![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুনিয়ার খবর রেখে শান্তি পাই।
রোহিঙ্গাদের ঐতিহাসিক অবস্থান
আরাকান হচ্ছে বার্মার একটা রাজ্য যেখানে মুলত মুসলমানদের বাস।যেটা এখন রাখাইন রাজ্য নামে পরিচিত। ১৯৭৪ সালে বর্মী সরকার আরাকান নাম পরিবর্তন করে রাখাইন রাজ্য নামকরণ করে। বিশিষ্ট ঐতিহাসিক ড. আবদলু করিম তাঁর ‘রোহিঙ্গাদের হাজার বছরের ইতিহাস’ নামক প্রবন্ধে লিখেছেন, “আরাকানের লোকসংখ্যা আনমুানিক ৪০ লক্ষ। তন্মধ্যে বৌদ্ধ ২০ লাখ, মসুলমান ১০ লাখ, জড়বাদী ৮ লাখ, হিন্দু ও খ্রিস্টান ২ লাখ। বৌদ্ধরা আরাকানে মগ নামে পরিচিত এবং মুসলমানরা রোহিঙ্গা নামে পরিচিত।” ২২-০৬-১২ তারিখে জাতিসংঘ প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী আরাকানে বর্তমানে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা আট লাখ। মসুলমানদেরকে হত্যা ও বহিষ্কার করে এবং বার্মার বৌদ্ধদেরকে পুনর্বাসন করে বার্মা সরকার আরাকানের মুসলমানদের অবস্থান প্রান্তিক পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে।খ্রিস্টপর্বূ ২৬৬৬ সাল থেকে ১৪০৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আরাকান মোটামুটি স্বাধীন রাষ্ট্র ছিল বলে ঐতিহাসিকগণ উল্লেখ করেছেন।১ বেশিরভাগ সময়ে আরাকান উত্তর ও দক্ষিণে ২টি রাজ্যে বিভক্ত ছিল। খ্রিস্টপর্বূ ২২০০ থেকে ২০০০ খ্রিস্টপর্বূ শতাব্দীতে উত্তর বিহারের মগধ থেকে আগত অনেক হিন্দু-বৌদ্ধ ও জৈন বঙ্গে, আরাকানে ও বার্মায় ধর্মপ্রচার ও উপনিবেশ স্থাপন করতে আসে। তখন থেকে আরাকান ও বার্মার শাসকগণ নিজেদেরকে মগধ রাজবংশীয় হিসেবে পরিচিত করার জন্য মহৎচন্দ্র, সুলতচন্দ্র, নরপতিগী, চন্দ্রসুধর্মা, শ্রীসুধর্মা খেতাব গ্রহণ করতো এবং রাজধানীর নাম ভারতীয় নামে বৈসালী, ধন্যাবতী, চম্পাবতী রেখেছিল।২ অপর ঐতিহাসিক তথ্য হলো- সম্রাট অশোকের মগধ বিজয়কালীন মগধ থেকে বিতাড়িত হয়ে যারা আরাকানে আশ্রয় গ্রহণ করেন তারাই আরাকানের মলূ মগ জনগোষ্ঠী। খ্রিস্টীয় ২য় শতাব্দী থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত চন্দ্র-সর্যূ ও কোলসিংহ চন্দ্রবংশ আরাকান শাসন করেছে।
দশম শতাব্দীতে সান উপজাতি কিছুদিনের জন্য আরাকান দখল করেছিল। দ্বাদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বার্মার প্যাগান বংশ (1044- 1287) উত্তর আরাকানকে সাময়িকভাবে সামন্তরাজ্যে পরিণত করেছিল। (G.E Harvey, History of Barma, P.138)১৫৫৪ সালে দিল্লীর সম্রাট শের শাহের জ্ঞাতি শামসদ্দুীন মোহাম্মদ শাহ গাজী সমগ্র চট্টগ্রাম ও উত্তর আরাকান জয় করেন। ১৫৮০ সালে সমগ্র চট্টগ্রাম আরাকানের অধীনে যায় এবং মোগল বিজয় পর্যন্ত (২৭-০১-১৬৬৬ইং) চট্টগ্রাম আরাকানের অধীনে ছিল। ১৭৮৫ সালে বার্মার রাজা বোধপায়া আরাকান দখল করে অবর্ণনীয় জলুমু শুরু করেন। তাঁর অত্যাচারে আরাকানের মগ ও রাখাইনরা পালিয়ে বাংলাদেশে এসে স্থায়ীভাবে থেকে যায়। কক্সবাজার ও বাকেরগঞ্জের রাখাইন সম্প্রদায় এবং বান্দবানের মারমা (মগ) সম্প্রদায় উক্ত সময়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
১৪০৬ সাল থেকে ১৪৩০-এর মধ্যে আরাকানের অনেক মগ বা রাখাইন বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় এবং ১৬৬৬ সাল থেকে ১৭৮৫ সালের মধ্যে আরাকানের করদরাজ্য ‘চকোমা’ (বর্তমান মিজোরাম) থেকে বর্তমান চাকমা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে এসে বসতি স্থাপন করে। মোগল প্রশাসকদের বদান্যতায় চাকমারা দলে দলে পার্বত্য চট্টগ্রামে এসে বসতি স্থাপন করে। ১৭৮৫ সাল থেকে ১৮২৫ সাল পর্যন্ত আরাকানে বার্মার শাসন, ১৮২৬ সাল থেকে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ শাসন, ১৯৪২ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জাপানি শাসন এবং পনুরায় ১৯৪৫ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ শাসন এবং ১৯৪৮ সাল থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত বর্মী শাসনের কাল।আরাকানের প্রাচীন জনগোষ্ঠী The southern মঙ্গোল বা দক্ষিণী মোঙ্গল শ্রেণীর। তিব্বতের মালভূমিতে এদের উদ্ভব ও বিকাশ। আরাকানের মধ্যবর্তী জনগোষ্ঠী হলো- বিহারের মগধ এলাকার বৌদ্ধ, হিন্দু ও জৈন আগন্তুকগণ। এদের কেউ কেউ মঙ্গোলয়েড এবং কেউ কেউ আলপাইন শাখার মানষু। খ্রিস্টীয় অষ্টম শতক থেকে আরাকানে ব্যবসা- বাণিজ্য উপলক্ষে বিপলুসংখ্যক আরবী, ইরানী, তর্কুী, ভারতীয় ও বাংলাদেশী বসতি স্থাপন করেছে। এদের বেশিরভাগ ককেসয়েড মানবধারার আলপাইন শাখার মানুষ। বর্তমানে আরাকানের জনগোষ্ঠী প্রধানত ২ ভাগে বিভক্ত। প্রথমোক্তরা হলো রাখাইন বা মগ দ্বিতীয়াক্তরা হলো রোহিঙ্গা বা মসুলমান। আরবীয়, ইরানী, ভারতীয় ও বাংলাদেশী মানুষের সাথে স্থানীয় মগদের মিশ্রণে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উদ্ভব হয়েছে। রাখাইনদের ভাষা চীন-তিব্বতি ভাষা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত, রোহিঙ্গাদের ভাষা আরবী- ফার্সী, উর্দু ও বাংলা ভাষার মিশ্রণে গঠিত হয়েছে। অধিকাংশ রাখাইনের ধর্ম হলো থেরবাদী বৌদ্ধধর্ম। এই ধর্ম হীনযানী বৌদ্ধ ধর্মের একটি শাখা। হীনযানী বৌদ্ধ ধর্মের গ্রন্থসমূহ পালিভাষায় লিখিত। ইসলামধর্ম যেরূপ আরাকানে বহিরাগত ঠিক তদ্রুপ বৌদ্ধ, হিন্দু ও খ্রিস্টানধর্ম বহিরাগত।(সূত্র- সিদ্দিক খান, Muslim Inter-cource in Burma. P.417)
রাশিয়ান ব্যবসায়ী আথানাসিয়াস নিচি যিনি ১৪৭০ সালে এশিয়া ভ্রমণ করেন। তিনি পেগু বন্দরটিকে “ভারতীয় দরবেশদের একটি উপনিবেশ” বলে বর্ণনা করেছেন। [সূত্র- কোর্টিনে লক সম্পাদিত The first Englishman in India (London,Jorge Rutlage 1903) P. 121]
১৫১৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারত ভ্রমণরত পর্তুগীজ পরিব্রাজত দূয়ার্তে বারবারোসা উল্লেখ করেছেন- “পেগুতে অনেক মসুলমান বাস করে। মরুীয় (মুসলমান) বাণিজ্য জাহাজগুলো পেগু থেকে চিনি, রন্ত্যক দ্রব্যাদি ও পদ্মরাগমনি রপ্তানি করে এবং কার্পাস, রেশম, আফিম, তামা, রূপা, ঔষধী ভেষজদ্রব্য ইত্যাদি আমদানি করে। পেগুর অধীনস্থ মার্তাবান এমন একটি শহর যেখানে মসুলমানরা বাস করে। (সূত্র- J.S. Farnival,Europians in Burma: The Early Porfuguse থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছেন ইসরাইলী গবেষক ও কূটনীতিক মোসে ইগার)।
সপ্তদশ শতাব্দীতে শ্যামরাজ্য শাসিত মারগুই ছিল মসুলমানদের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র। ১৬৭৮ খ্রিস্টাব্দে মারগুই এ অবস্থানেরও জনৈক ব্রিটিশ বণিক বলেন, “মুসলমানরা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতো। গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদগুলোই মসুলমানদের দখলে ছিল। মারগুই-এর গভর্নর, টেনাসসেরিম প্রদেশের ভাইসরয় এবং টেনাসসেরিম থেকে অযোধ্যা পর্যন্ত বিস্তৃত স্থলপথের উপর অবস্থিত প্রধান শহরগুলোর গভর্নরেরা ছিল ভারতীয় এবং পারস্য দেশীয় মসুলমান। ....সপ্তদশ শতাব্দীর শেষেরদিকে ব্রিটিশ এবং ফরাসীরা এতদাঞ্চলে প্রভাবশালী হলে অধিকাংশ মসুলমানকে পদচ্যুত করা হয় এবং অনেককে হত্যা করা হয়। [সূত্র-Moris Colis, Siamse white(London Favaur & Favour-1936)P-36-39]।
আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রচলন, বহির্বাণিজ্য, নৌবাহিনী গঠন, অশ্বারোহী বাহিনী গঠন, যুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার, আধুনিক মুদ্রাব্যবস্থাসহ সকল ক্ষেত্রে মসুলমানরাই বার্মা ও আরাকানকে প্রাচীন যুগ থেকে আধুনিক যুগে পদার্পণে প্রধান ভূমিকা পালন করে। এজন্য হাজার বছর ধরে মুসলমানদের সাথে আরাকানী ও বর্মীদের সৌহার্দ্যপর্ণূ সম্পর্ক ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তার বন্ধন অব্যাহত ছিল। সপ্তদশ শতাব্দী থেকে বার্মায় ইউরোপীয়দের আগমন এবং পরবর্তীতে ইউরোপে বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের পর থেকে ইউরোপীয়রা মসুলমানদেরকে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ও শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে। এ পর্যায়ে ব্রিটিশ ষড়যন্ত্র ও Devide Rule পরিস্থিতির শিকার হয়ে মসুলমানরা অত্যাচার ও নিগ্রহের শিকারে পরিণত হয়। এতদসংক্রান্ত কয়েকটি ঐতিহাসিক তথ্য নিম্নরূপ-
আরাকান রাজারা ছিলেন বৌদ্ধ। তাদের মুদ্রায় ৭৯২ মথি (১৪৩০ খ্রি থেকে ১০০০ মথি (১৬৩৮ খ্রি
পর্যন্ত মোট ১৫ জন রাজার বৌদ্ধ নামের সঙ্গে মসুলমান নাম পাওয়া যায়। (সূত্র- M. Robinson & L.A. Shaw: The coins of Banknote of Burma,Manchaster,1980.P.44-45)।
১৫০১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৫১৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারত ভ্রমণরত পর্তুগীজ পরিব্রাজক দয়ূার্তে বারবারোসা উল্লেখ করেছেন, “অনেক মসুলমান পেগুতে (বার্মার তৎকালীন রাজধানী) বাস করে। মরুীয় দ্রব্যাদি ও পদ্মরাগমনি রপ্তানি করে এবং কার্পাস, রেশম, আফিম, তামা, রূপা, ঔষুিধ, ভেষজদ্রব্য ইত্যাদি আমদানি করে। পেগুর অধীন ‘মার্তাবান’ শহরে ও অনেক মসুলমান বাস করতো। [সূত্রÑ ঞযব উবষঃর ঝঁষঃধহধঃব (বোম্বাই, ভারতীয় বিদ্যাভবন, ১৯৬০) পৃ.-৬৫১, তৎসূত্র- J.S. Furnival, Eurupians in Barma, The early Portugese)।
পঞ্চদশ ও ষষ্ঠদশ শতাব্দীতে টেনাসসেরিম ও মারগুই বন্দর ইউরোপীয় নাবিকদের নিকট সপুরিচিত ছিল। তারা বর্ণনা করেছেন যে, এগুলো মসুলিমপ্রধান শহর যার সাথে মালাক্কা, বাংলা ও মক্কার বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল। (সূত্র-D.C. Dcot “O” conor Mandalaya and Other cities of past in Barma(London, Hanchinchos, 1407, P.-405)।
ব্রিটিশ দূত মাইকেল সাইমন্স যিনি ১৭৯৫-৯৬ সালে এবং ১৮০২ সালে বার্মার রাজার সাথে আলোচনা করতে আসেন। তিনি তাঁর স্মৃতিগাথায় উল্লেখ করেন যে, “প্রচুরসংখ্যক বিদেশি যাদের মধ্যে মসুলমানদের সংখ্যা ছিল অত্যধিক এবং যারা বার্মায় স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেছিল তাদের সাথে লেনদেনের ব্যাপারে ক্রমবর্ধমান প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ এবং বিদেশীদের সাথে সংযোগ রক্ষা সম্পর্কিত পদগুলোতে এসব সম্প্রদায়ের বাছাইকতৃ লোকদের নিয়োগ করতে সরকার বাধ্য হয়। (সূত্র- M. Siddik Khan,Muslim Intercource with Barma,Islamic culture,P.-261.) তথ্যসূত্র Michel Simons, Second Embassy to Ava-P.198।
অর্থাৎ একথা আমরা নিদ্ধিধায় বলতে পারি বুদ্ধদের মত মুসলমানেরাও বার্মার আদি অধিবাসি কিন্তু এরপরেও তথাকথিত শান্তিবাদী বুদ্ধরা বিদেশী বলে মুসলিমদের উপর যেভাবে নির্যাতন করতেছে সেটা হিটলারের নাৎসি ক্যাম্প থেকে কোন অংশে কম নয়।
©somewhere in net ltd.