নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কি আর বলবো নিজের সম্পর্কে! কিছুই বলার নাই।

I love politics. I want death of those who killed our Army officers.

রিনকু১৯৭৭

দেশ নিয়ে খুব চিন্তায় মগ্ন থাকি। ভালবাসি আমার এই দেশটাকে।

রিনকু১৯৭৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

In Time (2011) সিনেমা রিভিউ।

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:৫৯



**ভূমিকা:**

অ্যান্ড্রু নিকোল পরিচালিত এবং জাস্টিন টিম্বারলেক ও আমান্ডা সেফ্রিড অভিনীত *In Time* (২০১১) সিনেমাটি এক ব্যতিক্রমী বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী। এটি এমন এক ভবিষ্যৎ সমাজের গল্প বলে যেখানে সময়ই হল একমাত্র মুদ্রা। অর্থাৎ, মানুষের বয়স ২৫ বছর পর্যন্ত বাড়ে, এরপর বেঁচে থাকার জন্য তাদের সময় কিনতে হয় বা উপার্জন করতে হয়। এই অনন্য ধারণার ভিত্তিতে সিনেমাটি সামাজিক বৈষম্য, পুঁজিবাদ এবং শ্রেণিবৈষম্যের গভীর সমালোচনা করে।

### **পটভূমি ও কাহিনি:**

সিনেমার কাহিনি ভবিষ্যতের এক সমাজে, যেখানে জিনগতভাবে মানুষের বয়স ২৫ বছরেই থেমে যায়, কিন্তু তারা কেবল এক বছর অতিরিক্ত সময় পায়। এর পর থেকে সময়ই একমাত্র মুদ্রা। মানুষ যদি আরও বেশি সময় অর্জন করতে না পারে, তবে তাদের জীবন থেমে যায়। ধনী লোকেরা শত শত বছর বেঁচে থাকে, আর গরিবেরা প্রতিদিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে।



উইল স্যালাস (জাস্টিন টিম্বারলেক) হলেন এক গরিব যুবক, যিনি প্রতিদিন কাজ করে সময় উপার্জন করেন। একদিন, তিনি হেনরি হ্যামিলটন নামের এক শতবর্ষী ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করেন, যিনি জীবনের প্রতি হতাশ। হেনরি উইলকে তার বেঁচে থাকার ১০০ বছর দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এই বিশাল সময় নিয়ে উইল ধনী সমাজে প্রবেশ করেন এবং সিলভিয়া ওয়েইস (আমান্ডা সেফ্রিড) নামের এক ধনী পরিবারের মেয়ের সাথে জড়িয়ে পড়েন। এরপর শুরু হয় পুলিশের (Timekeepers) সাথে তার লড়াই।


### **চরিত্রায়ন ও অভিনয়:**

**জাস্টিন টিম্বারলেক** উইল স্যালাস চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। তার চরিত্র একজন সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ থেকে ধনীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে ওঠার কাহিনি তুলে ধরে।

**আমান্ডা সেফ্রিড** ধনী ব্যাংকারের মেয়ে সিলভিয়া ওয়েইস হিসেবে চমৎকার অভিনয় করেছেন। তার চরিত্রটি ধনী সমাজের বিলাসী জীবন থেকে বেরিয়ে এসে উইলের সাথে একটি বিপ্লবী যাত্রায় অংশ নেয়।

**কিলিয়ান মারফি** পুলিশের প্রধান টাইমকিপার লিওন চরিত্রে ছিলেন অত্যন্ত শক্তিশালী। তার চরিত্র সময় ব্যবস্থার আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে চায়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে-ও বুঝতে পারে এই ব্যবস্থার অন্যায় দিক।


### **চিত্রনাট্য ও পরিচালনা:**

অ্যান্ড্রু নিকোলের পরিচালনা যথেষ্ট প্রশংসনীয়। তিনি এই সিনেমার মাধ্যমে একটি দার্শনিক ও সামাজিক বার্তা দিয়েছেন— "সময়ই আসল সম্পদ, এবং ধনীরা এটি ধরে রাখে, গরিবরা সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার জন্য।" সিনেমার স্ক্রিপ্ট দ্রুতগতির এবং থ্রিলারধর্মী। যদিও কিছু জায়গায় গল্প আরও গভীরভাবে ব্যাখ্যা করা যেত, তবে সামগ্রিকভাবে এটি একটি চমৎকার সাই-ফাই থ্রিলার।



### **থিম ও বার্তা:**

সিনেমাটির প্রধান থিম সময়ের অসম বণ্টন। এটি বর্তমান পুঁজিবাদী সমাজের একটি রূপক চিত্র তুলে ধরে, যেখানে ধনীরা সম্পদ ধরে রাখে, আর দরিদ্ররা সারাজীবন সংগ্রাম করে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ থিম:

- **ধনী বনাম গরিব:** সিনেমায় ধনী শ্রেণির মানুষের জীবন বিলাসিতায় ভরা, যেখানে গরিবরা প্রতিদিন বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করে।
- **পুঁজিবাদ ও অর্থনৈতিক বৈষম্য:** এখানে সময়ই টাকা, যা বাস্তব জীবনে টাকার মতোই কাজ করে। ধনীরা যত বেশি সময় ধরে রাখে, দরিদ্ররা তত বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
- **বিদ্রোহ ও বিপ্লব:** উইল এবং সিলভিয়া ধনী সমাজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে, যা সমাজ পরিবর্তনের বার্তা দেয়।


### **সিনেমাটির দুর্বল দিক:**

যদিও *In Time* কনসেপ্ট এবং পরিবেশনায় অনন্য, তবুও কিছু জায়গায় এটি দুর্বল।

- **গভীরতা কম:** সময়ের ব্যবস্থাপনা নিয়ে অসাধারণ ধারণা থাকলেও, গল্পের গভীরতা আরও বাড়ানো যেত।
- **পার্শ্বচরিত্রের অভাব:** মূলত উইল, সিলভিয়া, এবং টাইমকিপার লিওন ছাড়া অন্যান্য চরিত্রগুলোকে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
- **অবাস্তবতা:** যদিও এটি একটি সাই-ফাই সিনেমা, কিছু জায়গায় যুক্তির অভাব ছিল। যেমন, ধনী সমাজ এত সুরক্ষিত থাকার পরেও উইল সহজেই তাদের ভিতরে ঢুকে যায়।




### **চিত্রগ্রহণ ও ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক:**

সিনেমার চিত্রগ্রহণ অত্যন্ত সুন্দর, বিশেষ করে ধনী ও দরিদ্র সমাজের বৈষম্য দৃশ্যায়ন বেশ বাস্তবসম্মতভাবে দেখানো হয়েছে। ধনী এলাকার বিলাসবহুল পরিবেশ এবং দরিদ্র এলাকার হতাশাজনক চিত্র অসাধারণভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

**ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক** উত্তেজনাপূর্ণ, যা সিনেমার থ্রিলার অনুভূতি বাড়িয়ে দেয়। ক্রেগ আরমস্ট্রংয়ের কম্পোজিশন সিনেমার বিভিন্ন মুহূর্তকে আরও বেশি নাটকীয় করে তুলেছে।


### **শেষ কথা:**

*In Time (2011)* শুধুমাত্র একটি সাই-ফাই থ্রিলার নয়, বরং এটি আমাদের বাস্তব সমাজের প্রতিফলন। এটি পুঁজিবাদী ব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যের প্রতি একটি তীব্র প্রতীকী সমালোচনা। যদিও কিছু জায়গায় গল্পের গভীরতা আরও বাড়ানো যেত, তবে এর অভিনব কনসেপ্ট, শক্তিশালী অভিনয় এবং দার্শনিক বার্তার কারণে এটি অবশ্যই দেখার মতো একটি সিনেমা।

**রেটিং:** ৮/১০

আপনি যদি থ্রিলার ও সাই-ফাই মুভি পছন্দ করেন এবং সমাজ নিয়ে ভাবতে ভালোবাসেন, তাহলে *In Time* আপনার জন্য অবশ্যই উপভোগ্য হবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.