নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং এবাউট ওয়ার্ল্ড পলিটিক্স্,স্পেশালি মিনা রিজিয়ন। মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার কিছুই বিশ্বাস করি না।

মোহাম্মদ মোস্তফা রিপন

দুনিয়ার খবর রেখে শান্তি পাই।

মোহাম্মদ মোস্তফা রিপন › বিস্তারিত পোস্টঃ

সৌদি-ইজরায়েল জোটের পরবর্তী টার্গেটঃ লেবানন।

২২ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৩৪

সৌদি-ইজরায়েল জোটের পরবর্তী টার্গেটঃ লেবানন।
সিরিয়া যুদ্ধের সমাপ্তান্তে মধ্যপ্রাচ্যে বড় পাঁচটা ঘটনার জন্ম হয়েছে।
১)কাতারের উপর সৌদি জোটের অবরোধ।
২) ইরাক থেকে আইএস বিতাড়িত।
৩)স্বাধীনতার জন্য কুর্দিদের গণভোট।
৪)লেবাননে সুন্নি প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরীর পদত্যাগ।
৫)ফিলিস্তিনে হামাস-ফাতাহ চুক্তি।
মুলত সিরিয়া সংকটের উদ্ধেশ্য ছিল চারটাঃ ১)ইউরোপে কাতারের জ্বালানি সরবরাহের মাধ্যমে রাশিয়ার উপর(জ্বালানীর জন্য)ইউরোপের নির্ভরশীলতা কমিয়ে রাশিয়াকে কোণঠাসা করা। ২)মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র পরিবর্তনের মাধ্যমে ইজরায়েল রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ৩)আমেরিকান-ইজরায়েল-সৌদি বিরুধি আসাদকে ক্ষমতা থেকে সরানো। ৪)ইরানের আধিপত্য খর্ব করার মাধ্যমে ইরানকে এক ঘরে করা।
সবকিছুই সৌদি-আমেরিকা-ইজরায়েল জোটের পরিকল্পনা মাফিক চললেও সিরিয়াতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় রাশিয়া-ইরান-হিজবুল্লাহ জোট।খেলার শেষে দেখা যাচ্ছে সর্বশেষ জোটই সিরিয়া যুদ্ধের বিজয়ী।অর্থাৎ সিরিয়া যুদ্ধের সবচেয়ে বড় বেনিফিসিয়ারি হল ইরান।যুদ্ধের উদ্ধেশ্য ছিল ইরানকে দমানো কিন্তু ইরান এখন মধ্যপ্রাচ্যের পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত।ঐ দিকে যে পরিকল্পনা নিয়ে আমেরিকা ইরাক যুদ্ধের সুচনা করেছিল সে পরিকল্পনায় কিছুটা সফল হলেও আখেরে লাভবান হল ইরান।অর্থাৎ ইরান, সিরিয়া লেবানন এবং ইয়েমেন নিয়ে বিশাল এক ভূখণ্ডে পেয়েছে তার সমর্থিত সরকার। যে কারনে সৌদিরা ধংস করে দিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে গরিব রাষ্ট্র ইয়েমেনকে।অন্যদিকে ইজরায়েলের-সৌদি জোটের জন্য সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ নিরাপত্তা সংকট।আপাতত ইরাক এবং সিরিয়া এই জোটের হাতের বাইরে।তাহলে কি হাত গুঁটিয়ে বসে থাকবে।উত্তর হল ‘’না’’।ইজরায়েল-সৌদি জোটের নিরাপত্তার জন্য মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ অবশ্যই দরকার।সেটা তারা শুরু করেছে ইয়েমেন,আর এখন শুরু করার চেষ্টা করছে লেবাননে।সিআইএ – মোসাদের পরকল্পিত আরব বসন্তের সুবাদে ইয়েমেনে সালেহ সরকারের পতন হলেও সৌদিরা ক্ষমতায় বসায় সালেহের ভাইস প্রেসিডেন্ট হাদি মনসুরকে।সালেহ শিয়া মতাবলাম্বি হলেও সে ছিল সৌদির বিশ্বস্ত অনুসারি।হাদি মনসুরকে সংবিধান প্রনয়ন এবং নির্বাচনের জন্য দুই বছর সময় দেওয়া হলেও সৌদিরা তার ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার চেষ্টা করে।আর এতেই ইয়েমেনের বিশাল জনগোষ্ঠী হুতিরা বিদ্রোহ করে।তাঁদেরকে সমর্থন দেয় ইরান আর অপরপক্ষে ইজরায়েল-আমেরিকা-সৌদি জোট সমর্থন দেয় হাদিকে।বস্তুত পক্ষে ভৌগলিক কারনে সরাসরি ইরানের পক্ষে হুতিদের সমর্থন(অস্র)দেওয়া সম্ভব নয়।কারন ইয়েমেনের সাথে সীমান্ত হল সৌদিদের।ইরানকে ইয়েমেনে পৌঁছাতে হলে পার্সিয়ান সাগর,আরব সাগর এবং গালফ অব এডেন পাড়ি দিয়ে আসতে হয়।তাহলে ইরানের জন্য পথ খোলা থাকে সোমালিয়া এবং জিবুতি হয়ে চোরাচালানের মাধ্যমে অস্র সরবরাহ।ইরান যদি সরাসরি অস্র সরবরাহ করতে পারত তাহলে সম্ভবত ইয়েমেনে সৌদিরা এত দীর্ঘ সময় টিকে থাকতে পারত না।বিশ্লেষকদের মতে সম্প্রতি জিবুতিতে চীনের সামরিক ঘাঁটিকে ইরান,ইয়েমেনের জন্য ব্যাবহার করার চেষ্টা করতে পারে।তবে পর্দার অন্তরালে রাশিয়ার আলোচনার চেষ্টা সফল হলে সিরিয়ার মত ইয়েমেন সমস্যার সমাধান আশা করা যায়।যার কারনে রাশিয়া,সৌদির কাছে তার গর্বের অস্র এস-৪০০ বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে।অবশ্য এটার আরেকটা উদ্ধেশ্য হল ইয়েমেনে রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটি।আর সেটা হলেও এখানে বেনিফিসিয়ারি কিন্তু ইরান।
আর সর্বশেষ উত্তপ্ত পরিস্থিতি হল লেবানন।
লেবানন হল মুসলিম খ্রিষ্টান এবং অন্য ধর্মাবলম্বী মানুষের অংশ গ্রহনে পরিচালিত একটি মডেল রাষ্ট্র।যেখানে নির্বাচনে কে বিজয়ী হল সেটা বড় বিষয় নয়,রাষ্ট্র পরিচালনায় সবার অংশ গ্রহন এখানে সমান।দীর্ঘ যুদ্ধের মধ্য দিয়ে চলে আসা লেবানন এতদিন মোটামুটি শান্তই ছিল।কিন্তু সিরিয়া যুদ্ধের পরিসমাপ্তির কারনে সৌদি-ইজরায়েলী জোট তাদের নতুন প্রজেক্ট হিসেবে হাতে নিয়েছে লেবাননকে।ইজরায়েল ১৯৮২ সালে লেবানন দখল করে নিলে ইরানের সহয়ায়তায় সেখানে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য গড়ে উঠে হিজবুল্লাহ ফোর্স।ইরানের সাহায্য সহযোগিতায় হিজবুল্লাহ এখন লেবাননের সরকার অংশিদার এবং ইজরায়েলের অন্যতম প্রধান শত্রু।২০০৬ সালে লেবানন আক্রমন করতে এসে তারা এই হিজবুল্লাহর কাছে হেরে যায়।সৌদি-ইজরায়েলী জোটের সিরিয়া ধ্বংসের একটা এজেন্ডা ছিল তারা যদি সিরিয়ার নিয়ন্ত্রন নিতে পারে তাহলে ইরানের পক্ষে লেবাননে হিজবুল্লহকে সাহায্য দেওয়া অসম্ভব হয়ে যাবে।কারন লেবাননের সাথে সীমান্ত হল সিরিয়া,জর্ডান এবং ইজরায়েলের।কিন্তু বিধি বাম।যেহেতু সিরিয়া তাদের হাত ফসকে বেড়িয়ে গেছে তাই এখন তাদের সরাসরি টার্গেট হল লেবানন।অর্থাৎ হিজবুল্লাহ।সৌদির দাবী অনুযায়ী লেবানন তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।কিন্তু মানচিত্রে চোখ রাখলে তাদের দাবী হাস্যকর মনে হয় কারন সৌদির সাথে যুদ্ধ করতে হলে তাঁদেরকে জর্ডান অথবা ইজরায়েল পাড়ি দিয়ে আসতে হবে।এটাকে পাগলের প্রলাপ বলেই মনে হচ্ছে।এছাড়া লেবাননের হাতে এমন কোন ক্ষেপনাস্র নেই যেটা দিয়ে তারা প্রায় ১৮০০ কিলোমিটার দূরে সৌদিকে আক্রমন করতে পারবে।তাদের দাবির মুল উদ্ধেশ্য হল তারা লেবাননে আরেকটা গৃহ যুদ্ধ বাঁধাতে চায় যার ফলে তারা লেবাননের সংবিধান নতুন করে লিখতে পারে।অপরদিকে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে হিজবুল্লাহর আরেক বন্ধু হল ফিলিস্তিনের হামাস।২০০৬ সালে হামাস গাজার নির্বাচনে জয়লাভের পর থেকে ইজরায়েল গাজাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে।তারপর থেকে ইজরায়েলী-সৌদি পাপেট আবু মাজেন(মাহমুদ আব্বাস)ফিলিস্তিনে কোন নির্বাচন দেননি।হিলারির পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালিন উইকিলিক্সের ফাঁসকৃত ইমেইল থেকে জানা যায় হিলারি মাহমুদ আব্বাসকে বলেছিল জতদিন হামাস বিজয়ী হবার সম্ভাবনা থাকবে ততদিন ফিলিস্তিনে কোন নির্বাচন দেওয়া যাবে না।আর আবু মাজেন কোন নির্বাচন হতেও দেননি।সম্প্রতি আবু মাজেন চরম অমানবিকভাবে গাজার কর্মচারীদের বেতন এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এর সব কিছুই ইজরায়েল এবং সৌদি বুঝাপড়ার আলোকে।শেষ পর্যন্ত হামাস,আবু মাজেনের দল ফাতাহর সাথে সমযোতা করে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।কিন্তু আবু মাজেন এখন দাবী করছেন শুধু ক্ষমতা ছেড়ে দিলে হবে না,হামাস অবশ্যই ইজরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে হবে।সবকিছু এখানেই থেমে নেই,তারা এখন দাবী করছে হামাসকে অস্র সমর্পণ করতে হবে।আবু মাজেনের এই দাবির পর পরই সৌদি আবু মাজেনকে ডেকে পাঠান।উল্লখ্য সৌদি জোট কাতারের উপর অবরোধ আরোপের যত দাবী উত্থাপন করেছিল তার মধ্যে একটি ছিল হামাসের নেতাদের কাতার থেকে বের করে দেওয়া।এসব বিচারে কি মনে হয় সৌদির রাজপ্রাদের কোন মুসলমানের অস্তিত্ব আছে?
সর্বশেষ খবর হল সৌদি,ইয়েমেনি প্রেসিডেন্ট হাদির মত করে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরিকেও গৃহবন্ধী করে রেখেছে।শুধু তাকেই গৃহ বন্ধী করেনি তার পরিবার এবং সন্তানদের জিন্মি করে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করেছে।কিন্তু আশারবানি হল সাদ হারিরির দল ফিউচার মুভমেন্ট সাদ হারিরির মুক্তি দাবী করেছে এবং সে ফেরত না আসা পর্যন্ত তার পদত্যাগ কার্যকর হবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যেটা খ্রিষ্টান প্রেসিডেন্ট মাইকেল আউন এবং স্পীকার(শিয়া) এর মন্তব্যের সম্পুরক।এখন দেখার বিষয় ফিউচার মুভমেন্ট তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারে কিনা।তারা যদি তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারে তাহলে লেবাননে সৌদি জোট আরেকটা চড় খাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.