![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুনিয়ার খবর রেখে শান্তি পাই।
কাতারের উপর থেকে অবরোধ তুলে নেয়ার পিছনে সালমানের চারটি উদ্ধেশ্য থাকতে পারে।
১) ইজরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকের(পাবলিকলি) ঘোষণা দেয়া।
২)তার পিতাকে ক্ষমতা ত্যাগ করার জন্য প্ররোচিত করা।
৩)যেহেতু বাইডেন প্রশাসন জেসিপিওতে ফিরে যেতে পারে সেহেতু গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের মাধ্যমে এটার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো।
৪)এই অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান তুর্কি প্রভাব কমিয়ে আনা।
কাতারের উপর আরোপিত অবরোধ যে ব্যার্থ সেটা বুঝতে সালমানের সাড়ে তিন বছর সময় লেগেছে।স্বাধীন প্রতিবেশির কণ্ঠ স্তব্দ করার প্রকল্পটি যখন তৎকালীন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ম্যাট ডগ জিম ম্যাটিস এবং অয়েল ম্যান পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের(যার সাথে কাতারের গভীর সম্পর্ক ছিল) গোচরীভূত হয় তখন তারা দুজনেই এর বিরুধিতা করেছিল।এই বিরুধিতার কারনে টিলারসনকে ক্ষমতা হারাতে হয়।অবরোধের পর সময়ের সাথে সাথে কাতারের হাত শক্তিশালী হতে থাকে।তুর্কি,কাতারে তার সামরিক ঘাঁটি গড়ে তোলে।যার কারনে কাতার,সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক আগ্রাসন থেকে রক্ষা পায়।ইরান তার আকাশ পথ কাতারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়।ওয়াশিংটনে সৌদি-আমিরাতি লবিস্ট ইউসুফ আল ওতাইবার (ওয়াশিংটনে আমিরাতি রাষ্ট্রদূত) শক্ত লবিঙয়ের বিপরীতে ঘুরে দাঁড়াতে কাতারের কয়েক মাস সময় লেগেছিল।পিআর ক্যাম্পেইনের জন্য কাতার মিলিয়ন ডলার খরচ করেছিল সেই সাথে লবিঙয়ের খরচ এখনো অজানা।যার ফলে ট্র্যাম্প টুইট করে জানান দিয়েছিল যে,দোহা ওয়াশিংটনের কাছে খুবই গুরুত্বপুর্ন কারন দোহাতে মার্কিন সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাটির(আল উদেইদ) অবস্থান।
সালমান আমেরিকার ক্ষমতার ভারসাম্যের ভুল হিসেবের কারনে ট্র্যাম্পের ক্ষমতাকে ওভার এস্টিমেট করেছিলেন।কিন্তু আমেরিকার রাজনীতিতে সামরিক প্রভাবকে তিনি বেমালুম ভুলে গিয়েছিলেন।যার ফলে সময়ের আবর্তনে কাতারের উপর থেকে অবরোধ তুলে নেয়ার চাপ বাড়তে থাকে।
তথাকথিত লিবারেল জো বাইডেনের বিজয়ের পর সালমানের মনে হল এখনি অবরোধ তুলে নেয়ার উপযুক্ত সময়।অথচ যে ১৩টি দাবি নিয়ে কাতারের উপর অবরোধ আরোপ করা হয়েছিল তার কোনটাই তারা আদায় করতে পারেনি।আল জাজিয়া মিডিয়া বন্ধ হয়নি। কাতারের পররাষ্ট্রনীতির কোন পরিবর্তন হয়নি।ব্রাদারহুড নেতাদের কাতার থেকে বের করে দেয়া হয়নি এবং তাদের সাথে যোগাযোগও বন্ধ হয়নি। ইরান এবং তুর্কির সাথে সম্পর্ক আরো গভীরতর হয়েছে।
স্থানীয়ভাবে কাতারে জাতীয়তাবাদের প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে।সার্বভৌমত্ব রক্ষার কারনে কাতারের আমিরের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কাতার আগের থেকে অনেক বেশি স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে।
কাতারের বিজয়ঃ
এই অবরোধ থেকে যদি কিছু অর্জন হয় সেটা হয়েছে কাতার,তুর্কি এবং ইরানের।তুর্কি এবং ইরানের পররাষ্ট্র এবং স্ট্র্যাটেজিক নীতি আরো শক্ত অবস্থান ধারন করেছে।দুবাইয়ের রাজনীতির অধ্যাপক আব্দুল খালেক আব্দুল্লাহ যিনি অবরোধের কড়া সমর্থক ছিলেন ফাইনান্সিয়াল টাইমসকে বলেন,এই সাড়ে তিন বছর, ‘’জিসিসির ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ সময় এবং অবরোধের জন্য আমাদের চড়া মুল্য দিতে হয়েছে।এটা ছিল একটা পারিবারিক কলহ এবং গত সাড়ে তিন বছর এটা আমাদের সহ্য করতে হয়েছে’’।
তবে এই উপলব্দিটা অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সালমানের একার।কারন আমরা যদি মঙ্গলবারের জিসিসি সামিতের দিকে তাকায় তাহলে দেখবো কাতারি আমির শেষ মুহূর্তে সম্মেলনে যোগ দিলেও আমিরাতি আমির জায়েদ,বাহরাইনি আমির হামাদ এবং মিশরের প্রেসিডেন্ট সিসি সম্মেলনে অনুপস্থিত ছিল।
বাহরাইনের সাথে কাতারের সীমান্ত বিরোধ এখন চরম অবস্থায় রয়েছে।পক্ষান্তরে সিসি এখনো কাতারের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকে গ্রাউন্ড পাচ্ছে না।মাদা মাশ্রের ভাষ্য মতে কাতার এখনো ব্রাদারহুডের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেনি এবং মিশরের স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে এখনো তারা পদ্ধতিগত প্রচারনা চালাচ্ছে।
মিশরের দাবি অনুযায়ী - আল জাজিরাকে বন্ধ করে দেওয়া, তুর্কি সামরিক ঘাঁটি বন্ধ করে দেওয়া, মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং ইরানের সাথে সম্পর্ক হ্রাস করা - এর কোনটিই পূরণ হয়নি।এটি ২০১৩ সালে সামরিক অভভুত্থানের মধ্যে দিয়ে ক্ষমতাসীন করা সিসিকে যেভাবে অর্থনৈতিকভাবে সমর্থন দেয়া হয়েছিল তা হ্রাস করে কিনা সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
ইয়েমেন এবং ইজরায়েল নিয়ে উত্তেজনাঃ
বিন সালমান এবং তার পরামর্শদাতা জায়েদের মধ্যকার সম্পর্ক বিশাল এক ঝাঁকুনির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।তার মধ্যে একটি হল ইয়েমেন।২০১৫ সালের মার্চে সৌদি নেতৃত্বাধীন যে যুদ্ধ সালমান ইয়েমেনে শুরু করেছিল তার সত্যিকার নেতৃত্ব কার হাতে সেটা বলা মুশকিল। আমিরাতের প্রক্সি সন্ত্রাসীরা ইয়েমেনের দক্ষিনাংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এবং ইয়েমেনের উত্তরাংশে সৌদি,হুতিদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত।যদিও এই দুই পক্ষের মধ্যে সম্প্রতি চুক্তি হয়েছে তারপরেও এটা নিশ্চিত করে বলা যায় না যে,এই দুই পক্ষের যুদ্ধ শেষ হয়েছে।
উত্তেজনার দ্বিতীয় উৎস হল ইজরায়েল।আমিরাত,ইজরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার মাধ্যমে এটা স্পষ্ট করলো যে,গালফ অঞ্চলে আমিরাত অঞ্চলে আমিরাত হল ইজরায়েলের প্রধান মিত্র।যেটা আবার সৌদি এবং মিশরীয় হেজিমনির জন্য মারাত্মক হুমকি।ইজরায়েলি লিবারেল নিউজ মিডিয়া হারেতজের মতে,ওতাইবা গত বছর গর্ব করে বলেছিল,মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী দুইটা সামরিক বাহিনী আমিরাতি এবং ইজরায়েল মিলে ওয়াশিংটনের সাথে এই অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে পারে।এবং এই দুইটা অর্থনীতি হল সবচেয়ে বেশি বৈচিত্রপুর্ন।এবং এই দুই অর্থনীতির সম্পর্ক গালফ অঞ্চলের প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করবে।
নব নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হাড় ছোড়ার মাধ্যমে সালমান নিজের অন্ধকার গলি থেকে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছেন।সাময়িকভাবে হলেও পজিটিভ মিডিয়া কাভারেজ পাওয়ার চেষ্টা করবেন।বিশেষ করে আলজাজিরার কাছ থেকে।আল জাজিয়া এরাবিক মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় নিউজ নেটওয়ার্ক।এর প্রচারনায় মুলত ২০১১ সালে আরব বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল।আরব আপ্রাইজিং থেকে শুরু করে মিশরের গনহত্যা এবং ইয়েমের ম্যাসাকার সবকিছুতেই তারা প্রচারনার সামনে ছিল।এটাকে সাময়িকভাবে হলেও তারপ্রতি সিম্পেথেটিক করতে পারবেন।
যদিও প্রযোজক এবং সাংবাদিকরা তাদের সমসাময়িকদের অধিকাংশ সৌদি-,এমিরতি- এবং মিশরীয় নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ায় তুলনায় বেশি স্বাধীনতার সাথে কথা বলছেন, তবুও এর নিয়ন্ত্রন রয়েছে কাতারের হাতে।সম্প্রতি সৌদি আরবের মানবধিকার কর্মী লজাইন আল-হাথলুলের বিচারের কভারেজ কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সহ অনেক উদাহরণ রয়েছে।যে বিচারে তাকে ৫ বছর কারাদন্ড দেয়া হয়েছে।
সালমান কাতারের সাথে এই সম্পর্ক স্থাপনকে দুইটি উদ্ধ্যশে ব্যাবহার করতে পারেন।ইজরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্থাপন এবং তার পিতাকে সিংহাসন ছাড়তে বাধ্য করা। বিন সালমান ভাবেন যে দু'টিই করার সময় এসেছে বলে সন্দেহ নেই। রাজা হওয়ার প্রচারণার শুরু থেকেই ইস্রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনজমিন নেতানিয়াহুর সাথে ঘনিষ্ঠ গোপনীয় সম্পর্ক স্থাপন মার্কিন প্রেসিডেন্টর উপদেষ্টা জারেড কুশনার এবং তার শ্বশুর ট্রাম্পের সাথে বিন সালমানের সম্পর্কের মূল বিষয় ছিল এটাই। ইজরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকের বিষয়ে সৌদি স্পষ্টত দুইভাগে বিভক্ত।রাজ পরিবারের সাথে সম্পর্কিত পররাষ্ট্রনীতির সিনিয়র সদস্যরা জনসম্মুখে এখনো ইজরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকের বিরুদ্ধে।এর স্পষ্ট উদাহরন হল সাবেক গোয়েন্দা প্রধান তুর্ক আল ফয়সালের সাম্প্রতিক বক্তব্য।যার সাথে রাজার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান।তার মতে এই ঘটনা সৌদি সমাজে গভীর প্রভাব ফেলবে।
ভবিষ্যতের অশান্তিঃ
ইজরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে প্রথম বাধাটি আসবে আল জাজিরা থেকে।এই বাইডেন ক্ষমতা নেয়ার পর হয়ত আল জাজিরা সৌদির বিরুদ্ধে কাভারেজ বাড়িয়ে দিতে পারে।যেটা ছিল জায়োনিস্ট লবির ভয়।যার কারনে দ্রুত ট্রাম্পের ক্ষমতা ত্যাগের আগে সম্পর্ক পুনস্থাপন।যদিও চরম জায়োনিস্ট বাইডেন এটাকে স্বাগত জানাবে এতে কোন সন্দেহ নেই।এতে কোন সন্দেহ নেই ফিলিস্থিনিদের জন্য আর ভয়াবহ পরিস্থিতি সামনে অপেক্ষা করছে আর সেটা হল সৌদি আরবকে ইজরায়েলের হাতে সমর্পণ করা।এটা অস্বীকার করার উপায় নেই পুরু গালফ এবং মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি প্রভাব বিশাল এর আকার এবং অর্থের জন্য।এটা নিশ্চিত করে বলা যায়,এই সম্পর্ক স্বাভাবিক করার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে ভবিষ্যতে অশান্তি আরো বাড়বে।
এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে গালফ অঞ্চলে ইরান তার প্রভাব বৃদ্ধি করেই চলেছে।যেটা এই অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত রাজতান্ত্রিক ধারার প্রতি চ্যালেঞ্জ।অবরোধের মুখেও ইরান তার সামরিক শক্তিকে অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি করেছে।ইরাক,সিরিয়া,লেবানন,ইয়েমেন,ফিলিস্থিন এবং বাহরাইনে সে তার প্রক্সি গড়ে তুলেছে।এই অবস্থায় রাজতান্ত্রিক ধারার মুল উদ্ধেশ্য হল ইরানকে চাপে রেখে ক্ষমতার পরিবর্তন করা।যেটা ইজরায়েল এবং আমেরিকারও উদ্ধেশ্য।কিন্তু ইরানের সামরিক শক্তির কারনে সেটা সম্ভব হচ্ছে না।বিশেষ পরমানু প্রযুক্তির কারনে।আমেরিকা, ইজরায়েল-সৌদি লবির অব্যাহত চাপের মুখেও ইরানে আক্রমন করেনি।কারন তারা জানে ইরানে আক্রমন মানে হল পুরু মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের দামামা।যেটা থামানোর কোন শক্তি নেই।আবার ইরান পরমানু শক্তিধর হয়ে উঠলে সেটা তাদের হেজিমনির জন্য হুমকি।যার কারনে মন্দের ভালো হিসেবে তারা জেসিপিওতে সাক্ষর করে।যেটাকে ইরানের বিজয় বলা যায়।কিন্তু সৌদি-ইজরায়েল লবির মোট ট্রাম্পও সেটা পছন্দ করেনি।জো বাইডের জেসিপিওতে খুব দ্রুত ফিরে আসবেন না।তিনি,ফ্রান্স,ইউকে এবং জার্মানির সাথে মিলে জেসিপিওতে ইরানের ব্যালাস্টিক ক্ষেপনাস্র ব্যাবস্থা এবং প্রক্সি সংগঠনগুলু অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করবে।যার কারনে গালফ অঞ্চলের প্রভাব বৃদ্ধির জন্য সৌদি,কাতারের সাথে সম্পর্ক পুনস্থাপন করলো।এটা বার্গেইনিং চিপ বলা যায়।
মুসলিম বিশ্বের একমাত্র স্বনির্ভর সামরিক শক্তি বলা যায় তুর্কিকে।তুর্কি সামরিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির পাশাপাশি তার অতীত ইতিহাস চর্চা করতে চাই এবং সেটা করেছেও।কাতার থেকে সিরিয়া, ইউক্রেন থেকে আজারবাইজান,লিবিয়া থেকে বসনিয়া।মুসলিম বিশ্বে তুর্কির এই অব্যাহত প্রভাব বৃদ্ধিকে লিবারেল দুনিয়া স্বাভাবিকভাবে নেয়নি।তুর্কির এই অবস্থানের পিছনে তারা পাশে পাচ্ছে আমিরাত-সৌদি এলাইয়েন্সকে।সৌদি-আমিরাত এলায়েন্স তাদের প্রভাব ধরে রাখার জন্য তুর্কির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।চরম তুর্কি জো বাইডেন ক্ষমতাসীন হলে তুর্কির বিরুদ্ধে গালফ অঞ্চল একক প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে।যদিও সেটা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।
©somewhere in net ltd.