নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রথমেই বলে নিচ্ছি এটা কোন ভ্রমণ কাহিনী না। বরং সম্প্রতি নেপালে ভ্রমণ করার পর নিজের টুকরো টুকরো কিছু ঘটনা ও ইনফরমেশনের সন্নিবেশ। গত ২১ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমরা ৬ বন্ধু নেপাল ঘুরতে গিয়েছিলাম। ১ জন অনেক আগে একবার নেপালে গেলেও বাকি সবারই প্রথমবার নেপাল যাওয়া। ফলে সব কিছুই নিজেরাই ঠিক করেছি, নিজেরাই ঘুরেছি। ফলে নিজেদের অভিজ্ঞতাতে যে বিষয়গুলো শেয়ার করা প্রয়োজন মনে করছি সেগুলোই এই লেখায় তুলে ধরলাম।
নেপালের ভিসা সমাচার:
নেপাল ভ্রমণের ভিসা দুই ভাবে কালেক্ট করা যায়। বাংলাদেশে নেপাল অ্যাম্বাসী থেকে। অথবা নেপাল পৌঁছে অনএরাইভাল ভিসা নেবার মাধ্যমে। আগে থেকে ভিসা নিলে আমাদের দেশের পোর্টগুলোতে কোন ঝামেলা করে না। নতুবা ফিরতি টিকেট দেখানো লাগে। ক্ষেত্র বিশেষে অফিসের এনওসি-ও চাইতে পারে। তবে ফিরতি টিকেট ও অফিসের এনওসি সঙ্গে থাকলে অনএরাইভাল ভিসা নেবার মতো শান্তি দ্বিতীয়টি নেই। কারণ পোর্টে গিয়ে পাসপোর্টে এরাইভাল সিল মারার সময়ই ১৫ দিনের অনএরাইভাল ভিসা দিয়ে দেয়। ভীড় না থাকলে পুরো প্রক্রিয়াটা জাস্ট ৫ মিনিটের কাজ।
ডলার কোথায় ভাঙ্গাবেন?
অনেকেই বলে পোর্টগুলো বা এর আশে পাশে ডলারের ভালো রেট নাও পাওয়া যেতে পারে। তবে আমার সাজেসন হলো নেপালের এয়ারপোর্টে যদি কেউ নামেন, তবে এখানেই ডলার ভাঙ্গানোটা উত্তম। কারণ এখানে একেবারে ব্যাংকের রেটেই ডলার ভাঙ্গানো ও কেনা যায়।
তারপর এয়ারপোর্ট বা বাসে গেলে নেপালে ঢোকার পোার্টের আশেপাশের যে কোন দোকান থেকেই পাসপোর্ট দেখিয়ে নেপালী যে কোন মোবাইল কোম্পানীর সিম সংগ্রহ করতে পারেন। আমাদের দেশের রবি সিমের ভায়রা ভাই হলো নেপালের এনসেল। এটার নেটওয়ার্কও বেশ ভালো। ৮ হাজার ফুট পাহাড়ের উপর থেকেও ভিডিও চ্যাটিং করেছি, খুবই দারুণ নেটওয়ার্ক। এনসেলের সিমের দাম কাঠমান্ডুতে নিয়েছিল ১৫০ নেপালী রূপি। অথচ নাগারকোটে এটির দাম নিল ১২০ নেপালী রূপি। অর্থাৎ সম্ভব হলে একাধিক দোকান যাচাই করে সিম কেনা ভালো।
নেপাল এয়ারপোর্ট ভীতি:
নেপালে বিমান দুর্ঘটনার ঘটনা মাঝে মাঝেই ঘটে। এটা পৃথিবীর অনেক এয়ারপোর্টেই ঘটতে পারে। তবে নেপালের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আলোচনায় আসার বেশ কিছু কারণ আছে। নেপালের একমাত্র আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট "ত্রিভুবন" সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ফুট উপরে অবস্থিত। দুপাশে বেশ বড় পাহাড়বেষ্টিত থাকায় বিমান উড্ডয়ন ও নামার সময় কিছুটা রিস্ক থাকে।
উপরন্তু ত্রিভুবন এয়ারপোর্টটি অমসৃণ হওয়ায় বিমান নামা বা ওঠার সময় বেশ কাঁপুনি টের পাওয়া যায়, যা অনেক যাত্রীর মনে আতঙ্কের কারণ হতে পারে। তবে আমার ক্ষেত্রে নামা বা ওঠা কোন সময়ই কোন ভয় বা টেনশন কাজ করেনি। এমনকি আমার আশেপাশের যাত্রী ও সঙ্গীরাও কোন আতঙ্কবোধ করেনি। সেজন্য আমার সাজেসন হলো, মনে একটু সাহস রাখলেই চলবে। কারণ দুর্ঘটনা যদি ভাগ্যে থাকে তবে সেটা নিজের ঘরের মধ্যে হলেও হবে। এজন্য বিমানেই যে হবে সেটা না ভাবলেও চলবে।
কিভাবে যাবেন?
এর আগের পোস্টেই বলছিলাম যে নেপালে বাস বা প্লেন উভয় ভাবেই যাওয়া যায়। সড়কপথে নেপাল যাওয়ার জন্য আপনার প্রয়োজন হবে ভারতের ট্রানজিট ভিসা। ট্রানজিট ভিসা নেওয়ার সময় এন্ট্রি এবং এক্সিট পোর্ট দেবেন চ্যাংড়াবান্ধা/ রাণীগঞ্জ। নেপালের জন্য আলাদা করে ভিসা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। নেপালে পৌছলেই মিলবে অন অ্যারাইভাল ভিসা। এই স্টিকার ভিসা মিলবে এন্ট্রি পোর্টেই। সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকদের জন্য একই বছরের প্রথম ভ্রমণে ভিসা ফি লাগবে না। একই বছরে দ্বিতীয়বারের মতো ভ্রমণ করতে চাইলে ১৫ দিনের মাল্টিপল ভিসার জন্য ২ হাজার ২০০ টাকা ভিসা ফি প্রদান করতে হবে। চাইলে ঢাকায় অবস্থিত নেপালের এমব্যাসি থেকেও নিয়ে নিতে পারেন ভিসা।
আর বিমানে যেতে চাইলে সরাসরি হযরত শাহজালাল এয়ারপোর্ট থেকে কাঠমান্ডুর বিমানে যেতে পারেন। ইউএস বাংলার বিমান দুর্ঘটনার পর থেকে নেপালে তাদের বিমান বন্ধ রয়েছে। সেজন্য আপনার প্রথম চয়েস হিসেবে বিমান বাংলাদেশকে রাখতে পারেন। ভাড়া পড়বে আপ-ডাউন মিলিয়ে সর্বনিম্ন সাড়ে ১৮ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩৩ হাজার টাকার মধ্যে। সময় লাগবে ১ ঘন্টা ৪ মিনিট। বাংলাদেশ থেকে কাঠমান্ডুর উদ্দেশ্যে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টায় বিমান ছেড়ে যায়। আর কাঠমান্ডু থেকে বাংলাদেশে বিমান আসার সময় প্রতিদিন দুপুর ১টা (কাঠমান্ডুর সময় অনুযায়ী)। কাঠমান্ডুর সঙ্গে ঢাকার সময় পার্থক্য ১৫ মিনিট। অর্থাৎ আমাদের যখন দুপুর ১টা ১৫ মিনিট, কাঠমান্ডুতে তখন দুপুর ১টা।
বর্তমানে ঢাকা-কাঠমান্ডু-ঢাকা রুটে বিমান বাংলাদেশের বিশেষ ছাড় চলছে। প্রমো কোড ব্যবহার করে বিমান বাংলাদেশের ওয়েবসাইট থেকে রাউন্ড ট্রিপের টিকেট কাটলে ১০% ডিসকাউন্ট পাওয়া যাবে। প্রমো কোডটি হলো: "TREK-18"। এই অফার চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত থাকবে। এছাড়া ক্রেডিট কার্ড দিয়ে টিকেট কাটলেও ১০% ডিসকাউন্ট পাওয়া যাবে। তবে আপনার ক্রেডিট কার্ডে বিমান বাংলাদেশের টিকেট কাটার ডিসকাউন্ট সুবিধা আছে কিনা সে ব্যাপারে আগেই খোঁজ নিয়ে নেবেন।
নেপালে কোথায় যাবেন, কিভাবে যাবেন?
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর প্রধান সমস্যা হলো এর অধিকাংশ রাস্তাই ধুলাচ্ছন্ন। অনেক রাস্তারই সংস্কার কাজ চলছে। ফলে রাস্তায় চলাচলকারীদের অধিকাংশই মুখে মাস্ক ইউজ করেন। একারণে নেপালে যাবার সময় সঙ্গে করে মাস্ক নিয়ে যাওয়াটা উচিত।
তবে কাঠমান্ডুর থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরে নাগারকোট কিংবা ২০৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পোখরাতে আবহাওয়া অনেক পরিস্কার। নেপাল গেলে এ দুটো স্থানেই মূলত সকলে ঘুরতে যান।
কাঠমান্ডু থেকে নাগারকোটে যাবার ক্ষেত্রে টুরিস্ট বাস কিংবা রিজার্ভ ট্যাক্সি নেয়া যেতে পারে। আমার সাজেসন হলো একাধিক জন একসাথে গেলে ট্যাক্সি নেয়াটাই ভালো হবে। ট্যাক্সি ভাড়া যাই চাক না কেন ২ হাজার নেপালী রূপির বেশি না দেয়াটাই উত্তম হবে। তবে অবস্থা বুঝে কিছু বেশি দেয়া লাগতে পারে। বাসের চেয়ে ট্যাক্সি কেন প্রেফার করছি সেটি নাগারকোটে যাবার সময়ই উপলব্ধি করবেন। নাগারকোটের আঁকাবাঁকা ও তীক্ষ্ণ বাঁকগুলোতে ট্যাক্সিতে বসেই চরম থ্রিল অনুভব করবেন। তবে বাসের ক্ষেত্রে এই থ্রিলটি আতঙ্কে রূপ নিলেও নিতে পারে।
অন্যদিকে পোখরাতে নন এসি বা এসি বাস কিংবা শেয়ারিং মাইক্রোতে যেতে পারেন। লোক সংখ্যা যদি ১০ জন বা এর অধিক হয় তবে মাইক্রো রিজার্ভ করে নিতে পারেন। শেয়ারিং মাইক্রোতে পার হেড ভাড়া নেবে ৫০০ নেপালী রূপি করে। আর বাসে ৩০০ থেকে ১২০০ নেপালী রূপি ভাড়া পড়বে। এছাড়া স্পেশাল কিছু বিলাসবহুল বাস আছে সেগুলোর ভাড়া ২৫০০ নেপালী রূপি পর্যন্ত নেয়।
আমরা ৬ জন পোাখরা থেকে কাঠমান্ডুর থামেলে রিজার্ভ এসি জিপে এসেছিলাম ১১ হাজার নেপালী রূপি দিয়ে। খরচটি বেশি হলেও বেশ কিছু কারণে এভাবে এসেছিলাম। তবে আসার পর বুঝেছিলাম আমাদের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল না। কাঠমান্ডু থেকে পোখরা যাবার দূরত্ব ৪ থেকে ৫ ঘন্টা ধরা হলেও রাস্তায় অনাকাঙ্খিত জ্যামের সম্মুখীন হওয়া খুবই নিয়মিত ঘটনা। আমরা ৬ ঘন্টায় পোখরা গেলেও ফিরেছি ১০ ঘন্টায়। পুরো সময় এসি না থাকলে রাস্তার গরমে সারা দিনের জার্নিটাই অনেক কঠিন হতো।
তবে নাগারকোট যাওয়া বা আসার পথে কোন জ্যামের মুখোমুখি হতে হয়নি। সময় লেগেছে ২ ঘন্টার মতো। নাগারকোটে প্রবেশের সময় এন্ট্রি ফি হিসেবে জনপ্রতি ২০০ নেপালী রূপি দিতে হয়। এটা কেবল সার্ক ভুক্ত দেশগুলোর জন্য। নেপালীদের জন্য ১০০ রূপি। আর পৃথিবীর অন্য সকল দেশের নাগরিকদের জন্য জনপ্রতি ১২০০ নেপালী রূপি করে দিতে হয়।
নেপালে কোথায়, কিভাবে থাকবেন:
নেপালের অন্যতম প্রধান আয়ের উৎস হলো পর্যটন। ফলে পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার জন্য পুরো দেশেই অসংখ্য ভালো মানের হোটেল রয়েছে। এখন প্রসঙ্গ হলো ট্যুর করার সময় যদি লিমিটেড হয় বা দেখা গেল গন্তব্যে পৌঁছাতে আপনার অনেক রাত হয়ে গেল, তখন ভালো হোটেল কিভাবে খুঁজে পাবেন। আর কিভাবেই বা আপনার হোটেল রুম বুক দেবেন। ইন্টারনেটের এ যুগে এ বিষয়টি খুবই সহজ যে, অনলাইনেই নানা সাইট রয়েছে হোটেল রুম বুক দেবার জন্য। বিশেষ করে গুগল আপনাকে রুম রেট সহ হোটেলের খোঁজ পেতে ভালো সাহায্য করবে। এছাড়া বর্তমানে https://booking.com নামের একটি সাইটও আপনাকে এ ব্যাপারে ভালো সহযোগীতা করতে পারে। তবে নেপাল ভ্রমণের জন্য এসব কিছুর বাইরেও হোটেল খুঁজে বের করা বা বুকিং দেবার জন্য আমার কাছে ভালো একটা অপশন আছে।
নেপালে গিয়ে আমরা প্রথম রাতটি থেকেছিলাম নাগারকোটে। সেখানে যে হোটেলে আমরা ছিলাম সেটি খুব আহামরি মানের না হলেও একেবারে খারাপ ছিল না। এই হোটেলটি আমরা বুকিং ডট কম থেকে বুক করেছিলাম। বুক করে রাখার অন্যতম কারণ ছিল, নেপাল ইমিগ্রেশনে ফর্ম পূরণ করার সময় কোথায় কোন হোটেলে থাকবো সেটি অবশ্যই উল্লেখ করতে হয়। এটি পরবর্তীতে চেক করা হয় কিনা সেটির ব্যাপারে আমি শিওর না হলেও বুক করে যাওয়াই ভালো। এতে যেমন টেনশন ফ্রি থাকা যায়, তেমনি অচেনা স্থানে গিয়ে থাকার জায়গা খুঁজতে হয় না।
তবে পরের দিন যখন আমরা পোখরার উদ্দেশ্যে রওনা হই তখন আমাদের মধ্যে কেউ কেউ বলেছিলেন যে, পোখরায় প্রচুর হোটেল আছে। তাই আগে থেকে বুকিং দিয়ে যাবার কোনই দরকার নাই। গিয়ে দেখে শুনে হোটেল ঠিক করলেই হবে। এই আশ্বাসে আশ্বস্থ হয়ে আমরাও কোন বুকিং দেয়া ছাড়াই পোখরার উদ্দেশ্যে নাগারকোট থেকে রওনা দেই। নাগারকোট থেকে পোখরায় যাবার সরাসরি কোন বাস সার্ভিস নেই। রিজার্ভ ট্যাক্সিতে ভাড়া যায় ১৬ হাজার নেপালী রূপি করে। একেকটা ট্যাক্সিতে মাত্র ৩/৪ জন ট্রাভেল করতে পারে। আমরা সংখ্যাই আছি ৬ জন। সুতরাং, দুটো ট্যাক্সি তো লাগবেই। তাই সব কিছু ভেবে চিন্তে সরাসরি যাবার চিন্তা বাদ দিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হলো আগে কাঠমান্ডু যাবো। তারপর সেখান থেকে পোখরায় বাসে যাবো।
তবে কাঠমান্ডু থেকে পোখরায় শেয়ারিং মাইক্রোতে যাবার ভাড়া জনপ্রতি ৫০০ নেপালী রূপি হওয়ায় সিদ্ধান্ত হলো বাসের বদলে মাইক্রোতেই আমরা পোখরায় যাবো। নাগারকোট থেকে পোখরায় যেতে সময় লাগে প্রায় ৮/৯ ঘন্টা। নাগারকোট থেকে আমরা রওনা দেই দুপুর ১২টায়। কাঠমান্ডু এসে লাঞ্চ করেই মাইক্রোতে উঠি। পথিমধ্যে দুইবার যাত্রা বিরতিতে সময় পার হয়। ফলে হিসেব করে দেখি রাত ৯/১০ টার আগে আমরা পোখরায় পৌঁছতে পারবো না। নেপালে আবার রাত ৯টা বাজলেই প্রায় সব দোকানই বন্ধ হয়ে যায়। তাহলে এতো রাতে পৌঁছে হোটেল ঠিক করা তো বাস্তবিকই কঠিন কাজ। নেপাল ভ্রমণের টিম লিডার হিসেবে রাতে থাকার ব্যবস্থার টেনশনে অস্থির হয়ে প্রথমে গুগল ম্যাপের মাধ্যমে পোখরার হোটেলের খোঁজ শুরু করলাম।
প্রথম পর্বেই বলেছিলাম নেপালে মোবাইল নেটওয়ার্ক পাহাড়ের উপর থেকেও দারুণ ভাবে পাওয়া যায়। তাই যাত্রা পথের পুরোটা সময়ই ইন্টারনেটের ব্যাপক সাপোর্ট পেয়েছিলাম। তা যা বলছিলাম, গুগল থেকেই খোঁজ পেলাম দারুণ একটি অ্যাপের। OYO Rooms শিরোনামের এই অ্যাপটি মূলত ভারতীয়। তবে এটি ভারত ছাড়াও নেপাল, মালয়েশিয়া, ইউএই, চীন ও ইন্দোনেশিয়ায় কার্যকর। এই অ্যাপের মাধ্যমে এই দেশগুলোর ২৩০ টি শহরের ৮৫০০ টিরও বেশি হোটেলে থাকার জন্য বুকিং দেয়ায় যায়। উপরন্তু অ্যাপের মাধ্যেম বুকিং দিলে বেশ ভালো ডিসকাউন্টও পাওয়া যায়। OYO অ্যাপ দিয়েই পোখরাতে ও পরবর্তীতে কাঠমান্ডুতে আমরা হোটেল রুম বুক দিয়েছিলাম।
OYO অ্যাপে বুক দেবার জন্য নেপালের যে কোন স্থানীয় মোবাইল নম্বর দিয়ে সাইনআপ করতে হয়। বুক দেবার পর OYO কাস্টমার কেয়ার থেকে ফোন দিয়ে কনফার্ম তারা হয় ও হোটেলে যাবার ডিটেইলস এড্রেস এবং হোটেলের কনটাক্ট নম্বর মেসেজ করে পাঠিয়ে দেয়। OYO অ্যাপের মাধ্যমে কখন হোটেলে চেকইন করবেন সেটা উল্লেখ করা যায়। ফলে আপনি মধ্য রাতে হোটেলে পৌঁছালেও রুম ক্যান্সেল হয়ে যাবার ভয় থাকে না। আবার ইচ্ছা করলে রুম আপগ্রেডও করা যায়। যেমন হয়তো আপনি বুক দিলেন নন-এসি রুম, কিন্তু পরে মনে হলো এসি রুম নেবেন, সেটিও OYO অ্যাপের মাধ্যমে করা যায়। OYO এর চেইন হোটেলগুলোর অনেকগুলোতেই একটি রুমে তিনজন করে থাকা যায়। একটি সিঙ্গেল বেড ও একটি ডাবল বেড থাকে। একারণে বেশ বড় গ্রুপ ধরে গেলেও থাকাটা সাশ্রয়ী হয়। নেপালে OYO এর ১৩৮টি চেইন হোটেল আছে। ফলে নেপালের সব শহরেই OYO এর হোটেল পাবেন। আমরা পোখরা ও কাঠমান্ডুর থামেলে OYO এর যে হোটেল দুটিতে ছিলাম, দুটো হোটেলেই সকালের ব্রেকফার্স্ট কমপ্লিমেন্টারি ছিল। আমরা এসি ও নন এসি মিলিয়ে রুম নিয়েছিলাম বলে প্রতি রাতের জন্য রুম ভাড়া পড়েছে ১৩০০ থেকে ১৭০০ নেপালী রূপি করে। এজন্য আমার সাজেসন হলো নেপাল ভ্রমণের সময় OYO অ্যাপের সহযোগীতা নিলে কোন টেনশন ছাড়াই নেপাল ভ্রমণ করতে পারবেন।
নেপালের খাবার:
নেপালে যাবার আগে আমাদের সকলেরই অন্যতম টেনশন ছিল নেপালে গিয়ে কি খাবো। তাদের রান্না খেতে পারবো কিনা। উপরন্তু আমরা যা যা খাই, সেগুলো পাবো কিনা। খাবার নিয়ে এতো চিন্তার মধ্যে টিমের কেউ কেউ বললেন ৪/৫ দিন ভাত না খেলে কিছু হয় না। দরকার হলে নুডলস বা রুটি খাবো। তবে আমরা যেহেতু মাছে-ভাতে বাঙালি, সুতরাং মাছের আকুতি সহ্য করা গেলেও ভাত না খাবার আকুতি সহ্য করা বাস্তবিকই যে কঠিন সেটি দেশ ছাড়ার পর সকলে আরো তীব্র ভাবে বুঝেছে।
প্রথমদিন নেপালে পৌঁছে দুপুরের খাবার হিসেবে সকলে নুডলস খেলেও রাতের খাবারের তালিকায় টিমের অধিকাংশই ভাত খাবার জন্য অস্থির হলেন। ফলে পরের যে ক'দিন নেপালে ছিলাম দুপুরে ভাত না খেলেও রাতে ভাত থাকাটা যেন অলিখিত নিয়মই ছিল বলা যায়।
নেপালীরাও আমাদের মতো ভাত-রুটি খায়। তবে সেখানে খাবার-দাবারের দাম আমাদের দেশের তুলনায় বেশি। এক প্লেট ভাতের দাম রেস্টুরেন্ট ভেদে ১২০ থেকে ১৫০ নেপালী রূপি। ভালো মানের রেস্টুরেন্টে তো দাম আরো বেশি। রুটি বা পরোটার দাম ২৫/৩০ নেপালী রূপির উপরে। এক কাপ লাল চা ২০ আর দুধ চায়ের দাম পড়তো ২৫ নেপালী রূপি। কলা খেয়েছি প্রতি পিস ১৫ থেকে ২০ নেপালী রূপি, এমনকি সিঙ্গারার দামও নিয়েছে ২০ নেপালী রূপি করে।
আমাদের দেশে কাঁচের বোতলো সফট ড্রিংকসের দাম ২০ টাকা করে হলেও একই পানীয় নেপালে আমাদেরকে কিনতে হয়েছে ৫০-৬০ নেপালী রূপি করে। তবে বেশ কয়েক জায়গাতেই আমরা দেখেছি, একজনের জন্য যে খাবারটা তারা সার্ভ করে, সেটি অনায়াসে ২ জন খেতে পারে। তাই প্রথম দিন অর্ডার দেবার পর অনেক খাবার রয়ে গেলেও পরের দিনগুলোতে আমরা বেশ হিসেব করে অর্ডার দিয়েছিলাম। তাও লাঞ্চ বা ডিনারে আমরা ৬ জন যাই খাই না কেন, বিল কোনবারই ১৫০০ থেকে ২০০০ নেপালী রূপির নিচে আসেনি।
আমার হিসেবে, দাম বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ হলো নেপালে সমতল ভূমি প্রায় নেই বললেই চলে। পাহাড় কেটে যতটুকু আবাদী জমি করা হয়েছে সেটুকুতেই চাষাবাদ করা হয়। পাহাড়ের গায়ে সিঁড়ির মতো করে কেটে লম্বালম্বিভাবে ধান চাষ করা হয়। আর অনেক খাদ্যপণ্যই আমদানি করা হয়। নেপালে ভারতীয় পণ্যের আধিক্য খুব বেশি। তবে দাম তুলনামূলক বেশিই বলা যায়।
নেপালের দুধ চা বা দুগ্ধজাত কোন খাবারে মহিষের দুধ বেশি ব্যবহার করা হয়। মহিষের দুধের চা ও দই যে এতো মজা হয় সেটি নেপালে না গেলে বুঝতাম না। নেপালের নাগারকোট যারা যাবেন তারা অবশ্যই মোষের দুধের চা ও দই খেয়ে আসবেন।
ভাতের সঙ্গে সবজিই হোক বা মাংসই হোক সেটি খুব বেশি ঝোল ঝোল করা হয়। এটি অনেকে পছন্দ নাও করতে পারেন। আর প্রতিটি খাবারে কেমন যেন একটা গন্ধ থাকে, হয়তো তাদের মশলার ভিন্নতার জন্য, যেটি অনেক পর্যটকের কাছে ভালো না লাগারও কারণ হতে পারে।
নেপালে গেলে কলা খেতে ভুল করবেন না। অসাধারণ টেস্ট পাবেন। স্ট্রিট ফুডের টেস্ট নিতে পারেন। ভিন্ন এক্সপটেরিয়েন্স হবে।
হিন্দু প্রধান রাষ্ট্র হওয়ায় পুরো নেপালের কোথাও গরুর মাংস পাবেন না বললেই চলে, আমরা অন্তত পাই নি। মাংস হিসেবে খেতে পারবেন মুরগি ও মহিষের মাংস। তবে সেগুলোর জবাই প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন আছে। টিমের কেউ কেউ জানালেন আমরা যেভাবে পশু জবাই করি, সেগুলোর বদলে এই পশুগুলোকে বলি দেয়া হয়। এজন্য যারা মুসলিম অনুশাসন ভালো ভাবে মেনে চলেন তারা নেপালে মাংস খাওয়া এড়িয়ে যেতে পারেন। নেপালে মাছ খুব বেশি পাওয়া যায় না। আর যেগুলো পাওয়া যায়, সেগুলোর দামও অনেক বেশি।
নেপালে চলতি পথে বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট চোখে পড়েছে, যেগুলোতে বুফে সিস্টেম প্রচলিত। নন ভেজ ও ভেজ- এভাবে দুটো ক্যাটাগরিতে খাবারের বিল ধরা হয়। বিলও খুব বেশি হয় না। সর্বোচ্চ ২৫০-৩০০ নেপালী রূপির মধ্যেই নিজের ইচ্ছা মতো খেতে পারবেন।
তবে অনেক রেস্টুরেন্টই খাবার অর্ডার দেবার পর তৈরি করে তারপর সার্ভ করে। এজন্য সময় লাগে ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা পর্যন্ত। হোটেলে যদি রাতে বা দুপুরে খেতে চান তবে অনেক আগেই অর্ডার করে রাখতে হয়। নইলে পরে খাবার নাও পেতে পারেন। লোকাল রেস্টুরেন্টগুলোও রাত ৯টার পর বন্ধ হয়ে যায়। তাই রাতের খাবার ৯টা মধ্যেই খাবেন, নইলে না খেয়েই রাত পার করতে হবে।
সব শেষ কথা, ভিন্ন দেশ ও ভিন্ন সংস্কৃতিতে খাবারেও ভিন্নতা ও স্বাদ থাকবে। তাই সব কিছু নিজের মনের মতো না পাওয়াটাই স্বাভাবিক। এজন্য আক্ষেপ করে খামোখা ট্যুরের আনন্দ মাটি করবেন না। না হয় ক'দিন মন মতো না-ই বা খেলেন। একেবারে দেশে এসেই না হয় ইচ্ছা মতো খাবেন এই আশাই মনে পুষে রাখুন ও যে কোন জায়গায় ভ্রমণ এনজয় করুন।
নেপালে কেনাকাটা:
কেনাকাটার জন্য নেপাল খুব বেশি সুইটেবল দেশ না। কারণ নেপালের বিভিন্ন মার্কেটে কেনাকাটার জন্য যে পণ্যগুলো দেখবেন সেগুলোর অধিকাংশই ভারত অথবা চীন থেকে আমদানী করা। নেপালের ঐতিহ্যবাহী টুপি আর কিছু শো-পিস ছাড়া ইউনিক পণ্য তেমনটা আমার চোখে পড়ে নি।
আর জিনিসের দাম সেই রকম বেশি। আপনার যদি নিউমার্কেট বা গুলিস্তানে দামাদামি করে জিনিস কেনার বাতিক থাকে তবে নেপাল হবে আপনার আরেকটি প্র্যাকটিস ফিল্ড। তবে এ ফিল্ডটি কিছুটা কঠিন। কারণ, প্রথমত, ভাষাগত ব্যাপারে অমিল, দ্বিতীয়ত, একই পণ্যের দাম বিভিন্ন দোকানে বিভিন্ন রকম হওয়াতে আপনি রীতিমতো কনফিউজ হয়ে যাবেন। সেজন্য আপনাকে বিস্তর সময় ও ধৈর্য নিয়ে পণ্য কেনাকাটা করতে হবে।
দেখা যাবে ১৮০০ নেপালী রূপি দামের শাল (গায়ে দেবার চাদর) দামাদামি করে হয়তো ৮০০ নেপালী রূপিতে কিনে দোকান থেকে বের হয়েছেন, তখন আপনার সফরসঙ্গী কেউ একজন পাশের দোকান থেকে সেটি নেপালী ৬০০ রূপিতে কিনে বের হচ্ছে। অন্তত আমাদের ট্যুরে এমনটা হয়েছে বলেই বলছি। ব্যাপারটা সবার জন্যই তখন বিব্রতকর হয়ে দাঁড়ায়।
আবার এমনও হয়েছে যে, নেপালী টুপি দামাদামি করে ১৫০ নেপালী রূপি করে গোটা বিশেক কেনার পর দেখা গেছে অন্য একজন সেটি ১০০ নেপালী রূপি করে অন্য দোকান থেকে কিনেছেন। তাই দামাদামি যদি করতে পারেন তবে কেনাকাটায় সময় রাখবেন, নইলে খামোখা পরে আফসোস করার মানসিক প্রস্তুতি রাখুন।
এবার আসুন কোথা থেকে কিনবেন (নাকি ঠকবেন!)?
কাঠমান্ডুর থামেল হলো কেনাকাটার আদর্শ স্থান। এ জায়গাটা এয়ারপোর্ট থেকে খুব বেশি দূরত্বে নয়। গাড়িতে যেতে ২০ মিনিট মতো লাগে। থাকা-খাওয়ার জন্য অনেক ভালো ভালো হোটেল-রেস্টুরেন্ট এখানে পাবেন। অলি-গলির মধ্যে অসংখ্য ছোট-বড় দোকান থেকে আপনার পছন্দসই পণ্য কিনতে পারবেন। তবে ঘুরে ফিরে সেই একই কথা, কেনাকাটায় আপনাকে পারদর্শি হতে হবে। যদি পারেন তবে স্থানীয় কাউকে বা যিনি আগেও এখানে কেনাকাটা করেছেন তাকে নিয়ে যেতে পারেন।
ভাষাগত ব্যাপারে সমস্যা হতে পারে। কোন কোন নেপালী দোকানদার ইংরেজি বেশ এক্সপার্ট। আর বাকিরা নেপালী ছাড়াও হিন্দিতে পারঙ্গম। সুতরাং, আপনি আপনি যদি হিন্দিতে কথা বলা ও বোঝায় অভিজ্ঞ হন, তবে কেনাকাটা করা আপনার জন্য বেশ সহজই হবে।
বড় বড় দোকানগুলোতে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেও কেনাকাটা করার সুযোগ রয়েছে। তবে আমাদের গ্রুপেরই একজনের কার্ড কাজ করেনি। সেজন্য আপনার ক্রেডিট কার্ডটি আসলেই কাজ করবে কিনা সেটি দেশ ছাড়ার আগেই ব্যাংক থেকে কনফার্ম হয়ে নিয়েন।
যারা প্রথমবারের মতো নেপাল যাবেন তাদের অনেকেই শপিং করবেন। কিন্তু প্রশ্ন জাগে কি কি শপিং করবেন। আসুন, একটু আইডিয়া শেয়ার করি। বাসার মুরুব্বীদের জন্য শাল কিনতে পারেন। দাম নেবে ৫০০ থেকে ৮০০ নেপালী রূপি। সুন্দর সুন্দর চাবির রিংয়ের দাম নেবে ৫০ থেকে ১০০ নেপালী রূপি। ঐতিহ্যবাহী নেপালী টুপি পাবেন ১০০ থেকে ১৫০ নেপালী রূপির মধ্যে।
নিজের জন্য চামড়ার জুতো কিনতে পারেন। শার্ট, প্যান্ট বা গেঞ্জি যেটাই কিনুন না কেন সেটা পাশ্ববর্তী থেকে আমদানী করা বলেই ধরে নেবেন। তাই এগুলো কিনে লাগেজ ভারী না করাই ভালো। মনে রাখবেন আপনার জন্য ২০ কেজি লাগেজ পারমিটেড। এর বেশি ওজন হলে আলাদা করে ট্যাক্স দিতে হবে।
বাহারী ডিজাইনের নানা রকম শো পিস আছে। তবে যদি চাকু বা বন্দুক জাতীয় শো পিস কেনেন, তবে অবশ্যই বিমানের লাগেজে দিয়ে দেবেন। সাথে করে বহন করতে দেবে না।
এছাড়া ছোট-বড় সবার জন্য চকলেট কিনতে পারেন। তবে চিলি (মরিচ) যুক্ত ঝাল চকলেট কিনবেন না। এয়ারপোর্টে তা রেখে দেবে। আমার ক্ষেত্রে এমনটা হয়েছে বলেই বলছি।
চামড়ার হ্যান্ড ব্যাগগুলোও বেশ পছন্দ হবে। দামাদামি করলে ৫০০ থেকে ২৫০০ নেপালী রূপির মধ্যে কিনতে পারবেন। তবে কিছু কিছুর দাম কোয়ালিটি অনুযায়ী কম-বেশি হতে পারে।
২| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৮:০৭
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে নেপাল নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য।
৩| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২২
কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: খুবই চমৎকার একটি ভ্রমন পোষ্ট। আশা করি যারা নেপাল ভ্রমনে যাবে তাদের কোন সমস্যাই হবে না।
৪| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১২:১৮
মোস্তফা সোহেল বলেছেন: অনেক বড় পোষ্ট।প্রিয়তে রাখলাম।সময় করে পড়ব।
৫| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৪:৪৮
Tofiqul islam বলেছেন: সুন্দর লেখা। নেপাল যাবার ইচ্ছে আছে। দেখা যাক কখন সেটা পরুন হয়।
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১১:৫১
কাওসার চৌধুরী বলেছেন:
দারুন একটি ভ্রমণ পোস্ট। কখনো নেপালে যাইনি তাই আপনার লেখাটি মনযোগ দিয়ে পড়লাম। আপনি পরতিটি বিষয় খুব সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেছেন। যারা নেপাল ভ্রমণে যাবে তাদের জন্য আদর্শ একটি লেখা। তবে আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি এত টাকা খরছ করে নেপালে না গিয়ে আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবনে বেড়াতে যাওয়াই শ্রেয়।