![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুনিয়ার খবর রেখে শান্তি পাই।
প্রায় ছয় দশক ধরে ইজরায়েল এবং মরক্কোর মধ্যে চলা গোপন গোয়ন্দা,সামরিক,রাজনৈতিক এবং সংস্কৃতিক সম্পর্ক দুই সপ্তাহে আগে ঘোষণার মাধ্যমে স্বাভাবিক হল।কিন্তু প্রশ্ন হল এই ছয় দশকে মুসলিম দেশগুলুর মধ্যে সবচেয়ে প্রগাড় সম্পর্কটা কেমন ছিল/কি ছিল?
উল্লেখ্য গত কয়েক সপ্তাহে ইজরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোষণা দেয়া দেশগুলুর সাথে ইজরায়েলের গোপন সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের।
১৯৬০ সালের পর থেকে প্রত্যেক মোসাদ প্রধান - অমিত, জমির, হোফি, অ্যাডমনি, শাভিত, ইয়াতোম, হ্যালভি, দাগান, পার্ডো এবং বর্তমান প্রধান ইয়াসি কোহেন - উত্তর আফ্রিকার দেশ সফর করেছেন এবং এর নেতাদের এবং গোয়েন্দা প্রধানদের সাথে সাক্ষাত করেছেন।
দীর্ঘ সময়ে এই গোপন যোগাযোগের উদ্ধেশ্য ছিল পারস্পরিক স্বীকৃতির মাধ্যমে দুই দেশের জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।বছরের পর বছর তাদের সম্পর্কে উত্থান পতন থাকলেও একটা জায়গায় তারা স্থির ছিলেন সেটা তারা তাদের সম্পর্ককে ভেস্তে যেতে দেয়নি।১৯৫০ সালে মরক্কো যখন ফরাসি শাষিত তখন থেকেই তাদের যোগাযোগ শুরু হলেও এটা গতি লাভ ১৯৫৬ সালের মার্চে মরক্কো স্বাধীনতা লাভের পর।ফরাসিরা মরক্কোর ইহুদীদের ইজরায়েলে ভ্রমনে বাধা না দিলেও মরক্কোর রাজা মোহাম্মদ পঞ্চম মরক্কর ইহুদীদের ইজরায়েল ভ্রমনে নিসেদাজ্ঞা জারি করেন।এতদিনে ৭০,০০০ ইহুদি ইজরায়েলে পাড়ি জমিয়েছিল।১৯৫৯ সালে জায়োনিজমকে অপরাধ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন।এর উদ্ধেশ্য ছিল ইমিগ্রেটেড ইহুদিরা মরক্কোর নিজের ভাইদের বিরুদ্ধে অস্র হাতে তুলে নিতেও দ্বিধা করবে না।
এরপরেই মোসাদ তার পরিকল্পনা নিয়ে হাজির হয়।তারা একটা টিম গঠন করে।যার সদস্যারা ছিল মরক্কোন ইহুদি।তাদের উদ্ধেশ্য ছিল মরক্কোতে বাকি থাকা ১৫০,০০০ হাজার ইহুদিকে ইজরায়েলে নিয়ে আসা।এই টিমটার নাম দেয়া হয়েছিল মিসগেরেট।এই টিমকে সব ধরনের অস্র সরবরাহ করা হয়েছিল।ইহুদীদের মরক্কো থেকে ইজরায়েলে আনার জন্য ব্যাবহার করা হতো টেঙ্গিয়ার শহরকে।যেখান থেকে নিকটতর বন্ধ্র হয়ে সরাসরি ইজরায়েলে।পরবর্তীতে স্পেনের স্বৈরশাসক ফ্রান্সিস্কো ফ্রাংকোর সহযোগিতায় স্পেনের নিয়ন্ত্রণে থাকা মরক্কর দুইটি উপকূলীয় শহর সেউটা এবং মেলিলাকে এই কাজের ঘাঁটি হিসেবে ব্যাবহার করা হয়েছিল। মোসাদ বিশ্বাস করতো ফ্রাংকোর সাথে হিটালারের সম্পর্কের কারনে সে দোষী ছিল এবং ১৪৯২ সালে স্পেন থেকে ইহুদীদের বহিস্কারের জন্যও সে দায়ী ছিল।পরবর্তীতে মোসাদ ব্রিটিশ উপনিবেশ জিব্রাল্টারের একটা সামরিক স্থাপনা কিনে নিয়ে সেটাকে মরক্কো থেকে বের করে আনা ইহুদীদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যাবহার করেছিল।১৯৬১ সালের ১০ই জানুয়ারির ঘটনা মোসাদের পুরু পরিকল্পনাকে ভেস্তে দেয় দেয় যখন মরক্কোর ইহুদি ভর্তি একটা নৌকা ডুবে মোসাদ কর্মকর্তাসহ ৪২ জোন ইহুদি ডুবে মারা যায়।এই ঘটনা পুরু দুনিয়া জুড়ে প্রতিবাদের সৃষ্টি করে এবং মোসাদের গোপন পরিকল্পনা ফাঁস হওয়ার পর মরক্কোর রাজা পঞ্চম ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেন।কিন্তু মোসাদের ভাগ্য হল ১৯৬১ সালের ২রা মার্চ রাজা পঞ্চম মারা যান এবং তার স্থলাভিষিক্ত হন তার দ্বিতীয় ছেলে হাসান।
নতুন রাজা আমেরিকার সাথে সম্পর্কের উন্নতি করার চেষ্টা করেছিলেন এবং আমেরিকান ইহুদি জয়েন্ট ডিস্ট্রিবিউশন কমিটি এবং হিব্রু অভিবাসী এইড সোসাইটি, মার্কিন দুটি প্রধান ইহুদি মানবিক সংস্থা তাকে রাজি করিয়েছিলেন যে, তিনি যদি মরক্কোর ইহুদীদের অবাধে ইজরায়েলে যেতে দেন, তবে এটি আমেরিকার সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে।
দ্বিতীয় হাসানের শাসনকে দু'দেশের গোপন সম্পর্কের স্বর্ণযুগ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।এটার শুরু হয়েছিল মোসাদ এবং মরক্কোর গোয়েন্দা প্রধান জেনারেল উফকির এবং কর্নেল দালিমির দারা।মরক্কোর এই দুই সামরিক কর্মকর্তাকে পড়ে রাজার আদেশে হত্যা করা।রাজা পঞ্চমের অভিযোগ এই দুই কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিল।মোসাদ রাবাতে তাদের ষ্টেশন স্থাপন করে যেটা পরিচালিত হত মোসাদ দক্ষএজেন্ট ইউসুফ পোরাত এবং দভ আসদত দ্বারা।
১৯৬৫ সালে মরক্কোতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আরবলীগ সম্মেলনে আরব দেশগুলুর সব রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে সব ডেলিগেটের নিরাপত্তার নামে আড়িপাতার তথ্য ফাঁস হলে মরক্কো চাপের মুখে পড়ে যায়।যেটা মোসাদ করেছিল রাজার অনুমোদনক্রমে। বিশেষ করে ইজরায়েলের তখনকার মুল শত্রু মিশরের ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার পর মোসাদ,মরক্কোকে প্রচুর অর্থ দিতে হয়েছিল।এরপর মরক্কোর তৎকালীন গোয়েন্ধা প্রধান অউফকি এবং সামরিক কর্মকর্তা দলিমি ১৯৬৫ মোসাদ প্রধান মির অমিতকে অনুরোধ করেন,মরক্কোর বিরুধি নেতা মেহেদি বিন বারাকাকে হত্যা করার জন্য।তিনি মরক্কোর তৎকালীন রাজা দ্বিতীয় হাসানের শক্তিশালী প্রতিপক্ষ এবং ইজরায়েলের চরম সমালোচক।অমিত ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রি লেভি এশকোলের সাথে পরামর্শ করেন।মেহেদি বিন বারাকা তখন ফ্রান্সে নির্বাসিত ছিলেন।ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী মোসাদের এই প্রস্তাব নাকচ করে দিলেও তাকে খুঁজে বের করার অনুমতি দেন।পড়ে অবশ্য তাকে হত্যা করা হয় এবং এরপর ফ্রান্সের সাথে ইজরায়েলের সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়।ফ্রান্স প্যারিসে স্থাপিত মোসাদের ষ্টেশন বন্ধ করার হুমিকই দেন।এরপরেই আরব ইজরায়েল যুদ্ধ শুরু হয়।আরব ইজরায়েল যুদ্ধে ইজরায়েলের বিজয় মরক্কো এবং ইজরায়েলের সম্পর্ককে আরো শক্তিশালী করে তোলে।১৯৭৭ সালে মরক্কোর মধ্যস্থতায় ইজরায়েল এবং সাদাতের মধ্যে বৈঠক হয় রাবাতে।যার ফলশ্রুতিতে তাদের মধ্যে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় সাদাত ইজরায়েলি নেসেটে গিয়ে বক্তৃতা দেয়।
সেই সময় থেকে ইজরায়েলের সাথে মরক্কোর কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকলেও দ্বিতীয় ইন্তিফাদার পর রাজা মোহাম্মদ -৬ কূটনৈতিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেন।এরপরেও ইজরায়েলে বসবাসরত মরক্কোর ইহুদীদের মরক্কোতে যাতায়াত,মরক্কোর সাথে ইজরায়েলের বানিজ্য সম্পর্ক সবই চালু ছিল।
মরক্কোর সাথে ইজরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিকের চাড়াটা রোপন করেছিল মোসাদ প্রায় ৬০ বছর আগে।একই কাজটা সে করেছে সৌদি-ওমান-কুয়েত-ইন্দোনেশিয়াতে।তাই নিকট ভবিষ্যতে যদি এই দেশগুলু ইজরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকের ঘোষণা দেয় তাহলে অবাক হবার কিছুই থাকবে না।
©somewhere in net ltd.