নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কি আর বলবো নিজের সম্পর্কে! কিছুই বলার নাই।

I love politics. I want death of those who killed our Army officers.

রিনকু১৯৭৭

দেশ নিয়ে খুব চিন্তায় মগ্ন থাকি। ভালবাসি আমার এই দেশটাকে।

রিনকু১৯৭৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

Tora! Tora! Tora! (1970) সিনেমা রিভিউ।

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৮:০২



১৯৭০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত টোরা! টোরা! টোরা! (Tora! Tora! Tora!) একটি ঐতিহাসিক যুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র, যা ১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর পার্ল হারবারে জাপানের আকস্মিক হামলার ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। চলচ্চিত্রটির নাম "টোরা! টোরা! টোরা!" একটি কোড ওয়ার্ড, যা জাপানি নৌবাহিনী ব্যবহার করেছিল পার্ল হারবার আক্রমণের সফল সূচনার সংকেত হিসেবে। সিনেমাটি ইতিহাসপ্রেমী দর্শকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি যুদ্ধের দুটি দৃষ্টিভঙ্গি—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপান—উভয় দিক থেকেই ঘটনা উপস্থাপন করে।

পরিচালনা ও নির্মাণ:চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন তিনজন পরিচালক: রিচার্ড ফ্লেইশার (মার্কিন অংশ), তোশিও মাসুদা ও কিনজি ফুকাসাকু (জাপানি অংশ)। এই দৃষ্টিভঙ্গি চলচ্চিত্রটিকে অনন্য করে তুলেছে, কারণ এটি যুদ্ধের একপাক্ষিক বর্ণনার বাইরে গিয়ে দুই পক্ষের প্রস্তুতি, কৌশল এবং ব্যর্থতাগুলো বিশদভাবে তুলে ধরে।

চলচ্চিত্রটি তৈরির সময় হলিউড এবং জাপানি চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে দুর্দান্ত সমন্বয় করা হয়েছিল। প্রযোজনায় ড্যারিল এফ. জানুক বিশেষ ভূমিকা রাখেন, যার ফলে এটি কেবল একটি যুদ্ধের গল্প নয়, বরং ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের পূর্ণাঙ্গ চিত্রায়ণ হয়ে ওঠে।



চিত্রনাট্য ও গল্পের বিন্যাস:সিনেমাটির চিত্রনাট্য যথেষ্ট তথ্যনির্ভর ও বাস্তবসম্মত। এটি শুরু হয় যুদ্ধের পূর্ববর্তী সময়ের রাজনৈতিক ও সামরিক প্রস্তুতির চিত্রায়ণের মাধ্যমে। জাপানের সামরিক পরিকল্পনাকারীরা কীভাবে পার্ল হারবার আক্রমণের কৌশল নির্ধারণ করেছিল এবং যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্য থাকা সত্ত্বেও হামলা প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েছিল—এই দুই দিকই অত্যন্ত নিখুঁতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

গল্পের প্রথম অংশে আমরা দেখি, জাপানের সামরিক নেতারা আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার পূর্ব প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা বিশ্বাস করছিল, যদি পার্ল হারবারে আকস্মিক হামলা চালানো যায়, তবে প্রশান্ত মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের নৌ শক্তি দুর্বল হয়ে পড়বে এবং জাপান সহজেই তার সাম্রাজ্য বিস্তার করতে পারবে। অন্যদিকে, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলি বিভিন্ন সংকেত পেয়েও সময়মতো প্রতিক্রিয়া দেখাতে ব্যর্থ হয়, যা তাদের জন্য এক মারাত্মক ভুল হিসেবে প্রমাণিত হয়।

চরিত্র ও অভিনয়: চলচ্চিত্রে কোনো প্রধান নায়ক বা খলনায়ক নেই। বরং এতে বিভিন্ন সামরিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ভূমিকাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। জাপানি অ্যাডমিরাল ইয়ামামোতো চরিত্রে সোয়েচিরো উমেসুজি এবং মার্কিন অ্যাডমিরাল কিমেল চরিত্রে মার্টিন বালসামের অভিনয় প্রশংসনীয়। তাদের সংলাপ ও অভিব্যক্তিতে বাস্তবসম্মত আবেগ ধরা পড়ে।



মার্কিন সামরিক বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা যেভাবে বিভ্রান্তির শিকার হন, তা অভিনেতাদের অভিনয়ের মাধ্যমে চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। বিশেষ করে, জেসন রবার্ডস এবং ই. জি. মার্শালের পারফরম্যান্স দারুণভাবে সেই সময়কার রাজনৈতিক ও সামরিক পরিবেশের চিত্র তুলে ধরে।

সিনেমাটোগ্রাফি ও ভিজ্যুয়াল এফেক্টস: চলচ্চিত্রের বিশেষত্বের অন্যতম অংশ হল এর চমৎকার সিনেমাটোগ্রাফি ও বাস্তবসম্মত যুদ্ধের দৃশ্য। যুদ্ধবিমান, নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ এবং বিস্ফোরণের দৃশ্যগুলো ১৯৭০ সালের প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতার মধ্যেও অত্যন্ত জীবন্তভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

পার্ল হারবারে বোমা হামলার দৃশ্যটি সিনেমার অন্যতম সেরা অংশ। যুদ্ধবিমানগুলোর সমন্বিত আক্রমণ, বোমা বিস্ফোরণ, ধ্বংসযজ্ঞ—সবকিছু এতটাই নিখুঁতভাবে দেখানো হয়েছে যে দর্শকরা সহজেই সেই সময়কার ভয়াবহ পরিস্থিতি অনুভব করতে পারেন।

সঙ্গীত ও শব্দব্যবহার: সিনেমার ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক জেরি গোল্ডস্মিথের রচিত, যা পুরো সিনেমায় এক গভীর অনুভূতি যোগ করে। তিনি যেভাবে বিভিন্ন আবহ তৈরি করেছেন, তা যুদ্ধের উত্তেজনা ও ধ্বংসযজ্ঞের ভয়াবহতাকে আরও বাস্তবসম্মত করে তুলেছে। বিশেষ করে আক্রমণের মুহূর্তগুলোতে শব্দের ব্যাবহার এত নিখুঁতভাবে করা হয়েছে যে মনে হয়, দর্শক নিজের চোখের সামনে সবকিছু ঘটতে দেখছেন।

ইতিহাসের প্রতি বিশ্বস্ততা: একটি ঐতিহাসিক চলচ্চিত্র হিসেবে টোরা! টোরা! টোরা! ব্যতিক্রমীভাবে সঠিক তথ্য ও ঘটনার উপস্থাপনা করেছে। এটি কোনো অতিরঞ্জিত নায়কত্ব বা আবেগপূর্ণ কল্পকাহিনি সৃষ্টি করেনি; বরং ইতিহাসের নির্মোহ উপস্থাপনার দিকে মনোযোগ দিয়েছে।

চলচ্চিত্রটি দেখার পর দর্শকরা সহজেই বুঝতে পারবেন, কিভাবে সামরিক গোয়েন্দা ব্যর্থতা, রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত এবং অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস একটি বিপর্যয়কর ঘটনার দিকে নিয়ে যেতে পারে।

বক্স অফিস ও সমালোচনা: চলচ্চিত্রটি মুক্তির পর আর্থিকভাবে তেমন সফল হয়নি, তবে পরে এটি সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে এবং একটি কালজয়ী ক্লাসিক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। একাডেমি অ্যাওয়ার্ডসে এটি সেরা ভিজ্যুয়াল ইফেক্টের জন্য পুরস্কার পায়।

তবে কিছু দর্শক একে ধীরগতির মনে করেছেন, কারণ এটি মূলত কৌশলগত পরিকল্পনা ও ঐতিহাসিক দিকগুলোর উপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। যারা দ্রুতগতির যুদ্ধচলচ্চিত্র পছন্দ করেন, তাদের জন্য এটি কিছুটা ধৈর্যের পরীক্ষা হতে পারে।

চলচ্চিত্রটির গুরুত্ব: টোরা! টোরা! টোরা! শুধুমাত্র একটি যুদ্ধচলচ্চিত্র নয়, এটি একটি শিক্ষা। এটি দেখায় কিভাবে ভুল বোঝাবুঝি, গোয়েন্দা ব্যর্থতা এবং অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে একটি জাতি বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে। পার্ল হারবার হামলা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নয়, বিশ্ব ইতিহাসের জন্যও এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে জীবন্ত হয়ে ওঠে।

শেষ কথা: যদি কেউ বাস্তবসম্মত ও ঐতিহাসিকভাবে সঠিক একটি যুদ্ধচলচ্চিত্র দেখতে চান, তবে টোরা! টোরা! টোরা! অবশ্যই একটি অবশ্যদ্রষ্টব্য সিনেমা। এটি শুধু যুদ্ধের রোমাঞ্চ নয়, বরং কৌশলগত ভুল ও ঐতিহাসিক শিক্ষা প্রদান করে। যুদ্ধের দুই পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করার দক্ষতার জন্য এটি আজও একটি মাস্টারপিস হিসেবে বিবেচিত হয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.