নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাষ্ট্রীয় সম্মাননা না পেলেও জনতার কাছে তিনি একজন প্রকৃত বীর। তিনিই একমাত্র সেক্টর কমান্ডার, যিনি যুদ্ধকালীন সময়ে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে তিনি সম্মুখযুদ্ধেই কেবল অংশ নেননি, একই সঙ্গে স্থানীয় যুবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছেন লড়াই করার জন্য। ৭ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। 'বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিল' দশম খণ্ড ও মেজর রফিকুল ইসলামে লেখা লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে বইতে শহীদ মেজর নাজমুলের বীরত্বের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
গেরিলা ১৯৭১ আয়োজিত গত বছরের ১৭ই মার্চ 'স্বাধীনতা ও নবপ্রজন্ম' অনুষ্ঠানে সেক্টর কম্যান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর নাজমুল হকের শ্রদ্ধেয় সহধর্মিণী (ডানে) এবং কন্যা নওরিন সাবা (বামে)
মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর বেঁচে ছিলেন তিনি মাত্র ছয় মাস। এই ছয় মাসে সাত নম্বর সেক্টরের অধীনে সমগ্র রাজশাহী, পাবনা ও বগুড়া জেলা, দিনাজপুর ও রংপুরের কিছু এলাকায় অসংখ্য অভিযান পরিচালনা করেন। ইপিআর সদস্য ও স্থানীয় যুবকদের সঙ্গে নিয়ে নওগঁা ও বগুড়ার সেনা ক্যাম্পে হামলা করেন তিনি। শত্রুমুক্ত করেন সমগ্র বগুড়া জেলা। এরপর গ্রহণ করেন রাজশাহী ও চাঁপাইপাইনবাবগঞ্জ মুক্ত করার পরিকল্পনা।
মেজর নাজমুল হক
৭ নং সেক্টর কম্যান্ডার (আগস্ট ১৯৭১)
বগুড়া ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৯১ আইএপি (ইনডিপেনডেন্ট এমুনেশন প্লাটুন)। রংপুরে অবস্থিত ২৩ ব্রিগেডের যাবতীয় গোলাবারুদের সঞ্চিত রাখা হতো এখানেই। মেজর নাজমুল হক প্রথমে এই প্লাটুনের গোলাবারুদ যেন শত্রুর নিয়ন্ত্রণে না যায় তা নিশ্চিত করেন। এরপর বিস্তৃত অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন। বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ছাত্র ও যুবকদের সংগঠিত করতেন। কাছাকাছি কোনো স্কুলের মাঠে চলত প্রশিক্ষণ পর্ব। মুক্তিযুদ্ধকে একটি গণযুদ্ধের দিকে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা থেকেই তিনি প্রথম থেকে উদ্যোগী ছিলেন।
শিশুকন্যাকে কোলে নিয়ে স্নেহময় পিতা মেজর নাজমুল হক
মেজর নাজমুল হক যে ৭ নম্বর সেক্টরের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, সেই সেক্টরে প্রায় ১৫ হাজার মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ করেন। নিয়মিত বাহিনীর সৈন্যসংখ্যা ছিল প্রায় আড়াই হাজার এবং সাড়ে বারো হাজার মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন গণবাহিনীর সদস্য। এই সেক্টরের আটটি সাব–সেক্টর ছিল। প্রতিটি সাব-সেক্টরের অপারেশনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকতেন। অনেক সময় তিনি নিজেই অভিযানে নেতৃত্ব দিতেন।
মেজর নাজমুল হক ১৯৩৮ সালের ১ আগস্ট চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার আমিরাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা অ্যাডভোকেট হাফেজ আহমদ, মা জয়নাব বেগম। তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে কুমিল্লার পেশোয়ারা পাঠশালা থেকে ম্যাট্রিকুলেশন ও ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। ঢাকা আহসান উল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট) দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময়ই যোগ দেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দের ১৪ অক্টোবর আর্টিলারী কোরে কমিশন লাভ করেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে মেজর পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। তিনি রাজশাহী জেলা, পাবনা জেলা, বগুড়া জেলা এবং দিনাজপুর জেলার অংশবিশেষ নিয়ে গড়ে ওঠা ৭ নং সেক্টরের কমান্ডার পদে ১৯৭১ এর এপ্রিল থেকে অগাস্ট মাস পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন।তরংগপুর ছিল তাঁর হেডকোয়ার্টার।তাঁর সেক্টরে তিনি গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনা করতেন এবং মুক্তিবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতেন যারা প্রথাগত সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছিলো না।প্রায় পনের হাজার মুক্তিযোদ্ধা এ সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন। বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর তাঁর অধীনেই যুদ্ধ করেন।
১৮ মার্চ, ১৯৭১ তারিখে মেজর নাজমুল হককে নওগাঁয় ৭ ইপিআর উইংয়ের অধিনায়ক করে পাঠানো হয়। ২৫ মার্চ, ১৯৭১ এ পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বর অপারেশন সার্চলাইট শুরু হলে পরদিন স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করে নওগাঁ মহকুমাকে শত্রুমুক্ত স্বাধীন বাংলার অংশ ঘোষণা করেন তিনি। স্থানীয় যুবকদের হাতে তিনি তুলে দেন অস্ত্র। স্বেচ্ছাসেবক যুবকদের নিয়ে গঠন করেন ইপিআর মুজাহিদ বাহিনী। সেই বাহিনীর অধিনায়ক হিসেবে প্রথমেই তিনি নওগাঁ ও বগুড়ার পাকিস্তানি হানাদারদের ক্যাম্প দখল করে শত্রুমুক্ত করেন গোটা বগুড়া জেলা। ২৮ মার্চ, ১৯৭১ তারিখে তাঁর বাহিনীর দ্বিমুখী আক্রমণে রাজশাহী ক্যান্টনমেন্টে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে হানাদাররা। দিনাজপুরের ধনধনিয়াপাড়ায় ১৮ জুন, ১৯৭১ তারিখে বড় রকমের এক যুদ্ধের পর ওই এলাকা মেজর নাজমুলের বাহিনীর দখলে আসে। এতে ১৪ জন পাকিস্তানি সেনা মারা যায়।
১৯৭১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর মেজর নাজমুল হক মিত্রবাহিনীর সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক শেষে ভারতের শিলিগুড়ি ক্যান্টনমেন্ট থেকে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থানার অন্যতম ঐতিহাসিক স্থাপনা ছোট সোনা মসজিদ এর প্রাঙ্গনে মেজর নাজমুল হকের সমাধি রয়েছে। তাঁর মৃত্যুর পর মেজর কাজী নুরুজ্জামানকে ৭ম সেক্টরের নতুন সেক্টর কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধার ৪৭ তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জ্ঞাপন করছি। পরম করুনাময় তাঁকে চিরশান্তির স্থানে আসীন করুন।
(তথ্যসূত্রঃ "স্মরণ মুক্তিযুদ্ধের বীর মেজর নাজমুল"-- নাসির উদ্দিন হায়দার, ২৭.০৯.২০০৯)
২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:২৯
তানজীর আহমেদ সিয়াম বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:১৭
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর পোষ্ট।
শেষের সাদা কালো ছবি টি খুব সুন্দর।
২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:২৯
তানজীর আহমেদ সিয়াম বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০২
ফারিহা হোসেন প্রভা বলেছেন: তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রইলো।
২১ শে অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১২:২৭
তানজীর আহমেদ সিয়াম বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মুল্যবান সময় বের করে লেখাটি পড়ার জন্য
৪| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৯
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: বাহা! !সুন্দর একটি বিষয়ে আলোকপাত করেছেন । বীরের প্রতি রইল শ্রদ্ধা । ধন্যবাদ আপনাকে ।
শুভকামনা জানবেন।
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১১:৩০
তানজীর আহমেদ সিয়াম বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মুল্যবান সময় বের করে লেখাটি পড়ার জন্য
৫| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৪:০২
ম্যাড ফর সামু বলেছেন: মুক্তিযুদ্ধের গল্পগুলো পড়লে সবসময় আমার চোখে পানি চলে আসে। সুন্দর একটি বিষয়ে লিখেছেন, ধন্যবাদ ভাই।
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:৪০
তানজীর আহমেদ সিয়াম বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মুল্যবান সময় বের করে লেখাটি পড়ার জন্য
৬| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৯:৩০
ল বলেছেন: শ্রদ্ধা
ভালো থাকুন সবসময়।
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৬
মাহমুদুর রহমান বলেছেন: সুন্দর পোষ্ট। আমাদের এতো অধঃপতন হওয়ার একমাত্র কারন এটাই যে আমরা প্রকৃতবীরদের সম্মান করতে জানি না।