নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Freelance media worker & professional journalist.

রিজভী

https://www.facebook.com/Rizvibd

রিজভী › বিস্তারিত পোস্টঃ

কেমন আছে আমাদের ‘বাংলা নাটক’

১৬ ই জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৮

মাসখানেক আগের কথা। নাটকের দল ‘নাগরিক নাট্যঙ্গন’-এর দলনেতা লাকী ইনামকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘আমাদের দেশের অধিকাংশ ঘরেই কলকাতার নাটক দেখা হয়। তাহলে আমাদের নাটকের মান কি খারাপ?’

প্রত্যুত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘ইদানিং অনেক টিভি নাটকেই যাদেরকে অভিনয় করতে দেখি তাদের বাচন ভঙ্গি ভালো না। উচ্চারণ শুদ্ধ না। আবার অনেক নাটকে তো দেদারছে আঞ্চলিকতার প্রয়োগ করা হচ্ছে। ভালো নাটকের মানদন্ডে এগুলো কেমন সেটি দেখা ছাড়াও আগে দেখতে হবে আমাদের দর্শকরা সেসব নাটক গ্রহণ করছে কিনা। অনেকেই বলে কলকাতার নাটক দেখা যাবে না। কিন্তু সন্ধ্যার পর প্রায় সব বাড়িতেই তো কলকাতার সিরিয়াল চলে। সেগুলো তো চাইলেই আর বন্ধ করা যাবে না। কলকাতার অনেক আর্টিস্টদের চেয়ে আমাদের আর্টিস্টদের কোয়ালিটি অনেক ভালো। সুতরাং ভালো নাটক তৈরির বিষয়টি নিয়ে যত্মবান হয়া উচিত।’

লাকী ইনামের কথার সূত্র ধরেই বলি, আমাদের দেশে বর্তমানে যেসব নাটক তৈরি হচ্ছে সেগুলো নিয়ে নির্মাতারা আত্মতুষ্টিতে ভুগলেও দর্শকরা আসলে সেগুলো গ্রহণ করছেন কিনা তা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। অধিকাংশ নির্মাতাই নাটক নির্মাণকে ক্রিয়েটিভের জায়গা থেকে বাণিজ্যিক জায়গায় নিয়ে গেছেন। একটি নাটক নির্মাণ করে তারা কত দ্রুত জনপ্রিয় হতে পারবেন, কত টাকা আয় করতে পারবেন এসব নিয়ে অনেকে ব্যস্ত।

অথচ আশি ও নব্বই দশকে বিটিভিতে জনপ্রিয় যেসব নির্মাতা ছিলেন, যেমন- মোস্তাফিজুর রহমান, মোস্তফা কামাল সৈয়দ, নওয়াজেশ আলী খান প্রমুখ নির্মাতাদের ধ্যান-ধারণায় ছিল কিভাবে স্বল্প লজিস্টিক সাপোর্টেও একটি ভালো নাটক দর্শকদেরকে উপহার দেয়া যায়। আউটদোরে শুটিংয়ের ব্যবস্থা সহজলভ্য না থাকায় বিটিভির নিজস্ব ভবনেই তারা সেট নির্মাণ করে সেখানে নাটক নির্মাণ করতেন। সে সব নাটকের গল্প ও নির্মাণশৈলী এতটাই স্ট্রং হতো যে দর্শকদের কাছে সেগুলো মোটেই একঘেঁয়ে লাগতো না।

উপরন্তু নাটকের অভিনয়শিল্পীরাও আগে থেকে রিহার্সেল করতেন, ডায়লগ মুখস্ত করে আসতেন। অথচ এখন যেন এসব বিষয় ভাবাটাও দুসাধ্য। কারণ এখন রিহার্সেল তো দূরে থাক, অধিকাংশ অভিনয়শিল্পীই নাটকের স্ক্রিপ্টই পড়ে শুটিং স্পটে আসেন না। অনেকে তো পারলে একই দিনে দুটি নাটকেরও শুটিং করেন। শিল্পী বলেন নির্মতার অনুরোধ, নির্মাতা বলেন চ্যানেলে ডিমান্ড আর চ্যানেল বলে স্পন্সরদের চাওয়া- এভাবেই বাংলা নাটকের দুষ্টু চক্র চলছে।

এজন্যই দেখা যায় একই সময় সব চ্যানেলেই একই অভিনয়শিল্পীর চেহারা। আর মজার ব্যাপার হলো, এর ফলে অধিকাংশ নাটকেই অভিনয়শিল্পীর চরিত্র যাই হোক না কেন, অভিনয় কিন্তু তিনি একই রকম করছেন। অর্থাৎ. চরিত্র অনুয়ায়ী অভিনয়ের যে বৈচিত্র্য থাকার কথা ছিল সেটি কিন্তু তিনি করছেন না। বরং কাজের চাপে তিনি জাস্ট ডায়লগই বলে যাচ্ছেন, আর এক্সপ্রেশন দিচ্ছেন সবগুলোতেই একই রকম। কারণ তিনি তো রিহার্সেল দূরে থাক, স্ক্রিপ্টই পড়ে আসেন নি। ফলে নাটকের মান যথারীতি ডাউন হচ্ছে আর দর্শকও আমাদের বাংলা নাটক থেকে মুখ ফিরিয়ে কলকাতার বাংলা নাটকের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে।

অপরদিকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়, দিন কে দিন আমাদের নাটকের আর্থিক মূল্যমান চ্যানেলগুলো কমিয়ে দিচ্ছে। সাম্প্রতিক কালে দেশে যেন স্যাটেলাইট চ্যানেলের বিস্ফোরণ হয়েছে। দুই ডজনেরও উপরে চ্যানেল অনএয়ারে আছে। শীঘ্রই যুক্ত হবে আরো কিছু চ্যানেল। এতো চ্যানেল আসার ফলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রচুর নাটকের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। আর এসব নাটকের জন্যও দরকার প্রচুর স্পন্সর। ফলে আগে যেখানে হাতে গোণা কিছু চ্যানেলে স্পন্সররা তাদের বিজ্ঞাপন ভাগ করতে পারতেন, এখন তাদেরকে ভাগ করতে হচ্ছে অনেক বেশি। এ কারণে স্পন্সরের আর্থিক হার কমে যাওয়ায় হাতে গোণা কিছু চ্যানেল ছাড়া অধিকাংশ চ্যানেলই কম মূল্যে নাটক কিনতে আগ্রহী। নির্মাতারা তো আর নিজে লস দিয়ে নাটক বানাবেন না, তাই তারাও কম রেটে নাটক বানাতে চান।

আবার অভিনয়শিল্পীদের অনেকেই এখন নিজেদের অভিনয়ের রেট বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে চ্যানেল ও স্পন্সরদের ডিমান্ডের কারণে নির্মাতারা অভিনয়শিল্পীদেরকে উচ্চ রেট দিয়েই তাদের নাটকে কাস্ট করছেন। এতে করে খরচের লাগাম টেনে ধরার জন্য নির্মাতারা অন্যান্য দিকে হাত বাড়াচ্ছেন। যেমন- তারা নাট্যকারের পেমেন্ট কমিয়ে দিচ্ছেন, প্রোডাশনের খরচ কমাচ্ছেন বা বকেয়া রাখছেন, নতুন অভিনয়শিল্পীদের পেমেন্ট দিচ্ছেন না, অনেক সময় অনেক নতুন অভিনয়শিল্পীর কাছ থেকে অর্থও নিচ্ছেন প্রভৃতি।

ফলে আমাদের দেশে বাংলা নাটকের সাবলীল যে যাত্রা শুরু হয়েছিল আজ থেকে অর্ধ শতাব্দী আগে, আজ নানা কারণে সেই নাটকেরই গতিপথ পাল্টে যাচ্ছে। সুতরাং, নাটকের এসব অসঙ্গতি অচিরেই দূর না করলে আমাদের দেশের বাংলা নাটকের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়বে।

[পাক্ষিক "সময়ের কারুকাজ" পত্রিকার ঈদ সংখ্যা-২০১৫ তে প্রকাশিত]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.