![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুনিয়ার খবর রেখে শান্তি পাই।
সিরিয়া থেকে নাগরনো-কারাবাখ: রাশিয়া এবং তুরস্কের জটিল আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা
২০ শে অক্টোবর, কোন মিডিয়া প্রচারনা ছাড়াই সিরিয়ার শহর মোরেকে অবস্থান নেওয়া তুর্কি বাহিনী তাদের ঘাঁটি থেকে সরে আসতে শুরু করে।এই ঘাঁটি গুলু সিরিয়ার সরকার নিয়ন্ত্রিত হামা এবং সিরিয়ার তথাকথিত বিদ্রুহীদের নিয়ন্ত্রণাধীন সিরিয়ার উত্তর পশ্চিম সীমানায় অবস্থিত ছিল।
এই ঘাঁটিগুলু রাশিয়ার সমর্থিত সামরিক ইউনিট এবং সরকারি মিলিশিয়া দ্বারা বেষ্টিত ছিল।যা সিরিয়ার সরকারী এবং বিদ্রুহিদের মধ্যে বাফার জোন হিসেবে কাজ করছিলো।ওয়াশিংটন পোষ্টের ভাষ্য অনুযায়ী তুর্কি-রাশিয়ার মধ্যে অলিখিত চুক্তি অনুযায়ী তুর্কি এসব ঘাঁটি থেকে তাদের সেনাদের সরিয়ে নিতে শুরু করে। তবে তুর্কি এসব সেনা ঘাঁটি থেকে প্রত্যাহার করা সেনা সদস্যদের সন্ত্রাসী নিয়ন্ত্রিত ইদলিব প্রদেশে মোতায়েন করে।এখানেই হল ভাইটাল প্রশ্ন।মোরেকের মোট গুরুত্বপুর্ন ঘাঁটি ছেড়ে দিয়ে তুর্কি কেন ইদলিবে সেসব সৈন্য মোতায়েন করলো।
এই প্রশ্নের উত্তর শুধু সিরিয়াতে নিহিত নেই।এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য যেতে ককেশাস অঞ্চলে।ইদলিব প্রদেশ দখল মুক্ত করতে সিরিয়া-রাশিয়ান সৈন্যরা অভিযান পরিচালনার গুঞ্জনের মধ্যেই তুর্কি মোরেক থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে ইদলিবে মোতায়েন করলো।
মোরেক থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের সঙ্গে মুলত নাগরোণো-কারাবাখ এবং লিবিয়ার যুদ্ধের সাথে যুক্ত।সেপ্টেম্বরে সিরিয়া নিয়ে তুর্কি-রাশিয়া আলোচনা কোন সমযোতা ছাড়াই ভেঙ্গে যায়।এটার মুল কারন ছিল ২০১৮ সালের চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া,তুর্কিকে ইদলিবের কিছু সামরিক ঘাঁটি ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল।কিন্তু তুর্কি সেই চুক্তি মানতে অস্বীকার করে।
১লা সেপ্টেম্বর রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোয়া বলেছিলেন যে হায়াত তাহরীর আল-শাম এবং হুরাস আদ-দ্বিনের মতো উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলিকে ইদলিব ছেড়ে যেতে বাধ্য করতে পারেনি।যদিও চুক্তির মুল বিষয় ছিল ইদলিব এসব উগ্রবাদী গোষ্ঠীর হাত থেকে মুক্ত করা।এরপরেও রাশিয়ার যুদ্ধ বিমান ইদলিবে হামলা শুরু করে।
সর্বশেষ চুক্তিটি সম্পাদিত হয়েছিল চলতি বছর ফেব্রুআরির গোড়ার দিকে সিরিয়ার সরকারী বাহিনীর আক্রমনে প্রায় ৬০ জোন তুর্কি সৈন্য নিহত হবার পর।এরপর রাশিয়ার মধ্যস্থতায় মার্চের ৫ তারিখ যুদ্ধ বিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।চুক্তি অনুযায়ী তুর্কি ইদলিবের কিছু এলাকা থেকে তার সামরিক ঘাঁটি সরিয়ে নিবে এবং তাহরির আল শাম এবং হুরাস আদ দ্বীনের মত চরমপন্থি গোষ্ঠীগুলুকে ইদলিব থেকে সরিয়ে নিবে।মোরেকের স্ট্র্যাটিজিক অঞ্চল থেকে তুর্কির সামরিক ঘাঁটি প্রত্যাহারের মাধ্যমে বুঝা যাচ্ছে তুর্কি ইদলিব থেকে তার সামরিক ঘাঁটি প্রত্যাহার করবে না।ককেশাস এবং লিবিয়াতে এটা হবে তুর্কির পক্ষে বিশাল এক তুরুপের তাস।
লিবিয়া, সিরিয়া বা নাগর্নো-কারাবাখ উভয়ই আলাদা ঘটনা হিসাবে বিবেচিত হতে পারে কিন্তু তুর্কি রাশিয়া দন্দে একটা আরেকটার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
নাগর্নো-কারাবাখ কনফ্লিক্টঃ
প্রায় ৪০ দিন ধরে চলা যুদ্ধে আজারবাইজান প্রায় ৩০ বছর আগে আরমেনিয়া কতৃক দখলকৃত ভুমি উদ্ধার করতে সমর্থ হয়।যদিও এটা সম্ভব হয়েছে রাশিয়ার নিরপক্ষে ভুমিকার কারনে।আজারবাইজানকে তুর্কি যেভাবে সমর্থন দিয়েছে আরমেনিয়া,রাশিয়ার কাছ থেকে সেই সমর্থন পেলে এই ভুমি উদ্ধার করা সম্ভব হত না।যদিও আরমেনিয়ার সাথে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা চুক্তি রয়েছে।কিন্তু অক্টোবরের ৭ তারিখ প্রেসিডেন্ট এক বিবৃতিতে পরিষ্কার করে আরমেনিয়ার সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি নাগর্নো-কারাবাখকে অন্তর্ভুক্ত করেনা।কারন ইউএসএসআর এর পতনের আগেই নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলকে আজারবাইজানের স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা দিয়েছিল।যার কারনে পুতিন এই কনফ্লিক্টে নিরপেক্ষ ছিল।এছাড়াও দুই দেশের সাথেই রাশিয়া উষ্ণ সম্পর্ক রয়েছে এবং দুই দেশই রাশিয়ার অস্রের ক্রেতা।
১২ ই অক্টোবর এবং ২৩ অক্টোবর মস্কোতে রাশিয়া ও তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের মধ্যে বৈঠক সিরিয়া ও লিবিয়ার পরিস্থিতি সহ কারাবাখের দ্বন্দ্ব নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। এসব ঘটনা থেকে নিশ্চিত করে বলা যায় লিবিয়া, সিরিয়া বা নাগর্নো-কারাবাখকে আলাদা আলাদা ঘটনা হিসাবে বিবেচনা করা যাবে না। বিপরীতে, বর্তমান সময়ে তারা উত্তর আফ্রিকা থেকে ককেশাস পর্যন্ত বিস্তৃত মস্কো এবং আঙ্কারার মধ্যে বিস্তৃত লড়াইয়ের অংশ হিসাবেই ধরতে হবে।
যদিও এই ঘটনাগুলি ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে সরাসরি প্রভাবিত করে, তাদের সামরিক ও কূটনৈতিক অনুপস্থিতির পাশাপাশি আলোচনায় অংশ না নেওয়ার বিষয়টি তুরস্ক ও রাশিয়ার কাছে স্পষ্ট সংকেত যে তারা লিবিয়া, সিরিয়া এবং নাগরনো-কারাবাখ সমস্যার সমাধানের বিষয়টি অনেকাংশে এই দুই দেশের উপর ছেড়ে দিয়েছে।যদিও বাইডেন প্রশাসনের ভুমিকা দেখার জন্য আমাদের আরো অপেক্ষা করতে হবে।তবে একথা স্পষ্ট করে বলা যায় বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকাতে তুর্কিস হেগিমনিকে তারা মেনে নিবে না।এর মধ্যেই লিবিয়ার জিএনএ সরকারের সাথে ইটালির সামরিক চুক্তি তুর্কির অবস্থানকে আরো শক্তিশালি করবে এবং সৌদি-আমিরাতের ব্যাপারে যদি বাইডেন প্রশাসন কঠোর ভুমিকা নেয় তাহলে এ কথা স্পষ্ট করে বলা যায় লিবিয়াতে তুর্কির অবস্থান পাকাপোক্ত হবে।
©somewhere in net ltd.