নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যা-ই লিখি, কাঠবিড়ালীর মত এখানে জমিয়ে রাখি। https://rimsabrina.blogspot.com/
পর্ব-৪
১২.
‘কি কি কি...’ করে শিশুর কৌতূহল নিয়ে যে এগিয়ে এল, সে মোটেও শিশু সাইজের না। আকারে কমসে কম পাঁচ-সাত মিটার তো হবেই। বিপুল, ভীষন কিলার হোয়েলের দাবার ছকের মত সাদা-কালো শরীরটা দেখে তব্দা খেয়ে গেলাম। এত কাছ থেকে এমন দশাসই বস্তু আগে দেখা হয় নি। এ কোথায় এসে পড়েছি ভাবতে গিয়ে টাঙ্গানো বড় ব্যানারটা চোখে পড়ল। তাতে হলুদ-লালে লেখা ‘অর্কা ওশান’। ‘অর্কা‘ নামটা কেমন যেন চেনা চেনা। কিন্তু স্মৃতি হাতড়াতে গিয়ে হঠাৎ কতগুলো সবুজ রঙের তাজা ঢ্যাঁড়শ ভেসে উঠলো। ভ্যাবাচেকা কাটিয়ে মনে পড়লো, ঢ্যাঁড়শের আরেক নাম ‘ওকরা’। স্মৃতির অ্যালগরিদম হাতের কাছে যা পেয়েছে, টেনে বের করেছে। অর্কা-ওকরা, এই ধ্বনি বিপর্যয়ের ধার ধারে নি। মুচকি হেসে খেলায় মন দিলাম।
পুলের একপাশে নাচের ক্লাস বসেছে। নাচের মাস্টার এক পাক ঘুরে দুর্দান্ত একটা মুদ্রা দেখালো। ওমা, সুবিশাল দেহ নিয়ে ওর্কা বাবা পানিতে বসেই নাচটা হুবহু তুলে ফেললো। নাচের দর্শনী হিসাবে কেজি দুই কাঁচা মাছও জুটলো তার ভাগ্যে। মাছ গিলে সে আমোদে একটু চোখ বুজে ঝিমিয়ে নিতে পানি থেকে উঠে এল আদুরে বিড়ালের মত। নাকে নাক ঘষে তাকে আদর করে দেয়া হল খুব করে। ব্যাপারটা বাঘের লেজ দিয়ে কান চুলকানোর মতই রোমাঞ্চকর মনে হল। এই তিমি-ডলফিনের খেলা দেখানোই তো আসল চাকরি। আর আমি কিনা গবেষনার নামে সারাদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন চিপায় কেৎরে বসে কি সব ঘটর মটর করছি। দুঃখে মনটা সমগ্র বাংলাদেশ পাঁচ টন ভারি হয়ে গেল।
তবে সব পেশারই কিছু পেশাগত ফাঁপর থাকে। এই যেমন কিটো নামের এই আপাত নিরীহ চেহারার কিলার হোয়েলটা বছর খানেক আগে রিহার্সেলের সময় একজনকে পানিতে চুবিয়ে বেশ করে চিবিয়ে দিয়েছিল। অবশ্য, লোরো পার্কের মালিকপক্ষ চমৎকার ধামাচাপা মেরে দিচ্ছিল প্রায়। রটিয়ে দেয়া হয়, অ্যালেক্সিস নামের ট্রেইনার নাকি পানিতে ডুবে দম বন্ধ হয়ে মারা গেছে। কিন্তু থলের বেড়াল বেরিয়ে পড়লো ময়নাতদন্তের রিপোর্টে। ফুসফুসে ফুটো, এফোড় ওফোঁড় যকৃত, গুড়িয়ে যাওয়া পাঁজর আর সারা শরীরে দাঁতের দাগের ছড়াছড়ি দেখে আসল কারন আর লুকানো গেল না ।
তবে ঘটনার একটা টুইস্ট আছে। যাকে মেরে ফেলা হল তার মা-বাবা অবোধ প্রানিটাকে দোষ না দিয়ে উল্টো লোরো পার্ক থেকে সব ক'টা কিলার হোয়েল ছেড়ে দেয়ার জন্যে আজতক লড়ছে। যদিও লাভ হচ্ছে না, তবুও চেষ্টা থেমে নেই। সাগরে যে বুনো প্রানি অক্লেশে কয়েকশো কিলোমিটার সাঁতরে বেড়ায়, তাদেরকে কি বর্গমিটারের বেড়াজালে আটকে রাখা মানায়? মহানন্দে থাকলে কেউ কাউকে কামড়ে বসে? কামড়ানোটা হতাশা থেকে আসে। অনাদিকাল পর্যন্ত বন্দী থাকার ক্ষোভ থেকে।
১৩.
সেই ঘোরেল পথ দিয়েই ফিরে যাচ্ছি। তবে ভয় কাজ করছে না আগের মত। চারপাশটা এবার খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলাম। পাহাড় চিরে চলে গেছে পথ। মেঘগুলো বড্ড কাছে। ধূসর, ঘোলাটে পাহাড়চূড়ার ফাঁকে ফাঁকে তাদের মেঘ রাজ্য। পাখির সাদা পালক ভেবে ভুল হতে চায়।
সন্ধ্যা নামিয়ে যখন পৌঁছালাম, তখন চারিদিক প্রায় অন্ধকার। তবে আমরা অন্ধকার দেখছি খিদেয়। গত দু'দিনের কাঁচা পেঁপে, পাকা পেঁপেতে অরুচি ধরে গেছে। বাঙালি পেট এখন থালা কে থালা ধোঁয়া ভাত চাইছে। কাছাকাছি সুপারমার্কেট বরাবর গাড়ি ঘোরানো হল। মিনিট দুই পরের দৃশ্যে দেখা গেল, ভ্রমন পিপাসু সৌখিন বতুতা বাহিনী আমরা হাভাতে চেহারা নিয়ে চালের তাকে ছো মারছি, ডিমের বাক্স বগলে চাপছি, তেলের বোতল হাতিয়ে নিচ্ছি।
ঠিক এক ঘন্টা পর ভুরভুরে ডিমের কোর্মার পাঁচ তারকা ঘ্রানে আমাদের তিন তারার হোটেল রুম ছেয়ে গেল। তার সাথে বাসমতি চালের সুগন্ধি ভাত সফেদ ধোঁয়া তুলে এমন ফ্লামিঙো নাচ জুড়লো যে, সে আবেদন তুচ্ছ করে সাধ্য কার। মিহি কুচি লাল টমেটোর টক-মিষ্টি সুবাসও পাল্লা দিচ্ছে সমান তালে। ভীষন নবাব ছানাগুলো পর্যন্ত টেবিলের কাছে ঘুরঘুর করছে। চুলার ওপর খুন্তি-চামচের হিং-টিং-ছট বোলানো সার্থক তাহলে। আদিবা আর আমি মুখ টিপে তৃপ্তির হাসি হাসলাম।
আমাদের দিন তিনেকের ঘটনাবহুল ভ্রমন শেষ হল বাদশাহী ভোজনে। জানালার বাইরে স্প্যানিশ রাত আমাদের আগাম বিদায় জানাতে এক ফালি চাঁদ উঠিয়ে আলো ছড়িয়ে দিয়েছ। তরল জোছনা শরাব বানিয়ে গ্লাসে পুরে হৈ হৈ করে উঠলাম সবাই। (সমাপ্ত)
১৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:১৬
রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: শুভেচ্ছা, রাজীব ভাই।
২| ১৫ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:৩৭
ঢুকিচেপা বলেছেন: আপনার বলার স্টাইলটা খুব ভাল লাগে।
পড়ে বেশ মজা পাওয়া যায়।
১৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:১৭
রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: ধৈর্য্য নিয়ে পড়ছেন দেখে আন্তরিক ধন্যবাদ।
৩| ১৫ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ২:৩৮
নেওয়াজ আলি বলেছেন: অসাধারণ
ভীষণ ভালো লাগলো।
১৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:১৭
রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: কৃতজ্ঞতা, নেওয়াজ ভাই।
৪| ১৭ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:৫০
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: অসম্ভব ভাললাগায় বুদ!!!!!
এত ভালা কেমনে লেখেন আপনি।
কিছু বলতে ইচ্ছা করছেনা।শুধু চোখ বন্ধ করে ভাবের ঘরে হারিয়ে যেতে মোনচায়.।
বাঙগালী শাহী ভোজ ( ডিম ভাজি,ডাল,আলু ভর্তা) দিয়ে শেষ করলেন টেনেরিফ ভ্রমণ কিন্তু অতৃপ্ত আমি এত তাড়াতাড়ি ভ্রমণ শেষ অইল কেরে ??
আবার অন্য কোন এক নতুন গন্তব্যে ভ্রমণের অপেক্ষায়।
২০ শে আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১৯
রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: এমন চমৎকার মন্তব্যে সংকুচিত বোধ করছি। আপনার ভাল লেগেছে জেনে খুব খুশি লাগছে। অনেক শুভ কামনা।
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৩:৫৬
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর। অতি মনোরম।