![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুনিয়ার খবর রেখে শান্তি পাই।
সিরিয়ার ইতিহাস নিয়ে খুব বেশী আগে যাওয়ার ইচ্ছে নেই।
আরবদের কাছে “বালাদে শাম” আর পবিত্র কোরআনের সুরা রুমের সেই “ফি আদনাল আরদি” বা নিকটতর নিম্ন এলাকার দেশ হল সিরিয়া।সিরিয়াতে মানব ইতিহাসের প্রধান প্রধান সভ্যতার চূড়ান্ত সংঘাতগুলি হয়েছে। সেটি যেমন ইরানীদের সাথে গ্রীক ও রোমানদের, তেমনি খৃষ্টানদের সাথে মুসলমানদের।এই সিরিয়ার মাটিতে ৬ দিন ব্যাপি ইয়ারমুকের যুদ্ধে তৎকালীন বিশ্বশক্তি রোমানদের পরাজিত করে ইসলাম প্রধান বিশ্বশক্তি রূপে আবির্ভূত হয়। মুসলিম বীর সালাউদ্দিন আয়ুবী এ ভূমিতেই ইউরোপীয় ক্রসেডার বাহিনীকে পরাজিত করে মুসলিমদের হৃতগৌরব উদ্ধার করেছিলেন।হযরত মোয়াবিয়া (রাঃ)র রাজনৈতিক শক্তি এবং তার হাতে উমাইয়া রাজবংশ গড়ে উঠার মূল কারণ ছিল সিরিয়ার ক্ষমতা। নাসিরুদ্দিন আল-বানীর মত স্কলার ও ইমাম তায়মিয়ার মত মোজ্জাদ্দেদগণ সিরিয়া থেকেই মুসলিমদের পুণর্জাগরণের চেষ্টা করেছিলেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সিরিয়া দখল করার পর এর কতৃত্ব দেওয়া হয় ফ্রান্সের উপর।আর এই ফ্রান্স সিরিয়াকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করেন। তুরস্কের ইসলামী সাম্রাজ্য অটোমান অ্যাম্পায়ার (ওসমানিয়া সাম্রাজ্য) ছিল মধ্যপ্রাচ্যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য বড় বাধা তাই প্রথম মহাযুদ্ধে জয়ী হওয়ার কারণে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসকরা এই সাম্রাজ্য ভেঙে টুকরো টুকরো করে ইরাক, জর্ডান, কুয়েত, সৌদি আরব ইত্যাদি অসংখ্য তাঁবেদার রাষ্ট্রের জন্ম দেয়।বিবিসি সংবাদদাতা পিটার ম্যান্সফিল্ড লিখেছেন,কায়রোর এক চায়ের টেবিলে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল এক কলমের খোঁচায় জর্ডান নামে এক রাষ্ট্রের জন্ম দেন। অথচ এমন একটি রাষ্ট্রের ঐতিহাসিক ভিত্তি যেমন ছিল না, প্রয়োজনও ছিল না।এটা করা হয়েছে শুধু তাদের জুলুমের সুবিধার্থে।
যেহেতু সিরিয়া এখানে ভিকটিম।আর তাকে ভিক্টিমাইজ করার কাজটা করেছে সৌদি রাজপরিবার।সেই জন্য এই সৌদি রাজপরিবারের ইতিহাসটা সংক্ষেপে জানা প্রয়োজন।
১৯২৭ সালের আগে পৃথিবীতে সৌদি আরব নামে কোন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ছিলনা।১৯২৭ সালের ২৭ মে জেদ্দা চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটিশরা Kingdom of Nejd and Hejaz-কে স্বাধীন হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।এর আগের এবং পরের ইতিহাস সৌদি রাজাদের ব্রিটিশ গোলামির ইতিহাস।রিয়াদের নিকটস্থ দিরিয়া নামের একটি কৃষিবসতির প্রধান ছিলেন মুহাম্মদ বিন সৌদ।এই মুহাম্মদ বিন সৌদ দিরিয়া আমিরাত গঠন করেন।১৭৬৫ সালে মুহাম্মদ বিন সৌদ-এর মৃত্যু হলে তার ছেলে আবদুল আজিজ দিরিয়ায় ক্ষমতাসীন হয়।এই আবদুল আজিজ তত্কালীন বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী মোড়ল ব্রিটেনের সাথে হাত মিলিয়ে তুরস্কের খলিফাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাতে থাকে।আব্দুল আজিজের মৃত্যুর পর তার ছেলে আবদুল সৌদ বিন আবদুল আজিজ ক্ষমতায় এসে ব্রিটিশদের তুর্কিদের পরাজিত করে ১৮০৩ সালে মক্কা ও ১৮০৪ সালে মদিনা দখল করে নেয়। দুই পবিত্র নগরী দখল করে তারা ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালায়। তারা মক্কা-মদিনার বহু মুসলিমকে হত্যা করে।এসবই চলে ব্রিটিশদের অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা নিয়ে।ইরাক-মক্কা-মদিনায় সৌদিদের এই ধ্বংসযজ্ঞে তত্কালীন তুর্কি খলিফাগণ ভীষণ রুষ্ট হন। ১৮০৮ সালে খলিফা ২য় মাহমুদ ক্ষমতাসীন হয়ে সৌদিদের দমনে শক্তিশালী সেনাদল পাঠান। ব্রিটিশ বাবারা এবার আর সৌদিদের বাঁচাতে পারেনি। ১৮১৮ সালে সৌদের ছেলে, তত্কালীন সৌদি শাসক আবদুল্লাহ বিন সৌদ তুর্কিদের কাছে আত্মসমর্পণ করে।
আবদুল্লাহ বিন সৌদকে বন্দী করে ইস্তাম্বুলে নিয়ে যাওয়া হয়। দুই পবিত্র নগরী ও বহু মসজিদ ধ্বংসের শাস্তি হিসেবে খলিফা ২য় মাহমুদ-এর নির্দেশে আবদুল্লাহ বিন সৌদ ও তার দুই ছেলেকে ইস্তাম্বুলে প্রকাশ্যে শিরচ্ছেদ করা হয়। এভাবেই প্রথম সৌদি আমিরাত (১৭৪৪-১৮১৮)-এর পতন হয় ও পবিত্র মক্কা-মদিনাসহ আরবে উসমানিয়া খিলাফতের শাসনকর্তৃত্ব ফিরে আসে।সৌদ পরিবারের দিরিয়ার আখড়া ১৮১৮ সালে ধ্বংস হয়ে গেলে প্রথম সৌদি আমিরাতের শেষ আমীর আবদুল্লাহর তুর্কি নামের এক পুত্র মরুভূমিতে পালিয়ে যায়। এই তুর্কি বিন আবদুল্লাহ পালিয়ে বনু তামিম গোত্রে আশ্রয় নেয়। পরে ১৮২১ সালে সে আত্মগোপন থেকে প্রকাশ্যে এসে উসমানিয়া খিলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
১৮২৪ সালে তুর্কি বিন আবদুল্লাহ উসমানিয়াদের নিয়োজিত মিশরীয়দের হটিয়ে দিরিয়া ও রিয়াদ দখল করে নেয়। রিয়াদকে রাজধানী করে গঠিত এই “নজদ আমিরাত” ইতিহাসে দ্বিতীয় সৌদি রাজ্য নামে পরিচিত। দ্বিতীয় সৌদি রাজ্যটি অবশ্য খুব কম এলাকাই দখলে নিতে পেরেছিল। এটি বেশিদিন টিকেওনি।তবে এবার সৌদ পরিবারে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব শুরু হয়। কথিত ইমাম তুর্কি বিন আবদুল্লাহকে তাঁর এক জ্ঞাতি ভাই মুশারি বিন আবদুর রহমান বিদ্রোহ করে ১৮৩৪ সালে হত্যা করে। তবে ক্ষমতা পায়নি মুশারি। তুর্কির ছেলে ফয়সাল এরপর নজদ আমিরাতের ইমাম হয়।
সৌদ পরিবারের অন্তর্দ্বন্দ্ব চলতেই থাকে। অবশেষে ১৮৯১ সালে মুলায়দার যুদ্ধে উসমানিয়াদের অনুগত রাশিদী বাহিনীর হাতে দ্বিতীয় সৌদি আমিরাতের পতন ঘটে। সৌদিদের শেষ ইমাম আবদুর রহমান বিন ফয়সাল তার সাঙ্গোপাঙ্গসহ পালিয়ে যায়। আবদুর রহমান বিন ফয়সাল কুয়েতি রাজপরিবারের সহায়তায় সৌদিরা উসমানিয়া খিলাফতের কর্তৃত্বাধীন নজদে একের পর এক চোরাগুপ্তা হামলা চালাতে থাকে। ১৮৯৯ সালের জানুয়ারিতে কুয়েতের আমির মুবারক আল সাবাহ ব্রিটেনের সাথে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি করে কুয়েতকে ব্রিটেনের করদরাজ্য (Protectorate)-এ পরিণত করেন। তুরস্কের উসমানিয়া খিলাফতের প্রভাবের বিরুদ্ধেই কুয়েত এই চুক্তি করে ব্রিটেনের সাথে।সৌদ পরিবারের লড়াইটিও ছিল উসমানিয়া খিলাফতের বিরুদ্ধেই।আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ ১৯০১ সালের শেষের দিকে কুয়েতের আমির মুবারকের কাছে উসমানিয়াদের নিয়ন্ত্রিত রিয়াদ আক্রমণের জন্য সাহায্য চায়। ব্রিটিশ মদদপুষ্ট কুয়েত সানন্দে ইবনে সৌদকে ঘোড়া ও অস্ত্র সরবরাহ করে। ১৯০২ সালের ১৩ জানুয়ারি ইবনে সৌদ সৈন্যসহ রিয়াদের মাসমাক দুর্গ আক্রমণ করে। মাসমাকের উসমানিয়া অনুগত রাশিদী প্রশাসক ইবনে আজলানকে হত্যা করে সৌদিরা। ইবনে সৌদ যুদ্ধজয় শেষে ইবনে আজলানের ছিন্নমস্তকটি নিয়ে দুর্গশীর্ষে আসে এবং নিচে সমবেত উদ্বিগ্ন রিয়াদবাসীর দিকে ছুঁড়ে মারে।১৯০৯ সালে ব্রিটিশরা সামরিক অফিসার William Henry Irvine Shakespear-কে কুয়েতে নিয়োগ দিলে সৌদ পরিবার আরো শক্তিশালী হয়ে উঠে। শেক্সপিয়ারকে ইবনে সৌদ সামরিক উপদেষ্টা বানিয়ে নেয়। ১৯১৩ সালে সৌদিরা উসমানিয়া সৈন্যদের কাছ থেকে পূর্ব আরবের গুরুত্বপূর্ণ মরুদ্যান হাসা শহর দখল করে নেয়। এর পর পার্শ্ববর্তী কাতিফ শহরও সৌদিরা দখলে নেয়।পরের বছর ১৯১৪ সালে বিশ্বজুড়ে ১ম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। ব্রিটেন-ফ্রান্স-রাশিয়ার মিত্রশক্তি জার্মানি-উসমানিয়া খিলাফতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। রিয়াদে ব্রিটিশরা শেক্সপিয়ারের মাধ্যমে সৌদিদের সাথে উসমানিয়া অনুগত রাশিদীদের যুদ্ধ লাগায়।১৯১৫ সালের জানুয়ারিতে সংঘটিত এই যুদ্ধে রাশিদীরা জয়ী হয় ও শেক্সপিয়ারকে হত্যা করে। রাশিদীরা শেক্সপিয়ারের শিরশ্ছেদ করে ও তার হেলমেট উসমানিয়াদের কাছে হস্তান্তর করে। উসমানিয়ারা সৌদিদের সাথে ব্রিটিশদের সম্পর্কের প্রমাণস্বরূপ শেক্সপিয়ারের হেলমেট মদিনার প্রধান ফটকে ঝুলিয়ে দেখায়।
শেক্সপিয়ারকে হারিয়ে বিপর্যস্ত ইবনে সৌদ ১৯১৫ সালের ডিসেম্বরে ব্রিটিশদের সাথে দারিন চুক্তি স্বাক্ষর করে। ব্রিটিশদের পক্ষে ব্রিটেনের মধ্যপ্রাচ্য প্রধান মেজর জেনারেল স্যার পার্সি কক্স ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তি মোতাবেক সৌদি রাজত্ব ব্রিটিশদের করদরাজ্য (Protectorate)-এ পরিণত হয়।দারিন চুক্তির আওতায় আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ ব্রিটিশদের কাছ থেকে বহু অস্ত্র ও মাসে ৫,০০০ পাউন্ড ভাতা (দালালির পুরস্কার) পেতে থাকে।যুদ্ধের পর ব্রিটিশরা ইবনে সৌদকে ১ম বিশ্বযুদ্ধের উদ্বৃত্ত বিপুল গোলাবারুদ দিয়ে দেয়। ওই ব্রিটিশ অস্ত্র ও গোলাবারুদের সম্ভার নিয়ে সৌদিরা ক্রমধ্বংসমান উসমানিয়া খিলাফতের অনুগত রাশিদীদের ওপর দক্ষিণ-পশ্চিম আরব অঞ্চলে আক্রমণ শুরু করে। ১৯২০ থেকে ১৯২২ সাল পর্যন্ত লড়ে রাশিদীরা শেষ পর্যন্ত সৌদিদের হাতে পুরোপুরি পরাজিত হয়। ফলে আরবে আল-সৌদ পরিবার নিয়ন্ত্রিত ভূ-খণ্ডের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে ওঠে। ইরাকে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত Percy Cox-এর মধ্যস্থতায় ১৯২২ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত Uqair Protocol-এর আওতায় ওই বিশাল অঞ্চলে সৌদি রাজত্ব স্বীকৃতি লাভ করে।১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ইবনে সৌদ তার দুই রাজত্বকে একত্রিত করে তার নিজের ও বংশের পদবি অনুসারে দেশের নাম “Kingdom of Saudi Arabia” (আরবি: المملكة العربية السعودية al-Mamlakah al-‘Arabiyyah as-Su‘ūdiyyah) ঘোষণা করে।এভাবেই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির উসমানিয়া খিলাফতবিরোধী নীতির প্রকাশ্য সমর্থক হিসেবে, পদে পদে ব্রিটিশদের মদদ নিয়ে, দালাল আল-সৌদ পরিবার ১৯৩২ সাল থেকে Kingdom of Saudi Arabia নামে মুসলিমদের পবিত্র ভূমি দখলে রেখে শাসন করে যাচ্ছে।
এবার আসা যাক সিরিয়া বিষয়ে।সিরিয়া নিয়ে ৯০ দশক থেকে আলোচনা করলেই যথেষ্ট মনে হয়।এই আলোচনা সিরিয়াতে যে গনহত্যা হয়েছে সেটা জাস্টিফাই করা নয়।কারা করেছে এবং কেন করেছে সেটা সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারনা দেওয়া।সিরিয়া নিয়ে আলোচনা করতে গেলে আমাদের মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি বিষয়ে স্পষ্ট ধারনা থাকা জরুরী।মধ্যপ্রাচ্যে পক্ষ তিনটা।১ম পক্ষ –আমেরিকা,ইজরায়েল,সৌদি রাজ পরিবার,আমিরাতি রাজপরিবার,কাতারি রাজপরিবার,কুয়েতি রাজপরিবার,ইরাক(সাদ্দামের পর)লেবানন, ২য় পক্ষ-ইরান,সিরিয়া,হিজবুল্লাহ,৩য় পক্ষ্- তুর্কি। এই পক্ষ ভুক্তি দেখে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির ধারনা পাওয়া যায়।ব্যাতিক্রম হল তুর্কি।তুর্কির ইসলামপন্থী শাসক এরদোগান আদর্শিক কারনেই শুধু সিরিয়ার বিদ্রুহিদের সমর্থন দিয়েছেন,এটা যারা বিশ্বাস করে তারা বোকার স্বর্গে বাস করে।একজন ইসলামপন্থী হিসেবে এটা আমি বিশ্বাস করিনা।তুর্কির স্বার্থটা ভিন্ন জায়গায়।সেটা পরে বলছি।
মধ্যপ্রাচ্যের দ্বন্দ্বটা পুরুপুরি রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক।এই দ্বন্দ্বটাকে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব হিসেবে দেখিয়ে যখন মধ্যপ্রাচ্যের রাজারা সুবিধা করতে পারেনি তখনি আমেরিকা এবং ইজরায়েলের পরামর্শে শিয়া সুন্নি গুটি খেলা হয়।সৌদি নেতৃদ্ধধীন রাজারা এটা সুন্নি আরব রাজাদের সাথে শিয়া ইরানের দন্দে রূপ দেয়।অথচ শিয়া ইরানে যখন শাহ ক্ষমতায় তখন এই সৌদি রাজারা ছিল তার বিশ্বস্ত বন্ধু।যখন ইমাম খোমেনি ক্ষমতায় আসল তখনি তারা শত্রুতে পরিনত হল কারন তাদের রাজাগিরি ততক্ষনে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।ঠিক এই কারনে সৌদি রাজা এবং আমেরিকা মিলে সাদ্দামকে লেলিয়ে দিল ইরানের বিরুদ্ধে।তাকে দেয়া হল রাসায়নিক অস্র।যেটা সাদ্দাম ব্যাবহার করেছিল ইরান এবং ইরাকে শিয়া জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। কিন্তু এই সাদ্দাম যখন বিদ্রুহি হয়ে উঠল তখন তার উপর আরোপ করা হল নিষেদাজ্ঞা।এবং সবশেষে তারা ইরাক আক্রমন করল,এই সবই করা হল সৌদি রাজাদের সহযোগিতায়।এখন প্রশ্ন হল ইরান শিয়া হওয়ার কারনে তার ক্রমবর্ধমান শক্তিশালী হয়ে উঠা ঠেকানোর জন্য যদি এই যুদ্ধ তাহলে সাদ্দামের বেলায় কি বলবেন?কি বলবেন গাদ্দাফির বেলায়? তারা দুইজনই সুন্নি ছিল।সাদ্দাম এবং গাদ্দাফির বেলায় এটা পরিষ্কার মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি শিয়া সুন্নি কেন্দ্রিক নয়।এটা হল একান্ত ভাবে সৌদি রাজার ইচ্চা কেন্দ্রিক।অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্যে এমন কোন শক্তিকে সহ্য করা হবে না যেটা ইজরায়েলের জন্য ভয়ের কারন হয়ে উঠতে পারে।আর পুরু মধ্যপ্রাচ্যকে ইজরায়েলের জন্য নিরাপদ রাখার দায়িত্ব হল সৌদি রাজাদের।মনে করে দেখুন ২০০৩ সালে আমেরিকা-ব্রিটেন যখন ইরাক আক্রমন করে তখন টনি ব্লেয়ার স্পষ্ট করে বলেছিল তাদের ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে।শুধু সাদ্দামের কথা বলেনি।এই তারা হল সাদ্দাম,গাদ্দাফি এবং আসাদ।এটার বিস্তারিত পরে বলছি।
মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতি পরিচালিত হয় ইজরায়েলের স্বার্থের উপর নির্ভর করে।সিরিয়ার মানচিত্রের দিকে তাকালে দেখবেন এর এক দিকে ইজরায়েল,লেবানন,তুর্কি আরেক দিকে ইরাক এবং জর্ডান।আর মধ্যপ্রাচ্যে ইজরায়েল বিরুধি শক্তি হল ইরান,সিরিয়া আর হিজবুল্লাহ।ইজরায়েলের সাথে ঐতিহাসিক শত্রুতার কারনে আসাদ পরিবার সামরিক দিক থেকে শক্তিশালী হওয়ার চেষ্টা করেন।এরই প্রেক্ষিতে তারা ফ্রান্সের সহযোগিতায় পরমানু অস্র প্রকল্প শুরু করে।এটা একসময় ইজরায়েল এবং আমেরিকার কাছে ফাঁস হয়ে গেলে ২০০৮ সালে ইজরায়েল সৌদির সহায়তায় সেই প্রকল্পে বোমা হামলা করে ধ্বংস করে দেয়।আর এটাই ছিল ইজরায়েল এবং আমেরিকার মাথা ব্যাথার মুল কারন।তার পর থেকেই মুলত তারা আসাদকে হটানোর গোপন মিশন শুরু করেন।বিপরিত দিকে ইরানের উপর দীর্ঘমেয়াদী অবরোধেও টলাতে না পেরে তারা মধ্যপ্রাচ্যের নতুন মানচিত্রের দিকে নজর দেন।এবং ২০০৮ সালে আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট(তখন সিনেট সদস্য) জো বাইডেন মধ্যপ্রাচ্যের চুড়ান্ত মানচিত্র প্রকাশ করেন যেখানে ইরাক,ইরান এবং সিরিয়াকে কয়েকভাগে বিভক্ত করা হয়েছে।আর এর সবকিছুই করা হয়েছে সৌদি রাজার সম্মতিতে।উইকিলিক্সের ফাঁসকৃত তথ্যমতে আমেরিকা-ইজরায়েল-সৌদি ২০০৬ সালেই আসাদকে উৎখাতের পরিকল্পনা হাতে নেয়।এবং এটা করা সৌদি এবং ইজরায়েলি যৌথ সম্মতিতে।উল্লেখ্যএর মুল উদ্দেশ্য হচ্ছে ইরান এবং হিজবুল্লাহকে দুর্বল করে ইজরায়েলকে নিরাপদ করা।কারন ইজরায়েলের জন্য একমাত্র হুমকি হল সিরিয়া,ইরান এবং হিজবুল্লাহ।আমেরিকা এবং ইজরায়েলের এই সামরিক স্বার্থের দন্দে ইউরোপ যুক্ত হল তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থে।আর রাশিয়া যুক্ত হল তার স্ট্র্যাটেজিক স্বার্থে।ইউরোপ এবং তুর্কি তাদের জ্বালানীর গ্যাসের জন্য একান্তভাবে রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল।রাশিয়ার উপর এই নির্ভরশীলতা কাটানোর জন্য তারা অনেকদিন ধরে চেষ্টা তারা করতেছেন কাতার থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস আমদানির।আর গ্যাস পাইপলাইন বসাতে হলে তাদের দরকার সিরিয়াকে।কারন এই পাইপলাইনটা সিরিয়ার উপর দিয়ে বসাতে হবে।যেখানে অনেক চেষ্টা করেও সিরিয়া/রাশিয়াকে রাজি করানো যায়নি।দ্বিতীয়ত ব্রিটেনের স্বার্থ হল তার তেল কোম্পানি বিপির সৌদিআরব এবং আমিরাতে বিলিয়ন ডলারের চুক্তি।মুসলিম ব্রাদারহুড এবং মুরসির বিরুদ্ধে সৌদি এবং আমিরাতিরা এই জায়গায় ব্রিটেনকে বসে নিয়ে আসে।আর ফ্রান্সের স্বার্থ হল সৌদির কাছে রাফায়েল যুদ্ধ বিমান বিক্রি।
এবার আসুন দেখা যাক সিরিয়া আপ্রাইজিং।
সিরিয়াতে সরকার বিরুধি বিক্ষোভ শুরু হয় ১৭ মার্চ ২০১১ সালে,জর্ডানের সীমান্তবর্তী শহর 'দারা’তে।উল্লেখ্য এই জর্ডানকেই সৌদি বাদশা বাধ্য করেছিল বিদ্রুহিদের অস্র দেওয়ার রুট হিসেবে তার দেশকে ব্যাবহার করতে।
আলজাজিরা,বিবিসি এবং সিএনএনের রিপোর্ট অনুযায়ী সেইদিনের বিক্ষোভের সময় ১১ জন পুলিশ এবং ৪ জন বিক্ষভকারি নিহত হয়।এবং বিক্ষভকারিরা???বাথ পার্টির আফিস এবং দেরার কোর্ট ভবন পুড়িয়ে দেয়।অর্থাৎ বিক্ষভকারির তুলনায় পুলিশের মৃত্যুর সংখ্যা বেশী।এটা কি বিক্ষোভ ছিল?
Globalresearch এর ভাষ্য অনুযায়ী এটা ছিল সিআইএ এবং মোসাদের প্লট।আর আসাদ সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী এটা ছিল র্যাডিকেল সালাফিস্টদের কাজ(যারা মুলত মোসাদের সমর্থনপুষ্ট)।এই বিক্ষোভ নিয়ে ইজরায়েলি পত্রিকা Israel National News এর রিপোর্টঃ
“Seven police officers and at least four demonstrators in Syria have been killed in continuing violent clashes that erupted in the southern town of Daraa last Thursday. … and the Baath Party Headquarters and courthouse were torched, in renewed violence on Sunday. (Gavriel Queenann, Syria: Seven Police Killed, Buildings Torched in Protests,Israel National News, Arutz Sheva, March 21, 2011, emphasis added)
Globalresearch এর মতে এই বিক্ষোভ ছিল এই রকমঃ
The same “false flag” strategy of killing innocent civilians was used during the Ukraine Maidan protest movement. On February 20th, 2014, professional snipers were shooting at both demonstrators and policemen with a view to accusing president Viktor Yanukovych of “mass murder.”
এর পরেও ঘটনা হল হোলা ম্যাসাকার।মুলত যেটাকে বলা সিরিয়া সমস্যার শুরু।২৫শে মার্চ ২০১২,জুমার নামজের পর হুলাতে বিক্ষোভ শুরুর পর গুলি করে হত্যা করা হয় ১০০জন মানুষকে।যথারীতি বিশ্ব মিডিয়া প্রচার করতে শুরু করল সরকারী বাহিনী ১০০ জন বিক্ষোভ কারীকে গুলি করে হত্যা করেছে।যেটা গনহত্যার শামিল।এই ঘটনার পর নন শান্তি মিশনে নরওয়েজিয়ান জেনারেল রবার্ট হুড সহ আরও অনেকে হুলা সফর করে জাতিসংগের পর্যবেক্ষক হিসেবে।রবার্ট হুড ফিরে যে রিপোর্ট দেন যে,’’এই ঘটনায় তৃতীয় পক্ষ জড়িত’’।
জাতিসঙ্গের Un undersecretary general for peace keeping operation, Herve Ladsous এর ভাষায়
There was involved third party not Syrian people or regime.( there is a said third element, this people are not committed to cause of Syrian people. there committed to well agenda )
এই ঘটনা ঘটার ঠিক এক ঘণ্টা আগে ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা Victoria Noulan ঘোষণা করেন ‘’ right impose chapter 7, security council to invade Syria by land,sea and air’’
হত্যাকাণ্ডের সময় ভাগ্য ক্রমে বেঁচে যাওয়া ১১ বছরের আলী আল সাইদ বিখ্যাত হয়ে উঠেন।তার সাক্ষ্য মতে যারা গুলি করেছেন তারা বিক্ষোভকারী ছিলেন না বা পুলিশও ছিল না।তাদের মুখে লম্বা দাঁড়ি ছিল এবং মাথাই চুল ছিল না।
এবার এই চেহারার সাথে আইএস এবং আল নুসরা ফ্রন্টের সাদৃশ্য মিলিয়ে নেন।
VOA’র রিপোর্ট অনুযায়ী হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় জুমার নামাজের ঘণ্টাখানেক পর।যদিও হুলা সুন্নি অধ্যুষিত এলাকা তারপরেও বিশ্ব মিডিয়ায় প্রচার করা হয় এটা শিয়া অধ্যুষিত এলাকা।কিন্তু কেন?আসাদ নিজে একজন শিয়া।কিন্তু এই হত্যাকান্ডে যারা প্রান হারায় তারা সবাই আলাভি শিয়া।এবং একজন পার্লামেন্ট মেম্বারকেও হত্যা করা হয় যাকে বিদ্রুহিরা সরকারের কোলাবরেটর বলত।সিরিয়ার বিরুধি নেতা,যিনি প্রথম দিকে বিক্ষোভে অংশ নেন,পরে বিক্ষোভ থেকে সরে দাঁড়ান তার মতে ‘’we are completely against arming the uprising.as well as we against the foreign intervention’’
এত সব কিছুর পরেও কি বলা যায় সিরিয়াতে আসাদ বিরুধি আন্দোলন হচ্ছে নাকি অন্য কিছু।আর সিরিয়ার আজকের এই অবস্থার জন্য দায়ী হল সৌদি রাজ পরিবার।
২০১২সালের ২৮শে মার্চ আরব লীগের সম্মেলন ডাকা হয় সিরিয়া বিষয়ে আলোচনা করতে।সেই সভাতে সিরিয়া বিষয়ে কফি আনানের ৪ দফা শান্তি চুক্তি প্রতি সমর্থন জানানো হয় কিন্তু সৌদি এবং আমিরাতি রাজা সেই সম্মেলনে উপস্থিত থাকতে অস্বীকার করেন।কারন ততদিনে তারা দুই রাজা মিলে সন্ত্রাসীদের জন্য ৩০০ মিলিয়ন ডলারের ফান্ড গঠন করে ফেলেছে।
এই অর্থ তারা ব্যাবহার করেছে আইএসকে অস্র সরবরাহে।সিরিয়া থেকে আগত রিফুজিদের আশ্রয় দেওয়া হয় তুর্কি-সিরিয়া সীমান্তবর্তী শহরে।কিন্তু তাদেরকে দেওয়া হয়নি রিফুজি মর্যাদা।এই রিফুজিদের যাবতীয় দায়িত্ব দেওয়া সৌদি ইসলামিক রিলিফকে।কেউ চাইলেও এই রিফুজি ক্যাম্পে ঢুকতে পারবে না।এই রিফুজি ক্যাম্পকে পর্যবেক্ষণের বাইরে রাখার জন্য এটাকে রিফুজি মর্যাদা দেওয়া হয়নি।উদ্দেশ্য খুবই সহজ।
যারা তথাকথিত ইসলামপন্থী বা সিরিয়ার ব্যাপারে দরদি তাদের কাছে প্রশ্নঃ
পশিমা বিশ্ব ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষক।সিরিয়াতে একজন কক্টর সেকুলার শাসক ক্ষমতায় থাকলে তাদের সমস্যা কি?পৃথিবীর অন্য দেশের গনতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে তারা স্বৈরাচারকে ক্ষমতায় বসায়,কিন্তু আসাদকে কেন উৎখাত করতে চায়? মিশরে গনহত্যার নায়ক সিসিকে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে ক্ষমতায় বসাল কিন্তু আসাদের বেলায় সমস্যা কোথাই?
আর সৌদি-আমিরাতি রাজারা ১০ বিলিয়ন ডলার খরচ করে মুরসিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে সিসিকে ক্ষমতায় বসাল,কিন্তু রাজারা সিরিয়াতে আসাদকে ক্ষমতা থেকে সরাতে ব্রাদারহুডকে সমর্থন দিচ্ছে,কিন্তু কেন?
আপনি বলবেন আসাদ গনহত্যা করেছে।কিন্তু ২০১২ সালের আগেতো সিরিয়াতে খুনাখুনি ছিল না,সৌদি-আমিরাতি রাজারা তার আগেই আসাদকে সরাতে ৩০০ মিলিয়ন ডলারে ফান্ড গঠন করলেন।কিন্তু কেন?
শুনেন মুল সমস্যা হল আসাদ ইজরায়েল এবং আমেরিকা বিরুধি।তার সাথে এলাই হিসেবে আছে ইরান এবং হিজবুল্লাহ।এরা একাসাথে যদি শক্তিশালী হয়ে যায় তাহলে সেটা ইজরায়েলের অস্তিত্তের জন্য হুমকি,সেই সাথে হুমকি রাজাদের জন্য।
সোচি সম্মেলনে মতবিরোধ-সিরিয়াতে কি করতে চাচ্ছে রাশিয়া-তুরস্ক-ইরান।
১৪ ফেব্রুয়ারি সোচি সম্মেলনে তিন প্রেসিডেন্টের বৈঠকে সিরিয়া নিয়ে সব পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য একটা সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয় মূলত সিরিয়ার দুইটা এলাকার সমস্যা নিয়ে।
১)উত্তরপূর্ব সিরিয়া,মানবিজ থেকে কামিশলি/আল হাসাকা যেটা আমেরিকা দখল করে রেখছে।
২)ইদলিব প্রদেশ যেটা তুর্কি নিয়ন্ত্রিত সন্ত্রাসী গ্রুপগুলু দখল করে রেখেছে।
এই সম্মেলনে মৌলিকভাবে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পেয়েছে।বিশেষ করে সম্ভাব্য আমেরিকা সেনা প্রত্যাহার যেটা এপ্রিলে শেষ হবে বলে ওয়াশিংটন ঘোষণা করেছে।তবে সব পক্ষই একমত যে, মার্কিন প্রত্যাহার একটি অগ্রাধিকারমূলক বিষয় এবং এটা এই অঞ্চলকে নিরাপদ করবে। অতএব, যে কোন ভাবে এই উদ্দেশ্যটি সহজে পৌঁছাতে সহায়তা করা উচিত। তা সত্ত্বেও রাশিয়ার মুল ইচ্ছা হল মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে তুর্কির সাথে একটি অস্থায়ী চুক্তিতে উপনীত হওয়া।যদি এটা নিয়ে সমযোতায় পৌঁছানো না যায় তাহলে সিরিয়া থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার বাধাগ্রস্থ হতে পারে।
রাশিয়া তুর্কির জন্য একটা সম্ভাব্য সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে যার মাধ্যমে তুর্কি ইউপ্রেটিস নদীর পূর্ব তীরে ১২০০০ বর্গকিলোমিটারের বাফার জোনের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে যেটা এখন আমেরিকা দখল করে রেখেছে।উল্লেখ্য ইউপ্রেটিসর পূর্ব তীরের মোট আয়তন প্রায় ৪২০০০ বর্গকিলোমিটার।এই সমাধানে তুর্কিকে রাজি করানোর জন্য রাশিয়া আদানা চুক্তিকে পুনর্জীবিত করার প্রস্তাব দিয়েছে।সাবেক তুর্কি প্রেসিডেন্ট সুলেমান ডেমিরেল এবং হাফিজ আল আসাদের মধ্যে ১৯৯৮ সালে স্বাক্ষরিত আদানা চুক্তির ফলে সিরিয়া তার অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী পিকেকের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।
পুতিন চেষ্টা করছেন তুর্কির সাথে সিরিয়ার উচ্চ পর্যায়ের সম্পর্ক পুনরায় প্রতিষ্ঠা করতে।যার ফলাফল কয়েকদিন আগে তুর্কি প্রেসিডেন্টের কথায় প্রকাশ পেয়েছে।এরদোগান স্পষ্ট করে বলেছেন যে সিরিয়া এবং তুর্কির প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগ পুনরায় প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চলছে।রাশিয়ার মতে সাময়িকভাবে সিরিয়াতে তুর্কির উপস্থিতি দীর্ঘমেয়াদে ভালো ফলাফল বয়ে আনবে যদি সেটা সিরিয়ার অখণ্ডতা মেনে করা হয়।কিন্তু সমস্যা হল তুর্কি যদি একবার স্থায়ীভাবে সেনা মোতায়েন করে তাহলে পরবর্তীতে সৈন্য প্রত্যাহার করবে কিনা।সিরিয়া-তুর্কির মধ্যে এই অবিশ্বাস আপাতত কোন চুক্তিতে পৌঁছানোর পথে বড় বাধা।
রাশিয়া সিরিয়ার ঐক্যের ধারণা পরিত্যাগ করেনি এবং সমগ্র ভৌগোলিক এলাকাটিকে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে।এবং ভৌগোলিক নিরাপত্তার জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবুও, মস্কো বিশ্বাস করেন তুর্কি থেকেও বিপদটা বেশি আসবে আমেরিকার দিক থেকে।আর একারনেই মস্কো তুর্কি সেনা মোতায়েনের আমেরিকার অভিপ্রায়কে মেনে নিয়েছেন।
অন্যদিকে ইরান এবং সিরিয়ার ভয়ের জায়গা হল তুর্কি যদি একবার এই উত্তর পূর্ব সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে তাহলে কুর্দিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের উছিলায় সে এই এলাকা আর ত্যাগ করবে না।কারণ উত্তরপূর্ব সিরিয়াতে রয়েছে বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদের মজুদ।
অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যের পক্ষগুলু সিরিয়াতে তাদের প্রক্সি যুদ্ধ প্রায় পরিত্যাগ করেছে।নিকট ভবিষ্যতে সিরিয়াতে সৌদি দূতাবাস চালু করবে আশা করা যাচ্ছে।ইতিমধ্যে বাহরাইন সেটা করেছেও।মার্কিন পররাষ্ট্র সেক্রেটারি মাইক পম্পেওর চাপে সিরিয়াকে আরবলীগে ফিরিয়ে না নিলেও খুব দ্রুতই সেটা হবে বলে মনে হচ্ছে।যদিও কাতারা এখনো ইদলিবে আল কায়েদাকে সমর্থন দেওয়া বন্ধ করেনি শুধুমাত্র তুরস্কের সাথে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার স্বার্থে।কিন্তু গতকাল এরদোগানের কথায় এটা প্রকাশ পেয়েছে যে ইদলিবের সন্ত্রাসীদের আর সমর্থন দিবে না।এরদোগান স্পষ্ট করে বলেছে ইদলিবে সন্ত্রাসবিরুধি অভিযান খুব শিগ্রই শুরু হতে পারে এবং সেটা হবে রাশিয়া এবং ইরানের সাথে যৌথভাবে।কারণ রাশিয়া-তুর্কি-কাতার সিরিয়ান বাফার জোনে(মানবিজ-আইন আল আরব-তাল আবিয়াদ-আল হাসাকা-কামিশলি)তুর্কির উপস্থিতিকে মেনে নিচ্ছে।
অপরপক্ষে কুর্দিদের ভাগ্য নিয়ে এখন আমেরিকা আর মাথা ঘামাতে ইচ্ছুক নয়।আমেরিকা এটা নিশ্চিত যে সিরিয়াতে তারা হেরে গিয়েছে।মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে গিয়ে তারা তাদের ঘরের পাশেই রাশিয়াকে আসার সুযোগ করে দিয়েছে।আর সেটা ল্যাটিন আমেরিকার দেশ ভেনিজুয়েলা।এখন কুর্দিদের জন্য একটা মাত্র পথ খোলা সেটা হল সিরিয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে নিজেদের সমর্পণ করা।
৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:৩৩
মোহাম্মদ মোস্তফা রিপন বলেছেন: যেটা যেখান থেকে নিয়েছি সেই রেফারেন্স উল্লেখ করেছি।জ্ঞাতস্বরে এই ব্যাতয় ঘটাই না।মুল লেখাটি ছিল ২০১৪ সালের।কিছু বিষয় সংযুক্ত করে এখানে দিলাম।
২| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:৫৬
রাজীব নুর বলেছেন: ভালো লিখেছেন।
আপনি কি গল্প কবিতা লিখেন না?
৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:৫৮
মোহাম্মদ মোস্তফা রিপন বলেছেন: লেখা দুরের কথা কখনো পড়িও নাই।
৩| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪৪
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: সিরিয়ার এই যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার কোন শম্ভবনা আছে? কবে নাগাদ বন্ধ হতে পারে?
৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:৩৭
মোহাম্মদ মোস্তফা রিপন বলেছেন: ট্রাম্প থাকলে বন্ধ হবার সম্ভাবনা ছিল।বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর নিকট ভবিষ্যতে পুরুপুরি বন্ধ হবার সম্ভাবনা নেই।
৪| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:৩৪
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: জাতীয়তাবাদ আগমনের কারনে সকল সাম্রাজ্যই ভেঙ্গে যেত দুই দিন আগে আর পরে।পৃথীবির কোন সাম্রাজ্যই টিকে থাকতে পারতোনা।বৃটিশরাই পারলো না যুদ্ধে যয়লাভ করেও।
আমেরিকা বেশকিছুদিন সিরিয়াতে থাকবে যতদিন তাদের তেলচুরি অব্যাহত রাখতে পারে।
৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:৩৮
মোহাম্মদ মোস্তফা রিপন বলেছেন: সিরিয়াতে তারা শুধু তেলের জন্য যায়নি। তেল এখানে সামান্য বিষয়।
৫| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:৫৭
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: গিয়েছিল অন্য কারনে কিন্তু এখন আছে তেলের কারনে।এটা আমার বক্তব্য না এটা তাদেরই বক্তব্য।তারা বলছে পাহারা দিচ্ছি আসলে চুরি করছে সেটা প্রমানিত।
৬| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:৩১
করুণাধারা বলেছেন: আমার আগ্রহের বিষয়ে খুব চমৎকার ভাবে লিখেছেন, পড়ে অনেক কিছু জানা গেল।
চমৎকার এই পোস্টের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
৭| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:২৮
মোহাম্মদ মোস্তফা রিপন বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:৩২
কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে লেখাটির জন্য। এই আর্টিকেলে প্রকাশিত লেখার কোন অংশ বিশেষ যদি প্রকাশিত বই বা ওয়েবসাইট থেকে হুবহু নেয়া হয়, তাহলে তা অবশ্যই পোস্টে রেফারেন্স হিসাবে উল্লেখ্য করে দিতে হবে।