নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং এবাউট ওয়ার্ল্ড পলিটিক্স্,স্পেশালি মিনা রিজিয়ন। মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার কিছুই বিশ্বাস করি না।

মোহাম্মদ মোস্তফা রিপন

দুনিয়ার খবর রেখে শান্তি পাই।

মোহাম্মদ মোস্তফা রিপন › বিস্তারিত পোস্টঃ

লিসবন থেকে ভ্লাদিভোস্টক জোটের স্বপ্নের মৃত্যু

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২৭

Ostpolitik(পুর্ব ইউরোপের দেশগুলকে নিয়ে জার্মান পররাষ্ট্রনীতি) এর মৃত্যুর পাশাপাশি জার্মান রাশিয়ার সম্পর্কও সমাহিত হয়েছে।জার্মানির সাথে রাশিয়ার ভবিষ্যতের সম্পর্ক হবে দ্বান্দ্বিক কারন রাশিয়ার কাছে জার্মানির যে লেভারেজ ছিল সেটা জার্মানি হারিয়ে ফেলেছে।
অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার দরকার।সেই পর্যবেক্ষণের আলোকে জার্মানি,জাপান,ব্রাজিল এবং ভারতকে জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যপদ দেয়ার প্রস্তাব আসে কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে জার্মানির আচরনের কারনে আপাতত সেই সংস্কার তালাবদ্ধ।
জাতিপুঞ্জে জার্মানির রাষ্ট্রদূতকে তীব্র ভাষায় আক্রমন করেছে রাশিয়া এবং চীন।রাশিয়ার ভাষায় জার্মানিকে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হওয়ার দৌড়ে রাশিয়া সমর্থন করবে না আর চীনের ভাষায় জার্মানির জন্য পথটা অনেক কঠিন হয়ে গেল।
সিরিয়া নিয়ে বিরোধঃ
উত্তপ্ত বাক বিতন্ডার শুরু মুলত সিরিয়াতে,রাশিয়া এবং চীনের ভুমিকা নিয়ে জার্মানির কড়া সমালোচনার পর।জার্মানির ভাষায় রাশিয়া,সিরিয়াতে OPCW এর তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রশ্ন তুলে OPCW এর ভুমিকাকে খাটো করে সিরিয়ান সরকারের পক্ষ নিয়েছে।বিষয়টা এমন যে কৌশলগত অঞ্চলে জটিল ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা মূল্যবোধের উপর নির্ভরশীল।
এটা এখন পরিনত সত্য যে,সেই ২০০৬ সাল থেকে আমেরিকা,সিরিয়াতে সরকার পরিবর্তনের চেষ্টা করে যাচ্ছে।এইজন্য তারা সিরিয়াতে তাদের একটা প্রক্সি গ্রুপ তৈরি করেছে।এই গ্রুপকে প্রশিক্ষন এবং অস্র সরবরাহ করতে গিয়ে তারা আন্তর্জাতিক আইন এবং বিধি নিষেধ সব কিছুই অমান্য করেছে।
OPCW সিরিয়ার ডুমাতে রাসায়নিক হামলার জন্য সিরিয়ান সরকারকে দোষ দিচ্ছে।অথচ OPCW এর ফাঁস কৃত তথ্য থেকে জানা যায় OPCW ইচ্ছা কৃতভাবে ভুল তথ্য উপস্থাপন করেছে এবং OPCW এর হাতে প্রমান ছিল যে সিরিয়ার ডুমাতে রাসায়নিক হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা।এমনকি OPCW এর চীপ কেবিনেট OPCW এর কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন এই ব্যাপারে সব তথ্য মুছে ফেলতে।নিরাপত্তা পরিষদে OPCW এর প্রথম মহাপরিচালক জোসে বুস্তানির সাক্ষ্য প্রধানকে ইউএস,ইউকে এবং ফ্রান্স আটকে দিয়েছিল।বুস্তানির মতে এই দেশগুলু OPCW কে তাদের প্রচারনার পক্ষে ব্যাবহার করছে।জার্মানি এসব দেশগুলুর ন্যারাটিভকে নিরাপত্তা পরিষদে বিনা বাক্যে সমর্থন দিয়েছে এবং রাশিয়া এবং চীন,জার্মানির এই অনৈতিক অবস্থানের সমালোচনা করছে।শীতল যুদ্ধের পর পশ্চিমের ক্রমবর্ধমান হেগিমনিক আচরনকে রাশিয়া রাজনৈতিক চরমপন্থা হিসেবে দেখছে।আর জার্মানি সেই চরমপন্থার একটা অংশ হয়ে গেছে।পশ্চিম এই ন্যারাটিভ প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে যে তাদের এই আধিপত্যবাদি আচরন লিবারেল মূল্যবোধকে প্রতিষ্ঠা করবে কিন্তু বাস্তবতা হল ভিন্ন এবং রাশিয়া মনে করে লিবারেল ভ্যালুর আড়ালে পশ্চিম তার আধিপত্যের বিস্তার ঘটাচ্ছে।গত কয়েক দশকের আচরনে এটা এখন পশ্চিমের মানুষও বিশ্বাস করে।
পশ্চিম মাল্টিল্যাটারালিজমের(বহুপক্ষ) বিপরিতে,কতৃত্বের ভিত্তিতে তার আধিপত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে চাই।এই জন্য মিলিটারি ব্লকের সম্প্রসারন(ন্যাটো),গণতন্ত্র এবং মানবধিকারের নামে বিভিন্ন দেশ আক্রমন এবং ধংস করাকে নৈতিকতা হিসেবে প্রচার করা।গনতন্ত্রের নামে নিজেদের লোকের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত এবং নিজেদের স্বার্থে মানবধিকারের রক্ষা।এর সবই হয় লিবারেল চিন্তার নামে।
জার্মান-রাশিয়ান বিভাজন- Ostpolitik কে পুনরায় সংজ্ঞায়িত করা।
গত শতকে জার্মান-রাশিয়ান সম্পর্ক এগিয়েছে অংশীদারিত্ব এবং প্রতিযোগিতার মাধ্যমে।১৯১৭ সালে ব্রিটিশ জিওলজিস্ট James Fairgrieve পূর্ব ইউরোপকে ক্ষমতার ক্রাশ জোন হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন কারন এই অঞ্চলে জার্মান-রাশিয়া প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছে এবং এখনো করছে।ঐতিহাসিকভাবে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে ইউএস এবং ইউকে এই অঞ্চলকে বিভক্ত করে রাখার চেষ্টায় নিয়োজিত কারন এই অঞ্চল এলাই হিসেবে গড়ে উঠলে সেটা তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে এবং তারা ক্ষমতার ভারসাম্য হারাবে। ‘স্ট্রাটফোর প্রতিষ্ঠাতা জর্জ ফ্রেডম্যানের মতে আমেরিকার বিদেশ নীতির প্রথম উদ্ধেশ্য হচ্ছে রাশিয়া এবং জার্মানির মধ্যে যে কোন ধরনের জোট গড়ে উঠার পথ রুদ্ধ করা কারন এতে করে পশ্চিমের হ্যাগিমনির একটা বিকল্প পথ তৈরি হবে। শীতল যুদ্ধের সময়ে Willy Brandt’s Ostpolitik পলিসির মাধ্যমে সৌভিয়েত ইউনিয়নের সাথে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলুর সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হয়েছিল।মস্কো এটিকে জার্মানির জিরো সাম গেম হিসেবে দেখেছিল।শীতল যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে গর্ভাচেভের ইউনাইটেড ইউরোপের জন্য জার্মানি ছিল অপরিহার্য দেশ কিন্তু সেটা আর হয়ে উঠেনি।
আজিকের দিনে জার্মানি Ostpolitik কে তার নেতৃত্বদানের হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করতে চাইছে।যদিও এটা নির্ভর করছে রাশিয়াকে ইউরোপ থেকে বিতাড়িত করতে পারার উপর।জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস চলতি মাসেই Ostpolitik উত্তর পলিসি আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, Bdtran এর বিপরিতে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলুর সাথে সংলাপে এখন আমাদের রাশিয়ার দরকার নেই।পূর্ব এবং মধ্য ইউরোপের অনেক দেশই এখন রাশিয়াকে ভালো চোখে দেখে না।আমাদেরকে আমাদের প্রতিবেশীদের উদ্বেগকে গুরুত্বের সাথে নিতে হবে।
গ্রেটার ইউরোপ থেকে গ্রেটার ইউরেশিয়া
রাশিয়া ছাড়া ইউরোপ গঠনের চেষ্টা এখন পুরু ইউরোপকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছে।বার্লিন ফ্রেমের নামে ২০১৪ সালে ইউক্রেনের নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার মাধ্যমে রাশিয়ার বৃহৎ ইউরোপের স্বপ্নের মৃত্যু হয়।এরপর রাশিয়ার ভুমিকা নিয়ে পশ্চিম সমালোচনা করলেও রাশিয়ার অবস্থান তারা বুঝার চেস্টা করেনি। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জন মিয়ারশাইমারের মতে ইউক্রেনে পশ্চিম যা করেছে তাতে রাশিয়ার রেসপন্সটাই স্বাভাবিক ছিল।কারন রাশিয়া তার নিজের সীমান্তে আরেকটা ন্যাটো এলাই বা পশ্চিমের স্যাটেলাইট স্ট্যাটকে মেনে নিবে না।যেমন আমেরিকা মেনে নেয় না ওয়েস্টার্ন হেমেস্পায়ারে।এর ফলে জার্মানির সাথে রশিয়ার বিশেষ অংশিদারিত্বও ভেস্তে যায় যেটা ছিল আমেরিকার মুল উদ্ধেশ্য।
এরপর রাশিয়া,রাশিয়া-জার্মান গ্রেটার ইউরোপ প্রজেক্টকে চীন-রাশিয়া গ্রেটার ইউরেশিয়ার মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করেছে। রাশিয়া বিগত বছরগুলিতে জার্মানি থেকে দূরে সরে এসে এবং চীন ও এশিয়ার দিকে তার অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করতে ব্যস্ত ছিল। গ্রেটার ইউরেশিয়া উদ্যোগের ক্রমবর্ধমান সাফল্যের মুলে রয়েছে তাদের কমন ইন্টেরেস্টের জায়গা থেকে প্রতিবেশীদের নিয়ে কাজ করা।যেটা জার্মান চেষ্টার বিপরীত।
গ্রেটার ইউরেশিয়ার যুগে জার্মান-রাশিয়ান সম্পর্কঃ
গ্রেটার ইউরোপ উদ্যোগের আওতায় রাশিয়া তার ঘরোয়া বিষয়ে জার্মান হস্তক্ষেপকে স্পষ্টভাবে স্বীকার করেছে। সাধারণ মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে ইউরোপে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার লক্ষ্যে শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্ক আত্মপ্রকাশ করেছিল,বার্লিনকে মস্কো এই কতৃত্ব প্রদান করেছিল। গ্রেটার ইউরেশিয়ার যুগে, রাশিয়া ও জার্মানির সম্পর্ক দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে।একটি বহুব্যাপী বিশ্বের উত্থান নৈতিকতা এবং মূল্যবোধের বহুত্ববাদকে বোঝায়। মস্কো একটি স্বতন্ত্র রক্ষণশীল পথে হাঁটাকেই পছন্দ করে। এবং উদার গণতান্ত্রিক সার্বজনীনতার মাধ্যমে সার্বভৌম বৈষম্যকে বৈধতা দেয়ার পক্ষে মস্কো নয়। মস্কো পরবর্তীকালে প্রত্যাখ্যান করে যে তার ঘরোয়া রাজনীতি আন্তর্জাতিক আলোচনার জন্য একটি বিষয় তবে এটাকে খারাপভাবে চিত্রিত করার বার্লিন প্রচেষ্টাকে মস্কো প্রত্যাখ্যান করেছে।
নিরাপত্তা পরিষদে জার্মান অন্তুর্ভুক্তির স্বপ্ন শেষ হবার পর মস্কো বেইজিঙয়ের সম্পর্ক নতুন মাত্রায় উপনীত হয়েছে।যেটা পুরু লিবারেল দুনিয়ায়কে চ্যালেঞ্জ জানানোর দ্বারপ্রান্তে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:৩৪

রাজীব নুর বলেছেন: খুব কঠিন লেখা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.