![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুনিয়ার খবর রেখে শান্তি পাই।
কয়েক বছর ধরে, তুরস্ক ও কাতার মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিম সাম্রাজ্যবাদী প্রজেক্টের অগ্রদূত ছিল। সিরিয়াতে তাদের আঙ্গুল পুড়িয়ে দেওয়া হলেও, তারা ওয়াশিংটনের ইরান পরিকল্পনাকে সমর্থন করার জন্য অস্বীকার করছে - এবং এর জন্য মুল্য পরিশোধ করছে।
গত বছরের মে মাসে ট্রাম্পের সৌদি আরব সফর ছিল মধ্যপ্রাচ্যের জন্য খুবই গুরত্বপুর্ন।তার প্রথম বিদেশ সফরে দুই প্রধান কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল: প্রথমত, ১১০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তি এবং দ্বিতীয়ত, কাতারের আঞ্চলিক অবরোধে এর উদ্বোধন। ট্রাম্পের এই সফরের সময় তিনি সৌদি আরবকে কাতারের উপর অবরোধের অনুমোদন দিয়েছিলেন।সৌদি নেতৃত্বাধীন অবরোধের কারনে কাতারকে চরম অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়।কাতারের উপর সৌদি এক্সিসের অবরোধ সমর্থন না করার কারনে রেক্স টিলারসনকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ হারাতে হয়। ঠিক এই সময় এগিয়ে আসে তুর্কি এবং ইরান।বলা যায় তুর্কি এবং ইরানের সাথে বানিজ্যের কারনে কাতার এই যাত্রায় বেঁচে যায়।এমনকি কাতার এয়ারলাইন্সের জন্য সৌদি-আমিরাত-বাহরাইন-মিশর তাদের আকাশপথ বন্ধ করে দেওয়ার পর বিকল্প হিসেবে ইরান তাদের আকাশপথ কাতারের জন্য ফ্রি করে দেয়। যেটা অবরোধকারী দেশ এবং তাদের আমেরিকা-ইজরায়েলের জন্য বিধ্বংসী বলা যায়।
চলতি মাসে তুর্কি অর্থনীতিতে আমেরিকা-সৌদি-ইজরায়েল এক্সিসের আক্রমণ তাদের জন্য আরো বিধ্বংসী ফলাফল বয়ে এনেছে। গত ১০ ই আগস্ট ট্রাম্প ঘোষণা দেন যে তুর্কি থেকে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের আমদানি শুল্ক দিগুন করা হয়েছে। এর আগেই তুর্কি অর্থনীতিতে সংকটের শুরু।ট্রাম্প এই ঘোষণার মাধ্যমে তুর্কি মুদ্রা লিরার পতনকে ত্বরান্বিত করে।ট্রাম্পের ঘোষণার সাথে সাথেই লিরা তার ১৬% মুল্য হারায়।তার দুইদিন পর ডলারের বিপরীতে লিরার মুল্য দাঁড়ায় ৭.২,যেটা ট্রাম্পের ঘোষণার আগে ৬ এর নিচে ছিল।ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত ফেডারেল রিজার্ভের জন্য সাপে বর হয়ে আসে।ফেডারেল রিজার্ভ হুমকি দিয়ে রেখেছিল এই অঞ্চলে ঋনের ভারে জর্জরিত অর্থনীতিগুলুকে শায়েস্তা করার।
কোরীয় যুদ্ধের পর ১৯৫২ সালে তুর্কি ন্যাটো মেম্বার হয়।উল্লেখ্য কোরীয় যুদ্ধের সময় তুর্কি আমেরিকার পক্ষ্য নেয় এবং যুদ্ধে সেনাও প্রেরন করে,এবং ১৯৫৪ সালে ইঙ্কিরলিকে ন্যাটোর ঘাঁটি স্থাপনের অনুমতি দেয়। যেখানে সাধারন থেকে শুরু করে পরমানু ক্ষেপনাস্রের মজুদ গড়ে তোলা হয়।এই অঞ্চলে মার্কিন অভিযানের জন্য এটি অপরিহার্য এবং এই ঘাঁটিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু স্থাপনা কিউবা ক্ষেপণাস্ত্র সংকট সৃষ্টি করে।১৯৯১ সালে ইরাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র- এবং যুক্তরাজ্যের বোমাবর্ষণে ইঙ্কিরলিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ইরাক ও আফগানিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জন্য লঞ্চপ্যাড ছিল ছিল তুর্কির এই ঘাঁটি।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার শাসিত হচ্ছে আল থানি পরিবার দ্বারা।উনিশ শতকে এই থানি পরিবার ছিল এই অঞ্চলে ব্রিটিশ প্রক্সি।১৯৭১ সালে কাতারকে স্বাধীনতা দেওয়ার পরেও দেশটি গভিরভাবে পশ্চিমা বৈদেশিক নীতিতে আবদ্ধ হয়ে পড়ে।স্বাধীনতার পর কাতারের সব শাসক যুক্তরাজ্যের স্যান্ডহার্স্ট সামরিক একাডেমীর শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন না আছেন।এই কাতারেও তুর্কির মত আমেরিকার সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি অবস্থিত।২০১১ সালে ন্যাটো জোটের লিবিয়া ধংসাভিযানে গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা পালন করে এই কাতার।একদিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন আল জাজিরার প্রোপাগান্ডা,অন্যদিকে লিবিয়াতে বিমান হামলা,সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণ,অস্র সরবরাহ,এবং সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষনে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের ফান্ড।অবশ্য তার এই কর্মে সেই সময় পাশে ছিল সৌদি-ইজরায়েলি জোট।
তারপর ২০১১ সালের মাঝামাঝি সময়ে,উভয় দেশ নিজেদেরকে সিরিয়ার সরকারের পতন ঘটানোর যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলেন।সেই সময় তুর্কির সাথে তার দক্ষিনের প্রতিবেশীদের সাথে খুব উষ্ণ সম্পর্ক ছিল।সিরিয়া ধংসের জন্য এই তুর্কির সাহায্য ছিল আমেরিকা-ইজরায়েল-সৌদি জোটের জন্য অপরিহার্য।এটার কারন এই নয় যে তুর্কিকে তারা এলাই মনে করেছিল।এটার কারন ছিল তুর্কির সাথে সিরিয়ার ৮০০ কিমি সীমানা।যেখান দিয়ে সিরিয়াতে প্রবেশ করানো হয় সন্ত্রাসীদের।তুর্কি এবং কাতার আসাদকে ক্ষমতা থেকে সরানো মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে চেয়েছিলেন।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের মতে সিরিয়া যুদ্ধের তিন বছরের মধ্যে তুর্কি খরচ করেছিল ৩ বিলিয়ন ডলারের উপর।এটা হচ্ছে আনুমানিক।যদিও আসল অংকটা আরো অনেক বড়।২০১৩ সালে নিউজউইকের এক বিস্তারিত প্রতিবেদনে বলা হয়,সিরিয়া যুদ্ধের কারনে তুর্কিকে সামরিক ব্যয় বাড়াতে হয়েছে ২৫%।যেখানে ২০১০ সালে সামরিক ব্যয় ছিল ১৭ বিলিয়ন ডলার,২০১৪ সালে সেটা দাঁড়ায় ২৬.৬ বিলিয়ন ডলারে।এছাড়াও সিরিয়ান রিফিউজিদের প্রথম গন্তব্য ছিল তুর্কি।রিফিউজিদের জন্য ২০১৫ সাল অবধি তুর্কিকে খরচ করতে হয়েছে ৮ বিলিয়ন ডলার।এরদোগানের একদিকে আভ্যন্তরীণ উন্নয়ন,এবং সিরিয়া যুদ্ধে জড়ানোর কারনে তুর্কির অর্থনীতির চলতি হিসেবে চরম ঘাটতি দেখা দেয়।সেটা আরো ব্যাপক আকার ধারন করে রাশিয়ার যুদ্ধ বিমান ভুপাতিত করার মাধ্যমে।
রাশিয়ার সাথে খারাপ সম্পর্কের কারনে তুর্কির অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে প্রতি বছর প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার করে।সিরিয়া যুদ্ধের কারনে সিরিয়াতে রপ্তানি বানিজ্যের প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার বন্ধ ২০১১ সাল থেকে।এসব কারনে তুর্কিতে সৃষ্টি হয় বিশাল এক কালোবাজারের।যেটাকে নিয়ন্ত্রন করতে এরদোগান সরকার ব্যার্থ হয়েছেন।এই কালোবাজারকে নিয়ন্ত্রন করতে গিয়ে ২০১৫ সালে এক নতুন আইনের মাধ্যমে ক্যাশ ফ্লোর জন্য তুর্কি বর্ডার উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।যে ভুলের খেসারত তাকে এখন দিতে হচ্ছে। এরদোগানের এন্টি আসাদ পলিসির কারনে তার রিফিউজি খরচ,সামরিক ব্যয়,সীমান্ত নিরাপত্তার ব্যয় তাকে অর্থনীতিতে সামগ্রিকভাবে একটা নেতিবাচক অবস্থায় দাঁড় করিয়েছে।
সমষ্টিগতভাবে,আসাদ-কেন্দ্রিক নীতির দিকে অগ্রসর হওয়ার কারণে অর্থনীতিতে আরোপিত খরচের সংখ্যা বাড়িয়েছে এটা উদ্বাস্তু খরচ, সামরিক ব্যয়, সীমান্ত নিরাপত্তা খরচ এবং অর্থনীতিতে তরলতা প্রবাহের গুণমানের পরিবর্তনের সাথে সরাসরি পরিলক্ষিত হতে পারে।
কাতারে সিরিয়া যুদ্ধের প্রভাব তুর্কির সমান নয়।২০১৩ সালে ফিনান্সিয়াল টাইমসের ভাষ্য অনুযায়ী ২০১১-২০১৩ সালের মধ্যে কাতার সিরিয়া যুদ্ধের পিছনে খরচ করেছিল ৩ বিলিয়ন ডলার।কাতার ছিল সিরিয়ান সন্ত্রাসীদের সবচেয়ে বড় অস্র সরবরাহকারী।২০১১-২০১৩ সালের মধ্যেই ৭০টি কার্গো ফ্লাইটে তুর্কি হয়ে এসব অস্র সরবরাহ করা হয়েছে।অর্থাৎ কাতারের অর্থ এবং তুর্কির লজিস্টিক সাপোর্ট দুইটা মিলে ধংস করা হয়েছে সিরিয়াকে।২০১৫ সালে তুর্কি রাশিয়ার সামরিক বিমান ভুপাতিত করার পর পশ্চিমের সাহায্য চেয়েছিলেন।চেয়েছিলেন সিরিয়াতে লিবিয়ার মত নোফ্লাই জোন প্রতিষ্ঠা করতে।সেই সাথে গ্রাউন্ড ট্রুপ্স এবং অর্থ সাহায্যের দাবিও করেছিলেন।কিন্তু পশ্চিম তার কোনটা করতেই রাজি হয়নি।তখনি এরদোগান বুঝে যান,সিরিয়াতে আসাদ ক্ষমতায় থাকছেন।আর তাই আসাদের সাথেই তাকে কাজ করতে হবে।আর আসাদের সাথে কাজ করা মানে রাশিয়ার সাথে কাজ করা।আর সেই থেকেই আস্তে আস্তে তার পররাষ্ট্রনীতির পরিবর্তন।এরই মধ্যে কাতার আসাদের সাথে যোগাযোগ পুনস্থাপন করেছে।
আর তাই এবার যখন ট্রাম্প তার ইরান পলিসি নিয়ে যখন হাজির হলেন তখন তুর্কি বা কাতার কারো কাছ থেকেই তিনি পজিটিভ কোন রেসপন্স পেলেন না।এই যাত্রায় ইরান আবার তুর্কি এবং কাতারের খুবই গুরুত্বপুর্ন বানিজ্যিক অংশীদার।
কাতার সাথে এখন ইরানের বানিজ্যিক সম্পর্ক অনেক গভীরে।দুই দেশই দুনিয়ার সর্ববৃহৎ গ্যাস কুপ সাউথ পার্সের মালিক।ইরান হচ্ছে ইস্টার্ন এনার্জি মার্কেটে কাতারের প্রবেশ পথ আবার ইরান হল তুর্কির তেল এবং গ্যাস চাহিদার মুল যোগানদাতা।তাই তারা যে ভুল সিরিয়ার ক্ষেত্রে করেছে সেই ভুল ইরানের ক্ষেত্রে করবে বলে মনে হয় না।
©somewhere in net ltd.