![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মাটি ও মানুষের কথা- ৮
যাত্রা পথের বিড়ম্বনা
কিশোরগঞ্জ থেকে- ঢাকা
মাটি ও মানুষের কাজ করতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল আমরা চষে বেড়িয়েছি। এমন কোনো জেলা- উপজেলা পাওয়া যাবে না যে আমরা যাই নি। তাছাড়া মাটি ও মানুষের অনুষ্ঠানে যাওয়া মানে তো একেবারে নিভৃত গ্রামে- উপজেলায়- কৃষকের মাঠে।
উত্তরে দিনাজপুর পঞ্চগড়, দক্ষিণে বাহের চর- পটুয়াখালী, হাতিয়া সন্দ্রীপ- পূর্বে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর আর পশ্চিমে চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর কোনোটিই তো বাদ পড়েনি। সব গল্প হয়তো বা মনেও পড়বে না- আবার সব গল্প হয়তো বলাও যাবে না- তবে কিছু কথা তো না বললেও হবে না।
আশির দশকের কথা। আলিম উজ্জামান দুলু তখন প্রযোজক। কিশোরগঞ্জ গিয়েছি পাট-কচু ইত্যাদির অনুষ্ঠান করতে। পাটের সাথে আখের সাথী ফসল ইত্যাদি ছিল যতটা মনে পড়ে। পাট গবেষণার ঐ স্টেশনে প্রোগ্রাম করার পর ঢাকায় ফেরা। তখন পথটা কিন্তু ময়মনসিংহ হয়ে। ভৈরব হয়ে ঢাকার রাস্তাটি অতটা নিরাপদ বা ভাল ছিল না।
অনুষ্ঠান শেষে দুপুরের খাবার খেয়ে আমরা যাত্রা শুরু করলাম ময়মনসিংহ হয়ে ঢাকার পথে। তবে বলাইবাহুল্য- রেকর্ডিং এ গেলে দুপুরের কাবার খেতে খেতে বিকেল হয়ে যেতো।
মনে হয় স্টেশন থেকে বের হয়ে ২ মাইল গিয়েছি এর মধ্যেই চাকা পাংচার।
যাহাক একটি অতিরিক্ত চাকা ছিল- সেটা দিয়ে পরিবর্তন করে আবার রওয়ানা হওয়া গেল।
বাজে রাস্তা। ঝাকাঝাকি তে গতি কম। গাড়ীটাও অত ভাল নয়। চলছি। আমাদের একটু তাড়া ছিল যে পথে কোনো এক জায়গা থেকে পাংচার হওয়া চাকাটা ঠিক করে নিতে হবে । কিন্তু কিশোরগঞ্জ ময়মনসিংহের পথে কোথাও তা পাওয়া গেল না।
এদিকে অনেক বৃষ্টি। রাস্তাঘাটও কাদাময় হয়ে যাচ্ছে। আনন্দের ভ্রমনটা ক্রমেই টেনশনের ভ্রমণে পরিণত।
শম্ভুগঞ্জ ফেরী ঘাট। তখন সন্ধ্যা। পাঠক নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে শম্ভুগঞ্জ ব্রিজ তখনও হয় নি। ফেরী ঘাটে নামার পর ড্রাইভার সাহেব আরেকটি বিপদজনক খবর দিলেন- ।
আরেকটি চাকা লিক। আমরা সবাই মিলে অনুসন্ধান করে পেলাম- একটা লিংক। ফেরী পার না হলে চাকা ঠিক করা যাবে না। আর চাকার বাতাস বের হয়ে গেলে ফেরীও পাড় হওযা যাবে না। সবাই টেনশনে। দুলু ভাই আঙুল দিয়ে লিক ধরে আছে। কিন্তু আঙ্গুল দিয়ে কি বাতাস থামানো যায়?
যাহোক এর মধ্যে একটি কাজ করতে পারলাম- লাইনের অন্য গাড়ীগুলোর সাথে সমঝোতা করে আমাদের গাড়ীটা পরবর্তীর ফেরীতে ওঠানোর ব্যবস্থা করা গেল। টেলিভিশন বলে- আর টিভি ক্যামেরা দেখে কিছু খাতিরও পাওয়া গেল। তথন টিভি অনুষ্ঠানের কারনে আমাদের চেহারাটাও মানুষ মনে করতে পারছিল। সেটার সুবিধাও পাওয়া গেল।
যাহোক অনেক ঝুকি নিয়ে অল্প হাওয়া সহ চাকা দিয়েই গাড়ী পার হলো_ কিন্তু ময়মনসিংহ ঘাটে আসতেই আবার বৃষ্টি। এদিকে ঘাট থেকে মেইন রাস্তায় উঠতেই অনেক উচু পাড়, কাঁদা-। আমরাতো গাড়ীনে না উঠেই টায়ার ঠিক করা দোকান খুজতে নেমে গেলাম। আতিয়ার চাচা আমি নেমে গেলাম কাদার মাঝেই। কিন্তু বৃষ্টির কারণে দোকান পাঠ বন্ধ করে সবাই বাড়ীতে।
ভীষন বিপদ। এ সময় একজন পরামর্শ দিলেন মেডিকেলের পাশে একটা দোকান আছে- দোকানের পিছনেই মালিকের ঘর। একটা ব্যবস্থা হবেই।
লিক হওয়া চাকার হাওয়া প্রায় শেষ। ঐ গাড়ী নিয়েই আমরা রওয়ানা হলাম।
মেডিকেল এর পাশে টায়ার মেরামতের দোকান । মালিককে পাওয়া গেলেও মিস্ত্রী নাই। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত প্রায় ৮ টা। অবশেষে মিস্ত্রী এলো- বলা চলে ধরে আনা হলো- মিস্ত্রী মন খারাপ করে এলেও আমাদের দেখে তার চেহারা পাল্টে গেল। টেলিভিশনে আমাদের দেখা যায় আর আমরা তার দোকানে- তার সাথে কথা বলছি। অনেক যত্ন করে ২টা টায়ার ঠিক করে দিল। লেগে গেল ঘন্টা খানেক। অন্য টায়ারগুলোও চেক করে নিলাম।
এর পর আবার রওয়ানা হলাম- ঢাকার উদ্দেশ্যে।
মাসকান্দা পার হইনি। এরমধ্যে পুলিশের গাড়ী পথ আটকালো- এত রাতে ঢাকার রাস্তায় যাওয়া যাবে না- নিরাপত্তার সংকট আছে। আলিম উজ্জামান অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলেন কিন্তু পুলিশ আমাদের যেতে দেবে না। তার উপর টিভি সরঞ্জাম। এগুলোর জন্য আরো সতর্ক তারা।
অনেক চেষ্টায় পুলিশ সুপারকে ধরা গেল। তিনি বুঝলেন আমাদের সমস্যা। কারণ আমাদের ঢাকায় যেয়ে পর দিন অনুষ্ঠান প্রচার করতে হবে- তাছাড়া টিভি ক্যামেরার তো পরদিন অন্য কাজ আছে। এ অবস্থায় তিনি একটি টহল গাড়ীর ব্যবস্থা করলেন- এই গাড়ী আমাদের এগিয়ে দিল শ্রীপুর পর্যন্ত। সেখানে আরেকটি পুলিশ দল অপেক্ষা করছিল আমাদের জন্য। তারা আমাদের এগিয়ে দিল- গাজীপুর চৌরাস্তা অবধি। রাত ১২টার দিকে আমরা পৌছাতে পেরেছিলাম ঢাকায়।
একটি ঘটনার পিছনে কতজনের অবদান অস্বীকার করবো। ফেরীঘাটের মানুষ, টায়ার মিস্ত্রী-পুলিশ এদের সবার সহায়তা ছাড়া কি সেদিন আমরা আসতে পারতাম ঢাকায়? পরদিন আসাটাও অনিশ্চিত ছিল এই জন্য যে পর পর কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ময়মনসিংহ শহর অচল হয়ে পড়েছিল । ঐদিন রাতে না এলে আরো দু চারদিনের জন্য আটকা পড়ে যেতাম আমরা।
এতদিন পর এই খন্ড স্মৃতির উপস্থাপন কেবল মাত্র ঐ মানুষদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য, যারা আমাদের গতিকে সেদিন সচল রাখতে সহায়তা করেছিলেন।
১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ভোর ৫:৩৬
রেজা সিদ্দিক বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:০১
কালোপরী বলেছেন: ++++++
১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৩৬
রেজা সিদ্দিক বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৩৮
সুমন কর বলেছেন: পুরানো স্মৃতি ভালো লাগল।