নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং এবাউট ওয়ার্ল্ড পলিটিক্স্,স্পেশালি মিনা রিজিয়ন। মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার কিছুই বিশ্বাস করি না।

মোহাম্মদ মোস্তফা রিপন

দুনিয়ার খবর রেখে শান্তি পাই।

মোহাম্মদ মোস্তফা রিপন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বানিজ্য যুদ্ধ- আসল কারন কি?

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৮:০৫

চীন অনেক দিন থেকেই বিশ্ব বানিজ্য সংস্থার সদস্য হবার চেষ্টা করছিলো।অবশেষে ২০০০ সালের বসন্তে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদ চীনের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ককে স্বাভাবিক করার অনুমোদন দিয়েছে।চীনকে বানিজ্য সংস্থায় অন্তর্ভুক্ত করার সমর্থক ছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন।এর মাধ্যমে ওয়াশিংটন কিছু কৌশলগত বিষয় আদায় করতে চেয়েছিল।
ডব্লিউটিও বিশ্ববাণিজ্যের রেগুলেটেড অথরিটি।এর মাধ্যমে বিশ্ববানিজ্যের নীতিমালা ঠিক করা হয়।২০২০ সাল নাগাদ এর সদস্য সংখ্যা ১৬৪।গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সদস্যদের সর্বসম্মত মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তগৃহীত হবে।কিন্তু সব ক্ষেত্রে এর প্রতিফলন দেখা যায় না।যদিও সল্পউন্নত দেশ গুলুর জন্য এটা খুবই উপকারি হিসেবে পরিগনিত হচ্ছে।
চীন ডব্লিউটিওতে যোগ দিতে চেয়েছিল কারণ এটি চীনকে নতুন ব্যবসায়িক অংশীদারদের কাছে প্রবেশের সুযোগ করে দিবে।হয়েছেও তাই।কিন্তু ওয়াশিংটন যে কৌশলগত কারনে চীনকে অন্তর্ভুক্ত করেছিল তার বিন্দুমাত্রও তারা অর্জন করতে পারেনি।ওয়াশিনটনের উদ্ধেশ্য ছিল চীনকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন, উদার-গণতান্ত্রিক রাস্ট্রব্যাবস্থায় নিয়ে এসে তার কমিউনিস্ট মডেল থেকে দূরে রাখা।এর মধ্যে ওয়াশিংটন চীনকে কমিউনিস্ট মডেল থেকে দূরে রাখতে পারলেও চীন সব দিক থেকে এখন ওয়াশিংটনের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে।আর এটাই হল ওয়াশিংটন-বেইজিং বানিজ্য যুদ্ধের মুল কারন।
চীন ডব্লিউটিওতে যোগ দেওয়ার পর অভুতপুর্ব সফলতা দেখিয়েছে।বিশ্ব ব্যাংকের হিসেবে গত ৩০ বছরে চীন ৮৫০ মিলিয়ন মানুষকে দারিদ্রতা থেকে বের করে নিয়ে এসেছে।যেটাকে মানব ইতিহাসের মিরাকল বলা হয়।ডব্লিউটিওতে যোগ দেওয়ার আগে চীনের জিডিপি ছিল প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার(১৯৯৯)।২০১৯ সালে এসে তার জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ১৪.১৪ ট্রিলিয়ন ডলারে(২৭.৩১ ট্রিলিয়ন ডলার,পিপিপি)।দুনিয়ার অর্থনীতিতে চীনের অংশীদারীত্ব ঠেকেছে ১৫.৫%(বিশ্ব ব্যাংকের হিসেবে)।
২০১২ সালে দুনিয়ার গতিপথ চিরদিনের জন্য পরিবর্তন হয়ে যাওয়া শুরু হয় যখন জাতীয়তাবাদী শি জিন পিং চীনের ক্ষমতায় আসেন।তিনি ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড নামের উচ্চাবিলাসি পরিকল্পনা গ্রহনের সাথে সাথে ২০১৫ সালে মেড ইন চায়না-২০২৫ পরিকল্পনা ঘোষণা করেন।এরপর ২০১৬ সালে চরম পপুলিস্ট ট্র্যাম্পের আমেরিকার ক্ষমতারোহনের মধ্য দিয়ে দুনিয়ার গতিপথ চিরতরের জন্য বদলে যায়।চীন তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করে পক্ষান্তরে আমেরিকা হেগিমনিক অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে।আর এতেই শুরু হয় বিশ্বের দুই পরাশক্তির দ্বন্দ্ব এবং বানিজ্যের নামে।
চীন কি বিশ্ববাণিজ্য ব্যাবস্থা ভেঙ্গে দিয়েছে??
এক কথায় উত্তর হল না।কিন্তু আমেরিকার চীনের উত্থান তার হেগিমনিক অস্তিত্বের জন্য হুমকি যেটা অন্য কোন দেশের সাথে তুলনীয় নয়।
দুই দেশই এক অপরের আমদানি পন্যের উপর বিশাল অংকের শুল্ক আরোপ করেছে।যেটা বিশ্ববানিজ্য ব্যাবস্থার স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।কারন বিশ্ব বানিজ্যের প্রবৃদ্ধি অনেকাংশে এই দুই দেশের উপর নির্ভরশীল। প্রকৃতপক্ষে ওয়াশিংটন এবং বেইজিং বানিজ্য যুদ্ধের সাথে বানিজ্যের তেমন কোন সম্পর্ক নেই।
চীন আমেরিকার বানিজ্য ঘাটতির বিশাল অংশীদার। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন এটা মুল সমস্যা নয়।এটা অনেক বড় সমস্যার লক্ষন মাত্র। অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান মার্টিন ফিল্ডস্টেইন যুক্তি দিয়ে বলেছেন, "সামগ্রিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতার জন্য মুলত দায়ী হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক অবস্থা।তিনি উদাহরণ হিসেবে দেখান যে –মার্কিন অর্থনীতিতে সঞ্চয়ের তুলনায় বিনিয়োগের পরিমান কয়েকগুন বেশি,তার মতে চীনের সাথে বানিজ্য ভারসাম্য দূর করলে সেটা শুধুমাত্র অন্য দেশে স্থানান্তরিত হবে।এর বেশি কিছু নয়। ট্র্যাম্প প্রশাসন অব্যাহতভাবে চীনের পন্যের উপর শুল্ক আরোপ করে যতটা বানিজ্য ঘাটতি সমাধান করতে চাইছেন তার থেকে বেশি চাইছেন চীনের বিনিয়োগ নীতিমালা পরিবর্তনের।বিশেষ করে যৌথ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মার্কিন কোম্পানিগুলুকে প্রযুক্তি হস্তান্তরের বাধ্য করানো।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বিশ্বে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক,আইএমএফ এবং ডব্লিউটিইউ(সবগুলুই মার্কিন নিয়ন্ত্রিত) এর প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যে ব্যাবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে তাতে উন্নত দেশগুলু তাদের দেশের কোম্পানিগুলু যাতে প্রযুক্তি অনুন্নত দেশে ট্রান্সপার করতে পারে সেজন্য প্রণোদনা দিতে বাধ্য।
এটা করা হয়েছিল উন্নত দেশগুলির স্বার্থে।এতে করে অনুন্নত দেশগুলু বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজেরাই টেকসই উন্নয়নের পথে আগাবে।চীন এই ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে।বিশেষ করে ২০০০ সালের শেষের দিকে এসে চীন প্রযুক্তিগত বিষ্যগুলু ভালোভাবে আয়ত্ব করতে পেরেছে।যখন উন্নত দেশগুলু তাদের নিজেদের সৃষ্ট অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবেলা করছিল।এবং চীনের মত একটা দেশ বলা যায়,সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সহযোগিতা করেছিল।কিন্তু যে নৈতিক ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিধান ডব্লিউটিইউতে যুক্ত করা হয়েছিল তার কি প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে গিয়েছে নাকি তারা চীনকে ব্যাতিক্রম হিসেবে চিন্তা করবে?
ট্র্যাম্পের বানিজ্য যুদ্ধ শুরু হয় কিছু বিষয়কে সামনে রেখে।
১) ট্র্যাম্প বিশ্বাস করেন চীনের কারনে আমেরিকা ম্যানুফ্যাকচারিং খাত পুরুপুরি ধংস হয়ে গেছে।
২) চীনের সাথে আমেরিকার বানিজ্য ঘাটতি দিন দিন বেড়েই চলেছে( ৫০০ বিলিয়ন ডলার,২০১৯ সালে)
৩) চীন টেকনোলজি চুরি করছে।
৫) বানিজ্যের/বিনিয়োগের উপর রাস্ট্রীয় নিয়ন্ত্রন।
সর্বোপরি চীন আমেরিকার নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি।কিন্তু ম্যানুফ্যাচারিং সেক্টর ধংসের জন্য যেভাবে চীনকে দায়ী করা হয় আসলেই কি চীন দায়ী??
চীন বিশ্ব বানিজ্য সংস্থার সদস্য হয় ২০০০ সালে।গত চার দশক থেকে আমেরিকার অর্থনীতি একান্তভাবেই সার্ভিস সেক্টরের উপর নির্ভরশীল।আমেরিকা তার কঞ্জিউমার পন্যের জন্য বরাবরই এশিয়ার বিভিন্ন দেশের উপর নির্ভরশীল। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় চীনের অন্তর্ভুক্তির পর আমেরিকার আমদানি পন্যে চীনের অংশগ্রহন বাড়তে থাকে।আমেরিকার জিডিপির ৮০% এর যোগান আসে সার্ভিস সেক্টর থেকে।এই সার্ভিস সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত হল ব্যাংক,ইন্স্যুরেন্স,পাইকারি এবং খুচরা বিক্রয় কেন্দ্র ইত্যাদি।প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা,শ্রমের উচ্চ মুল্যের কারনে আমেরিকাতে কর্মের সংস্থান আস্তে আস্তে কমতে থাকে সেই ১৯৭৮ সাল থেকে। ১৯৯০ সালে এশিয়ার দেশগুলু থেকে আমেরিকার মোট আমদানির পরিমান ছিল চাহিদার ৪৫%।সেখানে চীনের পন্যের পরমিনা ছিল মাত্র ২%।বিশ্ববানিজ্য সংস্থায় অন্তর্ভুক্তির পর ২০০১ সালে আমেরিকার আমদানির পরিমান ছিল ৪০.৬% যেখানে চীনের পরিমান ছিল ১১%।সেটা বাড়তে বাড়তে ২০১৯ সালে এসে ২২% দাঁড়ায়।(চিত্র-১)এখানে উল্লেখ্য যে চীন থেকে আমেরিকার আমদানি পন্যে হাই ভ্যালু পন্যের পরিমান নেই বললেই চলে।এখন প্রশ্ন হল চীনের রপ্তানির পরিমান বেড়ে যাওয়ার কারন কি?
ক)চীনের প্রযুক্তিগত দক্ষতা, খ)সস্তা শ্রম,গ)ধীরে ধীরে চীন এসেম্বলির জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠা ইত্যাদি।চীনের অর্থনীতি যেখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উৎপাদন নির্ভর সেখানে আমেরিকার অর্থনীতি পুরুপুরি সার্ভিস সেক্টর নির্ভর।
১) ট্র্যাম্প বিশ্বাস করেন চীনের কারনে আমেরিকা ম্যানুফ্যাকচারিং খাত পুরুপুরি ধংস হয়ে গেছে।
যে কোন অর্থিনীতি যখন উন্নয়নশীল থেকে উন্নত হয় তখন তার সার্ভিস সেক্টর অবিশ্বাস্যভাবে উন্নতির দিকে যায়।মার্কিন অর্থনীতিবিদেরা হরহামেশায় বলেন যে মার্কিন ম্যানুফ্যাকচারিং খাত ধংসের জন্য চীন দায়ী।বিশেষ করে বিশ্ব বানিজ্য সংস্থায় চীনের অন্তর্ভুক্তির কারনে মার্কিন ম্যানুফ্যাচারিং খাত ধংস হয়ে গেছে।কিন্তু বাস্তবতা তার উল্টো।আমরা যদি মার্কিন অর্থনৈতিক ইতিহাসের দিকে তাকায় তাহলে বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে।১৮৯০ সালে আমেরিকার কৃষি খাতে কর্মসংস্থানের পরিমান ছিল ৩৯%,শিল্পে ২৭% এবং সার্ভিস সেক্ট্ররে ছিল ৩৪%,চীন বিশ্ব বানিজ্য সংস্থায় যোগ দেয়ার ঠিক আগে ১৯৮৯ সালে সেটা দাঁড়ায় যথাক্রমে ৩% ,২ঁ% এবং ৭১%। ২০২০ সালে আমেরিকাতে সার্ভিস সেক্টরে মোট কর্মসংস্থানের পরিমান ৭৯%।তাহলে দেখা যাচ্ছে যে ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরে কর্মসংস্থান নিম্নগতি শুরু হয়েছে অনেক আগেই।চীন বিশ্ববানিজ্য সংস্থায় যোগ দেয় ১৯৯১ সালে।ঠিক তার আগে আমেরিকাতে সার্ভিস সেক্টরে কর্মসংস্থান ছিল ৭১% আর ২০২০ সালে এসে সেটা দাঁড়ায় ৭৯% এ।পার্থাক্য ৮%।এখন প্রশ্ন হল চীন বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় যোগ না দিলেও কি সার্ভিস সেক্টরের কর্মসংস্থান বাড়তো।এক কথায় উত্তর হল হাঁ। ২০১৮ সালের হিসেবে আমেরিকার জিডিপিতে সার্ভিস সেক্টরের ভুমিকা হল ৮০% এবং শিল্পখাতের ভুমিকা হল ১৯%।আমেরিকাতে এই টেন্ড শুরু হয়েছিল ১০০ বছর আগে।আমরা যদি চীনের দিকে নজর দেই তাহলেও একই চিত্র দেখতে পাবো।চীনের জিডিপিতে ধীরে ধীরে ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরের অবদান কমতেছে আর বেড়ে যাচ্ছে সার্ভিস সেক্টরের অবদান।এটা অর্থনীতির একটা সাধারন গতিবিধি। চিত্র-১।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মনে করেন আমেরিকান কোম্পানিগুলুর চীনে,অতিরিক্ত বিনিয়োগের কারনে আমেরিকা জব চীনে চলে যাচ্ছে।ফলশ্রুতিতে দিন দিন মার্কিন-চীন বানিজ্য ঘাটতি বেড়েই চলেছে।কিন্তু বাস্তবতা হল ভিন্ন।এখন থেকে বিশ বছর আগেও চীনে মার্কিন এবং ইউরোপের বিনিয়োগের পরিমান ছিল প্রায় সমান। ২০০০ সালের পর এই ট্রেন্ড ভিন্ন রুপ নেয়।ধীরে ধীরে চীনে মার্কিন বিনিয়োগ কমতে শুরু করে এবং ইউরোপের বিনিয়োগ বাড়তে শুরু করে।সত্য হল চীনে আমেরিকা বিনিয়োগ ১.৫% - ২% এর কাছাকাছি।তাহলে একটা মিথ্যা তথ্যের উপর দাঁড়িয়ে চীনকে শায়েস্তা করার চেষ্টা করা হচ্ছে কেন? চিত্র-৮

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.