নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জানিনা কারুর এমন হয় কিনা?
ফেলে আসা সময় কি এই যাপিত জীবনেরই একটি অধ্যায় নাকি অন্য জীবনের, নাকি অন্য ভুবনের, অন্য সময়ের, এমন মনে হয়? তখন সময় কি ছিলও বেশ রোদ গন্ধ মাখা, খুব কি ছিলও সুখ সুখ হাওয়াদের আনা গোনা? নাহ তা হয়তো না। কিন্তু আজ এত দূর থেকে সেই সময়টাকে বড় সুন্দর মনে হয়, মনে হয় বেশ আলো ঝলমলে। বিমাতা ভয়ংকরী কিংবা পাওয়া না পাওয়ার ব্যাথা বেদনা আজ নেহাতি তুচ্ছ। আজ একুশের এই প্রথম প্রহরে এমনই এক ঘোর মাথায় ঘুর পাক খাচ্ছে।
এমনই এক রাত্তিরে অজস্র ফুল চুরি করে একুশের প্রথম প্রহরে “সালাম সালাম হাজার সালাম” গেয়ে আমিই কি পথ হেটেছিলাম?আবার রাত গভীরে ঘরে ঢুকতে গিয়ে বাবার হাতে আমি কি ধরা খেয়েছিলাম? আজ এই ইট, কাঠ, বালু, ড্রইং জমা এইসবের হিসেবি জীবনের কথাওই সেই আমি কে খুঁজে পাই না। এ এক অদ্ভুতুড়ে ধোঁয়াশা।
বেশ মনে আছে, বাকি রাতটুকু বাবার সাথেই কাটাতে হয়েছিলো। ভোরবেলায় বাবার সাথে বেরিয়ে ছিলাম প্রভাতফেরীতে। সেই শেষ। বাবার হাত ধরে নামিনি আর কোন মিছিলে, নামবার সুযোগই কি আর দিলেন! চলে গেলেন বড্ড হঠাত করেই।
সেই “বাবা” যিনি ছিলেন সেদিনের মিছিলেও, তরুণ উদ্দাম মাওলানা ভাসানির আদর্শে বলীয়ান, দুচোখে দিন বদলের স্বপ্ন, ৫২’তে তিনি মেডিক্যালের প্রথম কিংবা দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছিলেন, ভেঙ্গে ছিলেন ১৪৪ ধারা, কারাগারেও ঘুরে আসতে হয়েছিলো। হায়! বুলেটের ঠিকানাটা বদলে গেলে এ লিখাটা হয়তো অন্য কেউ লিখত অন্য কোন খানে।
আজ একুশের এই প্রথম প্রহরে সকল শহিদদের সাথে “বাবা” আপনাকে সহ সেই মিছিলের সবাই কে হাজার সালাম। আজ এই সস্তা আদিখ্যেতার দিনে, বিপন্ন আদর্শ আর অসহায় মুহূর্তগুলোও এই ভালো লাগা আর গর্বটুকুই বেঁচে থাকার মানে হয়ে দাঁড়ায় কখনো কখনো। আর তাই কোন সুদূরের সিয়েরালিওনে ওরা যখন গেয়ে উঠে “আমার ভাই এর রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি...” তখন সজল চোখে গেয়ে উঠি “আমি কি ভুলিতে পারি”। আমার অবুঝ শিশু অবাক চোখে তাকায় না, সে জানে তার “না দেখা দাদা” সেই মিছিলেরই একজন, যাদের গর্জে উঠা শ্লোগান আজ ছড়িয়ে গেছে তার ভাষায়, ছড়ায় গানে আর অস্ফুট কবিতায়।
©somewhere in net ltd.