নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Freelance media worker & professional journalist.

রিজভী

https://www.facebook.com/Rizvibd

রিজভী › বিস্তারিত পোস্টঃ

"ঢাকাই চলচ্চিত্রের নিরুদ্দেশ যাত্রা"

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:২৮

ঢাকাই চলচ্চিত্রের নিরুদ্দেশ যাত্রা’- শিরোনাম দেখেই অনেকে হয়তো ভ্রু কুঁচকে ফেলেছেন। এটা আবার কেমন কথা? ঢাকাই চলচ্চিত্র তো বহাল তবিয়তেই রয়েছে! সেই ১৯৫৬ সালের ৩ আগস্ট মুক্তি পাওয়া প্রথম ঢাকাই পূর্ণদৈর্ঘ্য সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এর পর তো আজ পর্যন্ত কয়েক হাজারের উপরে চলচ্চিত্র রিলিজ পেয়েছে ও পাচ্ছে। তাহলে ‘নিরুদ্দেশ যাত্রা’ হলো কিভাবে?

আব্দুল জব্বার খান যখন তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ নির্মাণ করেছিলেন তখনও কি তিনি ভাবতে পেরেছিলেন এদেশে চলচ্চিত্র এক সময় বাণিজ্যিক ভাবে শিল্পের মর্যাদা পাবে? হয়তো তিনি ভাবেন নি। কিন্তু আমরা এখন জানি যে, সরকার চলচ্চিত্রকে বাণিজ্যিক ভাবেও মূল্যায়ন করেছে, অর্থাৎ শিল্পের মর্যাদায় আসীন হয়েছে ঢাকাই চলচ্চিত্র। এটি চলচ্চিত্রাঙ্গনের মানুষদের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি ছিল। ২০১২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া চলচ্চিত্রকে শিল্প ঘোষণা করেন। এরপর কেটে গেছে ৩টি বছর। অদ্যাবধি শিল্প ঘোষণায় চলচ্চিত্রের কি লাভ হয়েছে সেটাই চলচ্চিত্রাঙ্গনের অনেকে এখনো জানেন না।

জাতীয় সম্প্রচার মাধ্যমগুলোর সবগুলোই তথ্য মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে চলচ্চিত্র এখন পর্যন্ত তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে। শিল্প ঘোষণার ফলে এটি তো শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে যাবার কথা ছিল। কিন্তু সেটি হয়নি। তবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনেও যদি চলচ্চিত্রকে দেয়া হয়, তাহলেও কিন্তু এর উন্নয়নে মন্ত্রণালয় পর্যাপ্ত সময় দিতে পারবে। অন্তত চলচ্চিত্রের উন্নয়নের জন্য হলেও এ বিষয়টি চলচ্চিত্রাঙ্গনের মানুষদেরকে ভেবে দেখতে হবে।

৩৫ মি.মি. চলচ্চিত্র নির্মাণ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন ডিজিটাল ভার্সনেই কেবল চলচ্চিত্র নির্মাণ হচ্ছে। ফলে যেসব হল তাদের প্রজেকশন ব্যবস্থাকে ডিজিটাল চলচ্চিত্র প্রদর্শনের উপযোগী করতে পারেনি তারা হল বন্ধ করে দিয়েছে। দেশে প্রত বছরই অনেক হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এর মূল কারণ হিসেবে বলা যায়, চলচ্চিত্র ব্যবসায় মন্দা। দর্শকদের অভিযোগ তারা ভালো চলচ্চিত্র পাচ্ছে না। আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসনের কারণে প্রতিবেশি দেশসহ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের চলচ্চিত্রই এখন সহজে দর্শকরা দেখতে পাচ্ছে। সেজন্য তারা কেনই বা পুরনো গৎবাঁধা রীতির ঢাকাই চলচ্চিত্র দেখবে? চলচ্চিত্রের কাহিনীতে নেই কোন ভিন্নতা, কাহিনী ও গানের সুরও থাকে নকল- এভাবেই চলছে আমাদের ঢাকাই চলচ্চিত্র।

চলচ্চিত্রে নতুন মুখ হরহামেশা এলেও তাদের অধিকাংশই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের উপযুক্ত নন। কারণ এদের অনেকেই এখন আসছেন টেলিভিশন নাটক থেকে। চলচ্চিত্র পাড়ায় একটি কথা প্রচলিত যে- দর্শক যাকে ফ্রি দেখতে পায় তাকে কেন টিকেট কেটে হলে যেয়ে দেখতে যাবে? অর্থাৎ, টিভি নাটকে যে মুখ দর্শক অহরহ দেখে অভ্যস্ত তাকে দেখতে কেনই বা দর্শক সিনেমা হলে যাবে?

একই কথা খাটে টিভি নাটকের পরিচালকদের ক্ষেত্রেও। টিভি নাটক নির্মাণ করেই যিনি জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি যখন চলচ্চিত্রের নির্মাতা হিসেবে আবির্ভূত হন, তখন তিনি যা নির্মাণ করেন, সমালোচক ও বোদ্ধারা সেটাকে বড় পর্দার নাটক বৈ ভিন্ন কিছু বলেন না। এটা নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে নিয়মিতই বলা যায় আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। ব্যতিক্রম কয়েকটি চলচ্চিত্র বাদে টিভির কোন নাট্যনির্মাতা ব্যবসায়িক সফলতা ও দর্শক জনপ্রিয়তা পেয়েছেন বলে আমার জানা নেই। এসব নির্মাতাদের অনেকেরই টার্গেট থাকে বিদেশের চলচ্চিত্র উৎসবগুলোকে কেন্দ্র করে চলচ্চিত্র নির্মাণের। ফলে তাদের চলচ্চিত্রের ভাষা এদেশে দর্শকদের জন্য হয় না। কারণ তাদের মাথায় তাকে বিদেশের চলচ্চিত্র উৎসবের বিচারকদের কথা। এই কথাগুলো যখন তাদেরকে বলা হয় তখন তারা সেটা মেনে নিতে পারেন না। নিজেদেরকেই সেরা মনে করে আত্মতৃপ্ত এসব নির্মাতারা তাই একসময় সবার অগোচরেই মিডিয়া থেকেই হারিয়ে যান, কিংবা আবার নাটক নির্মাণেই ফিরে যান।

এসব কারণে চলচ্চিত্রাঙ্গনে মূল ধারা ও বিকল্প ধারা নামের দুটি অভিধার সৃষ্টি হয়েছে। শুধু এটাই নয়, সমস্যা রয়েছে বহুমুখি। ঐক্য নেই পরিচালকদের মধ্যে। সম্মান নেই শিল্পীদের। জুনিয়র শিল্পীরা সাময়িক ভাবে নাম কামিয়ে সিনিয়রদেরকেই অগ্রায্য করছেন, অসম্মান করছেন। চলচ্চিত্রের সঙ্গে কোনকালেই বিন্দুমাত্র সম্পর্ক ছিল না, এমন লোকও আজ চলচ্চিত্র নির্মাণ করছে, প্রযোজনা করছে। আর এসব বদনামের ভাগীদার হচ্ছে পুরো চলচ্চিত্রাঙ্গনই।

আরো একটি বিষয় যেটি অদূর ভবিষ্যতে আমাদের চলচ্চিত্রকেই পুরোপুরি ধ্বংস করে দিতে পারে, সেটি হলো, আমাদের দেশের হলগুলোতে ভারতীয় চলচ্চিত্রের অবাধ প্রদর্শনী। ইতিমধ্যে বলিউডের বেশ কয়েকটি পুরনো চলচ্চিত্র আমাদের দেশের কয়েকটি হলে পরীক্ষামূলক ভাবে প্রদর্শন করা হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আগামীতে কলকাতা ও বোম্বের নতুন চলচ্চিত্রগুলোও হয়তো এখানে মুক্তি পাবে। এতে করে আমাদের দেশের চলচ্চিত্রগুলো নিঃসন্দেহে যে ধরা খাবে সে কথা আর নাই বা বললাম। কারণ বলিউডে এখন শত কোটি টাকা বাজেটের চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়। কলকাতার চলচ্চিত্রগুলোর বাজেটও আমাদের চলচ্চিত্রগুলোর ৫ থেকে ১০ গুণ পর্যন্ত হয়। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের দেশের চলচ্চিত্রগুলো থেকে দর্শকরা মুখ ফিরিয়ে নেবে। এতে করে যদিও সিনেমা হলগুলোর ব্যবসা ভালোই হবে, তবে সেটা কেবল ভিনদেশি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। ঢাকাই চলচ্চিত্রগুলো তখন প্রদর্শনের জন্য পর্যাপ্ত হল পাবে কিনা সেটিই সন্দেহ!

গত ঈদুল ফিতরের পর থেকে মুক্তি পাওয়া বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র ব্যবসায়িক সফলতা ও দর্শক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এটি অবশ্যই আমাদের চলচ্চিত্রের জন্য ইতিবাচক। এই ইতিবাচক ধারা চলমান রাখতে হলে ও চলচ্চিত্রের সমস্যাগুলো দূরীকরণে সরকারসহ চলচ্চিত্রাঙ্গনের সংশ্লিষ্ট সকলকে উদ্যোগী হতে হবে।

----------------------------------------------------------------
”পাক্ষিক সময়ের কারুকাজ” ম্যাগাজিনে প্রকাশিত
প্রকাশের তারিখ: ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫
----------------------------------------------------------------

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.