![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুনিয়ার খবর রেখে শান্তি পাই।
চীন অনেক দিন থেকেই বিশ্ব বানিজ্য সংস্থার সদস্য হবার চেষ্টা করছিলো।অবশেষে ২০০০ সালের বসন্তে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদ চীনের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ককে স্বাভাবিক করার অনুমোদন দিয়েছে।চীনকে বানিজ্য সংস্থায় অন্তর্ভুক্ত করার সমর্থক ছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন।এর মাধ্যমে ওয়াশিংটন কিছু কৌশলগত বিষয় আদায় করতে চেয়েছিল।
ডব্লিউটিও বিশ্ববাণিজ্যের রেগুলেটেড অথরিটি।এর মাধ্যমে বিশ্ববানিজ্যের নীতিমালা ঠিক করা হয়।২০২০ সাল নাগাদ এর সদস্য সংখ্যা ১৬৪।গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সদস্যদের সর্বসম্মত মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তগৃহীত হবে।কিন্তু সব ক্ষেত্রে এর প্রতিফলন দেখা যায় না।যদিও সল্পউন্নত দেশ গুলুর জন্য এটা খুবই উপকারি হিসেবে পরিগনিত হচ্ছে।
চীন ডব্লিউটিওতে যোগ দিতে চেয়েছিল কারণ এটি চীনকে নতুন ব্যবসায়িক অংশীদারদের কাছে প্রবেশের সুযোগ করে দিবে।হয়েছেও তাই।কিন্তু ওয়াশিংটন যে কৌশলগত কারনে চীনকে অন্তর্ভুক্ত করেছিল তার বিন্দুমাত্রও তারা অর্জন করতে পারেনি।ওয়াশিনটনের উদ্ধেশ্য ছিল চীনকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন, উদার-গণতান্ত্রিক রাস্ট্রব্যাবস্থায় নিয়ে এসে তার কমিউনিস্ট মডেল থেকে দূরে রাখা।এর মধ্যে ওয়াশিংটন চীনকে কমিউনিস্ট মডেল থেকে দূরে রাখতে পারলেও চীন সব দিক থেকে এখন ওয়াশিংটনের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে।আর এটাই হল ওয়াশিংটন-বেইজিং বানিজ্য যুদ্ধের মুল কারন।
চীন ডব্লিউটিওতে যোগ দেওয়ার পর অভুতপুর্ব সফলতা দেখিয়েছে।বিশ্ব ব্যাংকের হিসেবে গত ৩০ বছরে চীন ৮৫০ মিলিয়ন মানুষকে দারিদ্রতা থেকে বের করে নিয়ে এসেছে।যেটাকে মানব ইতিহাসের মিরাকল বলা হয়।ডব্লিউটিওতে যোগ দেওয়ার আগে চীনের জিডিপি ছিল প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার(১৯৯৯)।২০১৯ সালে এসে তার জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ১৪.১৪ ট্রিলিয়ন ডলারে(২৭.৩১ ট্রিলিয়ন ডলার,পিপিপি)।দুনিয়ার অর্থনীতিতে চীনের অংশীদারীত্ব ঠেকেছে ১৫.৫%(বিশ্ব ব্যাংকের হিসেবে)।
২০১২ সালে দুনিয়ার গতিপথ চিরদিনের জন্য পরিবর্তন হয়ে যাওয়া শুরু হয় যখন জাতীয়তাবাদী শি জিন পিং চীনের ক্ষমতায় আসেন।তিনি ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড নামের উচ্চাবিলাসি পরিকল্পনা গ্রহনের সাথে সাথে ২০১৫ সালে মেড ইন চায়না-২০২৫ পরিকল্পনা ঘোষণা করেন।এরপর ২০১৬ সালে চরম পপুলিস্ট ট্র্যাম্পের আমেরিকার ক্ষমতারোহনের মধ্য দিয়ে দুনিয়ার গতিপথ চিরতরের জন্য বদলে যায়।চীন তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করে পক্ষান্তরে আমেরিকা হেগিমনিক অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে।আর এতেই শুরু হয় বিশ্বের দুই পরাশক্তির দ্বন্দ্ব এবং বানিজ্যের নামে।
চীন কি বিশ্ববাণিজ্য ব্যাবস্থা ভেঙ্গে দিয়েছে??
এক কথায় উত্তর হল না।কিন্তু আমেরিকার চীনের উত্থান তার হেগিমনিক অস্তিত্বের জন্য হুমকি যেটা অন্য কোন দেশের সাথে তুলনীয় নয়।
দুই দেশই এক অপরের আমদানি পন্যের উপর বিশাল অংকের শুল্ক আরোপ করেছে।যেটা বিশ্ববানিজ্য ব্যাবস্থার স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।কারন বিশ্ব বানিজ্যের প্রবৃদ্ধি অনেকাংশে এই দুই দেশের উপর নির্ভরশীল। প্রকৃতপক্ষে ওয়াশিংটন এবং বেইজিং বানিজ্য যুদ্ধের সাথে বানিজ্যের তেমন কোন সম্পর্ক নেই।
চীন আমেরিকার বানিজ্য ঘাটতির বিশাল অংশীদার। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন এটা মুল সমস্যা নয়।এটা অনেক বড় সমস্যার লক্ষন মাত্র। অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান মার্টিন ফিল্ডস্টেইন যুক্তি দিয়ে বলেছেন, "সামগ্রিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতার জন্য মুলত দায়ী হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক অবস্থা।তিনি উদাহরণ হিসেবে দেখান যে –মার্কিন অর্থনীতিতে সঞ্চয়ের তুলনায় বিনিয়োগের পরিমান কয়েকগুন বেশি,তার মতে চীনের সাথে বানিজ্য ভারসাম্য দূর করলে সেটা শুধুমাত্র অন্য দেশে স্থানান্তরিত হবে।এর বেশি কিছু নয়। ট্র্যাম্প প্রশাসন অব্যাহতভাবে চীনের পন্যের উপর শুল্ক আরোপ করে যতটা বানিজ্য ঘাটতি সমাধান করতে চাইছেন তার থেকে বেশি চাইছেন চীনের বিনিয়োগ নীতিমালা পরিবর্তনের।বিশেষ করে যৌথ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মার্কিন কোম্পানিগুলুকে প্রযুক্তি হস্তান্তরের বাধ্য করানো।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বিশ্বে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক,আইএমএফ এবং ডব্লিউটিইউ(সবগুলুই মার্কিন নিয়ন্ত্রিত) এর প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যে ব্যাবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে তাতে উন্নত দেশগুলু তাদের দেশের কোম্পানিগুলু যাতে প্রযুক্তি অনুন্নত দেশে ট্রান্সপার করতে পারে সেজন্য প্রণোদনা দিতে বাধ্য।
এটা করা হয়েছিল উন্নত দেশগুলির স্বার্থে।এতে করে অনুন্নত দেশগুলু বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজেরাই টেকসই উন্নয়নের পথে আগাবে।চীন এই ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে।বিশেষ করে ২০০০ সালের শেষের দিকে এসে চীন প্রযুক্তিগত বিষ্যগুলু ভালোভাবে আয়ত্ব করতে পেরেছে।যখন উন্নত দেশগুলু তাদের নিজেদের সৃষ্ট অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবেলা করছিল।এবং চীনের মত একটা দেশ বলা যায়,সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সহযোগিতা করেছিল।কিন্তু যে নৈতিক ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিধান ডব্লিউটিইউতে যুক্ত করা হয়েছিল তার কি প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে গিয়েছে নাকি তারা চীনকে ব্যাতিক্রম হিসেবে চিন্তা করবে?
ট্র্যাম্পের বানিজ্য যুদ্ধ শুরু হয় কিছু বিষয়কে সামনে রেখে।
১) ট্র্যাম্প বিশ্বাস করেন চীনের কারনে আমেরিকা ম্যানুফ্যাকচারিং খাত পুরুপুরি ধংস হয়ে গেছে।
২) চীনের সাথে আমেরিকার বানিজ্য ঘাটতি দিন দিন বেড়েই চলেছে( ৫০০ বিলিয়ন ডলার,২০১৯ সালে)
৩) চীন টেকনোলজি চুরি করছে।
৪) বানিজ্যের/বিনিয়োগের উপর রাস্ট্রীয় নিয়ন্ত্রন।
সর্বোপরি চীন আমেরিকার নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি।কিন্তু ম্যানুফ্যাচারিং সেক্টর ধংসের জন্য যেভাবে চীনকে দায়ী করা হয় আসলেই কি চীন দায়ী??
চীন বিশ্ব বানিজ্য সংস্থার সদস্য হয় ২০০০ সালে।গত চার দশক থেকে আমেরিকার অর্থনীতি একান্তভাবেই সার্ভিস সেক্টরের উপর নির্ভরশীল।আমেরিকা তার কঞ্জিউমার পন্যের জন্য বরাবরই এশিয়ার বিভিন্ন দেশের উপর নির্ভরশীল। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় চীনের অন্তর্ভুক্তির পর আমেরিকার আমদানি পন্যে চীনের অংশগ্রহন বাড়তে থাকে।আমেরিকার জিডিপির ৮০% এর যোগান আসে সার্ভিস সেক্টর থেকে।এই সার্ভিস সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত হল ব্যাংক,ইন্স্যুরেন্স,পাইকারি এবং খুচরা বিক্রয় কেন্দ্র ইত্যাদি।প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা,শ্রমের উচ্চ মুল্যের কারনে আমেরিকাতে কর্মের সংস্থান আস্তে আস্তে কমতে থাকে সেই ১৯৭৮ সাল থেকে। ১৯৯০ সালে এশিয়ার দেশগুলু থেকে আমেরিকার মোট আমদানির পরিমান ছিল চাহিদার ৪৫%।সেখানে চীনের পন্যের পরমিনা ছিল মাত্র ২%।বিশ্ববানিজ্য সংস্থায় অন্তর্ভুক্তির পর ২০০১ সালে আমেরিকার আমদানির পরিমান ছিল ৪০.৬% যেখানে চীনের পরিমান ছিল ১১%।সেটা বাড়তে বাড়তে ২০১৯ সালে এসে ২২% দাঁড়ায়।(চিত্র-১)এখানে উল্লেখ্য যে চীন থেকে আমেরিকার আমদানি পন্যে হাই ভ্যালু পন্যের পরিমান নেই বললেই চলে।এখন প্রশ্ন হল চীনের রপ্তানির পরিমান বেড়ে যাওয়ার কারন কি?
ক)চীনের প্রযুক্তিগত দক্ষতা, খ)সস্তা শ্রম,গ)ধীরে ধীরে চীন এসেম্বলির জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠা ইত্যাদি।চীনের অর্থনীতি যেখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উৎপাদন নির্ভর সেখানে আমেরিকার অর্থনীতি পুরুপুরি সার্ভিস সেক্টর নির্ভর।
১) ট্র্যাম্প বিশ্বাস করেন চীনের কারনে আমেরিকা ম্যানুফ্যাকচারিং খাত পুরুপুরি ধংস হয়ে গেছে।
যে কোন অর্থিনীতি যখন উন্নয়নশীল থেকে উন্নত হয় তখন তার সার্ভিস সেক্টর অবিশ্বাস্যভাবে উন্নতির দিকে যায়।মার্কিন অর্থনীতিবিদেরা হরহামেশায় বলেন যে মার্কিন ম্যানুফ্যাকচারিং খাত ধংসের জন্য চীন দায়ী।বিশেষ করে বিশ্ব বানিজ্য সংস্থায় চীনের অন্তর্ভুক্তির কারনে মার্কিন ম্যানুফ্যাচারিং খাত ধংস হয়ে গেছে।কিন্তু বাস্তবতা তার উল্টো।আমরা যদি মার্কিন অর্থনৈতিক ইতিহাসের দিকে তাকায় তাহলে বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে।১৮৯০ সালে আমেরিকার কৃষি খাতে কর্মসংস্থানের পরিমান ছিল ৩৯%,শিল্পে ২৭% এবং সার্ভিস সেক্ট্ররে ছিল ৩৪%,চীন বিশ্ব বানিজ্য সংস্থায় যোগ দেয়ার ঠিক আগে ১৯৮৯ সালে সেটা দাঁড়ায় যথাক্রমে ৩% ,২ঁ% এবং ৭১%। ২০২০ সালে আমেরিকাতে সার্ভিস সেক্টরে মোট কর্মসংস্থানের পরিমান ৭৯%।তাহলে দেখা যাচ্ছে যে ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরে কর্মসংস্থান নিম্নগতি শুরু হয়েছে অনেক আগেই।চীন বিশ্ববানিজ্য সংস্থায় যোগ দেয় ১৯৯১ সালে।ঠিক তার আগে আমেরিকাতে সার্ভিস সেক্টরে কর্মসংস্থান ছিল ৭১% আর ২০২০ সালে এসে সেটা দাঁড়ায় ৭৯% এ।পার্থাক্য ৮%।এখন প্রশ্ন হল চীন বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় যোগ না দিলেও কি সার্ভিস সেক্টরের কর্মসংস্থান বাড়তো।এক কথায় উত্তর হল হাঁ। ২০১৮ সালের হিসেবে আমেরিকার জিডিপিতে সার্ভিস সেক্টরের ভুমিকা হল ৮০% এবং শিল্পখাতের ভুমিকা হল ১৯%।আমেরিকাতে এই টেন্ড শুরু হয়েছিল ১০০ বছর আগে।আমরা যদি চীনের দিকে নজর দেই তাহলেও একই চিত্র দেখতে পাবো।চীনের জিডিপিতে ধীরে ধীরে ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরের অবদান কমতেছে আর বেড়ে যাচ্ছে সার্ভিস সেক্টরের অবদান।এটা অর্থনীতির একটা সাধারন গতিবিধি। চিত্র-১।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মনে করেন আমেরিকান কোম্পানিগুলুর চীনে,অতিরিক্ত বিনিয়োগের কারনে আমেরিকা জব চীনে চলে যাচ্ছে।ফলশ্রুতিতে দিন দিন মার্কিন-চীন বানিজ্য ঘাটতি বেড়েই চলেছে।কিন্তু বাস্তবতা হল ভিন্ন।এখন থেকে বিশ বছর আগেও চীনে মার্কিন এবং ইউরোপের বিনিয়োগের পরিমান ছিল প্রায় সমান। ২০০০ সালের পর এই ট্রেন্ড ভিন্ন রুপ নেয়।ধীরে ধীরে চীনে মার্কিন বিনিয়োগ কমতে শুরু করে এবং ইউরোপের বিনিয়োগ বাড়তে শুরু করে।সত্য হল চীনে আমেরিকা বিনিয়োগ ১.৫% - ২% এর কাছাকাছি।তাহলে একটা মিথ্যা তথ্যের উপর দাঁড়িয়ে চীনকে শায়েস্তা করার চেষ্টা করা হচ্ছে কেন? চিত্র-৮
যে কোন অর্থনীতি একটা পর্যায়ে পৌঁছলে সেটা সার্ভিস সেক্টরের দিকে ঝুঁকে পড়ে।এটা শুধু আমেরিকা/উন্নত দেশগুলুর বেলায় নয়।অর্থনীতির এটা হল গতি।আমরা যদি চীনের অর্থনীতির দিকে তাকায় তাহলে দেখতে পাবো চীনের অর্থনীতি কত দ্রুত সার্ভিস সেক্টরের দিকে ধাবিত হচ্ছে। চিত্র- ৯।
২) চীনের সাথে আমেরিকার বানিজ্য ঘাটতি দিন দিন বেড়েই চলেছে( ৫০০ বিলিয়ন ডলার,২০১৯ সালে)
চীনের সাথে আমেরিকার বানিজ্য ঘাটতির জন্য মার্কিন প্রশাসন একচেটিয়াভাবে চীনকে দায়ী করে যাচ্ছে।এখন যদি ধরে নেই যে,বানিজ্য যুদ্ধের কারনে চীনের সাথে আমেরিকার বানিজ্য ঘাটতি কমে গেল।তাহলে কি আমেরিকার মোট বানিজ্য ঘাটতি কমবে?উত্তর হল না।মার্কিন ঋন নির্ভর অর্থনীতির যে স্ট্রাকচার তারা দাঁড় করিয়েছে তাতে তাদের বানিজ্য ঘাটতি দিন দিন বেড়েই চলবে।২০১৪ সাল থেকে যদি হিসেব করি তাহলে দেখা যাবে আমেরিকা এশিয়া থেকে যে পরিমান আমদানি করে তার ছোট একটা অংশ করে চীন থেকে।কিন্তু সেটা ১০০% চীন উৎপাদন নয়।চীন থেকে যে পন্য আমদানি করে তার বিশাল অংশের জন্য চীন হল এসেম্বলি হাব।ধরে নেয়া যায় আইফোনের কথা।একেকটা আইফোনের আমদানি ব্যয় ৪০০ ডলার।এই ৪০০ ডলারের মধ্যে চীনের আয় হল মাত্র ২৫ ডলার।কারন আইফোন আমদানি বিভিন্ন অংশ আমদানি করতে আমেরিকা(সেমি কন্ডাক্টর),জাপান,দক্ষিন কোরিয়া এবং তাইওয়ান থেকে।এমনি যে কোম্পানি আইফোন তৈরি করে সেটাও তাইওয়ানি কোম্পানি ফক্সকন।এখন এই ৪০০ ডলার বানিজ্য ঘাটতির জন্য চীনকে দোষ দেয়া যায়?কিংবা এই ৪০০ ডলার কি বানিজ্য ঘাটতির সাথে যোগ করা যায়?অর্থাৎ পুরু এশিয়া জুড়ে যে পন্য উৎপন্ন তার গন্তব্য হল চীন এবং সেখানে এসেম্বলিং হয়ে সেটা আমেরিকায় প্রবেশ করে।এই জন্য চীনের জিডিপির সাথে এশিয়ার অন্য দেশগুলুর জিডিপি নির্ভরশীল।একটা বিষয় মনে রাখা দরকার।উন্নত বিশ্বের বিশেষ করে ইউরোপ আমেরিকার জিডিপি গ্রোথের ফলে এশিয়ার অনুন্নত দেশের জিডিপি গ্রোথ হয় না কিন্তু চীনের জিডিপি গ্রোথের সাথে এশিয়ার অনুন্নত দেশগুলুর জিডিপি গ্রোথ ওতপ্রোতভাবে জড়িত।চিত্র- ২ এবং চিত্র- ৩ এবং চিত্র- ৪
মজার ব্যাপার হল চীন এখনো তেমন কোন হাই ভ্যালু পন্য উৎপাদন করে না।যেটা করে জাপান বা উত্তর কোরিয়া।এখন বিকল্প প্রশ্ন হল যে পরিমান আমদানি আমেরিকা,চীন থেকে করে সেই পরিমান আমদানি চীন,আমেরিকা থেকে করে না কেন? এর উত্তর হল আমেরিকা তেমন কোন পন্যের উৎপাদন করে না বা করতে পারবেও না।(চিত্র-৫)চীন মুলত আমেরিকার কৃষি পন্য,বিমান এবং সেমি কন্ডাক্টরের ক্রেতা।আমেরিকার কৃষি টিকে সরকারের ভর্তুকির কারনে। একারনে তার দামও সহনীয়।অন্যদিকে সেমি কন্ডাক্টর এবং বিমান শিল্পে আমেরিকার ব্যাবসা হল মনোপলি ধরনের।এছাড়া আমেরিকা এমন কোন পন্য উৎপাদন করে না যেটা বানিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা যায়। আমেরিক চীন থেকে সবচেয়ে বেশি যে পন্যগুলু আমদানি করে তা হল কম্পিউটার,সেল ফোন,পোশাক,টয় এবং স্পোর্টিং আইটেম।এই পন্যের বেশিভাগের কাঁচামাল আবার চীন,আমেরিকা/অন্য দেশ থেকে আমদানি করে থেকে আমদানি করে।উদাহরণ হিসেবে যদি আমরা আইফোনের কথা ধরি তাহলে দেখা যাচ্ছে যে,এক্সিলেরোমিটার তৈরি করে করে জার্মান কোম্পানি BOSCH এবং মার্কিন কোম্পানি Invensense,অডিও চিপসেট তৈরি করে মার্কিন কোম্পানি CIRUSLOGIC,বেস বেন্ড প্রসেসর তৈরি করে আমেরিকান কোম্পানি QUALCOM,ব্যাটারি তৈরি করে দক্ষিন কোরিয়ায় কোম্পানি SAMSUNG এবং চাইনিজ কোম্পানি DISEAY,ক্যামেরা তৈরি করে জাপানিজ কোম্পানি SONY এবং আমেরিকান কোম্পানি OMNIVISION,চীপসেট এবং প্রসেসর তৈরি করে দক্ষিন কোরিয়ার কোম্পানি SAMSUNG এবং তাইওয়ানিজ কোম্পানি TSMC,কন্ট্রোলার চিপ্স তৈরি করে সিরিয়ান কোম্পানি PMC এবং মার্কিন কোম্পানি BROADCOM,ডিসপ্লে তৈরি করে জাপানিজ কোম্পানি SHARP এবনহ তাইওয়ানিজ কোম্পানি TSMC,গরিলা গ্লাস তৈরি করে মার্কিন কোম্পানি CORNING. এছাড়াও আছে ফ্রান্স,ইটালি,নেদারল্যান্ড এবং সিংগাপুর।মোট ৪৩টা দেশে তারা তাদের বিভিন্ন পার্টস তৈরি করে চীনে এসেম্বলি করে।এমনি মাইনিং পন্যের জন্য তারা মংগোলিয়াতেও গিয়েছে।কম্পিউটার পন্যের বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য।টয় এবং স্পোর্টস আইটেমের জন্য দরকার প্লাস্টিক।আমেরিকার প্লাস্টিকের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হল চীন।এই জন্য বানিজ্য ঘাটতির জন্য চীনকে একা দায়ী করা যায় না।
৩) চীন টেকনোলজি চুরি করছে।
যে কোন বর্ধনশীল অর্থনীতি একটা পর্যায়ে অন্যের থেকে প্রযুক্তি হাতিয়ে নেয় বা চুরি করে।কিন্তু অর্থনৈতিক অবস্থা এই অনৈতিক কাজকে বৈধতা দেয় না কিন্তু চিন্তা করা উচিত এটাকে কিভাবে ইফেক্টিভ করা যায়।দক্ষিন কোরিয়া এবং জাপানের বিরুদ্ধেও ১৯৮০ এর দশকে প্রযুক্তি চুরির অভিযোগ তুলেছিল আমেরিকা।কিন্তু তাদের নিজেদের সক্ষমতা অর্জনের পর তারা সেখান থেকে বেরিয়ে আসে বিশেষ করে যখন তাদের মাথাপিছু আয় ২৫,০০০ ডলারে পৌঁছে।
চীনের বর্তমান প্রবৃদ্ধির হার চলমান থাকলে ২৫,০০০ ডলার মাথাপিছু আয়ে পৌঁছাতে তার আরো এক দশক লাগবে।এমচেমের ২০১৯ সালে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী তারা ৩০০ মার্কিন উপর জরিপ চালিয়েছিল।যেখানে ৫৯% বলেছে চীন ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টির অধিকার রক্ষায় গত ৫ বছরে যথেষ্ট উন্নতি করেছে।৩৭% বলেছে এটা আগের অবস্থায়ই আছে।চীনা কোম্পানিগুলু রেনল্ট-নিসান এবং ফোর্ডের সহায়তায় বৈদ্যুতিক যানবাহন তৈরি করছে। অ্যামাজন এবং মাইক্রোসফ্টকে চীনে ক্লাউড-কম্পিউটিং সেবা বিক্রি করার আগে চীনা কোম্পানিগুলির সাথে অংশীদারিত্ব এবং প্রযুক্তি শেয়ার করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। এবং হ্যাঁ, ডুপন্ট এবং জেনারেল মোটরস তাদের চীনা যৌথ অংশীদারদের বিরুদ্ধে বাণিজ্য গোপনীয়তার অপব্যবহারের জন্য মামলা করেছে। কখনও কখনও প্রতিরক্ষা খাত সহ বোমারু বিমান এবং ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেম সম্পর্কিত তথ্য চুরির ঘটনা ঘটেছিল।তবে অনেক ক্ষেত্রে প্রযুক্তি হস্তান্তর হয়েছে দুই পক্ষের সম্মতিতে এবং দুই পক্ষের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির আলোকে।
বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার চুক্তি অনুযায়ী উন্নত দেশগুলু টেকনোলোজি ট্রান্সপারের জন্য তাদের কোম্পানিগুলুকে ইনসেন্টিভ দিতে বাধ্য।যাতে অনুন্নত দেশগুলু টেকসই উন্নয়ন করতে পারে।কিন্তু উন্নত দেশগুলু কি এই পদক্ষেপ নিয়েছিল?চীন উন্নয়নশীল নাকি উন্নত অর্থনীতি সেটা ভিন্ন আলোচোনার বিষয়।টেকনোলজি চুরি বা আইটি থেফটের অভিযোগ এক সময় জাপান এবং কোরিয়ার বিরুদ্ধেও ছিল। তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে এই ধারা কমতে কমতে এখন শুন্যের কোঠায়। চিত্র-৪।আমরা চিত্র- ৫ এর দিকে তাকায় তাহলে দেখতে পাবো কি ধরনের পন্য আমেরিকা,চীনে রপ্তানি করে।এই ধরনের পন্যের জন্য আমেরিকানদের চীনে বিনিয়োগের প্রয়োজন নেই।যদিও সম্প্রতি বোয়িং চীনে তাদের এসেম্বলি হাব গড়ে তুলেছে।যেটা ইউরোপিয়ান এয়ারবাস করেছে দশক আগে।
দ্রুব সত্য কথা হল আমেরিকায় শিল্প বিপ্লবের শুরুই হয়েছিল প্রযুক্তি চুরির মাধ্যমে।ইউরোপের পাওয়ার লোমের প্রযুক্তি চুরির করে সেটা আমেরিকা কাজে লাগিয়ে ১৮১৪ সালে পাওয়ার লোম শিল্পের শুরু করে।যেটাকে আমেরিকার অর্থনীতির শুরু ধরা যায়। ১৮৯১ সালে আমেরিকা ইন্টারন্যাশনাল কপিরাইট এক্ট পাশ করলেও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের এনিমি বিজনেস এক্ট চালু করে বিদেশ হতে বিশেষ করে ইউরোপ থেকে প্রযুক্তি চুরি করার বৈধতা দেয়।সেই আমেরিকা আজকে প্রযুক্তি চুরির জন্য চীনকে দোষ দিচ্ছে। আমেরিকা যত সময় নিয়ে তার আইন এবং রেগুলেশন শক্তিশালী করেছে চীন তার থেকে অনেক দ্রুত গতিতে তার আইন এবং রেগুলেশ শক্তিশালী করছে।একটা উদীয়মান অর্থনীতিকে তার কর্মের আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ডে নিয়ে আসতে সময় দিতে হয় যেটা আমেরিকার কাছে অগ্রহণযোগ্য। চিত্র- ৭।
৪) বানিজ্যের/বিনিয়োগের উপর রাস্ট্রীয় নিয়ন্ত্রন।
এটা সত্য কথা যে চীনে বিদেশী বানিজ্যের উপর নিয়ন্ত্রন আরোপ করে রেখছিল।এটার একটা মুল কারন হল চীনের অর্থনীতির মুল চাবিটা রাস্ট্রের হাতে।চীনের জিডিপিতে রাস্ট্রায়ত্ব কোম্পানিগুলুর অবদান হল ৩০%।কিন্তু ফাইনান্সিয়াল ক্রাইসিসের পর এই ধারা আস্তে আস্তে বদলাতে শুরু করেছে।তবুও গ্লোবাল ফরচুনের,ফরচুন-৫০০ তে স্থান পেয়ছে ১০৯ টি চাইনিজ কোম্পানি।যার মধ্যে মাত্র ১৫% হল বেসরকারি খাতের।বাকি সবগুলুই রাস্ট্রায়ত্ব।চীনের সাধারনত যে সব সেক্টরের বিদেশী বিনিয়োগে নিয়ন্ত্রন আরোপ করেছিল সেগুলু হল তেল।গ্যাস,ফাইনান্সিয়াল প্রতিষ্ঠান/মেডিকেল ইত্যাদি।সম্প্রতি তেল/গ্যাস সেক্টরের বিদেশী বিনিয়োগের বাধা তুলে নিয়েছে।মার্কিন বানিজ্য আলোচকেরা অভিযোগ করে আসছিল যে,চীনের বিদেশি বিনিয়োগের আইন অনৈতিক। Commission on the Theft of American Intellectual Property এর ২০১৩ সালে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী ৫০%-৮০% international intellectual property theft এর জন্য দায়ী হল চীন।মার্কিন বানিজ্য প্রতিনিধির মতে যৌথ মালিকানা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চীন মার্কিন কোম্পানিগুলুকে প্রযুক্তি হস্তান্তরে বাধ্য করছে।এবং চীন বিদেশে প্রতিষ্ঠানের intellectual property rights রক্ষায় পুরপুরি ব্যার্থ।কিন্তু বাস্তবতা এর থেকে আরো বেশি ভয়ংকর।
হাঁ চীন তার রেস্ট্রিক্টেড ৩৫টি সেক্টরে বিদেশী কোম্পানিগুলুকে প্রবেশাধিকার দিয়েছে।যেমন- গাড়ি উৎপাদন,নিউক্লিয়ার পাওয়ার,টেলিকমিউনিকেশান,ব্যাংক,মেডিকেল ইন্সটিটিউশান,তেল উৎপাদন ইত্যাদি।তবে শর্ত ছিল যে তারা স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রযুক্তি হস্তান্তর করবে।
তাহলে কেন আমেরিকা চীনের সাথে বানিজ্য যুদ্ধে জড়ালো।এর উদ্ধেশ্যই বা কি?
মুলত চীনের সাথে বানিজ্য যুদ্ধের আড়ালে উদ্দেশ্য হল দুইটা।
১) টেকনোলজিকাল সুপ্রিমেসিতে চীনকে আটকে রাখা। ২) দুনিয়াজুড়ে চীনের ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক প্রভাবকে নিয়ন্ত্রনে রাখা।
আগামির বিশ্ব প্রযুক্তিগত দিক থেকে যে যত বেশি অগ্রগামী হবে দুনিয়া জুড়ে তার প্রভাব তত বেশি থাকবে।এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।ঠিক এই চিন্তা থেকে চীন তার পলিসি প্রনয়ন করেছে।চীনে যে কোন সরকার চরম জাতীয়তাবাদী।২০১৬ সালে মার্কিন ক্ষমতায়ও আসেন জাতীয়তাবাদী ট্র্যাম্প।২০১৫ সালেই চীন তার ভিশন-২০২৫ ঘোষণা করেছিল।আর গণ্ডগোলটার শুরু এখান থেকেই।প্রযুক্তিগত দিক থেকে চীন এখন আমেরিকার ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলছে।মহাকাশ প্রযুক্তি থেকে ভার্চুয়াল প্রযুক্তি সবখানেই এখন তার আধিপত্য।
আর দুনিয়া জুড়ে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব কমানোর কোন হাতিয়ার আমেরিকার কাছে নেই। চীন যেখানে মিউচুয়াল বেনিফিটের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করছে ঠিক সেই জায়াগায় আমেরিকার অবস্থান তার বিপরিত মেরুতে।মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে আফ্রিকা,এশিয়া সব জায়গায় চীন ব্যাবসার মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করছে।আমেরিকনেরা এটা বুঝতে চাইনা যে চীনের অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলা মানে দুনিয়ার অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলা।কারন চীন এখন দুনিয়ার ম্যানুফ্যাকচারিং হাব।নিকট ভবিষ্যতে এই ধারা পরিবর্তনের কোন সম্ভাবনা নেই।
২৮ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:২৬
মোহাম্মদ মোস্তফা রিপন বলেছেন: চীনের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার এবং দেখার সুযোগ আমারো হয়েছে।২০৩০ সাল তারা চিপ সেক্টরের স্বাবলম্বী হবে এতে সন্দেহ নেই।চীন তার দ্বিমুখী অর্থনীতির মাধ্যমে শুধু উৎপাদক নয়,বিশাল একটা ভোক্তা শ্রেনি ক্রিয়েট করতে সক্ষম হয়েছে যাতে তাকে পুরুপুরি রপ্তানি নির্ভর হতে না হয়।আফ্রিকাতে ব্রিলিয়ন ডলার উদ্ধেশ্য হল সেখানে একটা বিশাল ভোক্তা সম্প্রদায় সৃষ্টি করা যাতে রপ্তানি বাজার ডাইভারসিফাই করা যায়।আর দক্ষিন চীন সাগরে দন্ধ লাগিয়ে চীনকে খুব বেশি কাবু করা যাবে না।
২| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৫:৪৩
রাজীব নুর বলেছেন: ২০১৭ সালে আমি ট্রাম্প সম্পর্কে বলেছিলাম- সামনের দিন গুলোতে ট্রাম্প অনেক ভুল করবেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। আমেরিকানদের উঁচু করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিচু করে ফেলবেন।
আমেরিকার বিদঘুটে পররাষ্ট্রনীতি আর উগ্র জাতীয়তাবাদ আমেরিকানদের উন্নতিতে বাধা তৈরি করবে।
ট্রাম্প অনেক হিসাব নিকাশ পাল্টে দেবেন। অনেক মিত্র দেশকে রেডকার্ড দেখাবেন।
৩| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৩৯
মোহাম্মদ মোস্তফা রিপন বলেছেন: বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ট্রাম্প সঠিক ছিল।
৪| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪৯
শাহ আজিজ বলেছেন: হংকং নিয়ে লিখুন । হাঙ্কিজরা অর্থ সম্পদ সরিয়ে ফেলছে । ফিলিপিন, ভিয়েতনাম , মালায়শিয়া , থাইল্যান্ড হবে হাংকিজদের নেক্সট উৎপাদন কেন্দ্র । চীনের ৮০ভাগ রফতানি করত হংকং এবং গুয়াংতোং প্রভিন্স । হাংকিজ্রা ব্রিটিশ পাসপোর্ট পেতে আবেদন করেছে । ভাইরাস রোড অ্যান্ড বেল্টের বেশ ক্ষতি করে দিল । অর্থাৎ আমরা যা ভাবতাম তা কিন্তু হচ্ছে না । আস্থা হারালে বাজার নষ্ট হয় । চীনের টেকনোলজি চুরি প্রবাদ প্রতিম । তবে তাদের মেধা আছে বলেই চুরি করতে পারছে । এই শি চীন পিং ২০০৯ সালে আমেরিকায় ৯ মাস ছিল বিবিধ রকম কাজ কাম শিখতে এবং সামাজিক অবস্থা বুঝতে । সেই শি এখন আজীবনের প্রেসিডেন্ট । ৭৮ সালে তেং আমেরিকায় গেলে মার্কিনী ব্যাবসায়িরা ধেয়ে আসে চীনে কারখানা বানাতে । যাইহোক আমেরিকার পরাজয় হবে না আবার চীন পুরো পৃথিবীর ব্যাবসা দখলে নিতে অক্ষম , এটি দুঃস্বপ্ন ।
লিখতে থাকুন ।
২৮ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:২৭
মোহাম্মদ মোস্তফা রিপন বলেছেন: হংকং ভিন্ন বিষয়।আর চীনের রপ্তানি আয়ের একটা বিশাল অংশ আসে শেনজেন থেকে।গুয়াংজু নয়।গুয়াংজু হল ট্রেডিং হাব।
৫| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:০২
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: চীন যুদ্ধ না চাইলেও তাকে যুদ্ধে যেতেই হবে।আমেরিকা নিজেকে একটু গুছিয়েই চেষ্টা করবে দক্ষিন এশিয়ায় অস্ট্রেলিংয়া সহ নতুন ফ্রন্ট খুলতে।তাছাড়া তার অর্থনীতি গতি পাবে না।তার অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তিই হলো যুদ্ধবাজ অর্থনীতি।
৬| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২১ ভোর ৬:৪২
সাসুম বলেছেন: লেখক বলেছেন: হংকং ভিন্ন বিষয়।আর চীনের রপ্তানি আয়ের একটা বিশাল অংশ আসে শেনজেন থেকে।গুয়াংজু নয়।গুয়াংজু হল ট্রেডিং হাব।
হংকং এর ব্যাপার টা আসলে এরকম না। হংকং থেকেই চীনের সব চেয়ে বেশি রপ্তানি হয় কারন হংকং ইন্টারন্যাশনাল হাব। দুনিয়ায়র সবাই এখানে এসে বসে আছে। কারন হংকং পুরা দুনিয়ার সাথে চীনের লিং আপ করছে। এখন হংকং কে দমাতে গত ৩০ বছর ধরে সেঞ্জেন কে তুলে এনেছে চায়না। এখন সেঞ্জেন কে দেখলে মনে হবে প্যারিস বা লন্ডন। পুরা শহর ঝা তকতকে। আমি নিজেই সেঞ্জেনের প্রেমে পড়ে গেছি।
বাট সেঞ্জেন হল মেনুফেকচারিং হাব। এখনো সব চেয়ে বেশি বিজনেস হয়ে থাকে গুয়াঞ্জু থেকে । এখন আবার চেংডু উঠে আসছে। কিন্তু, হংকং কে দমাতে গিয়ে চীন বর ভুল করে ফেলেছে। সব বিজনেস হেডঃ কোয়াটার গুলা এখন এশিয়ার অন্য দেশ গুলাতে যাচ্ছে। সিংগাপুর, মালেশিয়া, থাইল্যান্ড ইভেন লাওস তে মুভ করছে। আর সেঞ্জেন এ একটা করে সাব অফিস রেখে দিলেই চলে। হংকং এর ইন্টারনাশ্নাল হাব হিসেবে পতন চীনের জন্য একটা বিরাট লস। পশ্চিমারা জীবনেই সেঞ্জেন এ মুভ করবে না, যতই বলুক না কেন। এখন চায়না রা হংকং এর মত সেঞ্জেন কে ও ভিসা ফ্রি করতে চাচ্ছে। ১৪৪ ঘন্টা ভিসা ফ্রি এক্সেস আছে সেঞ্জেন এ । এটাকে হংকং এর মত স্পেশাল করতে চাচ্ছে।
৭| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:২৪
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: খুব ভালো ও বিশ্লেষণধর্মী লেখা। চীনের জনসংখ্যা তাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ আর আমাদের দেশে এটা একটা দায়। আমরা যদি চীনের মত আমাদের জনশক্তিকে দক্ষ করতে পারতাম ও সুদূরপ্রসারী বাণিজ্যিক নীতি প্রনয়ন করতে পারতাম তাহলে আমরাও ভালো করতাম। তবে আমাদের সময় এখনও ফুঁড়িয়ে যায়নি।
৮| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৩:০৮
রিফাত হোসেন বলেছেন: বিশ্লেষণধর্মী লেখা, খুব ধৈর্য্য নিয়ে পড়ে নিলাম। যা বলার উপরে অনেকেই বলে দিয়েছে। লেখক হিসেবে আপনিও অনেক কিছু আলোচনা করেছেন। নতুন কিছু যোগ করার কিছু পাচ্ছি না।
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:০৬
সাসুম বলেছেন: আপনার লিখাটা খুব সুন্দর।
ইকোনমিকাল দিক থেকে দেখতে গেলে আম্রিকা সব সময় ভোক্তা ছিল, আছে এবং থাকবে। এদিকে চীন যেটা করেছে, তারা ভোক্তা প্লাস কর্মী দুইটাই করে দেখিয়েছে। এখন চীন দুনিয়ার সব চেয়ে বড় উতপাদন কারখানা এবং দুনিয়ার সব চেয়ে বড় কমজিউমার কান্ট্রি। তারা এক অদ্ভুত ভাবে সেলফসাস্টেইন একটা সিস্টেম তৈরি করেছে। এবং এটা কিন্তু অব্যহত থাকবে। তারা এক এক করে পশ্চিমা প্রযুক্তির বিপরীত কিছু আবিস্কার করে ফেলেছে এবং তারা এটাকে তাদের সিস্টেমে ইন্টিগ্রেট করে নিয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে পশ্চিমা প্রযুক্তির চেয়ে ভাল ভাবে- উদাহরন জিপিএস সিস্টেম, ম্যাপিং সিস্টেম, ন্যাভিগেশান। এখন চীনের বাইদুর নিজেদের জিপিএস সিস্টেম আছে যেটা আম্রিকার বিমান বাহিনীর জিপিএস এর চেয়ে কোন অংশে কম না বরং কিছু কিছু যায়গায় বহু দূর এগিয়ে।
চীনের পিছিয়ে যাওয়ার যায়গার আরেকটা হল- সেমিকন্ডাক্টর,
আপনি বললে হয়ত বিলিভ করবেন না তারা এটার জন্য জান প্রাণ দিয়ে ফেলছে, শুধু মাত্র চীপ নিয়ে পড়ানোর জন্য দুনিয়ার প্রথম ইউনিভার্সিটি খুলে বসেছে।
আম্রিকার সাথে তাল মিলিয়ে আই বি এম, ইন্টেল, এপল, ওরাকল এর সাথে পাল্লা দিয়ে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং নিয়ে কাজ করছে এবং খুব তাড়াতাড়ি এটা নিয়ে পাল্লা দিবে বাকি দুনিয়ার সাথে। ( আমি চীনে একটা টেক কোম্পানিতে কাজ করছি ন্যানো টেক নিয়ে )
বাকি থাকে, অস্ত্র। দুনিয়াতে সব চেয়ে বড় অস্ত্র হল টাকা। তারা এ যায়গাতেও পাল্লা দিয়ে আগাবে বাট কখনো আম্রিকাকে হয়ত ফেলতে পারবেনা ১ নাম্বার থেকে বাট ঘাড়ের পিছনে নিঃশ্বাস ফেলবে সব সময়।
চীনের এই প্রভাব কে পাশ কাটানোর কোন ক্ষমতা আম্রিকার নাই, এটা আম্রিকা ও জানে। এখন এক্টাই উপায় যদি সাউথ চায়না সী আর কোরিয়ান পেনিন্সুলা তে কিছু ঝগড়া লাগায় দিয়া চীন কে দমানো যায়। তবে চীন ও জানে এটা, তাই তারা এই ফাদে কখনো পা দিবে না, তারা আগে তাদের পায়ের নীচে মাটি শক্ত করবে। দরকার হলে আরো ১০০ বছর এভাবে চালাবে।
তারা বেল্ট এন্ড রোড হাইওয়ে তে সবাইকে যুক্ত করছে। এরপর দুনিয়ার স্ট্রাটেজিক বন্দর গুলা দখল করছে। হাম্মামটোটা, করাচী, মালদ্বীপ, এদিকে রাখাইনে নিজেরা ন্যাভাল বেজ সহ বন্দর করছে।
আফ্রিকায় রাস্তা করছে নিজের টাকায়, সেটার পজিশান খেয়াল করলে দেখতে পারবেন এমব ভাবে যাতে ট্রুপ্স মুভ করান যায় তাদের এলাই কান্ট্রি থেকে।
অন্য দিকে মোজাম্বিকে আর জিবুতিতে তাদের সেনা আছে। কন্টিঞ্জেন্ট আছে। ন্যাভাল বেইজ করছে। তারা ধীরে ধীরে আগাচ্ছে কারো সাথে ঝগড়া না করে।
চীন কখনোই নিজ থেকে এটাক করবেনা এখন অন্তত। ধীরে ধীরে আগাবে। তারপর হয়ত আগামী শতাব্দি তে আম্রিকাকে ফেললেও ফেলতে পারে সামরিক দিক থেকে।
বাট আপাতত পুরা দুনিয়ার উপর ছড়ি ঘুরানোর জন্য আম্রিকার আরেক মাথাব্যাথা হয়ে উঠছে চীন। এত সহজে এই মাথাব্যাথা দূর করতে পারবেনা আম্রিকা।