নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে আমি কোন ব্লগার নই মন চায় তাই লিখি তথ্য-উপাত্ত সবার সাথে শেয়ার করি ।\nজব এর পাশাপাশি এয়ার টিকেট ও ট্রাভেল ভিসার ব্যাবসা করি ।\nধন্যবাদ\n

তানজীর আহমেদ সিয়াম

তানজীর আহমেদ সিয়াম

তানজীর আহমেদ সিয়াম › বিস্তারিত পোস্টঃ

কুড়ানো ( পর্ব -১০ ) ★\'দিনাজপুর ট্র্যাজেডি\' ★

১০ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:৪২



৬ জানুয়ারি ১৯৭২, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের বয়স সবে একুশ দিন হয়েছে। স্বাধীনতার আনন্দে উদ্বেলিত জাতি সেদিন প্রত্যক্ষ করেছিল এক হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা। এদিন, দিনাজপুর শহরের উত্তর বালুবাড়ীস্থ মহারাজা হাইস্কুলে ঘটেছিল ইতিহাসের এক বেদনাদায়ক ট্র্যাজেডি।
স্বাধীন বাংলাদেশে এতো বড় ট্র্যাজেডি আর কোথাও হয়নি। এক সঙ্গে কয়েকশ বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধার প্রাণ ঝরে যাওয়ার এতো বড় মর্মান্তিক, হৃদয়বিদারক ঘটনা অকল্পনীয় ছিল। যে মুক্তিযোদ্ধারা ঘরে ফেলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, বাংলার স্বাধীন মাটিকে নিরাপদ করতে সক্রিয় ছিল, তাদের এ প্রাণ বিসর্জন বেদনার চেয়েও বেদনাদায়ক।
স্বাধীনতার পর তো বটেই, যুদ্ধকালীন সময়েও একসাথে একইস্থানে এত বেশী মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। একাত্তরের ১৪ই ডিসেম্বর দিনাজপুর, পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বর্বরতা থেকে মুক্ত হয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধ শেষ হওয়া মাত্র মুক্তিযোদ্ধারা বাড়ি ফিরে যাননি,স্বাধীন দেশের মাটি নিরাপদ করতে, তাঁদের ওপর আরও বিশাল দায়িত্ব অর্পিত হয়েছিল। পাকিস্তানী সেনা কর্তৃক পুঁতে রাখা মাইন ও অন্যান্য বিস্ফোরক নিস্ক্রিয় করা, অস্ত্র সংগ্রহ করা ও জমা দেয়া এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এসব কারণেই, স্বাধীন দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাঁদের জন্য স্থাপিত হয়েছিল 'ট্রানজিট ক্যাম্প'।
ভারতের পতিরাম, হামজাপুর, বাঙ্গালবাড়ী, তরঙ্গপুর, বাংলাদেশের নবাবগঞ্জ, ঘোড়াঘাট, ফুলবাড়ী, হাকিমপুর, দিনাজপুর সদর, ঠাকুরগাঁও, পীরগঞ্জ, রাণীশংকৈল ও হরিপুর এলাকার ৬ ও ৭নং সেক্টরের প্রায় হাজার খানেক মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ট্রানজিট ক্যাম্প করা হয় দিনাজপুর শহরের পূর্বে অবস্থিত মহারাজা গীরিজানাথ হাইস্কুলে। বৃহত্তর দিনাজপুর জেলায় যুদ্ধ করেছেন এমন প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে এই ট্রানজিট ক্যাম্পটি স্থাপিত হয়েছিল।
ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বৃহত্তর দিনাজপুরের বিভিন্ন স্থানে পাকি হার্মাদদের পুঁতে রাখা মাইন,বোমা, অন্য অস্ত্র উদ্ধার করা হতো। প্রতিদিনের উদ্ধারকৃত অস্ত্র ট্রানজিট ক্যাম্পের ব্যাংকারে রেখে দেয়া হতো। মহারাজা স্কুলের বিরাট মাঠের দক্ষিণ দিকে (বর্তমানে যেখানে মসজিদ রয়েছে তার পাশেই) উদ্ধারকৃত এসব অস্ত্রের ব্যাংকার ছিল। ব্যাংকারে রাখা হয়েছিল উদ্ধারকৃত অ্যান্টি ট্যাংক মাইন,অ্যান্টি পার্সোনাল মাইন,জ্যাম্পিং মাইন,মর্টারের ২ ও ৩ ইঞ্চি শেল এবং গ্রেনেডসহ বিভিন্ন অস্ত্র ও বিস্ফোরক।
৬ই জানুয়ারি ১৯৭২, সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। এদিন নবাবগঞ্জ ও ঘোড়াঘাট থেকে উদ্ধার্কৃত দুই ট্রাক অস্ত্র মহারাজা স্কুলে নিয়ে আসেন মুক্তিযোদ্ধারা। সেসব অস্ত্র ব্যাংকারে স্থানান্তরের মুহূর্তে, আনুমানিক বিকেল সাড়ে পাঁচটায় সূর্য অস্ত যাবার মুহূর্তে হঠাৎ করেই যেন নরক নেমে এলো মহারাজা স্কুলের ট্রানজিট ক্যাম্পে। প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দের সাথে সাথে চারপাশের প্রায় আধ মাইল যেন ধ্বংসস্তুপে পরিণত হলো।
চোখের পলকে স্কুলের দোতলা ভবনটি ভেঙে পড়েছিল। মাঠের যে স্থানটিতে অস্ত্র ব্যাংকার ছিল,তা ২০ থেকে ২৫ ফুট গভীর পুকুরে পরিণত হলো,সেখানে উঠে এলো পানি। প্রচণ্ড বিস্ফোরণে বিদ্যালয়ের কক্ষে ও মসজিদে নামাজ আদায়কারী মুক্তিযোদ্ধারা নিহত হয়েছিলেন।
স্কুলের বিশাল এলাকা এবং এর চারপাশে নিহত আর আহত মানুষের পোড়া গন্ধে ভয়ঙ্কর এলাকায় পরিণত হলো। এই অকস্মাৎ বিস্ফোরণ শুধু মহারাজা স্কুল প্রাঙ্গণ নয়, গোটা দিনাজপুর শহরকে ভূমিকম্পের মতো কাঁপিয়ে দিয়েছিল। এমনকি ৪০/৫০ মাইল দূরেও এই ভয়াবহ বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট অগ্নিগোলক মানুষের দৃষ্টিগোচর হয়েছিল সেদিন।
দুর্ঘটনার সময় ঠিক কতজন মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে উপস্থিত ছিলেন তার সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য নেই। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সকালে রোল কলের সময় ৭৮০ জন মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে উপস্থিত ছিলেন। তারপর অনেকেই ২/১ দিনের ছুটি নিয়ে বাবা-মা-স্ত্রী-সন্তানদের সাথে দেখা করার জন্য ক্যাম্প ছেড়ে চলে যায়।
ক্যাম্প ছেড়ে কতজন মুক্তিযোদ্ধা স্বজনদের কাছে চলে যান, সেটার সঠিক তথ্য জানে না কেউই। তাই দুর্ঘটনার সময় ক্যাম্পে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বলা কঠিন। দুর্ঘটনার পরপরই স্থানীয় মানুষ উদ্ধার কাজে নেমে পড়েন। কিন্তু সে সময় বিদ্যুৎ না থাকায় ঘন অন্ধকারের ভেতর ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধারকাজ চালানো কষ্টকর ছিল। পরে ভারতীয় মিত্রবাহিনী উদ্ধারকাজে যোগ দেয়। গাড়ির লাইট জ্বালিয়ে এবং টর্চ, হ্যাজাক ও লণ্ঠনের আলোয় রাতভর উদ্ধার কাজে সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেয়।
ট্র্যাজেডির পরদিন ৭ জানুয়ারি ১৯৭২, দিনাজপুর শহরের গোর-এ শহীদ বড় ময়দানে বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে ৯৬ জন মুক্তিযোদ্ধার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় মুক্তিযোদ্ধাদের মৃতদেহ,দিনাজপুর চেহেলগাজী মাজার প্রাঙ্গণে দাফন করা হয়। পরে একই স্থানে আরো ৩৯ জনসহ মোট ১শ’ ৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধার মরদেহ সমাহিত করা হয়। এছাড়া অনেক মুক্তিযোদ্ধার মরদেহ তাদের আত্মীয়-স্বজন নিয়ে যান।
লাশগুলোর অধিকাংশ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন ছিল। কারো হাত, কারো মাথা জোড়া লাগিয়ে একেকটি লাশের আদল দেয়া হয়েছিল। সবগুলো লাশই ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের। ঘটনাস্থলে অনেক গলিত, পোড়া, অর্ধ পোড়া, ছিন্ন-বিচ্ছিন, ঝলসানো মাংসের টুকরো পাওয়া যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের মাংসও দাফন করা হয় তাদের লাশের সাথে।
ট্রানজিট ক্যাম্পের বাইরে, উত্তর বালুবাড়ী-কুমারপাড়া মহল্লার আরও ১৫ জন স্থানীয় মানুষ মারা গিয়েছিলেন বলে জানা যায়। বিস্ফোরণে আহতদেরকে বিভিন্ন স্থানে নেয়ায় নিহতের সঠিক হিসাব পাওয়া না গেলে ঘটনার দিন সকালে রোল কলের তালিকা মোতাবেক প্রায় পাঁচশত মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।
শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের অধিকাংশ ছিলেন দিনাজপুর শহরের বাইরের। ফলে বেশিরভাগ শহীদের নাম, পরিচয় জানা যায়নি। দিনাজপুরের বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদের প্রচেষ্টায় ১২২ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও ৪৪ জন আহত মুক্তিযোদ্ধার নাম সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে।
আজ, দিনাজপুর ট্র্যাজেডির ৪৬ তম বার্ষিকীতে 'গেরিলা ১৯৭১' পরিবার হৃদয় গভীরের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করছি শহীদ সকল মুক্তিযোদ্ধাদের। পরম করুনাময় তাঁদের সকলেকে চিরশান্তিতে রাখুন।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: জানলাম।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:৪৭

তানজীর আহমেদ সিয়াম বলেছেন: ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য :)

২| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:৫৫

মনিরা সুলতানা বলেছেন: ধন্যবাদ শেয়ারের জন্য ।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:৪৭

তানজীর আহমেদ সিয়াম বলেছেন: ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য :

৩| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৪৮

সৈয়দ ইসলাম বলেছেন: পরবর্তীতে এই আকস্মিক বিস্ফারণের কোন কারণ পাওয়া গিয়েছিল?

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:৪৮

তানজীর আহমেদ সিয়াম বলেছেন: না
এ ধরনের কোন তথ্য খুজে পাই নাই :(
ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য :)

৪| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:২৫

মিনহাজুল পলক বলেছেন: অত্যন্ত হৃদয়বিদারক

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:৫০

তানজীর আহমেদ সিয়াম বলেছেন: জ্বী এ ধরনের ঘটনা আনন্দকে ম্লান করে দেয় :(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.