নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং এবাউট ওয়ার্ল্ড পলিটিক্স্,স্পেশালি মিনা রিজিয়ন। মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার কিছুই বিশ্বাস করি না।

মোহাম্মদ মোস্তফা রিপন

দুনিয়ার খবর রেখে শান্তি পাই।

মোহাম্মদ মোস্তফা রিপন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইয়েমেনঃ তেলের জন্য গনহত্যা নাকি ইরানের ভয়?

২২ শে ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:০৬

ইয়েমেনঃ তেলের জন্য গনহত্যা।
ইয়েমেনের সিভিল ওয়ার গনহত্যায় রুপ নেয় মুলত ২০১৫ সালে আমেরিকা-ইজরায়েল সমর্থিত সৌদি-আমিরাতি জোটের বিমান হামলার মধ্য দিয়ে।তখন পশ্চিমা মিডিয়াগুলু এটা নিয়ে এক প্রকার চুপ ছিল।কিন্তু এটা দুর্ভিক্ষে রুপ নেওয়ার কারনে তাদের ঘুম ভাঙ্গে।ততদিনে ইয়েমেনকে সৌদি জোট মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে।এর সবই তারা করেছে আমেরিকা-ইউরোপের সরবরাহকৃত অস্র দিয়ে।প্রায় ১০০ বছর আগে ব্রিটিশ কতৃক পারস্য সাগরে তেল আবিস্কারের পর প্রায় প্রত্যেকটা যুদ্ধই ছিল তেলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে।ইয়েমেন যুদ্ধও তার থেকে ভিন্ন নয়।
ইয়েমেন পৃথিবীর ভুরাজনৈতিক ক্রিটিক্যলা জায়গাগুলুর একটা।এটি মুলত লোহিত সাগরের সংযোগস্থলে অবস্থিত।এটি সুয়েজ খালের সাথে ভারত মহাসাগরের মাধ্যমে ভুমধ্যসাগরকে যুক্ত করেছে।এটা হল দুনিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন শিপিং রুট।আফ্রিকার হর্ন ক্ষ্যাত জিবুতি থেকে মাত্র ১৮ মাইল দূরে ‘’বাব এল মান্দাব’’ হল আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের চোখে সবচেয়ে ভাইটাল অয়েল রুট।তাদের হিসেবে প্রতিদিন এই রুট দিয়ে তেল পরিবহন হয় ৪৭ লাখ ব্যারেল যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমান তেলের গন্তব্যস্থল হল চীন।
মার্চ,২০১৫ সালে ইয়েমেনের যুদ্ধে নতুন মোড় নেয় মার্কিন সমর্থিত সৌদি জোট কতৃক হুসাইন বদরুদ্দিনের গ্রুপ হুতিদের বিরুদ্ধে বোমা হামলার মধ্য দিয়ে।এই হুতিরা মুলত শিয়াদের মধ্যে সুন্নিদের প্রায় কাছাকাছি জায়েদি ধারার অনুসারী।(জায়েদি শিয়াদের সাথে সুন্নিদের পার্থক্য খুবই সামান্য)। এই হুতিরা ১৯৬২ সাল পর্যন্ত প্রায় ১০০০ বছর ইয়েমেন শাসন করেছেন।২০১১ সালে মুলত এই হুতিরাই সৌদি প্রক্সি প্রেসিডেন্ট আলি আব্দুল্লাহ সালেহকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করে।উল্লেখ্য এই সালেহ কিন্তু শিয়া ছিলেন এবং সে শিয়া হওয়া সত্বেও তাতে সৌদির কোন সমস্যা ছিল না।তার পরে দুই বছর সময় দিয়ে ক্ষমতা দেওয়া হয় সালেহর ভাইস প্রেসিডেন্ট আরেক সৌদি প্রক্সি আব্দুরাব্বুহ মনসুর হাদির কাছে।সে ইয়েমেনের সমস্যা সমাধানে দুই বছরে কিছুই না করে সৌদি পরামর্শে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার পথে হাঁটলে হুতিরা আবার বিদ্রোহ করে।হাদি যে সৌদি প্রক্সি ছিল তার বড় প্রমান হল হুতি বিদ্রোহের পর সে সৌদিতেই পালিয়ে যায়।
হাদিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল দুই বছরের জন্য।কিন্তু সৌদির পরামর্শে সে তার মেয়াদ উত্তীর্ণ হবার পরেও পদত্যাগে অস্বীকার করে।পাশাপাশি তেলের উপর থেকে ভর্তুকি প্রত্যাহার এবং সালেহর পতনের পর কাংখিত কোন সংস্কার করতে সে অস্বীকার করলেই হুতিরা অস্র হেতে নেয়।এই প্রেক্ষিতেই ২০১৫ সালের ২৫শে মার্চ সে সৌদি আরব পালিয়ে যায় এবং সে দিনই সৌদি রাজা ইয়েমেনে বিমান হামলা শুরুর নির্দেশ দেয়।
সৌদিরা এই বোমা হামলার নাম দেয় অপারেশান ডেসিসিভ স্টর্ম।এই হামলায় তারা ইয়েমেনের বেসামরিক স্থাপনা এবং চিকিৎসা ব্যাবস্থাকে পুরুপুরি ধংস করে দেয়।প্রায় ২.৫ কোটি ইয়েমেনিকে রিফুজিতে পরিনত করে।বন্ধ করে দেওয়া খাবার এবং ঔষধ সরবরাহ।তখন জাতিপুঞ্জ ইয়েমেনকে লেভেল-৩ ইমারজেন্সি ঘোষণা করে।এরপর ইয়েমেনে পরিকল্পিত ভাবে ছাড়ানো হয় কলেরার জীবাণু।কলেরা মহামারীতে জীবন হারায় লক্ষ ইয়েমেনি।পরিকল্পিতভাবে খাবার সরবরাহ বন্ধ করে দুর্ভিক্ষ ডেকে আনা হয়।আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে এটা হল গনহত্যা যে কথা জাতিপুঞ্জ বার বার বলে আসছে।
ডিক চেনির তেলের জন্য যুদ্ধঃ
ইয়েমেনে মার্কিন সমর্থিত সৌদি জোটের হামলার মুল কারন নিহিত হল বুশ-চেনির প্রশাসনের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার মধ্যে।(৯/১১ এর পর)২০০৩ সালের ইরাক আক্রমনের উদ্ধেশ্যও ছিল এই তেল যেটা পল উলফইটজ পরে স্বীকার করেছে।
১৯৯৮ সালে হেলিবার্টনের সিইও থাকার সময় টেক্সাসে তেল মন্ত্রীদের এক বৈঠকে তিনি বলেছিলেন ‘’তেল যেখানে সেখানে আমাদের যেতে হবে।আমি এটি [রাজনৈতিক অস্থিরতা] সম্পর্কে খুব বেশি চিন্তা করি না’’
জুনিয়র বুশের ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকা কালে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ডোনাল্ড রাম্পফেল্ডের সাথে মিলে পাঁচ বছরে সাতটা দেশ দখলের পরিকল্পনা হাতে নেয়।যার প্রায় সবগুলুই মধ্যপ্রাচ্যের এবং যে গুলু মুলত চীন এবং ইউরোপে তেল সরবরাহ করে।জেনারেল ওয়েস্লি ক্লার্ক যেটা পরে জনসম্মুখে ফাঁস করে দেন।২০০৪ সালে চেনি-বুশের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ইয়েমেনে আগাত হানে।যখন আলি আব্দুল্লাহ সালেহ হুতি নেতা বদরুদ্দিন জায়েদিকে গ্রেফতার করার চেষ্টা করে।সেই সময়েও আমেরিকা-ব্রিটেন-সৌদিরা সালেহকে সমর্থন দেয় এবং তার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখে।২০১৫ সালে এসে ওবামা প্রশাসন ইয়েমেনে সৌদি বোমা হামলাকে সমর্থন জানায় এবং সম্প্রতি ফাঁসকৃত তথ্য অনুযায়ী আমেরিকা ইয়েমেন সৈন্য মোতায়েন করে সৌদিকে সাহায্য করছে।
ইয়েমেনে আমেরিকা বা সৌদিদের আগ্রহ কী? তেল নিয়ন্ত্রণ সংক্ষিপ্ত উত্তর, কিন্তু সম্ভবত স্বাভাবিক অর্থে না।
অনাবিষ্কৃত তেলঃ
ইয়েমের দুটি স্ট্রাটেজিক দিক রয়েছে।একটা হল দুনিয়ার তেল পরিবহনের জন্য বাবএল মান্দাব রুট’ আরেকটি ইয়েমেনের অনাবিষ্কৃত বিশাল তেলের মজুদ।২০০২ সালে মার্কিন জিওলজিক্যাল সার্ভের হিসেব মতে ইয়েমেনে অনাবিষ্কৃত তেলের পরিমান প্রায় ৯.৮ বিলিয়ন ব্যারেল।এটা সৌদির প্রমানিত ২৬৬ বিলিয়ন মজুদের কাছে তেমন কিছুই না।কিন্তু সৌদির প্রমানিত তেলের মজুদের অনেকগুলুই ইয়েমেনের সাথে বিতর্কিত সীমানার মধ্যে অবস্থিত।যেটা ইয়েমেনের সাথে সমজোতা ছাড়া একা সৌদির পক্ষে উত্তোলন সম্ভব নয়।যেটাকে ১৯৮৮ সালে সিআইএ নাম দেয় The Chimera of Wealth।ঠিক এই কারনেই ইয়েমেনে একজন সৌদি পাপেট দরকার।
হুতিদের নিয়ন্ত্রনাধীন আল আলিফ তেল ক্ষেত্র থেকে টেক্সাস ভিত্তিক ওয়েল হান্ট তেল উৎপাদন শুরু করে ১৯৮৪ সালে।এই আলিফ ফিল্ড হল সৌদি-ইয়েমেনি বিতর্কিত সীমানার কাছাকাছি।হান্টের মতে এই বিতর্কিত সীমানায় তেল মজুদের পরিমান গোটা সৌদি তেল মজুদ থেকেও বেশি।যেটা মার্কিন জিওলজিক্যাল সার্ভেতেও উঠে এসেছে। এর থেকে এটা স্পষ্ট যে, পারস্য উপসাগর এবং লোহিত সাগর দ্বারা আবদ্ধ স্থানটি ইয়েমেন ও সোমালিয়া সহ হাইড্রোকার্বনের জন্য আমাদের গ্রহের সবচেয়ে কার্যকরী সক্রিয় এলাকাগুলির মধ্যে একটি। ইয়েমেনে বোমা হামলায় পেন্টাগনের শর্তহীন সমর্থনই ইয়েমেন তেল এবং গ্যাসের মজুদ প্রমানের জন্য যথেষ্ট।
তাই ইয়েমেন কনফ্লিক্টের সাথে শিয়া বা সুন্নির কোন সম্পর্ক নেই।কিন্তু সৌদি রাজারা সবসময় এই শিয়া সুন্নি কার্ডটাই খেলতে পছন্দ করে।ইয়েমেন যুদ্ধ মুলত তেল এবং গ্যাসের নিয়ন্ত্র নিয়ে।আমেরিকার কাছে সালেহ না হাদি হল সেকেন্ডারি অগ্রাধীকার।তাদের মাথা ব্যাথা হল যেহেতু হুতিদের পিছনে ইরানের সমর্থন আছে তাই যদি হুতিরা ইয়েমেনের নিয়ন্ত্রণ হাতে পাই তাহলে বিশাল এই তেলের রাজ্যে চীন এবং রাশিয়া বাগড়া দিতে পারবে যেটা আমেরিকার জন্য স্ট্রেটিজিক একটা পরাজয়।এখানে রাজনৈতিক পরাজয়টা আমলে নাই নিলাম।ঠিক ইয়েমেন পাশেই জিবুতিতে চীন তার ভুমির বাইরে প্রথম সামরিক ঘাঁটি গড়ল।সেখানে আমেরিকার সামরিক ঘাঁটি আছে সাবেক কলোনি ফ্রান্সের।তাই আমরা যত সহজে ইয়েমেন নিয়ে কথা বলছি বা ইয়েমেন যুদ্ধের শেষ চাইছি তার থেকে এটা এর অনেক গভীরে এবং খুব দ্রুত ইয়েমেন যুদ্ধের শেষ দেখার মত অবস্থা নেই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.