নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১ম পর্ব
'আলীপুর বোমা ষড়যন্ত্র মামলা'
ফাঁসির রায় শোনার পর, বন্ধু সত্যানন্দকে বললো,
'লীলাকে গিয়ে বলিস্ এই জন্মে তো তার সাথে দেখা হলোনা। পরের জন্মে স্বাধীন ভারতে নিশ্চই একসাথে ঘর করা যাবে'
মামলার রায়
১৯০৮ সালের মে মাসে গ্রেফতার, ১৯০৯ সালের মে মাসে রায়, ১৭ জন বেকসুর খালাস, ১০ জনের যাবত জীবন দ্বীপান্তর ও সম্পতি বাজেয়াপ্ত, ৩ জনের ১০ বৎসরের দ্বীপান্তর, ২ জনেরর ৭ বৎসর দ্বিপান্তর।
বারীন্দ্র ও উল্লাসকর দত্তের হলো ফাঁসির আদেশ।
এজলাসে সবাই নিশ্চুপ।
উল্লাস সেই নিরবতা ভেঙ্গে বলে উঠলেন, 'Thank you very much, বাঁচার দায় থেকে বাঁচা গেলো'।
হাত করজোড় করে গেয়ে উঠলেন, 'সার্থক জন্ম আমার জন্মেছি এই দেশে'।
এজলাসের সবার চোখে জল, রবীন্দ্রনাথের গানের কি শক্তি, গাইছে ফাঁসির রায় পাওয়া সদ্য একজন দেশপ্রেমিক।
কুুমিল্লা তালপুকুর পাড় থেকে মা মুক্তাবেশী রায় শুনতে গিয়েছিলেন, সাথে ছিলো লীলার বড়বোন শোভনা।
মুক্তাবেশী বল্লেন, চিন্তা করিস্ না পালু আমি আপিল করবো, ছেলেকে ডাক নামেই ডাকতেন।
উল্লাস আপিলের জন্য রাজী নয়, মা ও মামার অনুরোধে সম্মত হলেন।
৬ মাস পর রায় হলো, বারীন্দ্র ও উল্লাসকরের যাবত জীবন দ্বিপান্তর।
পাতার ছাতা
সরাইলের কালিকচ্ছ (ব্রাক্ষণবাড়িয়া) নিজ বাড়িতে ১৮৮৫ সালে, উল্লাসের জন্ম। দ্বিজদাশ দত্তের ঘরে। নানা অাচার্য মহারাজ আনন্দ স্বামী পূর্ব বাংলায় ব্রাহ্ম সমাজের জনক। কুমিল্লায় ব্রাহ্ম সমাজ প্রচারে, গুরুদয়াল সিংহ, দ্বিজদাশ দত্ত ও উকিল রজনী নাথের ভূমিকাই মুখ্য।
দ্বিজদাশ দত্ত, ১৮৮১ সালে কুমিল্লা জিলা স্কুলের হেড মাস্টার। তিনি স্বদেশী আন্দোলনের আগেই স্বদেশী, মান কচুর পাতার ছাতা মাথায় দিয়ে বৃষ্টির দিনে স্কুলে যেতেন। তালপুকুরের পূর্ব পাড়ে, ব্রাহ্ম মন্দিরের বিপরীত পাশেই বাড়ি।
ত্রিপুরার জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট, হেড মাস্টার সাহেবের স্বদেশী কাজকর্মে নাখোশ হয়ে উপরে চিঠি লিখেন, এই স্বদেশীকে কোন একটা অখ্যাত স্কুলে বদলির জন্য। Mr.Croff ছিলেন এডুকেশন ডিরেক্টর, তিনি দ্বিজদাশ দত্তের মেধা ও চিন্তাধার সম্পর্কে অবিহিত, Mr. Croff তাহাকে প্রমোশন দিয়ে কলকাতা 'বেথুম স্কুল এন্ড কলেজের' লেকচারার করে পাঠিয়ে দেন।
সেখান থেকে সরকারী বৃত্তি পেয়ে, বিলাত চলে যান। এগ্রিকালচার ইঞ্জিনিয়ারিং উচ্চতর শিক্ষালাভ করে শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে, কৃষি বিভাগে প্রফেসার পদে যোগদেন।
স্বরাজ
১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ ছিলো একটা টার্নিং পয়েন্ট। লর্ড কার্জনের এই ঘোষনার এবং কার্যকরের পর, বাংলায় সশস্র সংগ্রামের বিকাশ ঘটে। এক ঘোষনায়, লর্ড কার্জন বলেছিলেন, '
'মুসলমানদের হৃতগৌরব পনুুরুদ্ধারের এর জন্য পূর্ব বাংলা পঠন করাটাই তার লক্ষ'।
১৯০৬ সালে কংগ্রের সভায় স্বরাজ' কথাটি গৃহীহ হয়।
তিনটি ধারায় চলতে থাকলো আন্দোলন।
নরম পন্থীরা বুঝলো, ঔপনেবেশিক সায়ত্বশাসন।
চরম পন্থীরা বুঝলো স্বাধীনতা।
উগ্র পন্থীরা বুঝলো সর্ব ভারতীয়ক্ষেত্রে সর্বাত্বক বর্জন ও সশস্র সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন।
বিষয় রসায়ন
উল্লাসের বড় হওয়াটা কলকাতায়। মেধাবী, নাম যেমন উল্লাস কাজেও তেমনি। বাঁশি বাজনো, বেহেলা বাজনো গানের গলাও দারুন, দীর্ঘদেহী। এন্ট্রাস পাশ করে প্রেসিডেন্সিতে ভর্ত্তি হয়েছে। অধ্যাপক বিপিনচন্দ্র রসায়ন ক্লাশটা তার বেশী ভাল লাগে। বিপিনচন্দ্র সিলেটের জমিদার ঘরের ছেলে, কলিকাতায় পড়তে এসে, ব্রাহ্ম ধর্মে দীক্ষিত হন, তাই বাড়ি থেকে ত্যাজ্য, সাথে পাশের গ্রামের, জমিদারের ছেলে ডা. সুন্দরীমোহন দাশও ত্যাজ্য তাহার 'সুকিয়া ষ্ট্রিটে' থাকেন।
রবীন্দ্রনাথ
মিনার্ভায় রবীন্দ্রনাথ ঠকুরের বক্তৃতা, বিকাল ৫ টায়। সবাই স্বদেশী পোষাক পড়ে যাবে। উল্লাস দলপতি, সাথে সত্যানান্দ, মানিক লাল, যদুগোপাল ও রাধাকৃষ্ণ। মিনার্ভা ভরে গেছে, কিন্তু ডুকতে হবে, গেটে ভলান্টিয়ার সাথে মারামারি, এদিকে সত্যানন্দকে ঘোড়সাওয়ার পুলিশ দিলো বেদম প্রহার, উল্লাস সেই পুলিশকে ঘোড়া থেকে নামিয়ে ফেলে দিলো, ভলান্টিয়ারদের কিল, ঘুষি মেরে আহত করলে, পুলিশ উল্লাসকে গ্রেফতার করে বেদম লাঠিপেটা করেন। সেই রাতেই আধ্যপক বিপিনচন্দ্র ও ডা.দিজেন্দ্রনাথ মৈত্র, থানায় গিয়ে, ৫০০ টাকা বেলবন্ড দিয়ে নিয়ে আসেন।
প্রথম দেখা
সেইদিন উল্লাসের শিবপুর যাওয়া হলো না। সুন্দরীকাকার সুকিয়া স্ট্রিটের বাড়িতে চলে আসেন। বিপিনচন্দ্রের মেঝো মেয়ে লীলা রাতে উল্লাসের পিঠে লাঠিপেটার আঘাতে, মলম লাগিয়ে দিলো, লীলার বয়স তখোন ১৫/১৬,
লীলার সাথে উল্লাসের, সেদিনই প্রথম দেখা।
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে মে, ২০১৯ দুপুর ১২:০৮
রাজীব নুর বলেছেন: বারীন্দ্র আর উল্লাসকর এর ফাঁসি টা বড্ড কষ্ট দায়ক।