের ভেতর এক ইবনে বতুতা বগলে জুতা নিয়ে ঘাপটি মেরে বসে থাকে। সুযোগ পেলেই সে জুতা ফটফটিয়ে বেরিয়ে আসে। তাই হাতের মুঠোয় গুগল ম্যাপ নামের মানচিত্রের বাপ থাকতেও লোকজনকে ঠিকানা জিজ্ঞেস করে করে হেলেদুলে হাঁটছি। আর সকালের মিষ্টি রোদ, ভেসে থাকা নৌকার ভিড়, নতুন শহরের পথঘাট, দালানকোঠার নকশা, অপরিচিতের ক্ষনিক সঙ্গ-সব কিছুই তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছি। বিশ মিনিটের হাঁটা পথ আধা ঘন্টা লাগিয়ে পৌঁছালাম জায়গামত।

অতিকায় সান ডিয়াগো কনভেনশন সেন্টার কিছুতেই চোখ এড়াতে পারে না। আর কয়েক সপ্তাহ পরেই এখানে শুরু হবে কমিক কনভেনশন। কমি-কন নামেই বেশি পরিচিত আসরটা। হলিউডি ব্যাটম্যান, স্পাইডারম্যান আর আয়রনম্যানে ছেয়ে যাবে শহরটা। রবার্ট ডাউনি জুনিয়র আসছে শুনলাম। ইশ্, আফসোস! ভাবছিলাম আর খুঁজছিলাম ল্যাবের লোকজনকে।

সবার দেখা মিলল অবশেষে। সুপারভাইজার চোখ নাচিয়ে খুব সাগ্রহে জানতে চাইল, ‘কি, কেমন ধরাটা খেলে এয়ারপোর্টে? আটলান্টায় ধরে নি তোমাকে?’ কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললাম, ‘কিসের ধরা খাওয়া, আমাকে তো আরো ইঁদুরের ডাক্তার ভেবে ঝামেলা ছাড়াই আস্তে করে ছেড়ে দিল। কিন্তু, তুমি কোথাও আটকেছো মনে হচ্ছে?‘ উত্তরে তার চোয়াল ঝুলে গেল। জানালো, বেচারার তুর্কি চেহারা আর জার্মান পাসপোর্ট ইত্যাদি দেখে তাকে দলছুট করিয়ে আলাদা করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে নিয়ে গিয়েছিল। হাজার প্রশ্নের জবাব নিয়ে তারপর নাকি ছেড়েছে। ফ্লাইট মিস নাকি একদম কানের পাশ দিয়ে গিয়েছে।

টম আর গেরিট হাতের ইশারায় কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে। সুপারভাইজারকে পাশ কাটিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে গেলাম। আমাদের ল্যাবের দুই পোস্টডক। গেরিট চোস্ত জার্মান, ধারালো চেহারা। জার্মান স্বভাব মোতাবেক সারাক্ষন খঁচে থাকে। টম আইরিশম্যান, গোলগাল ভালোমানুষ। তবে ব্রিটিশ বললে ক্ষেপে যায়। তাই তাকে আমরা নিষ্ঠার সাথে ব্রিটিশ ব্রিটিশ বলে ক্ষ্যাপাই। কাছে এগোতেই খবর দিল, সেভেন-সিটার একটা পাওয়া গেছে। অমুক দিন সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়া যাবে। সময় মত যেন পার্কিংয়ে অপেক্ষা করি। এই বুদ্ধি আগেই আঁটা। শেষের একটা দিন খালি ক্লিনিকাল আলোচনা। আমাদের মত মৌলিক গবেষনার লোকের জন্যে তেমন একটা জরুরী না। সেদিন আমরা ফাঁকি দিবো। সারাদিনের জন্যে গাড়ি ভাড়া নেয়া হয়েছে। আরেক ল্যাবের দুই একজনকে জুটিয়ে সদলবলে ঘুরতে বেরিয়ে পড়ব। আমাদের সুপারভাইজার যাবে না। সে যাবে মেক্সিকোর সীমান্তের দিকে। সেখানে দারুন সব বিখ্যাত ব্রান্ডের জিনিস প্রায় অর্ধেক দামে কিনতে যাওয়া যায়। নিজে সৌখিন লোক। তার উপর বউ বিশাল ফর্দ ধরিয়ে দিয়েছে। সে ফর্দ মিলিয়ে ডিজাইনার’স ব্যাগ, ঘড়ি ইত্যাদি কিনবে। শুনে একরকম খুশিই হলাম। নেতা গোছের কেউ থাকলে স্বাধীনতা খর্ব হয়।

এলোমেলো ঘুর-ঘুরান্তির দিনটা আর আসে না। এদিকে সকাল-সন্ধ্যা জ্ঞানের ঘ্যানঘ্যান আর কাঁহাতক সহ্য হয়! নিজের পোস্টার প্রেজেন্টেশন না হয় এরকম উৎরে গেল। বাকিরাও ভাল করল। তবু সুপারভাইজার লোকটা গাঁয়ের পাঠশালার পন্ডিতের মত পিছে লেগে থাকে। অমুক নামকরা বিজ্ঞানীর আলোচনায় আমরা যেন বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্ন করে তাক লাগিয়ে দেই। নইলে ‘কিন্তু কপ্ করে খেয়ে ফেলবো’ জাতীয় হুমকি চলে। তাই কিছুটা প্রানভয়ে কোন সেশনে বোকাটে বোকাটে সব প্রশ্ন ছুড়লাম। কোনটায় সত্যিকারের আগ্রহ নিয়ে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে গেলাম। কাউকে কাউকে তো স্টেজ থেকে কফির টেবিল পর্যন্ত ধাওয়া করলাম। আবার কোনটায় একদম সামনের সারিতে বসে আধ খোলা মুখে হাঁ করে ঘুমিয়ে গেলাম।

সারাবেলা কনফারেন্সের পর রাতে আশেপাশের রেস্তোরায় হানা দিয়ে পেটচুক্তি খেয়ে সময় কেটে যাচ্ছিল এক রকম। এক আধ দিন মাহদি এসে আবার সেই লেবানিজ রেস্তোরায় নিয়ে গিয়েছিল। নাম যার সুলতান। একদিন সেখানে চোখে পড়ল, এক ধারের দেয়ালে প্রায় সব দেশের খুচরো টাকার নোট ফ্রেম বন্দী হয়ে ঝুলছে। বাংলাদেশের দুই টাকার নোটও আছে দেখলাম। দোয়েল পাখিটা পরিচিত ভঙ্গিতে উঁকি দিচ্ছে। তার একটু বাদেই এক দল দেশী ভাই জাতীয় পোশাক চেক লুঙ্গি বিপজ্জনকভাবে হাঁটু অবধি তুলে গটগট করে ঢুকলো। নোয়াখালীর ভাষায় চলা আড্ডা দেখে বোঝা গেল তারা নিয়মিত কাস্টমার। ‘এটাই আমেরিকার মজা, বুঝলা?’, চওড়া হাসিতে মাহদি দুই মহাদেশের উদারতার ফারাক ইঙ্গিত করল। বাকিটা সময় মনে হল, লেবাননি রেস্তোরা সুলতানে না, বরং বসে আছি ‘ইয়ান তুন খাই যান’ নামের নোয়াখাইল্যা কোন ভাতের হোটেলে। (চলবে)

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই মে, ২০১৯ সকাল ৭:৪০

বলেছেন: আপনার প্রেজেন্টেশন ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে আগ্রহী!!

আইরিশরা তো বৃটিশ সাজতে ভালোবাসে এ
তো দেখি ডিফরেন্ট!!

সাথে আছি ++

১৩ ই মে, ২০১৯ রাত ১:৪৮

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: ল ভাই, ধন্যবাদ জানবেন। টপিকটা ছিল CARM1 নামের একটা প্রোটিন আর একই সাথে এনজাইম কিভাবে ফুসফুসের একধরনের কোষের মৃত্যুকে নিয়ন্ত্রন করে Emphysema'র ঝুঁকিতে ভূমিকা রাখে। কি শুষ্কং কাষ্ঠংই না শোনাচ্ছে!

সেই কলিগ উল্টা ছিল কিনা জানি না, তবে আরো এক আধজন আইরিশ দেখেছি, তারাও ব্রিটিশ বললে ক্ষেপে যেত।

২| ১২ ই মে, ২০১৯ সকাল ১০:০৯

আপেক্ষিক মানুষ বলেছেন: যতই পড়ছি, আগ্রহ বাড়ছে। চলুক না বহুদূর পর্যন্ত।

১৩ ই মে, ২০১৯ রাত ১:৫০

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: হাহাহা...ধন্যবাদ। লিখতে খুব ইচ্ছা করে। কিন্তু ছাও পাও পেলে আর কাজ কর্ম করে সময় বেশি মেলে না। তাই লেখাগুলোও হয় টুকরো টুকরো।

৩| ১২ ই মে, ২০১৯ বিকাল ৫:৩৯

মেঘ প্রিয় বালক বলেছেন: চলুক,পাশে আছি পাঠক হিসেবে।

১৩ ই মে, ২০১৯ রাত ১:৫১

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: বালক ভাই, আপনাকে পেয়ে ভাল লাগলো।

৪| ১২ ই মে, ২০১৯ রাত ১০:৩৩

রাজীব নুর বলেছেন: চলুক---
বরাবরের মতো সাথে আছি----

১৩ ই মে, ২০১৯ রাত ১:৫২

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: যাপিত জীবনের প্যারার মাঝেও যে সাথে আছেন, তাই অনেক শুভ কামনা আপনার জন্যে।

৫| ১২ ই মে, ২০১৯ রাত ১১:২৪

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: খুব সুন্দর।

১৩ ই মে, ২০১৯ রাত ১:৫৩

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: অনেক কৃতজ্ঞতা। আপনি আমার লেখা পড়েন। এটা আমার সৌভাগ্য।

৬| ১৪ ই মে, ২০১৯ ভোর ৫:১৮

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আবার পড়তে পারছি
......................................................

১৬ ই মে, ২০১৯ রাত ১২:৩১

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: ধন্যবাদ তো আমি দিব, কারন ব্যস্ত জীবনের ফাঁকফোকর গলে লেখাটা পড়েছেন আবার ভাল লাগা জানিয়ে যেতেও কার্পণ্য করেন নি।

৭| ২০ শে মে, ২০১৯ রাত ২:৩৩

মেঘ প্রিয় বালক বলেছেন: নেতা গোছের কেউ থাকলে স্বাধীনতা খর্ব হয়। লেখক এ উক্তিটি বুঝতে পারিনি আমি,আপনার সান ডিয়াগো ১.২ ও এখন পড়তে হবে, আমি সামনে থেকে পিছন মুখি হচ্ছি আপনার সান ডিয়াগোর সাথে,কিছুখনের মধ্যেই দেখা হবে সান ডিয়াগো ২ এর পর্বে।

২১ শে মে, ২০১৯ রাত ১:৪৮

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: ধন্যবাদ। পর্বগুলো পড়ছেন জেনে ভাল লাগছে। আসলে বুঝিয়েছি যে আমাদের রিসার্চ গ্রুপ লিডার যে কিনা আমার গবেষনার গাইড ছিল, সে আমাদের সাথে বেড়াতে যাবে না। তার শপিংয়ের ধান্দা আছে। তাতে খুশিই হয়েছি। সাথে গেলে সে স্বভাবসুলভ ঝাড়ির ওপরে রাখে সবাইকে।

৮| ২০ শে মে, ২০১৯ সকাল ১১:৩৮

মা.হাসান বলেছেন: এই পর্বটা একটু আকারে ছোট মনে হলো। তবে ভালো লেগেছে। রোজার মধ্যে অনেক ব্যস্ততা থাকে, কষ্ট করে পোস্ট দিয়েছেন এতেই খুশি।

২১ শে মে, ২০১৯ রাত ১:৫০

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ উৎসাহের জন্যে। রোজার ভেতর আসলেই সময় পাওয়া ভার। ভাল থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.