নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Freelance media worker & professional journalist.

রিজভী

https://www.facebook.com/Rizvibd

রিজভী › বিস্তারিত পোস্টঃ

দেশি গানের খোঁজে..

২১ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:০২

বাঙালী সংস্কৃতির একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ‘গান’। গান ব্যতিত কোন উৎসব কল্পনাও করা যায় না। গান শোনার সার্বজনীনতা তাই অতীতেও যেমন ছিল, বর্তমানেও আছে। ঢাকার বাইরে গ্রামাঞ্চলে দিকে গান শোনার প্রচলন শহরের চেয়ে কোন অংশেই কম নয়। শহুরে ছেলে-মেয়েদের বেশিরভাগই হেডফোনে এফএম রেডিও-র গান শোনে। একই ভাবে গ্রামের ছেলেপেলেরাও হেডফোন দিয়ে গান শোনে। তবে অধিকাংশ স্থানে এফএম-র ফ্রিকোয়েন্সি না থাকায় তারা মোবাইলে আগে থেকে ডাউনলোড করে রাখা গান শোনে।

আর তাই এই আলোচনার উপপাদ্য হলো, আসলেই কি দেশি গান তার শ্রোতা ধরে রাখতে পেরেছে? তাহলে এই হেডফোন প্রজন্ম আসলে কোন ধরণের গান শোনে?

আমাদের দেশে বর্তমানে দুটি গানের চ্যানেল অনএয়ারে আছে। ‘গান বাংলা’ ও ‘মিউজিক বাংলা’ (পূর্বের চ্যানেল সিক্সটিন)। রাজধানীর মিরপুর ১০ এ আমি ‘গান বাংলা’ ও ‘মিউজিক বাংলা’ চ্যানেল দুটি দেখতে পাই যথাক্রমে ৬৭ ও ৬৯ নম্বর। এতেই বোঝা যায়, আমাদের দেশের কেবল অপারেটরদের কাছে বাংলা গানের গুরুত্ব কতখানি!

যাই হোক, দুটি চ্যানেলের মধ্যে ‘গান বাংলা’ বেশ বড় বাজেট নিয়ে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু এটি যে সব শ্রেণী-পেশার দর্শকদের চ্যানেল না, সেটি তাদের প্রচারিত গান দেখলেই বোঝা যায়। বিশেষ করে, তাদের প্রচারিত গান দেখলে তো মনে হয় কেবল বোদ্ধা শ্রেণীর দর্শকদের জন্যই বুঝি তাদের চ্যানেল! অথচ একটি চ্যানেল হওয়া উচিত সব শ্রেণীর দর্শকদের। কেবল নির্দিষ্ট একটি দর্শক গ্রুপকে টার্গেট করে একটি অনুষ্ঠান সাজানো যায়, তাই বলে পুরো চ্যানেলকে সাজানো নিছক গোয়ার্তুমি।

অন্যদিকে ‘মিউজিক বাংলা’ চ্যানেলটির পূর্বের নাম ছিল ‘চ্যানেল সিক্সটিন’। পরবর্তীতে সরকারী নির্দেশে সেটি বন্ধের ঘোষণা আসার পর তারা রাতারাতি নিজেদের নাম বদলে অনএয়ারে থাকে। সরকারের খাতায় বন্ধ হলেও বাস্তবিক দৃশ্য হলো এই চ্যানেলটির জনপ্রিয়তা পুরো দেশের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার দর্শকদের মাঝেই রয়েছে। চ্যানেলটিতে নতুন ও পুরনো কণ্ঠশিল্পীদের গাওয়া গানের মিউজিক ভিডিও প্রচার করা হয়। বিভিন্ন স্বাদের গান প্রচারের কারণে ‘গান বাংলা’ চ্যানেলের তুলনায় এই চ্যানেলটির দর্শক বেশি। তবে এতে প্রচারিত গান ও মিউজিক ভিডিও-র মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। প্রায়শঃই নিম্নমানের গান ও মিউজিক ভিডিও এই চ্যানেলে প্রচারিত হয়। সরকারী খাতায় বন্ধ বলে এটি নিয়ে কেউ কোন ধরণের কথাও বলেন না। এভাবেই দেশের অন্যতম জনপ্রিয় একটি মিউজিক চ্যানেলের প্রচার চলছে।

আমি যতটুকু দেখেছি, শহুরে প্রজন্মের কাছে বাংলার চেয়ে বলিউডের হিন্দি গান ও ইংরেজি গানই বেশি পছন্দের। সেই তুলনায় গ্রামের প্রজন্মের কাছে বাংলা গানই বেশি জনপ্রিয়। তবে সেই বাংলা গানের অধিকাংশই এ দেশীয় নয়। সেগুলো কলকাতার বাংলা চলচ্চিত্রগুলোর গান। কেবল কলকাতার ‘সংগীত বাংলা’ চ্যানেলটিই গ্রামাঞ্চলে যে পরিমাণ জনপ্রিয়, সেটির ধারে কাছে আমাদের দেশের কোন চ্যানেল আসবে বলে মনে করি না। ‘সংগীত বাংলা’ চ্যানেলটিতে মূলত কলকাতার নতুন ও পুরনো বাংলা চলচ্চিত্রগুলোর গান প্রচার করা হয়। নান্দনিক ভিডিও, গানের কথা ও সুরে আমাদের দেশের গানগুলোর থেকে ভিন্নতা থাকায় চ্যানেলটি এ জেনারেশনের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে, আমাদের গান কি তাহলে কলকাতার গানের কাছে তার জৌলুস হারাচ্ছে?

আমি সেটা মনে করি না।

আমার মতে, আমাদের গানের অবস্থান পূর্বের চেয়ে বরং দিনকে দিন উন্নতি করছে। গানে প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে আমাদের গানের সাউন্ড সিস্টেম উন্নত বিশ্বের গানের চেয়ে কোন অংশেই কম না। তবে ভয়ঙ্কর ব্যাপারটি হলো, টেকনলজির উন্নতির সুযোগে অনেক অ-শিল্পীও এখন শিল্পী হয়ে যাচ্ছেন। অটো টিউনার সফটওয়ার দিয়ে গান গেয়ে সেটি প্রকাশ করা হচ্ছে। গানের কথার ক্ষেত্রে একটি কমন অভিযোগ হলো, পূর্বে আমাদের দেশের বিভিন্ন গানের কথায় যেমন গভীরতা থাকতো, এখন আর তেমনটা খুঁজে পাওয়া যায় না। খুব হালকা কথা দিয়েই গান তৈরি হচ্ছে। যারা গান লিখছেন তারা কেবল অন্তঃ মিল দিয়েই গান লিখছেন। গান লেখার ন্যূনতম জ্ঞানও অনেক গীতিকারের নেই। আবার অনেক সংগীত পরিচালক ভিনদেশি গানের সুর ও সংগীতও নকল করছেন। অনেক জনপ্রিয় কম্পোজাররাও এই নকলের হিসাব থেকে বাদ পড়বেন না।

এতো সব অসঙ্গতির ভীড়েও ভালো গান হচ্ছে। তবে সেগুলো কেবল প্রচারের অভাবেই শ্রোতাদের কান পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছে না। সংগীত নির্ভর চ্যানেলের সংখ্যা বাড়ালে ও দেশি চ্যানেলগুলো যদি আরো বেশি করে গান প্রচার করে তবে আমার ধারণা কলকাতার গানগুলোর পাশাপাশি আমাদের দেশি গানগুলোও দর্শক- শ্রোতাদেরকে আরো বেশি আকর্ষণ করবে। তখন দেশি গানের শ্রোতা নেই- এই অভিযোগটা অন্তত আর শুনতে হবে না।

-----------------------------------------------------------------------------------------------

[পাক্ষিক "সময়ের কারুকাজ" পত্রিকার চলতি সংখ্যায় (১৬-৩১ আগস্ট, ২০১৫) প্রকাশিত]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.