নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হইচই, হট্টগোল এড়িয়ে চুপচাপ, নিরিবিলিতে লুকিয়ে থাকতে ভাল লাগে।

রিম সাবরিনা জাহান সরকার

যা-ই লিখি, কাঠবিড়ালীর মত এখানে জমিয়ে রাখি। https://rimsabrina.blogspot.com/

রিম সাবরিনা জাহান সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

অটো কাহিনী ১

০৬ ই অক্টোবর, ২০২১ ভোর ৫:২৭



কাঁচের দেয়াল ঘেরা মিউনিখ শহরটা দূরে অধোবদনে দাঁড়িয়ে। নিশ্ছিদ্র ফোঁকর গলে লোকগুলো চম্পট দিচ্ছে, ব্যাপারটা তার ঠিক ভাল লাগছে না। তাই বোধহয় আস্ত এক খন্ড কালো মেঘ পাঠিয়ে দিয়েছে। যেটা কিনা পিছু নিয়েছে বেশ কিছুক্ষন হল। কিন্তু হাইওয়েতে উঠে আমাদের আর পায় কে। প্যাডেল চেপে প্রায় ধনুক ছেড়া তীরের গতিতে ধূলো উড়িয়ে, গাড়ি হাঁকিয়ে পালিয়ে যাচ্ছি।

শুক্রবারটা ছুটি নিয়ে দু’দিনের শনি-রবিকে টেনেটুনে তিন দিনের মামলা বানিয়ে ছুটে চলছি ষ্টুটগার্ট বরাবর। মিউনিখের কালো মেঘকে কচু দেখাতে তাই বাঁধছে না কোথাও। তাছাড়া উঁচু-নিচু পাহাড়ি শহর স্টুটগার্টের আবেদনটা বেশ গাঢ়। সেখানে এক বন্ধু দম্পতি খিচুড়ি আর গরুর মাংস চুলায় চাপিয়ে অপেক্ষা করছে আমাদের জন্যে। ধোঁয়া ওঠা খাবারের ঘ্রান আমাদের ‘আয় খুকু, আয়‘ সুরে ডাকছে। সে ডাক উপেক্ষা করে সাধ্যি কার। তাই চার ঘন্টা ঠেঙ্গিয়ে মিউনিখ-টু-ষ্টুটগার্ট যাত্রাটা অত মন্দ লাগছে না। যাত্রা শেষে প্রাপ্তির পুরোটা পেটে চালান করে দেবো।

খাদ্য চিন্তায় মগ্ন হয়ে গাড়ির সিটে গা এলিয়ে দিয়েছি। খিচুড়ির সাথে বোনাস হিসেবে বেগুন ভাজা থাকবে, কি থাকবে না-এই তরল চিন্তার বায়বীয় বুদ্বুদ থেকে বের হতে পারছি না। সাথে যদি টকটকে লাল টমেটোর ভেতর থেকে সবুজ কাঁচামরিচ আর হালকা গোলাপি পেঁয়াজকুঁচিরা উঁকিঝুঁকি মারে, তাহলে তো আর কথাই নেই। সরিষার তেলের ঝাঁজ নাকে এসে সপাটে আঘাত হেনে গেল যেন। হাতে স্টিয়ারিং থাকলে এতক্ষনে বে-লাইনে গাড়ি চালিয়ে দিতাম নির্ঘাৎ।

বাঙ্গালির হেঁসেল থেকে লোভাতুর মনটা বাঁকিয়ে চুরিয়ে বের করে একেবার জার্মান অটোবানে এনে ছুড়ে ফেললাম। যাহাই জার্মান ‘অটোবান’, তাহাই ইংরেজি হাইওয়ে আর সেটাই বাংলায় মহাসড়ক। তবে অটোবানে একটা আলাদা রোমাঞ্চ আছে। আর সেটা হল গতির পরোয়া না করা। অটোবানের অনেক পথেই গতিসীমার মাত্রা নেই। হাঁকাও গাড়ি যত খুশি হেইয়ো। আর ডানে-বামে ঘটছেও তাই। পাগলাটে খুনে গাড়িগুলো শাঁই শাঁই প্রায় উড়ে যাচ্ছে যেন। ঘন্টা দু’শো কিলোমিটার বেগে আমরাও চলছি। কিন্তু তৃপ্তি মেলার আগেই পাশ ঘেষে লাল ফেরারিটা ধূমকেতুর মত মিলিয়ে গিয়ে বুঝিয়ে দিল গতির খেলার তার কাছে আমাদের সেকেন্ডহ্যান্ড কালো ভক্সওয়াগন এক বুড়ো কচ্ছপ বিশেষ।

বুড়ো কাছিমের পিঠেই না হয় পাড়ি দিলাম পথ। পেছনের সিটে ছয় বছরের ছেলেটা ঘুমে ঢুলুঢুলু। স্বছ লালার একটা স্রোত একবার গড়িয়ে নামছে তো আবার সুড়ুৎ করে ঠোঁটের ফাঁকে উল্টোরথ ধরছে। ছেলের বাবার সেই আয়েশের জো নেই। তাকে তীক্ষ্ণ চোখে, শক্ত হাতে গাড়ির হাল ধরে বসে থাকতে হচ্ছে। একমাত্র আমারই কাজ নেই। নিজেকে বিরাট কাছিমের পেটের অলস ডিম বলে মনে হচ্ছে। অবশ্য আলসেমিতে আগ্রহ ষোলআনা। সাথে করে ব্যবস্থাপাতিও কম আনি নি। সিটের নিচ থেকে কোল্ড কফির ক্যান বের করলাম ব্যাগ হাতড়ে। ঠান্ডা চুমুকে চারপাশটা দেখছি তাড়িয়ে তাড়িয়ে। শীতল আবেশের আয়েশী আবেগে চোখ বুজে আসছে প্রায়।

জানালার বাইরে ভুট্টা ক্ষেতের সারি। তার যেন বাধ্য সেনাদলের মত মাথা নুইয়ে আছে। গাড়ির কুচকাওয়াজ সরে গেলে আবার আরামে দাঁড়াবে সটান। আকাশটাও আজ দেখার মতন। এখানে ওখানে মেঘদল। কিছুটা হতবিহ্বল। বৃষ্টি হয়ে নামবে, নাকি নীরবে সরে গিয়ে এক আকাশ রোদকে জায়গা করে দিবে-এই নিয়ে যেন বিরাট দ্বিধায় আছে। সেই সুযোগে দুষ্টু সূর্যটা মিষ্টি হাসছে ফাঁক পেলেই। দূরের শুভ্র উইন্ডমিলগুলো আস্তে আস্তে ঘুরে চলছে আপন মনে। তাদেরকে স্পিনিং দরবেশ বলে ভুল হতে চায়। উইন্ডমিল নয়, সাদা আলখেল্লা জড়িয়ে তুর্কি সুফীর দল চক্রাকারে উদ্বাহু ঘুরছে যেন। আকাশের মেঘ-রোদের লুকোচুরি, অটোবানের গাড়িঘোড়ার উন্মাদনা, কোনো কিছুই স্পর্শ করছে না তাদের। দশ দিগন্তের মাঝে দাঁড়িয়ে ঘূর্ণি ধ্যানে মগ্ন নির্বিকার, নির্নিমেষ।

মোক্ষলাভের নেশাটা পেয়ে বসেছিল। যদি না অতর্কিতে গাড়ির গতি কমে এসে ঝাঁকুনি না লাগাতো। হালকা-পাতলা একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে মনে হচ্ছে। গাড়ির সারিগুলো হ্যাজার্ড বাতি জানিয়ে আগাম জানা দিচ্ছে, ‘সামনে সাবধান’। অটোবানের দুর্ঘটনা অবশ্য হালকা-পাতলা হয় না। মোটাসোটা কিসিমেরই হয়। তীব্র গতির দু’টো ধাতব যন্ত্র একে অন্যকে ছুয়ে গেলেও ‘ফাস্ট এ্যান্ড ফিউরিয়াস’ কায়দায় উল্টে গিয়ে পাক খেয়ে গোত্তা খেয়ে কোন দূরে পড়বে কে জানে। এর যাত্রীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অটোবান থেকে একবারে স্বর্গযানে উঠে পড়েন আর কি। অটোবানের অভিধানে মাঝামাঝি বলে কিছু নেই। ‘হেল অর হাইওয়ে’।

কপাল ভাল। দোমড়ানো গাড়ি, ভাঙ্গাচোরা যাত্রী আর প্যাঁ পোঁ অ্যাম্বুলেন্স দেখতে হল না। বিকল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটা নিরীহ চেহারার পোর্শে কনভার্টিবলকে তুলতে বিশালাকার রেসকিউ ট্রাক এসেছে। টেনে তোলার তোড়জোড় চলছে। আর তাতেই শ’খানেক গাড়ির স্রোত থমকে গিয়েছে হঠাৎ। (চলবে)



মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২১ ভোর ৫:৪৫

ব্লগার মুহাম্মদ রাসেল বলেছেন: খিচুড়ি তে কি বেগুন ভাজি ছিল?
ছ' বছরের ছেলের স্বচ্চ লালার স্রোতের মতন, অদৃশ্য লালা গড়িয়ে পড়ছে আমারো।
অপেক্ষায় পরের পর্ব গুলোর জন্য...

০৭ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ২:০৯

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: হাহা, বড় মজা করে বললেন। কিন্তু সে খবর পরের পর্বে বলছি। সে অবধি থাকুন সাথেই।

২| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ৭:৪৮

শেরজা তপন বলেছেন: আপনার লেখায় বিশেষনগুলো চমৎকার!
কচ্ছপের পেটের অলস ডিম, নুয়ে পড়া শস্যকে বাধ্য সেনার দল, উইন্ডমিলকে আলখেল্লা পড়া সুফির দল, 'ফার্স্ট এন্ড ফিউরিয়াস' চমৎকার সব উদাহরন!
অপেক্ষায় রইলাম আপনার এই চমৎকার জার্নি শেষে খিচুরি খাবার গল্প শোনার

০৭ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ২:১২

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: ভাই শেরজা তপন, মন দিয়ে পড়ার জন্যে ধন্যবাদ। লেখাটা আমি নিজেও এতটা মনোযোগ দিয়ে পড়ি নি। খসখস্ লিখেই খালাস।

৩| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১১:০৩

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: আপনার লেখা খুব সুন্দর আপু
ভালো থাকুন

০৭ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ২:২১

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: আপনি শিল্পী মানুষ, এই অধমের লেখা পড়াতে খুব আনন্দ পেলাম। ভাল থাকবেন। কলমের সাথে ক্যামেরাও চলুক অবিরাম ক্লিক্ ক্লিক্।

৪| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১১:১৪

*আলবার্ট আইনস্টাইন* বলেছেন: ভালো লিখেছেন।

ফ্রাংকফুর্ট শহরের বইমেলা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও বিখ্যাত।

০৭ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ২:২৪

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: ধন্যবাদ অনেক। জি, কিন্তু মক্কার লোক হজ্জ পায় না, এই সূত্র মেনে আজও ফ্রাংকফুর্টের বইমেলায় যাওয়া হল না। গোপালমার্কা কপাল আর কি।

৫| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৫:১৭

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: সামনের পর্বে ছবি আরও বেশি দিয়েন।

০৭ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ২:২৬

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: জি, আমি চেষ্টা করবো। তবে চলন্ত গাড়ি থেকে ছবি তুলে খুব বেশি সুবিধা করতে পারি নি। তাই অল্পের উপর দিয়ে মাফ করে দিলে ভাল হত, হাহা।।

৬| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৫:৩২

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: গন্তব্যে পৌছানোর আগেই একি সমস্যা হলো !!! থেমে যেতে কি মন চায় এইরকম অবস্থায় যেখানে পৌছেই খিছুড়ি খাওয়ার কথা । আর বাংগালীর খিছুরী মানেই ভুনা কিংবা ঝাল গরুর মাংস । আহা মরি :(( মরি, কি যে করি - কখন গিয়ে পৌছব। ভালো লাগেনা কিছু !!!!

জার্মানীর অটোবান শুনে ভাবছিলাম আমাদের বাংগালীদের :P বাটার বন টাইপের কিছু ।আর অটোবান পড়েই কত দিন বাটার বন খাইনা তার হিসাব করতে করতে দেহি এযে X(( উপরে যাওয়ার পথ । কি আর করুম ব্রেক লাগালাম বাটার বন খাওয়ায় আর অপেক্ষায় রইলাম সহিসালামতে গিয়ে পৌছানোর।

০৭ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ২:২৮

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: অটোবানে যেভাবে বাটার বন উঠিয়ে দিলেন, তাতে হেসে গড়াগড়ি। দাঁড়ান, আপনাকে দুর্দান্ত এক থালা খিচুড়ি না খাইয়ে ছাড়ছি না আগামী পর্বে।

৭| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০৯

মিরোরডডল বলেছেন:




জার্নির বর্ণনা বরাবরের মতোই ভালোলাগা ।
কিন্তু খাবারের যে বর্ণনা, ওহ নো !!!
আমার যে এখন ভীষণ খিচুড়ি মাংস আর বেগুন ভাঁজা খেতে ইচ্ছে করছে ।
এখন কি হবে X((




০৭ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ২:২৯

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: আপনার খিদে দেখে আমার নিজেরও খিদে পেয়ে গিয়েছে। এ এক বিরাট সংক্রামক রোগ। জনে জনে ছড়িয়ে পড়ে অতি দ্রুত।

৮| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১০:১০

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর ঝরঝরে লেখা।

০৭ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ২:৩০

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: রাজীব ভাই, বরাবরের মত প্রানখোলা ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.