![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নবান্ন
নবান্ন মানে নতুন অন্ন। নতুন ফসল ঘরে তোলা উপলক্ষে কৃষকরা এই উৎসব পালন করে থাকে। সাধারণত নবান্ন হয়ে থাকে অগ্রহায়ন মাসে। সে সময় আমন ধান কাটা হয়। এই নতুন ধানের চাল দিয়ে রান্না উপলক্ষে নবান্ন উৎসব হয়ে থাকে। গবেষকদের মতে কৃষি প্রথা চালু হবার পর থেকে নবান্ন উৎসব পালন হয়ে থাকে। বাংলার কৃষিজীবী সমাজে শস্য উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে যে সকল আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব পালিত হয়, নবান্ন তার মধ্যে অন্যতম।
"নবান্ন" শব্দের অর্থ "নতুন অন্ন"। নবান্ন উৎসব হল নতুন আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে প্রস্তুত চালের প্রথম রান্না উপলক্ষ্যে আয়োজিত উৎসব।
সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান পাকার পর এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। কোথাও মাঘ মাসেও নবান্ন উদযাপনের প্রথা রয়েছে।
অমুসলিম রীতিতে নবান্ন অনুষ্ঠানে নতুন অন্ন পিতৃপুরুষ, দেবতা, কাক ইত্যাদি প্রাণীকে উৎসর্গ করে এবং আত্মীয়-স্বজনকে পরিবেশন করার পর গৃহকর্তা ও পরিবারবর্গ নতুন গুড় সহ নতুন অন্ন গ্রহণ করেন।
নতুন চালের তৈরি খাদ্যসামগ্রী কাককে নিবেদন করা নবান্নের অঙ্গ একটি বিশেষ লৌকিক প্রথা। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, কাকের মাধ্যমে ওই খাদ্য মৃতের আত্মার কাছে পৌঁছে যায়।
অতীতে পৌষ সংক্রান্তির দিনও গৃহদেবতাকে নবান্ন নিবেদন করার প্রথা ছিল।
নবান্ন উৎসব হিন্দুদের একটি প্রাচীন প্রথা। হিন্দুশাস্ত্রে নবান্নের উল্লেখ ও কর্তব্য নির্দিষ্ট করা রয়েছে। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, নতুন ধান উৎপাদনের সময় পিতৃপুরুষ অন্ন প্রার্থনা করে থাকেন। এই কারণে হিন্দুরা পার্বণ বিধি অনুযায়ে নবান্নে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করে থাকেন। শাস্ত্রমতে, নবান্ন শ্রাদ্ধ না করে নতুন অন্ন গ্রহণ করলে পাপের ভাগী হতে হয়।
নবান্ন উৎসব এর অন্যতম প্রথা হচ্ছে কাকবলি। একটি কলার ডোগায় নতুন চাল, কলা, নারকেল নাড়ু কাককে খাওয়াতে হয়। প্রচলিত বিশ্বাস হচ্ছে কাকের মাধ্যমে ওই খাদ্য মৃতের আত্মার কাছে পৌঁছে যায়। এই নিয়ে ছড়া আছে। ছোট ছেলে-মেয়েরা ছড়া কেটে দাড় কাককে নিমন্ত্রন করতঃ
"কো কো কো,
আমাগো বাড়ি শুভ নবান্ন।
শুভ নবান্ন খাবা, কাকবলি লবা,
পাতি কাউয়া লাঠি খায়,
দাড় কাউয়া কলা খায়,
কো কো কো,
কাকবলির আগে আরো তিনটি আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হত- লক্ষ্মীপূজা, পিতৃশ্রাদ্ধ, বীরবাশ। বীরবাশের প্রথা অন্য অঞ্চলে প্রচলিত না থাকলেও বরিশালে প্রচলিত। বাড়ির উঠানের মাঝখানে একটি গর্ত করা হয়। তার চারপাশে পিটুলী দিয়ে আলপনা আঁকা হয়। গর্তে জ্যান্ত কই মাছ ও কিছু দুধ দিয়ে একটি বাঁশ পোতা হয়। সেই বাঁশের প্রতি কঞ্চিতে ধানের ছড়া বাধতে হয়। এটাকে বীরবাশ বলে।
নবান্ন উৎসবে কাকবলি, লক্ষ্মীপূজা, পিতৃশ্রাদ্ধ হয়ে গেলে সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়া করত। এর আগে কেউ কিছু খেত না। এখানেই নবান্ন উৎসব শেষ হত না, এই উৎসব উপলক্ষে প্রায় কুড়ি থেকে চল্লিশ পদের রান্না হত।জীবনানন্দ দাসের কবিতায় কাকবলির প্রমাণ মেলে । কার্তিকের শেষে নবান্নে ভোরের কাক হওয়ার আকাঙ্খা কিন্তু কাকবলিরই উদাহরণ।
“আবার আসিব ফিরে ধানসিড়ির তীরে — এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয় — হয়তো বা শঙ্খচিল শালিখের বেশে;
হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে
কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঠাঁলছায়ায়;”
নবান্ন মানে হেমন্তের উৎসব।
হেমন্ত হলো ষড়ঋতুর চতুর্থ ঋতু, যা কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসের সমন্বয়ে গঠিত। শরতের পর এই ঋতুর আগমন। এর পরে আসে শীত, তাই হেমন্তকে বলা হয় শীতের পূর্বাভাস।
কৃত্তিকা ও আর্দ্রা এ দুটি তারার নাম অনুসারে নাম রাখা হয়েছে কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসের। ‘মরা’ কার্তিকের পর আসে সর্বজনীন লৌকিক উৎসব নবান্নে। ‘অগ্র’ ও ‘হায়ণ’ এ দু’অংশের অর্থ যথাক্রমে ‘ধান’ ও ‘কাটার মওসুম’। সম্রাট আকবর অগ্রহায়ণ মাসকেই বছরের প্রথম মাস বা খাজনা তোলার মাস ঘোষণা দিয়েছিলেন।
নবান্নে নানা ধরনের দেশীয় নৃত্য, গান, বাজনাসহ আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালিত হয়। লাঠিখেলা, বাউলগান, নাগরদোলা, বাঁশি, শখের চুড়ি, খৈ, মোয়ার পসরা বসে গ্রাম্য মেলায়।
তবে খাজনা তোলা- ও জমিদারী প্রথার প্রভাবে নবান্ন কখনো কখনো উৎসবের পোষাকে থাকতো না। সুকান্তের কবিতায় তার কিছু চিত্র আমরা পাই।
এই নবান্নে
এই হেমন্তে কাটা হবে ধান,
আবার শূন্য গোলায় ডাকবে ফসলের বান-
পৌষপার্বণে প্রাণ-কোলাহলে ভরবে গ্রামের নীরব শ্মশান।
এই হেমন্তে ফসলেরা বলেঃ কোথায় আপন জন?
তারা কি কেবল লুকোনো থাকবে,
অক্ষমতার গ্লানিকে ঢাকবে,
প্রাণের বদলে যারা প্রতিবাদ করছে উচ্চারণ
এই নবান্নে প্রতারিতদের হবে না নিমন্ত্রণ?
আজকের নবান্ন:
কৃষকের উঠোনে নাই উৎসবের আমেজ
ধান উৎপাদন তো লাভজনক নেই
বীজ সার কিনতে গিয়ে কৃষকের নাভিশ্বাস
সম্রাট আকবরের মতোই মহাজনরা বসে থাকে আলের উপর কখন তার পাওনা সে আদায় করবে।
কেউ কেউ নবান্ন পালন করেন- ঐতিহ্যের তাগিদে
মাটির প্রতি দায় থেকে
কেউ কেউ এখনো কাকবলি করেন- বীরবাশ করেন- সেটা তো পিতৃপূরুষের প্রতি দায় থেকে
আবার কেউ কেউ কংকালসার দেহের উপর জৌলুস ছড়ানো উৎসবের পোষাক এটে দেন- তা না হলে তো দিনটা বিক্রী করা যাবে না।
একেকটা দিনের অনেক দাম।
নিউ লিবারেলিজম বা ব্যবসাবাদী সমাজে সবই পণ্য হয়ে উঠছে।
সেখানে সাধারণের উৎসব ফেরত দিতে হবে সাধারণকে
তবেই উৎসব টিকে থাকবে হৃদয়ে।
তারপরও সবাই নবান্নের শুভেচ্ছা আর কৃতজ্ঞতা সেই সব কৃষকদের প্রতি যারা আমাদের খাইয়ে বাঁচিয়ে রেখেছেন।
(তথ্যসুত্র: ইন্টারনেট- সহ বিভিন্ন উৎস্য)
১৪ ই নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২৫
রেজা সিদ্দিক বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।
২| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:২০
আমিনুর রহমান বলেছেন:
নবান্ন নিয়ে তথ্য ও বিশ্লেষণমূলক পোষ্টে +
১৪ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:২৯
রেজা সিদ্দিক বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ
৩| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৩৬
শাশ্বত স্বপন বলেছেন: বেশ তথ্য পেলাম। চমৎকার
http://www.somewhereinblog.net/blog/sswapan/29990257
১৪ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:২০
রেজা সিদ্দিক বলেছেন: ধন্যবাদ
৪| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৪৮
কলমের কালি শেষ বলেছেন: নবান্ন নিয়ে চমৎকার পোষ্ট । +++
১৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ ভোর ৫:৫৭
রেজা সিদ্দিক বলেছেন: ধন্যবাদ
৫| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৪৭
সকাল হাসান বলেছেন: নবান্নের সময় নবান্নের এই পোষ্টটা দারুন লাগল!
১৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৬
রেজা সিদ্দিক বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ
৬| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৬ ভোর ৫:১৭
রেজওয়ান তানিম বলেছেন: ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ এই পোস্ট এর জন্যে আপনাকে স্বাগত জানাই।
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১০
জাফরুল মবীন বলেছেন: বাহ!চমৎকার কিছু তথ্য জানলাম নবান্ন বিষয়ে।
আপনাকেও নবান্নের শুভেচ্ছা।