নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাসেল মেহেদী পারভেজ। পরিচিত হতে: web.facebook.com/rmparves

র ম পারভেজ

স্বপ্নময় পথিক। দেখা, শোনা ও জানাগুলিকে ব্লগের পাতায় রেখে যেতে চাই।

র ম পারভেজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বুক রিভিউ : কৃষণ চন্দরের ’গাদ্দার’

১১ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৮:২৪

২০১০ সালে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে পাঠচক্রের সভ্য ছিলাম। সে সূত্রে অনেকগুলি বই পড়ার সুযোগ হয়েছিল, তখন কৃষণ চন্দরের ’গাদ্দার’ বইটি পড়েছিলাম। ভারত-পাকিস্তানের বর্তমান এই যুদ্ধংদেহী সময়ে মনে হলো বইটি নিয়ে একটি রিভিউ লেখা প্রয়োজন। যদি কেউ রিভিউটি পড়ে বইটি পড়তে আগ্রহী হন তা হলে অন্তত এই যুদ্ধ-বিদ্বেষে হিন্দু-মুসলিম, ভারত-পাকিস্তান পরিচয়ের বাইরে মানবিকতার বিপন্নতা নিয়ে কিঞ্চিত চিন্তার উদ্রেক হবে। প্রথমেই লেখক কৃষণ চন্দরের পরিচয় দেয়া যাক, তিনি ২৩ নভেম্বর ১৯১৪ সালে অবিভক্ত ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাবে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি উর্দু ভাষাতে লেখালেখি করতেন এবং বাংলার দুর্ভিক্ষ, দেশবিভাগের ফলে সৃষ্ট মানবিক বিপন্নতা নিয়ে লিখেছেন। তাঁর লেখাতে সবসময় উচ্চারিত হয়েছে মানবিকতার জয়গান। ১৯৭৭ সালের ৮ মার্চ ৬২ বছর বয়সে তিনি মুম্বাইতে মৃত্যুবরণ করেন।
’গাদ্দার’ উপন্যাসাটিতে সাতচল্লিশের দেশবিভাগের সময়কালীণ বিপন্ন মানবতার চিত্র ফুটে উঠেছে। উপন্যাসের মূল চরিত্র বৈজ্যনাথ, যার মাধ্যমে লেখক তুলে ধরেছেন দেশবিভাগ কালীণ হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার উন্মত্ততা,নৃশংসতা -যেখানে মানবতা হয়েছে ভূলন্ন্ঠিত। বৈজ্যনাথ তার মাতামহের বাড়ি থেকে লাহোর , লাহোর থেকে ইরাবতীর তীর সবখানে ছুটে বেড়িয়েছে নিজের জীবন বাঁচানোর তাগিদে। এই ছুটে চলায় সে প্রত্যক্ষ করেছে মানুষের বিশ্বাসঘাতকতা, প্রতিহিংসাপরায়ণতা- যা তাকেও মাঝে মাঝে বিভ্রান্ত করেছে। বীতশ্রদ্ধ হয়ে সে বলেছে-
”আমি মানুষ,আর মানুষের হাত থেকে বাঁচবার জন্য পালাচ্ছি।”
সে আক্ষেপ করে তাঁর সঙ্গী কুকুরটিকে বলেছে-
”কেন,তুই আমার সঙ্গে এলি? যখন সবাই আমাকে ছেড়ে চলে গেল, দেশও যখন পরিত্যাগ করল, সম্পদ,ঘরবাড়ি, পরিবার-পরিজন,আত্মীয়-বান্ধব সবাই যখন ছেড়ে গেল-এমন কি সেই ধরিত্রী পযর্ন্ত, যে ধরিত্রীর সঙ্গে হাজার বছর ধরে নাড়ীর বাঁধনে বাঁধা রয়েছি,সেও তো আমাকে ছেড়ে গেল।”
দেখেছে মুসলিমের হাতে হিন্দু-শিখের হত্যা, হিন্দু-শিখের হাতে মুসলিমের হত্যা।
”সৎশ্রী আকাল হর হর মহাদেও-বাতাসে বল্লম ঝলসে উঠল আর প্রার্থনারত বৃদ্ধ মুসলমানের দেহ চার টুকরো হয়ে পড়ে গেল। মৃত্যু পথযাত্রীর মুখে যে নাম উচ্চারিত হয়েছিল সে নাম ঈশ্বরের। হত্যাকারীদের মুখেও ছিল তাঁরই নাম।”
কিন্তু সে নিজের মানবিকতার দ্বারা পৈশাচিত্যকে পরাজিত করেছে এবং উপন্যাসের শেষ অংশে মুসলমানের সন্তানকে নিজের কোলে তুলে নিয়ে যে সুন্দর আগামীর কল্পনা করেছে তাতে চিরন্তন মানবতার চিত্রই উদ্ভাসিত হয়েছে। বৈজ্যনাথ তাঁর ধর্মবিশ্বাসের সাথে গাদ্দারি করে তথাকথিত জাতিপ্রেমকে পিছনে ফেলে মানবতার জয়গান গেয়েছে।
বইয়ের মূলকাহিনীটি সংক্ষেপে লিখলাম, কিন্তু না পড়লে এর গভীরতা আঁচ করা কঠিন। বইটি আজিজ মার্কেটের বইয়ের দোকানে পাওয়া যাবে। আর সময় নিয়ে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের লাইব্রেরীতে গিয়েও পড়তে পারেন।


মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.