![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
স্বপ্নময় পথিক। দেখা, শোনা ও জানাগুলিকে ব্লগের পাতায় রেখে যেতে চাই।
একটা যুদ্ধ, যেখানে গোলাগুলি হয় না, কিন্তু পুরো দুনিয়া ধ্বংসের আশঙ্কায় কাঁপে। যুদ্ধের ময়দান শুধু ট্যাঙ্ক বা বন্দুকের নয়—এই যুদ্ধ চলে কূটনীতিতে, গোপনচরদের খবরে, মহাকাশে, এমনকি অলিম্পিকের মাঠেও। এই ছিল শীতল যুদ্ধ—একটি যুদ্ধ, যা আসলে ছিল আদর্শের যুদ্ধ। একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাদী, গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি—আরেকদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট বিপ্লবী মতবাদ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, এই দ্বন্দ্ব গোটা বিশ্বের রাজনীতিকে পাল্টে দিয়েছিল। সীমান্তভিত্তিক সংঘাত ছাড়াও, এটি মানুষকে বিভক্ত করেছিল ভাবনার জগতে—কে বন্ধু, কে শত্রু, সেটাই পরিষ্কার ছিল না।
মিত্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর সবাই ভেবেছিল—এবার শান্তি আসবে।
কিন্তু যুদ্ধ শেষ হওয়ার কিছুদিন পরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল একেবারেই বিপরীত:
• যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছিল উন্মুক্ত বাজার, গণতন্ত্র ও কমিউনিজম ঠেকানো।
• সোভিয়েত ইউনিয়ন চাইত সীমান্তে নিরাপত্তা, কমিউনিস্ট মতবাদের বিস্তার, আর পূর্ব ইউরোপে প্রভাব বিস্তার।
এই দ্বন্দ্ব শুরু হয় জার্মানি বিভাজনের মাধ্যমে। বার্লিন হয়ে ওঠে নতুন সীমানার প্রতীক—দুই আদর্শের মাঝখানে টান টান উত্তেজনার রেখা।
বিশ্ব ভাগ হয়ে যায়: প্রতিরোধ ও জোট
১৯৪০-এর দশকের শেষের দিকে বিশ্ব দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়:
• একদিকে পশ্চিমা জোট—যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গণতন্ত্র ও মুক্ত বাজারের পক্ষে।
• অন্যদিকে পূর্ব জোট—সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে একদল একনায়কতান্ত্রিক কমিউনিস্ট রাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্র গ্রহণ করে Containment Strategy—যার লক্ষ্য ছিল কমিউনিজমকে ছড়িয়ে পড়তে না দেওয়া। তাদের কিছু বড় পদক্ষেপ ছিল:
• মার্শাল প্ল্যান, যার মাধ্যমে পশ্চিম ইউরোপে আর্থিক সহায়তা দিয়ে কমিউনিজম ঠেকানো হয়।
• ন্যাটো (NATO) গঠন—যুদ্ধ এড়াতে ও সামরিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে।
• সোভিয়েত ইউনিয়ন পাল্টা গঠন করে ওয়ারশ প্যাক্ট (Warsaw Pact)।
যেখানে শীতল যুদ্ধ ছিল গরম: প্রক্সি যুদ্ধ
যদিও ইউরোপে সরাসরি যুদ্ধ হয়নি, কিন্তু অন্যত্র প্রক্সি যুদ্ধ (অন্য দেশের মাটিতে অন্যদের লড়াই) ছিল ভয়াবহ। কিছু বড় উদাহরণ:
• কোরিয়া যুদ্ধ (১৯৫০–১৯৫৩): উত্তর কোরিয়ার পেছনে ছিল চীন-সোভিয়েত, দক্ষিণ কোরিয়ার পেছনে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ।
• কিউবান মিসাইল সংকট (১৯৬২): যখন কিউবায় সোভিয়েত পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র বসানো হয়, তখন পুরো পৃথিবী পরমাণু যুদ্ধে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল।
• ভিয়েতনাম যুদ্ধ (১৯৫৫–১৯৭৫): যুক্তরাষ্ট্র কমিউনিজম ঠেকাতে যুদ্ধ করে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত হেরে যায়।
• আফগানিস্তান যুদ্ধ (১৯৭৯–১৯৮৯): সোভিয়েত বাহিনী আক্রমণ করে, আর যুক্তরাষ্ট্র মুজাহিদিনদের সহায়তা দেয়।
এই যুদ্ধগুলো প্রমাণ করে—যুদ্ধ শীতল ছিল কেবল নামে, আসলে তা ছিল অনেক গরম—অন্যদের ঘরে।
পারমাণবিক ভয় ও MAD (Mutually Assured Destruction)
এই সময়ে সোভিয়েত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এত পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করেছিল, যাতে একে অপরকে বহুবার ধ্বংস করে ফেলা সম্ভব হতো। এই ধারণাকেই বলা হয় Mutually Assured Destruction (MAD)—যেখানে যুদ্ধ মানেই দু’পক্ষেরই নিশ্চিহ্ন হওয়া। এটা paradoxical: যত বেশি শক্তি, তত বেশি আত্মনিয়ন্ত্রণ। পরবর্তী সময়ে কিছু চুক্তি হয়—SALT, START ইত্যাদি, যা অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
যুদ্ধ শুধু অস্ত্রের নয়, সংস্কৃতিরও
শীতল যুদ্ধ ছিল বুদ্ধি, সংস্কৃতি ও প্রযুক্তির লড়াই:
• মহাকাশ প্রতিযোগিতা: সোভিয়েত প্রথম স্যাটেলাইট (Sputnik) পাঠায়, যুক্তরাষ্ট্র প্রথম মানুষকে চাঁদে পাঠায়।
• খেলাধুলা ও অলিম্পিক: একেকটি ম্যাচ যেন দুই আদর্শের লড়াই।
• চরবৃত্তি ও প্রোপাগান্ডা: CIA ও KGB হয়ে ওঠে ছায়ার যোদ্ধা।
• তৃতীয় বিশ্বে প্রভাব বিস্তার: আফ্রিকা, এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকায় দুই পক্ষই মিত্র খুঁজে বেড়ায়।
এই যুদ্ধ চলেছে শুধু সামরিক নয়—মন ও মানসিকতার উপরও।
জমাট বরফ গলতে শুরু করে
১৯৭০ এর দশকে কিছুটা সম্পর্কের উষ্ণতা আসে, যাকে বলা হয় Détente—যেখানে দ্বন্দ্ব কমানোর চেষ্টা চলে।
কিন্তু ১৯৮০-এর দিকে উত্তেজনা আবার বেড়ে যায়। এরপর আসে এক বড় পরিবর্তন:
• গর্বাচভ সোভিয়েত ইউনিয়নে সংস্কার আনেন: গ্লাসনস্ত (উন্মুক্ততা) ও পেরেস্ত্রোইকা (পুনর্গঠন)।
• পূর্ব ইউরোপে কমিউনিস্ট সরকারগুলো একে একে পতন হয়।
• ১৯৮৯ সালে বার্লিন প্রাচীর ভেঙে পড়ে—শীতল যুদ্ধের পতনের প্রতীক।
• অবশেষে, ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যায়। ৪৫ বছরের শীতল যুদ্ধের অবসান ঘটে।
কেন শীতল যুদ্ধ এখনো গুরুত্বপূর্ণ?
এই যুদ্ধ আজ ইতিহাস হলেও, এর ছায়া এখনো রয়ে গেছে:
• যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে যে একমেরু বিশ্ব তৈরি হয়, তার ভিত্তি তৈরি হয় শীতল যুদ্ধে জয় পাওয়ার মাধ্যমে।
• অনেক বর্তমান জোট, শত্রুতা, এমনকি সংঘাতের শিকড় শীতল যুদ্ধে।
• পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা এখনো একেবারে উধাও হয়নি—শুধু রূপ পাল্টেছে।
এটা আমাদের শেখায়—আদর্শগত দ্বন্দ্ব, যখন অনিয়ন্ত্রিত হয়, তখন গোটা পৃথিবীকে ভাগ করে দিতে পারে। কিন্তু সেই বিভাজনও একদিন ঝরে যেতে পারে আলোচনার মাধ্যমে।
শেষ কথা
শীতল যুদ্ধ কোনো একক ঘটনা নয়—এটি ছিল এক পুরো যুগ।
যে যুগ বদলে দিয়েছিল রাজনীতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, এমনকি আমাদের দৈনন্দিন জীবনও। এটা মনে করিয়ে দেয়—ক্ষমতা সব সময় আওয়াজ করে না, অনেক সময় সেটি নীরব আতঙ্কের মধ্যেও টিকে থাকে।
২| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৫:৩৬
অরণি বলেছেন: সব সমস্যার কেন্দ্রে ইসরাইল প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত।
৩| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২৫ রাত ৯:৩৫
লোকমানুষ বলেছেন: অনেক গুলো ব্যাপার ধারাবাহিক ভাবে সুন্দর করে উপস্থাপন করেছেন। তবে সবচেয়ে ভালো লেগেছে "কেন শীতল যুদ্ধ এখনো গুরুত্বপূর্ণ?" এবং "শেষ কথা" অংশ দুটি। পরাশক্তির দেশ গুলো কীভাবে ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক বিষয় গুলো কীভাবে পরিচালনা করে তা বুঝতে হলে অবশ্যই এই ব্যাপার গুলো সম্পর্কে জ্ঞান রাখা জরুরি।
৪| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২৫ রাত ১০:৫৪
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: শীতল বা উষ্ণ কোন যুদ্ধই প্রত্যাশা করিনা। পৃথিবী হোক সবার জন্য শান্তিময়।
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৪:৪৯
সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: শীতল যুদ্ধ বিশ্বকে পিছনে টেনে নিয়ে যাবে।