নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই লেখাটার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো আমি নেপাল যাবার আগে নাগারকোট সম্পর্কে তেমন কোন স্পেসিফিক লেখা বা ভ্রমণ কোথাও খুঁজে পাইনি। তবে কাঠমান্ডু বা পোখরা সম্পর্কে শত শত ভ্রমণ কাহিনী পেয়েছি। একারণে কেবল নাগারকোট ভ্রমণ সম্পর্কে একটা ডিটেইলস লেখার ইচ্ছা তখন থেকেই ছিল।
যাই হোক, নেপালে পর্যটকদের আকর্ষণের অন্যতম স্থান হিসেবে নাগারকোটকে ধরা হয়। তাই নেপাল ভ্রমণে যাবেন, অথচ নেপালের রাজদানী কাঠমান্ডু থেকে মাত্র ৩২ কিলোমিটার দূরে নাগারকোটে যাবেন না, এটা তো হতেই পারে না।
কাঠমান্ডুর পূর্ব দিকে নাগারকোটের অবস্থান। আর পশ্চিম দিকে ২০৪ কিলোমিটার দূরে পোখরা অবস্থিত। যারা নেপাল ভ্রমণে যান তারা পোখরাকে মাথায় রেখেই ট্যুর প্লানিং করেন। যেহেতু নাগারকোট ও পোখরা দুটোই কাঠমান্ডুর দুদিকে, তাই সময় কম থাকলে অনেকেই নাগারকোটকে তাদের ট্যুর প্লান থেকে বাদ দিয়ে দেন। অথচ নাগারকোটের ফিলিং যে পোখরায় পাওয়া যাবে না সেটি অনেকেরই অজানা।
নেপালের ভক্তপুর জেলায় অবস্থিত নাগারকোট থেকে হিমালয়ের ভিউ সবচেয়ে ভালো দেখা যায়। বিশেষ করে হিমালয়ের কোল থেকে সূর্যদয়ের দৃশ্য দেখার জন্য নাগারকোট প্রসিদ্ধ। নাগারকোট থেকে কাঠমান্ডু শহরটিকেও দারুণভাবে দেখা যায়। হিমালয়ের ১৩টি পর্বতশৃঙ্ঘের মধ্যে ৮টিই নাগারকোট থেকে দেখা যায়। নাগারকোটে আপনি যেহেতু থাকবেনই মেঘের ওপরে তাই আকাশে খুব বেশি মেঘ থাকলে নাও দেখতে পারেন।
কেন যাবেন নাগারকোট?
প্রথমেই বলে নেই, যারা হাইকিং করতে (পাহাড়ে উঠতে) পছন্দ করেন তাদের জন্য এক কথায় নাগারকোট হলো বেস্ট অপশন। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭ হাজার ফুট উপরে নাগারকোটের অবস্থান। ফলে মেঘও থাকবে আপনার অনেক নিচে। আপনার থাকার হোটেলটির জানালা দিয়ে প্রায়শই মেঘ ঢুকে হয়তো আপনাকে কিঞ্চিত ভিজিয়ে দিয়ে যাবে।
সূর্যদয়ের দৃশ্য দেখার জন্য খুব ভোরেই বেরিয়ে পড়তে পারেন। এছাড়া সকালের নাস্তার সময় দূরের হিমালয় পাহাড়কুঞ্জে সূর্যের আলোতে প্রতিফলিত আলোতে মুগ্ধ হয়ে অপলক নয়নে তাকিয়ে থাকবেন। পাহাড়ে পাহাড়ে যখন হেঁটে বেড়াবেন তখন নতুন কিছু দেখার মুগ্ধতা আপনাকে আচ্ছন্ন করে রাখবে।
হাঁটতে হাঁটতে কখনো পাহাড়ের উপরে উঠবেন, আবার নিচে নামবেন। নানা রকমরে পাহাড়ী ফুল-ফলের দেখা পাবেন। পাহাড়ী মানুষদের সঙ্গে আড্ডা জমাতে পারেন। নেপালীরা নেপালী ভাষা ছাড়াও হিন্দিতে পারঙ্গম হয়। তাই যদি হিন্দিতে টুকটাক কথা বলতে ও বুঝতে পারেন তবে নেপাল ঘোরাটা আপনার জন্য কঠিন কিছু হবে না।
নেপাল হিন্দুপ্রধান দেশ হওয়ায় এখানে প্রচুর মন্দিরের দেখা পাবেন। পাহাড়ের অনেক উপরেও তাই আপনি মন্দিরের খোঁজ পাবেন।
কিভাবে যাবেন:
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে নাগারকোট যাবার জন্য বাস ও ট্যাক্সিক্যাব পাবেন। এসি ও নন এসি উভয় রকমের বাসেই যেতে পারবেন। বাসে ভাড়া প্রতিজন ২০০ থেকে ৫০০ নেপালী রূপি করে নেবে। তবে আমার সাজেসন হলো একাধিকজন একসাথে গেলে ট্যাক্সি নেয়াটাই ভালো হবে। ট্যাক্সি ভাড়া যাই চাক না কেন ২ হাজার নেপালী রূপির বেশি না দেয়াটাই উত্তম হবে।
তবে অবস্থা বুঝে কিছু বেশি দেয়া লাগতে পারে। বাসের চেয়ে ট্যাক্সি কেন প্রেফার করছি সেটি নাগারকোটে যাবার সময়ই উপলব্ধি করবেন। নাগারকোটের আঁকাবাঁকা ও তীক্ষ্ণ বাঁকগুলোতে ট্যাক্সিতে বসেই চরম থ্রিল অনুভব করবেন। তবে বাসের ক্ষেত্রে এই থ্রিলটি আতঙ্কে রূপ নিলেও নিতে পারে। তবে নাগারকোট যাওয়া বা আসার পথে তেমন কোন জ্যামের মুখোমুখি হতে হয়না। সময় লাগবে ২ ঘন্টা মতো।
নাগারকোটের এন্ট্রি ফি:
নাগারকোটে প্রবেশের সময় এন্ট্রি ফি হিসেবে জনপ্রতি ২০০ নেপালী রূপি দিতে হয়। এটা কেবল সার্ক ভুক্ত দেশগুলোর জন্য। নেপালীদের জন্য ১০০ নেপালী রূপি। আর অন্য সকল দেশের নাগরিকদের জন্য জনপ্রতি ১২০০ নেপালী রূপি করে দিতে হয়।
কোথায় থাকবেন?
নেপালের অন্যতম প্রধান আয়ের উৎস হলো পর্যটন। ফলে পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার জন্য পুরো দেশেই অসংখ্য ভালো মানের হোটেল রয়েছে। এখন প্রসঙ্গ হলো ট্যুর করার সময় যদি সীমিত হয় বা দেখা গেল গন্তব্যে পৌঁছাতে আপনার অনেক রাত হয়ে গেল, তখন ভালো হোটেল কিভাবে খুঁজে পাবেন। আর কিভাবেই বা আপনার হোটেল রুম বুক দেবেন। ইন্টারনেটের এ যুগে এ বিষয়টি খুবই সহজ যে, অনলাইনেই নানা সাইট রয়েছে হোটেল রুম বুক দেবার জন্য। বিশেষ করে গুগল আপনাকে রুম রেট সহ হোটেলের খোঁজ পেতে ভালো সাহায্য করবে। এছাড়া বর্তমানে https://booking.com নামের একটি সাইটও আপনাকে এ ব্যাপারে ভালো সহযোগীতা করতে পারে।
নাগারকোটে থাকার জন্য বিভিন্ন মানের ভালো ভালো হোটেল আছে। ভাড়া পড়বে ডাবল রুমের ভাড়া পড়বে ১২০০ থেকে ১৫০০ নেপালী রূপি। আর সকালের নাস্তা কমপ্লিমেন্টারি হিসেবে যেসব থ্রি স্টার মানের হোটেলগুলো দেয় সেগুলোর ভাড়া পড়বে ২০০০ থেকে ২৫০০ রূপি করে। তবে শীতকালে বা পিক সিজনে গেলে ভাড়া বাড়তে পারে। এজন্য অনলাইনে আগে থেকে দেখে বুঝে বুক করে গেলেই ভালো করবেন।
কি খাবেন?
নাগারকোটে খাবার-দাবারের দাম আমাদের দেশের তুলনায় বেশি। এক প্লেট ভাতের দাম রেস্টুরেন্ট ভেদে ১২০ থেকে ১৫০ নেপালী রূপি। ভালো মানের রেস্টুরেন্টে তো দাম আরো বেশি। রুটি বা পরোটার দাম ২৫/৩০ নেপালী রূপির উপরে। এক কাপ লাল চা ২০ আর দুধ চায়ের দাম পড়তো ২৫ নেপালী রূপি। কলা খেয়েছি প্রতি পিস ১৫ থেকে ২০ নেপালী রূপি, এমনকি সিঙ্গারার দামও নিয়েছে ২০ নেপালী রূপি করে। তবে বেশ কয়েক জায়গাতেই আমরা দেখেছি, একজনের জন্য যে খাবারটা তারা সার্ভ করে, সেটি অনায়াসে ২ জন খেতে পারে। এজন্য প্রথমবার খাবার অর্ডার দিয়ে পরিমাণটা দেখে নেবেন। তাহলে পরবর্তীতে সেই অনুপাতেই অর্ডার দিতে পারবেন।
যে হোটেলে থাকবেন যদি রাতে বা দুপুরে খেতে চান তবে অনেক আগেই অর্ডার করে রাখতে হয়। নইলে পরে খাবার নাও পেতে পারেন। লোকাল রেস্টুরেন্টগুলোও রাত ৯টার পর বন্ধ হয়ে যায়। তাই রাতের খাবার ৯টা মধ্যেই খাবেন, নইলে না খেয়েই রাত পার করতে হবে।
এখানে দুধ চা বা দুগ্ধজাত কোন খাবারে মহিষের দুধ বেশি ব্যবহার করা হয়। মহিষের দুধের চা ও দই যে এতো মজা হয় সেটি নেপালে না গেলে বুঝতাম না। নাগারকোট যারা যাবেন তারা অবশ্যই মোষের দুধের চা ও দই খেয়ে আসবেন। আর নাগারকোটের পাহাড়ী কলা খেতে ভুল করবেন না। অসাধারণ টেস্ট পাবেন।
নাগারকোটের আবহাওয়া:
নাগারকোটে সারা বছরই বেশ ঠান্ডা থাকে। ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, নেপালের রাজপরিবার গরমকালে নাগারকোটে অবকাশ যাপন করতে আসতেন।
নাগারকোটে আমরা যে হোটেলে ছিলাম সেই হোটেলে এসি তো দূরে থাক, কোন ফ্যানই চোখে পড়েনি। এমনকি ঘরের উপরে সিলিং ফ্যান লাগানোর কোন জায়গাই চোখে পড়েনি। বিষয়টা নিয়ে প্রশ্ন করতেই হোটেলের নেপালী ম্যানেজার আমাদেরকে জানালেন, নাগারকোটে সারা বছরই শীত থাকে। আমরা গত মাসে দেশে প্রচন্ড গরম দেখে গিয়ে নাগারকোটে লেপ গায়ে দিয়ে ঘুমিয়েছি। তাহলেই পাঠকদের বুঝতে সুবিধা হবে নাগারকোটে শীতের সময় তাহলে আবহাওয়া কেমন থাকে।
তাই যারা নাগারকোটে যাবেন তারা অবশ্যই গরম কাপড় নিয়ে যাবেন। আর সম্ভব হলে গুগলে নাগারকোটের আবহাওয়া কেমন আছে সেটি দেখে যাবেন। তাহলে কি পরিমাণ গরম কাপড় সঙ্গে নিতে হবে সেটি সম্পর্কে আইডিয়া যাবেন।
২| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১:০১
চাঙ্কু বলেছেন: নাগরকোট নিয়ে চমৎকার বিস্তারিত পোষ্ট। অনেকের কাজে লাগবে!
৩| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ২:৪৮
অনল চৌধুরী বলেছেন: নাগারকোটে খাবার-দাবারের দাম আমাদের দেশের তুলনায় বেশি। এক প্লেট ভাতের দাম রেস্টুরেন্ট ভেদে ১২০ থেকে ১৫০ নেপালী রূপি। ভালো মানের রেস্টুরেন্টে তো দাম আরো বেশি। রুটি বা পরোটার দাম ২৫/৩০ নেপালী রূপির উপরে। এক কাপ লাল চা ২০ আর দুধ চায়ের দাম পড়তো ২৫ নেপালী রূপি। কলা খেয়েছি প্রতি পিস ১৫ থেকে ২০ নেপালী রূপি, এমনকি সিঙ্গারার দামও নিয়েছে ২০ নেপালী রূপি করে।-নেপারী মুদ্রার দাম বাংলাদেশী টাকার চেয়ে অনেক কম।এছাড়াও পর্যটন এলাকাতে জিনিসপত্রের দাম সবসময়ই বেশী থাকে।
২০০২ সালে ওখানে গিয়ে দেখেছি যে স্থানীয় অার পর্যটকদের জন্য একই জিনিসের দুইরকম দাম।
অার নেপালের বেশীরভাগ লোকজন বাংলাদেশের লোকদের চেয়েও অসৎ,ওদের লোভও খুব বেশী।
২২ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৯:৫৭
রিজভী বলেছেন: কথা সত্য। ওরা পর্যটকদের কাছে যে কোন জিনিসের দামই অতিরিক্ত বাড়িয়ে বলে। আর আমরা গিয়ে নেপালী রূপির সঙ্গে টাকার যে মান পেয়েছি সেটি হলো আমাদের ৭৫ টাকা হলো ওদের ১০০ রূপি। সেই হিসেবে ধরলেও সব কিছুর দামও অতিরিক্ত বেশি।
৪| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৮:১৮
রাজীব নুর বলেছেন: মেঘের রাজ্যে মেঘ নেই, শুধু আপনি।
৫| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১০:০০
মোস্তফা সোহেল বলেছেন: লেখা ভাল লাগল।
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১:০০
মনিরা সুলতানা বলেছেন: বাহ !
সুন্দর করে প্রয়োজনীয় তথ্যসহ লিখেছেন ।
বর্ননা অনেক ভালো লেগে গেলো নাগারকোট ।