![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুনিয়ার খবর রেখে শান্তি পাই।
পশ্চিম ধারাবাহিকভাবে তাদের অংশীদারদের স্বার্থকে দুর্বল করে তুলতে চায়,সেটা হোক বাণিজ্য বা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে। এটা হোক পশ্চিমের অংশীদার,তাদের ছোট বা দুর্বল ভাই!! অথবা পূর্ব থেকে; অথবা দক্ষিণ থেকে- তাদের কাছে সর্বদা শোষণ একটি উপাদান, "এক আপমশক্তি", একটি আধিপত্য। সমতা ও সততা পশ্চিমে অজানা।
সমতা এবং সততার চিন্তাধারা প্রথমে কিছু লোক বা দেশের হাতে কুক্ষিগত ছিল।এবং তখন সেটার আচরণ আসলেই সমানুপাতিক ছিল।কিন্তু নিউ লিবারেল ডক্ট্রিনের চিন্তা ভাবনা সেটাকে মুছে ফেলেছে।আমিই প্রথম এবং মুনাফার ম্যাক্সিমাইজেশান এর সর্বমোট মতবাদ দ্বারা এটাকে একদম মুছে ফেলা হয়েছে।এটার জন্য,যে চুক্তিটা তারা আগামীকাল করবে,সেটার জন্য আজকে হত্যা করতেও তারা দ্বিধা করে না।ফিউচার ট্রেডিং এর জন্য অর্থনৈতিক মূল্যের ম্যানিফুলেশান,এসবই তারা করে তথাকথিত পুঁজিবাদের নামে।
এটি পশ্চিমা বাণিজ্য ও ব্যবসায়ের মূল বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে।এটাকে তারা নৈতিকতা এবং সততার উপরে স্থান দিয়েছে।এই কতৃত্ববাধী মুনাফা ম্যাক্সিমাইজেশনের জন্য যেসব দেশে তাদের ছলনায় পা দেবে সেখানে তারা শক্তি প্রয়োগ করবে।সামরিক বাহিনী এবং আধুনিক অস্রের বলে তারা হয় সেই দেশ দখল করে নিবে বা সরকার(তাদের কথায় রেজিম) পরিবর্তন করে তাদের পাপেটকে ক্ষমতায় বসাবে।
চীন এর পদ্ধতি এক্ষেত্রে বেশ ভিন্ন।সে পশ্চিমের মত একা ভোগ করার নীতি থেকে বেরিয়ে শেয়ার করার ধারনায় অগ্রসর হচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশগুলিতে চীন ট্রিলিয়ন ডলারের সমান বিনিয়োগ করেছে - বিশেষ করে ভারত এবং বর্তমানে পাকিস্তান, আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা। এসব বিনিয়োগের বেশিরভাগ হল অবকাঠামো প্রকল্পের জন্য এবং পাশাপাশি প্রাকৃতিক সম্পদ খনিতে কিছু বিনিয়োগ হচ্ছে। পশ্চিমা বিনিয়োগ থেকে লাভের চিন্তায় চীনের বিনিয়োগ অনেক ভিন্ন। চীনের বিনিয়োগের সুবিধাগুলি ভাগ করা হয়েছে। মাইনিং এর ক্ষেত্রে চীনের বিনয়োগ নিগৃহীত নয় বরং সমতা ভিত্তিক।চীনের বিনিয়োগগুলু অংশীদার দেশগুলুর জন্য অপমানজনক বা আক্রমানত্তক নয়। পক্ষান্তরে পশ্চিম যা পেতে চায় তার জন্য সামরিক শক্তি বা ব্যাবসায়িক বিভিন্ন টুল ব্যাবহার করে।
অবশ্যই পশ্চিম চীনের এসব বিনিয়োগ নিয়ে যখন কথা বলে তখন তারা নিজের চরিত্র লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করে।বিশেষ করে তারা যখন আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকায় প্রতিযোগিতায় হেরে যাচ্ছে।তারা এখনো দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলুকে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়।যেসব দেশে কয়েক দশক কলোনি বানিয়ে রেখেছিল।এমনকি আজকে দিনেও তারা এসব দেশের সাথে কলোনির মত আচরণ করছে।কিন্তু সেটা আরো ভয়ঙ্কর রূপে।কখনো অবরোধ,কখনো বয়কট, যেগুলু আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ।কিন্তু এটাকে অবৈধ বলার মত শক্তিও কারো নেই।
উদাহরণ হিসেবে সাবেক ফ্রেন্স কলোনি পশ্চিম এবং মধ্য আফ্রিকার দেশগুলুর দিকে তাকানো যায়। পশ্চিম আফ্রিকান অঞ্চলটিতে আটটি দেশ রয়েছে: বেনিন, বুর্কিনা ফাসো, গিনি বিসাউ, আইভরি কোস্ট, মালি, নাইজার, সেনেগাল, টোগো; এবং ফরাসি সেন্ট্রাল আফ্রিকান অঞ্চলের ছয়টি দেশ রয়েছে - ক্যামেরুন, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, চাদ, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, ইকোটোরিয়াল গিনি এবং গ্যাবান। এই ১৪ টি দেশে একটি সাধারণ মুদ্রা রয়েছে, সিএফএ ফ্রাঙ্ক (সিএফএ = কমিউনিট ফাইন্যান্সিয়্রে আফ্রিকান - আফ্রিকান আর্থিক সম্প্রদায়)।
তারা আবার দুটি মুদ্রাও ব্যাবহার করে।কিন্তু এই মুদ্রার মান সবসময় সমান থাকে তাই এগুলু এই ১৪টি দেশে একযোগে ব্যাবহারযোগ্য।এউ দুইটি অঞ্চলে আবার আলাদা কেন্দ্রীয় ব্যাংক রয়েছে। একটার নাম ব্যাংক অব ওয়েস্ট আফ্রিকান কান্ট্রিজ এবং ব্যাংক অব সেন্ট্রাল আফ্রিকান কান্ট্রিজ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থাকলেও এই দুইটি মুদ্রার নিয়ন্ত্রণ থাকে ফরাসি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে।এর মূল্যও নিয়ন্ত্রণ করে ফরাসি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।লিবীয় নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফিকেও হত্যা করার কারণ কিন্তু এখানেই নিহিত।গাদ্দাফিকে ক্ষমতা থেকে সরানোর মুল কারিগর ছিল ফ্রান্স।গাদ্দাফির উদ্ধেশ্য ছিল এই ১৪টি দেশকে ফ্রান্সের আধিপত্য থেকে বের করে এনে নিজস্ব স্বর্ণ মুদ্রা কেন্দ্রিক কারেন্সি চালু করা।মুদ্রা নিয়ন্ত্রণের মানে হল এই ১৪ টি দেশকে অর্থনৈতিকভাবে শুধু ফ্রান্সের নির্ভরশীল করা হয়নি বরং এটা নতুন পলিসিতে নতুন কলোনি প্রতিষ্ঠা।
মুদ্রার উপর ফ্রান্সের নিয়ন্ত্রণের কারণে এসব দেশের বানিজ্যের উপরেও ফ্রান্সের নিয়ন্ত্রণ আরোপিত।কি আমদানি করবে,কোন দেশ থেকে আমদানি করবে সেটা একান্তভাবেই ফ্রান্সের উপর নির্ভর করবে।এমনকি যদি ফ্রান্স এসব দেশের উৎপাদিত পণ্য কিনতে অস্বীকৃতি জানায় তাহলে এসব দেশগুলু দেউলিয়া হয়ে পড়বে।এভাবে তারা সবসময় ফ্রান্স, আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক এবং আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের দয়ার উপর নির্ভরশীল।ফ্রান্স তাদেরকে সাটের দশকের শ্রম দাসত্ব থেকে এই সময়ের অর্থনৈতিক দাসে পরিণত করেছে।এই ১৪ টি দেশের মুদ্রার গ্যারান্টি বাবদ এসব দেশের রিজার্ভের ৮৫% ফ্রান্সের কাছে রাখতে হয় এবং ফ্রান্স শুধুমাত্র তাদের ইচ্ছানুযায়ী এসব ব্যাবহারের অনুমতি দেয় এবং সেটাও ঋণ হিসেবে।কল্পনা করুন তারা নিজেদের অর্থ ফ্রান্স থেকে ধার করতে হচ্ছে।একই পলিসি ব্রিটিশ এবং পর্তুগিজেরা ব্যাবহার করেছিল তাদের উপনিবেশগুলিতে কিন্তু তারাও তাদের এভাবে দাস হিসেবে ব্যাবহার করেনি।
আশ্চর্য জনক বিষয় হচ্ছে পশ্চিমের ক্রমাগত চাপ সত্ত্বেও আফ্রিকা,চীনের বিনিয়োগকে স্বাগত জানিয়েছে।এরপর পশ্চিম চীনের বিরুদ্ধে প্রথমদিকে শুরু করে ভয়াবহ মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধও।পশ্চিমের মিডিয়াগুলু তাদের নাগরিকদের বুঝানোর চেষ্টা করে যে চীন আফ্রিকার সম্পদ চুরি করছে যদিও আফ্রিকার সাথে চীনের প্রত্যেকটা বাণিজ্যিক চুক্তি প্রকাশিত এবং কোনটাতেই কাউকে কোন শর্তের ভেড়াজালে আটকানো হয়নি।চীন শুধু আফ্রিকাতে বিনিয়োগ এবং ব্যাবসা করেই ক্ষান্ত হয়নি সে আফ্রিকার জনশক্তির উন্নয়নেও মনোনিবেশ করেছে।যার উদ্ধেশ্য উন্নয়ন এবং একটা মধ্যবিত্ত ভোক্তা শ্রেণীর সৃষ্টি করা। আফ্রিকাতে চীনের ন্যায্যতা পশ্চিমের প্রতারণার বিরুদ্ধে কঠিন প্রতিযোগিতা।
আফ্রিকায়, চীন কেবল প্রাকৃতিক সম্পদ কেনার এবং ব্যবসায়ের উপর মনোযোগ দিচ্ছে না,পশ্চিমা ক্রীতদাস থেকে সমান অংশীদার হিসাবে আফ্রিকার রূপান্তর করতে স্থানীয় আফ্রিকার ব্রেইন পাওয়ারকে প্রশিক্ষণ ও ব্যবহার করছে।উদাহরণস্বরূপ, আফ্রিকান স্বায়ত্তশাসনকে আরও শক্তিশালী করা।যেটা লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট গাদ্দাফি করতে চেয়েছিলেন।চীন এখন আফ্রিকাতে সেটাই করছে।সেটা পশ্চিমের ট্রিলিয়ন ডলারের মোবাইল ব্যাবসাকে পাশ কাটিয়ে আফ্রিকাতে ওয়ারলেস মোবাইল সিস্টেম চালু করা।যেটা এনার্জি এফিসিয়েন্ট ব্যাটারি দ্বারা পরিচালিত।যা দিয়ে সস্তায় দক্ষ সেবা দেওয়া হচ্ছে।এটা সরাসরি পশ্চিমের স্বার্থকে চ্যালেঞ্জ করেছে।চীনের মোবাইলগুলু আফ্রিকাতে নিজেদের ব্রাউজিং সিস্টেম নিয়ে হাজির হয়েছে যেটা একদম প্রত্যন্ত অঞ্চলেও তারা সেবা পৌঁছে দিচ্ছে।যেগুলুকে পশ্চিম মুল ধারার বাইরে রাখতে চেয়েছিল।লিবিয় প্রেসিডেন্ট গাদ্দাফিকে নির্মমভাবে হত্যা করার এটাও একটা কারণ ছিল।
পশ্চিমের প্রতি এটা চীনের একটা সতর্ক বার্তা যে চীন আফ্রিকা,ল্যাটিন আমেরিকা এবং এশিয়ার দেশগুলুতে আমেরিকার কুইক বাক হিসেবে আসেনি।চীন এসেছে সত্যিকার অর্থে ব্যাবসা,বিনিয়োগ,অবকাঠামো উন্নয়ন,একের সাথে অন্যের সংযোগ স্থাপন এবং স্বাধীন আর্থিক ব্যবস্থা যা পশ্চিমের SWIFT এবং FED / ওয়াল স্ট্রিট ব্যাঙ্কিং সিস্টেম থেকে নিরাপদ রাখতে।এর মাধ্যমে সরকারের নিয়ন্ত্রিত ব্লকচেইনের মুদ্রার সৃষ্টি হতে পারে যেটা ভেনেজুয়েলার হাইড্রোকার্বন-সমর্থিত পেট্রোর মত।সেই সাথে আফ্রিকার মুদ্রাগুলুকে ইউয়ান এবং সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার আর্থিক ব্যবস্থায় সংযুক্ত করে ডলারের আধিপত্য এবং জুলুম থেকে মুক্তি দেওয়া।চীন এবিং রাশিয়ার সহায়তায় আফ্রিকার দেশগুলু বিশেষ করে পশ্চিম এবং মধ্য আফ্রিকার দেশগুলু ক্রিপ্টো কারেন্সি ব্যাবহারের অগ্রদূত হতে পারে।এর মাধ্যমে তারা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ফ্রান্সের পরাধীনতা ভাঙতে পারবে এবং নিজেদের মত স্বাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। চীনের সহায়তায় আফ্রিকা পূর্বের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার হয়ে উঠবে,পশ্চিমা শোষণ ও অপব্যবহারের ব্যবসা এবং ব্যাংকিং ম্যাগনেটগুলিকে ধুলোর পিছনে রেখে চলে যাবে।
চীনের কাছে আমেরিকার বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলুর হেরে যাওয়া নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি ঋণ ও বিনিয়োগ গ্যারান্টি এজেন্সি -ওভারসিজ প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন (OPIC) যথেষ্ট বিরক্ত এবং আগ্রাসী।OPIC বিনিয়োগকারীদের আরো আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে অগ্রসর হওয়ার অনুরোধ করেছে।তারা এটা নিয়ে সরকারের সাথে অনেক দেন দরবারের পর কংগ্রেস থেকে ৬০বিলিয়ন ডলারের একটি প্রকল্পও পাশ করিয়েছে। OPIC ছাড়াও আমেরিকা ব্যাবহার করার চেষ্টা করেছে বিশ্ব ব্যাংক এবং আইএমএফকে।কিন্তু আফ্রিকা ভদ্রভাবে তাদের এসব প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে।এর মাধ্যমে আফ্রিকা জানান দিয়েছে যে,এ যাত্রায় আফ্রিকা চাই নিজেদের সার্বভৌমত্ব, আর্থিক এবং রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারণ।
আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার অনেক দেশ ডলারের বিনিয়োগ করা থেকে ইউয়ানে বিনিয়োগ করাকে নিরাপদ মনে করছে।এটা একটা সপ্টার কারেন্সি তাই নিরাপদ।এটা চীনের জন্য ডলার আধিপত্য কমানোর একটা ভালো পথ যেটা ইতিমধ্যেই খুব দ্রুত শুরু হয়ে গেছে।
২| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:৩৩
আমি সাজিদ বলেছেন: চমৎকার
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৫:৪৮
রাজীব নুর বলেছেন: খুব সুন্দর প্রবন্ধ লিখেছেন।