![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুনিয়ার খবর রেখে শান্তি পাই।
স্বৈরশাসক এবং তাদের পশ্চিমা স্পনসর ছাড়াও ধর্মনিরপেক্ষ আরব উদারপন্থীরা গত তিন দশকে আরব রাজনীতিতে সবচেয়ে প্রতিক্রিয়াশীল এবং গনতন্ত্র বিরোধী শক্তি হিসাবে কাজ করেছে।
আমেরিকা এবং ইউরোপীয় স্পন্সর নিওলিবারাল অর্ডার এবং তাদের চাপিয়ে দেওয়া স্বৈরশাসক এবং এক নায়কদের বিরুদ্ধে আরব স্প্রিং এর এক দশক পার হয়ে গেছে।এই স্বৈরশাসক এবং এক নায়কদের দায়িত্ব ছিল আমেরিকা-ইউরোপের পুঁজিবাদী স্বার্থকে সুরক্ষিত করা।এরপরে সিরিয়া ও ইয়েমেন,লিবিয়া ও মিশরে কয়েক লাখবনি আদম জীবন হারিয়েছেন।
এই আরব বিদ্রোহে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে তিউনিশিয়ার বেন আলি,মিশরের হোসনি মোবারক,ইয়েমের আলি আব্দুল্লাহ সালেহ,যদিও এদের সবার পিছনে ছিল ইউরোপ-আমেরিকার ব্যাপক সমর্থন।এই বিদ্রোহ বাহরাইনী, সৌদি, জর্দান, মরোক্কান বা ওমানের স্বৈরশাসকদেরকে/এক নায়কদের ক্ষমতাচ্যুত করতে সক্ষম হয় নি। বেশিরভাগ পশ্চিমা মিডিয়া এদের বিরুদ্ধের বিক্ষোভকে চাপা দিয়েছিল।
আমেরিকা এবং তার জুনিয়র মিত্র ইউরোপ সিরিয়া এবং লিবিয়াতে সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে তাদের পক্ষে সম্ভব সব কিছুই করেছে।কারন তারা তাদের ইম্পেরিয়াল এজন্ডা বাস্তবায়নে রাজি ছিলেন না।আরবদের মধ্যে এই দুইটা দেশেই আমেরিকার হেজিমনি মেনে নিতে রাজি ছিল না।যার ফলশ্রুতিতে এই দুইটা দেশকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে।শুধু ওবামার আমলেই সিরিয়া ১ বিলিয়ন ডলারের অস্র সরবরাহ করা হয়েছিল যেগুলু সবই গেছে হয় আইএস না আল কায়দার মত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে।
হত্যাযজ্ঞ ও হতাহতের ঘটনাঃ
আমেরিকা এবং তার ইউরোপিয় মিত্ররা লিবিয়াইয় গাদ্দাফিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে লিবিয়ার সম্পদ নিজেরা ভাগ বাটয়ারা করে নিয়েছে এবং এটা এখনো চলমান রয়েছে।সিরিয়াতে তারা ব্যার্থ হলেও সিরিয়াকে তারা ব্যার্থ রাষ্ট্রে পরিনত করেছে।
দুনিয়ার অন্য যে কোন অঞ্চলের মত আমেরিকা এবং ইউরোপ আরব বিদ্রোহের ফসল ঘরে তুলে নিয়েছে।যদিও সব দেশে এটা সম্ভব হয়নি।কিন্তু প্রশ্ন হল আরব বিদ্রোহের ফসল ভোগ করার কথা ছিল যারা এই বিদ্রোহে অংশ নিয়েছিল এবং যারা এর নেতৃত্বে ছিল।দুর্ভাগ্য হল এর কোনটাই হয়নি।
এই আরব বিদ্রোহ এর পর দুইটি গোষ্ঠীর উদ্ভভ হয় একটা হল অর্থনৈতিকভাবে নিওলিবারেল, রাজনৈতিকভাবে উদারপন্থী, ধর্মনিরপেক্ষ, মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজীবী,তাদের কিছু অনুসারী এবং তাদের ব্যবসায়ী মিত্র আরেকটা হল উদারপন্থী ইসলামিস্ট,মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজীবী সমাজ,তাদের অনুসারী এবং ব্যবসায়ী মিত্র ।
দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠী মানব ও রাজনৈতিক অধিকারের বিষয়ে পশ্চিমা উদার ভাষায় কথা বলেছিল। তবে তারা উভয়ই নিওলিবারাল দারিদ্র্যের চরম প্রভাব দূরীভূত করার জন্য হালকা প্রতিকারমূলক ব্যাবস্থার আহ্বান ছাড়া অর্থনৈতিক অধিকারের মৌলিক বিষয় থেকে দূরে থেকেছেন। উদাহরণস্বরূপ,তারা ভুমি পুনঃবন্টনের কথা ভুলেই গেছেন,(যদিও মিশরে ১৯৫০ এর ধকে ভুমি পুনো বন্টন হয়েছিল) ১৯৭০ এর দিকে পুঁজিবাদী ব্যাবস্থার উত্থানের পর থেকে এটি আবার পুঁজিপতিদের হাতে কুক্ষিগত হয়ে যায়। এছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং কারখানার জাতীয়করন,মুলধনের সীমাবদ্ধতা,ধনীদের উপর করারোপ,এমনকি রাষ্ট্রীয় সামাজিক সেবার প্রসার।এর বাইরে ইসলামপন্থীরা তাদের নিও লিবারেলদের তুলনায় কিছু সামাজিক দায়বদ্ধতা দেখিয়েছে তাদের ব্যাংক সার্ভিস,হাসপাতাল,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং চ্যারিটির মাধ্যমে। পশ্চিমি মিডিয়ার সেলিব্রেটিঃ
ধর্মনিরপেক্ষ উদারপন্থীরা দাবি করেছিলেন যে এই বিদ্রোহগুলি তাদের নিজস্ব তৈরি এবং ইসলামপন্থী উদারপন্থীরা আন্তঃসংযোগকারী।এই ধর্ম নিরপেক্ষ উদারপন্থীদের পশ্চিমা মিডিয়া আরব এক নায়কদের মত সেলিব্রেটিতে পরিনত করেছিল।এজন্য তারা কাজে লাগিয়েছিলেন তাদের বি টীম হিসেবে কাজ করা কিছু এনজিওকে।
অন্যদিকে ইসলামপন্থীরা সহযোগিতা পেয়েছিল কাতার থেকে। কাতার ধরে নিয়েছিল যে তথাকথিত নিও লিবারেলদের সাথে আপোস না করেও উপসাগরীয় অঞ্চলের বাইরে উদারপন্থী মুসলিম ব্রাদারহুড সবচেয়ে ভালো বিকল্প হতে পারে।
যেহেতু উভয় গোষ্ঠীর প্রকল্পটি ছিল সাম্রাজ্যবান্ধব রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক স্বার্থে বিক্ষোভকে নিয়ন্ত্রণ এবং পরিচালনা করার জন্য।এজন্য তারা যে জোট তৈরি করেছিল তাতে কোনও বিরোধ ছিল না। প্রকৃতপক্ষে, তারা উভয়ই মিত্র হিসাবে স্থানীয় একনায়কতন্ত্রের সাম্রাজ্যবাদ সমর্থনকারীদের সমর্থন পেয়েছিল।
কিন্তু বাস্তবতা যখন আমেরিকা- ইউরোপ এবং তাদের স্থানীয় স্বার্থ সুরক্ষাকারি রাজাদের বিরুদ্ধে চলে যায় তখন প্রতি বিপ্লবের দায়িত্ব এসে পড়ে সৌদি-আমিরাতের উপর। তারা কাতারের সাথে তাদের সিংহাসন রক্ষার লক্ষ্য ভাগ করে নিয়েছিল, কিন্তু কাতারের বিপরীতে তারা কোনও বিপ্লবী প্রচেষ্টায় বিশ্বাস করেনি। ডমিনো প্রভাবের ফলে তাদের নিজস্ব শাসনের অবসান ঘটবে এই ভয়ে সৌদি ও আমিরাতীরা যে কোনও মূল্যে স্থানীয় একনায়কতন্ত্রকে রক্ষার জন্য জোড় চেষ্টা করেছিল।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলি, তাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক বিনিয়োগের স্বার্থে স্থিতিশীলতার পথ বেছে নিয়েছিল। পুতুল স্বৈরশাসকের রক্ষা করার চেষ্টা যদি কোন দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলে তবে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি নতুন প্রতিদ্বন্দ্বীকে সমর্থন করে।যদি নতুন প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক শক্তি তাদের পক্ষে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম বলে মনে করা হয় তখন তারা সেটাকে সমর্থন দেয়। অন্যথায় তারা স্বৈরশাসনের দিকে ফিরে যাওয়ার পক্ষে জোর প্রচেষ্টা চালান।যদিএই বিবর্তন ব্যর্থ হয়,তবে তারা সেই দেশকে ধংস স্তূপে পরিনত করে।আমাদের সামনে উদাহরন হল মিশর এবং ইয়েমেন ও লিবিয়া।মিশরে বিপ্লবের ফলে প্রতিষ্ঠিত শক্তি যখন তাদের স্বার্থের বাইরে চলে গেছে তখন তারা আরেক স্বৈরশাসকের মাধ্যমে সেটার রিপ্লেস করেছে।আর ইয়েমেন এবং লিবিয়াতে যখন সেটা পারেনি তখন এই দুই দেশকে তারা ব্যার্থ রাষ্ট্রে পরিনত করেছে।
স্বৈরাচারী জোট
মিশরে স্বৈরাচার বিরুধি জোটে ধর্মনিরপেক্ষ উদারপন্থীরা অন্তর্ভুক্ত ছিল।তাদের চিন্তা ছিল,যদি তারা ইসলামপন্থীদের সাথে গণতান্ত্রিক প্রতিযোগিতায় পরাজিত হয় তাহলে তারা আবার স্বৈরশাসনে ফিরে যাওয়াকে সমর্থন দিবে।ব্রাদারহুডের ২০১২ সালে নির্বাচনী বিজয়ের পর নতুন সরকার দেশি বিদেশী শত্রুর মুখোমুখি হয়েছিল।যার ফলে নতুন মিশরে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ব্যার্থ হয়।ফলশ্রুতিতে আমেরিকা এবং জুনিয়র মিত্র ইউরোপ আবার স্বৈরশাসককে ক্ষমতায় বসায়।
তিউনিশিয়ার লিবারেল ধর্ম নিরপেক্ষ কোন অংশেই মিশরের ধর্ম নিরপেক্ষ শক্তি থেকে আলাদা নয় কিন্তু তারা মিশরের অবস্থা থেকে ভালোই শিক্ষা নিয়েছে।কিন্তু সেখানে উদারনৈতিক ইসলামি শক্তি আন্নাদা পার্টি সম্পূর্ণ ভিন্ন পলিসি প্রনয়ন করেছে।যার ফলে উদারনৈতিক ইসলামপন্থী এবং লিবারেল ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি মিলে কোনোভাবে সেখানে স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে সমর্থ হয়েছেন।
লিবিয়া এবং সিরিয়ায় পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীরা ভালভাবে বুঝতে পেরেছিল যে বিদ্যমান শাসন ব্যবস্থার বিপরীতে সেখানে তাদের স্বপক্ষে একটি স্থিতিশীল বিকল্প অসম্ভব।এজন্য তারা দু'দেশকে রক্তের সাগরে নিমজ্জিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেটা লিবিয়ার তেলের/সম্পদের চুরির গ্যারান্টি দিতে পারে এবং সিরিয়ার শাসন কৌশলকে দুর্বল করতে পারে।যারা এই অঞ্চলে মার্কিন স্বার্থকে ডিক্টেট করতে পারে তাদের জোটবদ্ধ করে এদের পিছনে লেইল্যে দেওয়া হয়েছে।এতে তারা লিবিয়ায় সাফল্য পেলেও, সিরিয়ায় ক্ষেত্রে ফলাফল ভিন্ন।
ইয়েমেন আমেরিকা যুদ্ধ শুরু করেছিল তাদের প্রক্সি আল কায়েদার বিরুদ্ধে।পড়ে তারা সেটা সাব কন্ট্রাক্ট দেয় সৌদি-আমিরাতি জোটকে।সৌদি আমিরাতি জোট ইয়েমেন যে যুদ্ধ শুরু করেছিল এবং এখনো করছে সেটা যে কোন বিচার মানদণ্ডে গনহত্যা।যে বেহিসেবি যুদ্ধ তারা শুরু করেছিল সেটাকে নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা তারা এখনো করেই যাচ্ছে।
এসব বিপ্লব চেষ্টার একটা অতি বাস্তব ডাইমেনশন হল বহুদা বিভক্ত বিপ্লবের গোষ্ঠীগুলু তাদের অর্থনৈতিকভাবে দুরাবস্থায় পতিত জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক মুক্তির কথা বললেও অর্থনৈতিক মুক্তির বিষয়টা তারা বেমালুম চেপে গিয়েছিলেন।
দীর্ঘ এবং কঠোর সংগ্রাম
পরের বছরগুলিতে আলজেরিয়া, ইরাক, সুদান এবং লেবাননে এই বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল, একই অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্য দিয়ে তারা গেলেও স্ব-নিযুক্ত উদারপন্থী বক্তারা গত দশকের ব্যর্থতা থেকে কিছুই শিখেননি,যার ফলে তারাও এখন ধংসে নিমজ্জিত। সুদান এবং আলজেরিয়ার মতো কসমেটিক রাজনৈতিক পরিবর্তনগুলি তাদের সাফল্যের শিখর পৌঁছে দিলেও,দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতায় কোনও পরিবর্তন হয়নি।এটাই ছিল পশ্চিমের আরব বসন্তের আল্টিমেট অউতফুট।
আরব বিদ্রোহের ফলে বহু মানুষের জীবন হানি ঘটেছে যা ধারনারও অতীত। বেশ কয়েকটি আরব দেশে স্বৈরশাসন এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সাথে ধর্মনিরপেক্ষ উদারপন্থী-ফ্যাসিবাদীদের সহযোগিতা ছিল সহায়ক ও সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী। তবুও পশ্চিমা নিওলিবারেল পুঁজিবাদের প্রধান কণ্ঠস্বর, দি ইকোনমিস্ট ধর্মনিরপেক্ষ উদারপন্থী ব্যতীত সবাইকে দোষারোপ করে।তাদের মুল টার্গেট হল উদারপন্থী ইসলামিস্টরা।যাতে আগামি কয়েক দশকেও তারা আর ঘুরে দাঁড়াতে না পারে।এই জন্যই তারা বেচে নিয়েছে তথাকথিত নিওলিবারেল ধর্মনিরপেক্ষতা বাদিদের।
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১:০১
রাজীব নুর বলেছেন: খুব কঠিন বিষয় নিয়ে লিখেছেন।