নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হইচই, হট্টগোল এড়িয়ে চুপচাপ, নিরিবিলিতে লুকিয়ে থাকতে ভাল লাগে।

রিম সাবরিনা জাহান সরকার

যা-ই লিখি, কাঠবিড়ালীর মত এখানে জমিয়ে রাখি। https://rimsabrina.blogspot.com/

রিম সাবরিনা জাহান সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

কোরাল দ্বীপের হীরা-পান্না-২

২০ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৩:৩৯

আগের পর্ব

৪.
হাতে করে গুনে গুনে ঠিক তিন দিন নিয়ে এসেছি। এই মহার্ঘ্য সময় শুয়ে বসে নষ্ট করা যাবে না। গেস্টহাউসে বোঁচকা-বুঁচকি নামিয়ে চট করে কাপড় পাল্টে তৈরি হয়ে নিলাম। বেরিয়ে দেখি মাঝ-দুপুরের রোদ ঠিক মাথার ওপর। বেচারা ডিসেম্বরের রোদটা তেজ দেখিয়ে খুব একটা কুলিয়ে উঠতে পারছে না। তার কাটা ঘায়ে আরো নুনের ছিটা দিচ্ছে হালকা একটা তিরতিরে বাতাস। মনটা চনমন করে উঠল। এই চনমন সাগরে ইচ্ছে মত হুটোপুটি খাবার জন্যে চনমন।

অবশ্য আমি এই দলে নেই। পানিভীতি আছে। দৌড় বড়জোড় পা ভেজানো পর্যন্ত। হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে মিনমিনে সুরে বাকিদের তাড়া দিলাম, ‘তোমরা যাও, যাও, আমি আসছি আস্তে ধীরে...’ কথাটা শেষ না হতেই কে যেন ধাক্কা মেরে ফেলে দিল ঝপাং! গ্লাক গ্লাক করে কিছু পানি খেয়ে ফেলবো, নাকি ভুলে যাওয়া সাঁতারটা মনে করার চেষ্টা করবো- বুঝে উঠতে না পেরে, যে আমাকে জলে ফেলে হাওয়া হয়ে গেছে, তাকে ধাওয়া করলাম। কয়েক সেকেন্ডের মাথায় ধরেও ফেললাম। ধরা পড়ে রেন খিলখিল করে হেসে উঠল। চোখ-মুখ খিঁচে এক চোট ফুপুগিরি ফলাতে যাবো, আর তখনি মাথায় খেললো, ওখান থেকে এখানে আসলাম কি করে? সাঁতরে না তো? আরিব্বাপস্! এই আকস্মিক বিস্ময়ের সুযোগ নিয়ে আধা কলস লবন পানি বিনা চিনিতে ওরস্যালাইন সেজে গলা দিয়ে সুড়ুৎ করে পেটে চালান হয়ে গেল।

এত খানি লবন একবারে গিলে ব্লাড প্রেশারটা বোধহয় খানিকটা বেড়েই গেল। মনে হচ্ছে হাঙ্গরের মত কি যেন একটা চারপাশে ঘাঁই মারছে। ভয় পেয়ে ভড়কে যাবার আগেই দেখি দুই হাতে প্লাস্টিকের ফ্লোটিং ডিভাইস লাগিয়ে ভেসে থাকা তাফসু মিয়াই হাঙ্গর সেজে ঘাঁই মারছে। কি ভেবে সে হঠাৎ কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলল ‘মা, আমার না পানিতে পিপি করতে খুব ভাল লাগে‘। বলেই হাঁসের মত পা চালিয়ে তার মামার দিকে রওনা দিয়ে দিল। তার মানে একটু আগে লবন পানির সাথে তাহলে আরো কিছু গিলেছি! কিন্তু যা হবার তো হয়ে গেছে। মুখ ভঁচকিয়ে লাভ নেই, স্বান্তনা দিলাম নিজেকে।

সাগরে ভাটার সময় হয়ে এসেছে। খিদেটাও চাগিয়ে উঠছে। জল ছেড়ে ডাঙ্গায় ফিরে এলাম। ছানাপোনাদেরকে এক রকম চ্যাংদোলা করে আনতে হয়েছে। সমুদ্র তাদের ভাল লেগে গেছে। তাদেরকে আশ্বাস দেয়া হয়েছে আবার পানিতে নামা হবে কালকে।


৫.
সবাই মিলে খেতে বসেছি। গেস্টহাউসের চাচা লেবু-কাঁচামরিচের বাটি নিয়ে ছুটোছুটি করছে। একটু বাদেই সবার পাতে তাজা মাছের বড় বড় পেটিগুলো উড়ে এসে ডাল, সবজি আর সাদা ভাতকে আরেক উচ্চতায় নিয়ে গেল। আমরা কবজি, কনুই সব ডুবিয়ে গলা অবধি খেয়ে ভালুকের মত গা ছেড়ে বসে থাকলাম কিছুক্ষন। এই না হলে জীবন, আর এই না হলে ছুটি!

গেস্টহাউসের সামনে সুমনের চায়ের দোকানে এক প্রস্থ দেশী চা আর বার্মিজ কফি মেরে দিয়ে দ্বীপটা হেঁটে দেখবো বলে পা চালালাম। ছোট্ট ঈয়াসীর আশে পাশেই ছিল। এবার বাবার কাছে বায়না ধরলো আমাদের সাথে যাবে বলে। সুমনও নির্বিকার সায় দিয়ে দিল। চার পা এগোতেই দেখলাম, সে এই দ্বীপের অতি পরিচিত মুখ। ডাবওয়ালা পাশ দিয়ে যাবার সময় খোঁজ নিয়ে গেল, তার সাইকেল ঠিক হয়েছে কিনা। আবার এক পাল গরু খেদাতে ব্যস্ত বালক রাখাল দূর থেকে হাঁক দিল, ‘কই যাস রে ঈয়াসীর?’। ঈয়াসীরও জবাবের পর জবাব দিতে দিতে এলোমেলো পায়ে রন আর তাফসু মিয়ার পাশে পাশে চলছে।

চপ্পল খুলে হাতে নিয়েছি। নরম কাদামাটিতে পায়ের ছাপ এঁকে আমাদের দলটা একটু দ্রুতই এগোচ্ছি। নইলে জোয়ারে আটকে যাব। ভাটায় সাগর সরে গিয়েছে বহুদূর। সেন্টমার্টিন্সের দিগন্ত জুড়ে এখন শুধু কোরাল আর কোরাল। তাদ্র গায়ে অসংখ্য ফুটোগুলো না থাকলে কালো পাথরের চাঁই বলে ভুল হত। মৃত কোরালের গায়ে ক্রমে ক্রমে কাদা-বালি জমে জমে এগুলো পাথরের চেহারা নিয়েছে। আর জ্যান্ত সাদা কোরালও আছে। কিন্তু চোখে পড়ছে খুব কম। আগে নাকি এমনটা ছিল না। ভাটায় পানি সরে গেলে সফেদ কোরাল্গুলো মুক্তোর মত জেগে উঠত। তাদের গায়ে শামুক-ঝিনুক আর কত না জলজ প্রানির বসত। এক আধটা সাদাটে কোরাল দেখলেই বাচ্চারা ছুটে যাচ্ছে। বড়রাও তাদের পিছু নিচ্ছি। কাঠি-কুটো দিয়ে কোরাল খুঁচিয়ে ফেললে আরেক বিপদ।

খানিকবাদে আবিষ্কার করলাম, কোরাল বাদেও অনেক অ-সামুদ্রিক জিনিসে দ্বীপের এদিকটা সয়লাব। একে একে মিলল নানা আকারের প্লাস্টিকের বোতল, রাবারের স্যান্ডেল, পলিথিনের ব্যাগ, সিমেন্টের খালি বস্তা ইত্যাদি ইত্যাদি। তারই মাঝে আর এক-আধটা লাল কাঁকড়া ধুঁকে ধুঁকে চলছে। মনটাই ভেঙ্গে গেল। কার যেন একটা লুঙ্গিও পড়ে থাকতে দেখলাম দুই কোরালের খাঁজে। গত বছর মাল্টা বলে এক দেশে ঘুরতে গিয়ে সৈকতে হাফ-প্যান্ট খুঁজে পেয়েছিলাম। দেশীয় লুঙ্গিটা তাই আমাকে ঘাবড়াতে পারলো না। কিন্তু বিপুল প্লাস্টিক আবর্জনার বহর দেখে কৌতুহল জাগল এত ময়লা এখানে ফেলল কারা? তারা কোন বাপের ব্যাটা? ঠিক হল, ফিরতি পথে যত পারি সবাই মিলে যা পারি কুড়িয়ে নিয়ে যাব। হোক না সেটা ‘লিখে রেখো, এক ফোঁটা দিলেম শিশির’।


৬.
বিকালের রোদটা কোমল হয়ে এসেছে। সোনালি আভার মাঝে হঠাৎ রুপালি ঝিলিক দেখলাম মনে হল। একটু এগোতেই দেখি জাল ফেলে তোলা ছোট ছোট মাছ বালুতে শুকাতে ব্যস্ত জেলেদের দল। মাছগুলো দিনভর রোদে শুকিয়ে শুকিয়ে শুটকি হবে এক সময়। তারপর বাজার ঘুরে কারো ঘরের হেঁশেলে ঢুঁকে জিভে জল আসা চচ্চড়ি হয়ে কোন বা লোকের পাতে পড়বে। পেট পুরে ভাত খেয়ে আসার পরেও কাল্পনিক ঝোলের ধোঁয়া ওঠা সাগরে মন হারিয়ে যেতে বাঁধলো না কোথাও।

প্রায় নিরিবিলি এলাকাটায় একলা দাঁড়ানো চায়ের টং দেখে আমরা অবাকই হলাম। ভাইয়া চোখ মটকে ইশারা দিল, ‘আরেকবার চা হয়ে যাবে নাকি?’ কথা ফুরানোর আগেই কড়িৎকর্মা ঝুমু আপু জনপ্রতি চায়ের অর্ডার দিয়ে ফেললো। কাঠের নড়বড়ে বেঞ্চি আর পেতে রাখা চেয়ারগুলো দখল করে দোকানের বেড়ায় যা যা ঝোলানো আছে প্রায় সব কিছু নামিয়ে ফেলতে লাগলাম। এলাচি বিস্কুট থেকে আনারস-ক্রিম বিস্কুট, কিছুই বাদ থাকলো না। এমন বুভুক্ষের দল এই দোকানের দোকানী আর আগে দেখে নি বোধহয়। তবে সযত্নে খোসাগুলো ময়লার ঝুড়িতে জমা দিতে ভুল হল না।


এই দোকান যারা চালায় তাদের একটা বিশেষত্ব আছে। তার বিশদ বিবরনটা সামনে টাঙ্গানো কার্ডবোর্ডে লাল হরফে হাতে লিখে রাখা হয়েছে। ডায়বেটিস ঘটিয়ে দেয়ার মত মারাত্মক মিষ্টি শরবত-চায়ের কাপে খুব সাবধানে চুমুক দিয়ে লেখাটা পড়লাম। বানান সামান্য এদিক-ওদিক আছে যদিও। ‘ছেরাদ্বীপের একটি পরিবার মোঃ হোসেন আলী। হোটেল মৌসুমী। এইখানে সকালের BRACK PAST তেকে দুপুরের খাবার পায়া যায়।‘ তার মানে সেন্টমার্টিন্সের আসল দ্বীপ্টা থেকে দূরে জনমানবহীন এই ছেঁড়া দ্বীপে হোসেন আলীরাই একমাত্র অধিবাসী। সে তার বউ কিংবা মেয়ের নামের এই হোটেল অবলিক চায়ের দোকান চালায়। সংকোচে জানতে চাই নি। বাঁশের বেড়ার ওপাশেই তাদের বাড়িঘর চোখে পড়ল। গোয়ালে দু’টো গরু বাঁধা আর উঠানে এক ডজন হাঁস-মুরগি ছাড়া। এমন নির্ঝঞ্ঝাট, নির্বিবাদ জীবন দেখে হোসেন আলীদের হিংসাই হল আমাদের।

নাস্তা-পানি পেটে পড়ে সবার ফুয়েল ট্যাংকি ফুল। আবারো পদব্রজে রওনা দিলাম। দূরে যুদ্ধ জাহাজ ভাসছে মনে হল। চোখ কচলে আবার তাকিয়ে দেখি আসলেই তাই। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অতিকায় টহল জাহাজ। জল সীমানার অতন্দ্রপ্রহরী। ওপাশে সারি সারি পাহাড় ডাঙ্গায় ভেসে আসা তিমির মত শুয়ে স্থির। দেখে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দেখে ঝুমু আপু উৎসাহী আঙ্গুল উঁচিয়ে দেখালো, ‘ঐ যে মিয়ানমার। আর ঐ যে আরাকান। নাম শুনেছো তো?’ শুনবো না মানে? আরাকান-আলাওল-পদ্মাবতী, নামগুলো বিদ্যুতের মত মগজে খেলে গেলো। সেই আরাকান! কত শত বছর আগে হঠাৎ একদিন আলাওল নামে ক্ষ্যাপাটে এক বাঙালি তরুন আরাকানের সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে হাজির। আস্তে আস্তে জানা গেল, মার-মার তলোয়ার চালাতে পটু এই সৈন্য কাট-কাট কলম চালাতেও ওস্তাদ। লোকে আলাওলের কবিতা পড়ে অস্থির হয়ে শেষে তাকে ঘোড়ার পিঠ থেকে নামিয়ে সোজা রাজসভার কবি বানিয়ে দিল। সেও মহানন্দে ঢাল-তলোয়ার ফেলে হুলস্থুল সব কবিতা লিখে শোরগোল বাঁধিয়ে দিতে থাকলো। আরাকানের সবুজ পাহাড়ে কান পাতলে এখনো হয়তো মধ্যযুগের সেরা কবি আলাওলের কবিতা শোনা যায়। ঘুরে আসা গেলে মন্দ হত না।


৭.
অনেকটা পথ এসে হাঁপ ধরে গেছে। পায়ের গোড়ালিও গোঙ্গাচ্ছে। সমতল একটা কালো কোরাল দেখে জিরাতে বসে পড়লাম সবাই। এ জায়গাটায় প্রচুর লোকের আনাগোনা। রীতিমত হই হুল্লোড় চলছে। কেয়া গাছ থেকে বাঁদর ঝোলা হয়ে ঝুলছে কয়েকজন। ফটো খেঁচাও চলছে দেদারসে। উৎসব উৎসব ভাব। এরই মাঝে হদিস মিলল বাপের ব্যাটাদের।

আট-দশজনের দল। তারা কোরালে বসে হাত-পা ছড়িয়ে প্যাকেটের পর প্যাকেট বিরানি খেয়ে প্লাস্টিকের বাক্সগুলো মিসাইলের মত তাক করে দশ দিগন্তে ছড়িয়ে দিল নিখুঁতভাবে। তারপর পাঁচ লিটারের গোটা তিনেক বোতল ঢকঢক করে গিলে সেগুলোকে ফুটবল বানিয়ে অদৃশ্য কোনো গোলপোস্ট বরাবর লাথি মেরে পাঠিয়ে দিল। বেচারাদের আকৃতি গোল না হয়ে সিলিন্ডার বলে কিছুদূর গড়িয়ে ব্রেক কষলো। এই অপমান দেখে ফিরে আসা জোয়ারের পানি তাদেরকে সাগরে টেনে নিতে ছুটে আসলো। একটা বোতল তো ভেসেও গেল চোখের সামনে দিয়ে। কিন্তু বাপ কা ব্যাটারা তখনো ব্যস্ত। যে ঝুড়িতে করে তারা তাদের আখেরি খানা-দানা নিয়ে এসেছিলো, সেটাকে একজন জুতো দিয়ে মাড়িয়ে মট্মট্ করে ভাঙ্গলো। তারপর পুরো ধ্বংসযজ্ঞের দিকে তাকিয়ে তৃপ্তির হাসি নিয়ে বাড়ির পথ ধরলো।

অবাক রেন আর আমি নিঃশব্দে তাদের পিছু নিলাম। ‘এই যে ভাই, শুনছেন?’ ভাই-বেরাদাররা আমাদের দুই পয়সার দাম না দিয়ে লম্বা লম্বা পা ফেলে এগোতেই থাকলো। পিছু নেয়া বন্ধ করে তাদের পাশেই হাঁটছি এখন। ‘বোতল-বাক্সগুলি কি সাথে নেয়া যেত না ভাই।‘ এবার চরম বিরক্ত এক ভাই আকাশ থেকে পড়লো, ‘ময়লা সাথে নিবো ক্যান?’। তেড়ে মারতে আসছে না দেখে সাহস খুঁজে নরম সুরে বললাম, ‘দেশটা তো ভাই আপনারই। এই দ্বীপটাও আপনার। নিজের ঘরে কি ময়লা ফেলা যায়? না পারেন তো আমরা নিয়ে যাই। সাথে লোকজন আছে’। (কথাটা ভুল। সাথের লোকেরা সামনে এগিয়ে বিন্দু হয়ে গেছে।) তবে আমাদের ভাইকে বিচলিত দেখালো। সে ক্ষয়ক্ষতির পরিমানটায় চোখ বুলিয়ে ইতস্তত করে জবাব দিল ‘এ্যা...আচ্ছা, মানে আমরাই নিবো নে। আপনারা হাঁটেন’। বিকালের আলো কমে আসছে। আমরা আর দাঁড়ালাম না। বিশ্বাস করে নিতে চাইলাম, লোকগুলো সত্যি বলছে। আশাহত হই, এই ভয়ে পিছে তাকালাম না আর।

আমাদের দলটা আবার সেই মৌসুমী হোটেল-কাম- চায়ের টংয়ে ফিরে এসেছি। সাথে করে পথে যত চটি, বোতল, ছিপি আর যা যা আবর্জনা পেয়েছি দুই হাত ভরে নিয়ে এসেছি। বিরাট ময়লার ঝুড়িতে সেগুলোকে সঁপে দিয়ে ছেলেমানুষি একটা আনন্দ পাচ্ছি। যদিও আনন্দ পাবার কারন শূন্য। খুব শিগগিরি এই অনিন্দ্যসুন্দর কোরাল দ্বীপ আবর্জনার স্তুপে ঢাকা পড়ে যাবে। এটাই বাস্তব।

যাহোক, হোসেন আলী চা চড়িয়েছে। চিনি দিতে মানা করার পরেও সে এক কৌটা কন্ডেন্সড মিল্কের পুরোটাই কেতলীতে গুলে দিয়েছে। তৈরি হচ্ছে স্যুইট ডেথ। আমরা বিনা আপত্তিতে হাসি মুখে চা নিলাম।

আজকে ষোলোই ডিসেম্বরে মৌসুমী হোটেলের সামনে পতাকা গেঁড়ে রাখা হয়েছে সযত্নে। সোনার থালার মত সূর্যটা পতাকার লাল-সবুজকে সাক্ষী রেখে আজকের মত ডুবে গেল কালকে আবার জাগবে বলে। সব কটা বাচ্চা-কাচ্চা সাথে আছে কিনা মাথা গুনে আমরাও ফিরে চললাম কালকে আরেক গন্তব্যে ছুটবো বলে। (চলবে)

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৭:২৯

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: ছেড়া দ্বীপে তো কোন বসতি ছিলোনা, এবং ওখানে বসতি স্থাপন করাই নিষেধ। তাহলে হোসেন আলীরা ওখানে বসতি স্থাপন করলো নাকি নতুন করে? তবে আমি দেখেছি ওখানে সকাল বেলা বোটে চড়ে কিছু লোক গিয়ে পসরা সাজিয়ে বসে পর্যটকদের সেবা দিয়ে নিজেরা কিছুটা কামিয়ে নেয় আর বিকাল বেলা চলে আসে।

ভালো লাগলো আপনার ভ্রমণ পোষ্ট।

২২ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১:৩২

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: গরু টরু পালছে যখন, হয়তো কোনো বিশেষ অনুমতি নেয়া আছে। জানা নেই যদিও।

২| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৭:৪৬

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



প্রবাল দ্বীপের সৌন্দর্য অতুলনীয় । যারা কয়েক যুগ আগে গিয়েছেন তারা নাকি আরো অনেক বেশী সৌন্দর্য দেখতে পেয়েছেন । এই প্রবাল দ্বীপটির বিষয়ে এই পোষ্টে আপনার লেখায় ভাঙ্গা চোড়া বোতল আর ছেড়া পলিথিনের ছড়াছড়ির কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে যায় । যাহোক দ্বীপের প্রতিটি অংশে রয়েছে সৌন্দর্য। সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় কোলাহলহীনতায়, নির্জনতায়, সাগরের গর্জনে, নীলাভ সবুজ পানিতে, ঝিরঝির কিংবা রাতের ঝড়ো বাতাসে। মুগ্ধ হওয়া যায় রাতের ভরা জ্যোৎস্নায় সাগরের জোয়ার ফুলে ফেপে উঠা দেখলে।

পতেঙ্গা, কক্সবাজারের সুগন্ধা, লাবনী, কলাতলী বীচের বালুময় অস্বচ্ছ পানি দেখে যারা নীল পানির খোঁজে সেন্ট মার্টিন আসেন তারা হতাশ হবেন না তা হলপ করে বলতে পারি।

সেন্ট মার্টিনস্ থেকে দূরের অস্পষ্ট মায়ানমারের পাহাড়শ্রেনী পেড়িয়ে দৃষ্টি আরাকানে পৌঁছে যাওয়ার বিবরণ পাঠে বেশ ভাল লাগল ।

আরাকান রাজসভায় বাংগালী মহাকবি আলাউলের কথা উল্লেখ থাকায় পোষ্টের মধ্যে থাকা কোরাল দ্বীপের হীরা-পান্নার কথামালা ছাড়িয়ে এটা পোষ্টের জৌলুষ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে হল। মধ্যযুগের সমগ্র বাঙালি কবির মধ্যে আলাওল ছিলেন শীর্ষস্থান অধিকারী। আরবি ফার্সি হিন্দি ও সংস্কৃত ভাষায় তিনিতো সুপণ্ডিত ছিলেনই এছাড়া ব্রজবুলি ও মঘী ভাষাও ছিল তাঁর আয়ত্তে । প্রাকৃতপৈঙ্গল, যোগশাস্ত্র, কামশাস্ত্র, অধ্যাত্মবিদ্যা, ইসলাম ও হিন্দু ধর্মশাস্ত্র-ক্রিয়াপদ্ধতি, যুদ্ধবিদ্যা, নৌকা ও অশ্ব চালনা প্রভৃতিতে বিশেষ পারদর্শী হয়ে আলাওল মধ্যযুগের বাংগালীর কৃতিত্ব ও বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি আমাদের বাংগালীর গর্ব । আলাওলের প্রধান অনুবাদ কাব্য পদ্মাবতীর একটি অন্তরার কথাও এসাথে মনে পড়ে যায়
প্রেম বিনে ভাব নাই ভাব বিনে রস
ত্রিভূবনে যাহা দেখি প্রেম হুনতে (হতে) বশ
যার হূদে জন্মিলেক প্রেমের অঙ্কুর
মুক্তি পাইল সে প্রেমের ঠাকুর


দেশের সর্ব দক্ষিনের শেষপ্রান্তের কোরাল দ্বীপে বসে সমুদ্রের গর্জন শুনতে বা যান্ত্রিক জীবনের গ্লানি ভুলে নদী-সাগর পেরিয়ে দ্বীপটিতে কি রহস্য আছে তার সন্ধান করতে মন চায় । তাইতো প্রবাল দ্বীপ নিয়ে কোন পোষ্ট দেখা গেলে সব ভুলে মনযোগ দিয়ে সেটা পাঠের চেষ্টা করি । প্রবাল দ্বীপের পশ্চিম পাশের বীচে থাকা প্রাকৃতিক একুরিয়ামের দৃশ্য আর সেখানকার মন কাড়া কেয়া বনের কথা মনে পড়ে যায় ।

তবে সব ছাড়িয়ে প্রবাল দ্বীপের প্রবালগুলোই আমার কাছে বেশি প্রাণবন্ত ।

আশা করি পরের পর্বে কোরাল দ্বীপের হিরা পান্না নিয়ে আরো অনেক ছবি ও বিবরণ দেখতে পাব ।

প্রবাল দ্বীপটির যেখানে সেখানে পড়ে থাকা বর্জ কুড়িয়ে বেশ প্রসংসীয় কাজ করছেন ।

কামনা করি আপনাদের ভ্রমণ হোক নিরাপদ।

২২ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১:৩৫

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: সামান্য লেখাটার এমন অসামান্য বিশ্লেষণ দেখে সংকুচিত বোধ করছি। ধন্যবাদ দিলেও কম হবে। তবু্ও অসংখ্য ধন্যবাদ।

৩| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:২৮

রাজীব নুর বলেছেন: আমার তো এখনই চলে যেতে ইচ্ছা করছে।

২২ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১:৩৯

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: আপনি সৌন্দর্য্যের সমঝদার। গেলে ভাল লাগবে নিশ্চিত।

৪| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:৫৭

পদ্মপুকুর বলেছেন: এইবার অবশ্য প্রথমআলোতেই আগে পড়েছি। ঘটনা লম্বা করার এক আশ্চর্য গুণ আপনার মধ্য আছে। হঠাৎ স্বর্ণকেশী ১ থেকেই ভেবেছি এই গল্প খুব বেশি হলে আর দুই/তিন পর্ব চলবে..... তারপর তো মাশাল্লাহ, পড়তেই আছি, পড়তেই আছি... জব্বার কাকু আটকে দেওয়াতে বেশি আর পড়তে পারিনি। মাঝে মাঝে প্রথমআলোতে দেখেছি, শেষ পর্যন্ত বোধ হয় ২০ পর্যন্ত গেছিলো।

যাইহোক, আমি বোধহয় আপনার সাথে আমার ইন্টারেকশনের প্রথমদিকে বলেছিলাম যে হুমায়ুন আহমেদ আমাদের সায়েন্স ফ্যাকাল্টিতে কথাসাহিত্যের কোনো একটা বীজ রোপন করেছে..... কথাটা সত্যি বলেই মনে হচ্ছে। এখন এতগুলো পর্ব করার পর আমার মনে হয় এখন বই করার সময় আপনার হয়েছে।

ভালো থাকবেন। শুভ ব্লগিং।

২২ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১:৪৫

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: অনেক কৃতজ্ঞতা। বই বোধহয় একটা বেরোচ্ছে। কাউকে বলি নি। এখানে চুপিচুপি বলে গেলাম। আর চাইলে হঠাৎ স্বর্ণকেশী অখন্ড এই ব্লগে পড়তে পারেন। ভাল থাকবেন আপনিও।

৫| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:৩২

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: সাধারন এক উপহার ভ্রমণপ্রিয়দের জন্য এই দ্বীপ।

২২ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১:৪৭

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: পড়েছেন জেনে ভাল লাগলো

৬| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৩৪

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:

আপনার পোষ্টটি বেশ উপকার করেছে। আজকের প্রথম আলোতে দেখলাম লিখেছে-
দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের দেড় কিলোমিটার এলাকা থেকে মাত্র দেড় ঘণ্টায় ১২০ কেজি ৩ (মণ) প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এসব প্লাস্টিক বর্জ্যের বেশির ভাগই ছিল একক ব্যবহার যোগ্য কাপ, প্লেট, চিপসের খালি প্যাকেট।
সেন্টমার্টিনে দেড় কিলোমিটারে তিন মণ প্লাস্টিক

৭| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৪৫

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: আপনার পোষ্টটি বেশ উপকার করেছে। আজকের প্রথম আলোতে দেখলাম লিখেছে-
দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের দেড় কিলোমিটার এলাকা থেকে মাত্র দেড় ঘণ্টায় ১২০ কেজি ৩ (মণ) প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এসব প্লাস্টিক বর্জ্যের বেশির ভাগই ছিল একক ব্যবহার যোগ্য কাপ, প্লেট, চিপসের খালি প্যাকেট।
সেন্টমার্টিনে দেড় কিলোমিটারে তিন মণ প্লাস্টিক
উপরের লিংকটি কাজ করছেনা ,তাই ছবিটা এখানে তুলে দিলাম

২২ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১:৫০

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: আশংকার ব্যাপার। তবে লোকজন জাগছে দেখে ভাল লাগছে আবার। আপনার উৎসাহের জন্যে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।

৮| ২২ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:১৫

আহমেদ জী এস বলেছেন: রিম সাবরিনা জাহান সরকার,





আপনার তো দেখি জীবন খানা ষোল আনাই মিছে! সাঁতার জানেন না, আবার গিয়েছেন খাল-টাল ছেড়ে এক্কেরে সমুদ্রে! তা গেলেন তো গেলেন আবার ব্লগবন্দিও করলেন এমন করে যে হোসেন আলীও অতো মিষ্টি দিয়ে চা বানাতে পারবেনা। এবার আবার আপনার মতো আমাদেরও না রক্তে হোটেল মৌসুমীর চিনির মাত্রা বেড়ে যায়! :(

আর ছেড়া দ্বীপের চরিত্র যে আমরা বঙ্গবাসীরা প্রতিদিনই ছিঁড়ে ফেলছি তার বয়ান শুনে শুনে মানে পড়ে পড়ে যে কারও রক্ত সহ সব চাপই বেড়ে যাবার কথা। বলতেই হয় - এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি.............

চমৎকার লেখা, জলের নীচে নবীন কোরালের মতোই দোলায়মান।

২৪ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১:৪৬

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: এমন করে কথা বলার ক্ষমতা কম মানুষের আছে। অনেক খুশি হলাম দামী মন্তব্যটা উপহার পেয়ে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.