নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
“আম্মা আম্মা- দেখতো হাতে কি হইলো!” হাত চুলকে চুলকে বিছানা থেকে উঠে আসে মুনির। ঘুম থেকে দেরী করে উঠেছে, চুল গুলো খাড়া খাড়া হয়ে আছে। আজকালকার ছেলে পুলেরা যেমন রাখে মুখ ভর্তি কুটকুটে দাড়ি, মুখটার দিকে তাকালে ছোট্ট মুনিরের মুখটাই মা’র মনে পরে সব সময়।
“কি হল আবার!” রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন, “দেখি, দেখি!” বলে ছেলের হাতটা নিজের হাতের তালুতে নিয়ে নিলেন, সাদা হাত লম্বা লম্বা আঙ্গুল, কি ভালো যে লাগে! দেখেন বুড়ো আঙ্গুলের নিচের ফোলা অংশটায় একটু ফুস্কুরি মত হয়েছে, আর ছেলে চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় করছে!
“কিচ্ছু না বাবা, আমি একটা চুম দিয়ে দিলাম, ভালো হয়ে যাবে”। হাসতে হাসতে মা বলেন, ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া ছেলে লজ্জা আর কপট রাগে বলে “মা! তুমি”! এমন সময় খিল খিল করে পিছন থেকে ছোট বোনের হাসি, বুঝে যায় ঘটনাটা দেখে ফেলেছে, এখনই বলবে, মামা’স বয় ভাইয়া!
“যা তো এখান থেকে। স্কুল নাই তোর”? রাগ রাগ গলায় বোন কে বলে, পিত্তি জ্বলানো হাসি দিয়ে চলে যায় বোন।
“কি এটা”? মুনির আবার জিজ্ঞেস করে।
“কিচ্ছু না, ফুস্কুড়ি, আমি পটাশ দিচ্ছি, পটাশ দিয়ে হাতটা ধুয়ে নে গরম পানি দিয়ে”।
“মা! আবার পটাশ, হাত বেগুনি হয়ে থাকে!”
যাক আর কথা আগায় না, মুনির পটাশ নিয়ে বাথরুমে ঢুকে যায়, গিজার অন করে।
সারা দিন ক্লাস, আড্ডা, সন্ধ্যায় টিউশানি নিয়ে ব্যস্ত থাকে, অতটা আর খেয়াল করে না, এর মাঝে হাত চুলকেছে যখন, খস খস করে চুলকে নিয়েছে! কি যন্ত্রণা, কোন ব্যথা নাই কিন্তু থেকে থেকে চুলকে উঠে! এই যন্ত্রণার কোন মানে হয়! বাসায় এসেই আবার হাত ধুতে ঢুকে বাথরুম, পটাশ হাতে নিয়ে নিজের হাতটা দেখে নিজই অবাক হয়ে যায়, সকাল একটা মুখ ছিল এখন যেন আশে পাশে কয়েকটা মুখ গজিয়ে গেছে, ছোট ছোট জ্বালা মুখ যেন সব!, সে আর হাত ধোয় না, মা কে বলে, পাড়ার ডাক্তার আঙ্কেলের চেম্বারে চলে আসে। উনারও সেই একই কথা, এগুলো কিচ্ছু না, একটা মলম লিখে দিয়েই ছেড়ে দেন ওকে!
বাসায় এসে মলম টলম লাগিয়ে সে শুয়ে পরে। হালকা শীত পড়ে গেছে, ও তাই একটা পাতলা কুইল্টে মাথা ঢেকে, ফুল স্পিডে ফ্যান ছেড়ে দেয়, মশার হাত থেকে বাঁচার এটাই ওর সব চেয়ে প্রিয় পদ্ধতি!
ঘুম একদমই হচ্ছে না, থেকে থেকে ভেঙে ভেঙে যাচ্ছে! কেমন একটা অবসাদ সারা গা জুড়ে, খুব বেশী ক্লান্ত থাকলে শরীর যেন আর নিজের বসে থাকে না এমন লাগছে। আর পাড়া জুড়ে হয়েছে এক যন্ত্রণা, এক পাল কুকুর অহোরাত ঘেউ ঘেউ করে। এর মাঝে একটার বুঝি সময় ঘনিয়ে এসেছে, সারা রাত কাঁদে অদ্ভুত অপার্থিব এক শব্দ করে। দিনের বেলা নানা হট্টগোলে বুঝি এসব শব্দগুলো মিশে থাকে, সব মিলিয়ে একটা শব্দ জট ওঠা-নামা করে, কোন শব্দ আলাদা করে স্পষ্ট হয়ে উঠে না, শুধু মাঝে মাঝে বড় রাস্তায় গাড়ীর হার্ড ব্রেইক করবার তীব্র ক্রি...ই...ই...চ শব্দটা ছাড়া! কিন্তু রাতে শব্দগুলি যেন কানে বড্ড বেশী লাগছে আজ।
রাত যেন আজ শেষই হচ্ছে না, দীর্ঘ অন্তহীন এক রাত মনে হচ্ছে! এর মাঝে হাতের তালু যেন আগুনের মত জ্বলছে! কালকে কুইজ আছে, সেশনাল আছে এই হাত নিয়ে কিভাবে সব সামলাবে! “দুর” বলে বিছানা ছেড়ে উঠে পরে, আলো জ্বেলে দেখে রাত তিনটের মত বাজে। উঠে পরে বিছানা ছেড়ে। কম্পিউটারের সুইচ টিপে বাথরুমে যায় যতক্ষণে কম্পিউটার বুট হবে, ততক্ষণে একটু মুখে পানি দিয়ে আসা যাবে! এটা এখন অভ্যাস হয়ে গেছে, ঘুম ভাঙলে সবার আগে কম্পিউটার “অন” করেই বাথরুমে যাওয়া!
বাথরুম থেকে এসে টেবিলে বসে মুনির। ড্রয়ারে পেন ড্রাইভটা খুঁজে, দুনিয়ার জিনিষ ভর্তি ড্রয়ার! পুরানো কলম পেন্সিল , ক্ষয়ে যাওয়া ইরেজার, পুরনো ড্রয়িং, এনিমে কি টাইটানের স্কেচ, কোনটা শেষ কোনটা খসড়া, প্রিয় ব্যান্ড এর পিন, স্ক্রু-ড্রাইভার, সিডির ফ্ল্যাপ, প্রিয় “সুপার ঈগল” অটম্যাটিক পিস্তল আর তার ছোট ছোট গোল গোল হলদে প্লাস্টিকের গুলি, গড়াগড়ি যায় ড্রয়ার ধরে টানা টানি করলে, অকেজো হার্ড ড্রাইভ, কি নেই এই ড্রয়ারে! এত ভীরের মাঝে পেন ড্রাইভটা আর পায় না। হঠাৎ মনে পরে ওটা কালকের খুলে রাখা প্যান্টের পকেটেই রয়ে গেছে। দরজার পিছনের হুড়কোতে ঝুলে থাকা প্যান্টের পকেটেই পাওয়া গেল সেটিকে! পেন ড্রাইভ থেকে, বন্ধুর কাছ থেকে নিয়ে আসা পিডিএফ গুলো নামিয়ে, কুইজের জন্য দেখতে লাগলো। দেখতে দেখতে মাঝে মাঝে লেখা আর গ্রাফ গুলো লেপ্টে লেপ্টে যেতে থাকে দৃষ্টিতে, সাইন কার্ব গুলি বড় বড় ঢেউয়ের মত উঠা নামা করতে থাকে, চোখ জড়িয়ে আসতে থাকে ঘুমে। তখনই মনে হয় যেন বাইরে থেকে সেই অদ্ভুতুরে কুকুরের কান্নাটা ভেসে আসে। গভীর গহীন এক বিষাদের মত কান্না!
টেবিল ছেড়ে বিছানায় এসে শোয় সে, উপুর হয়ে নাক মুখ গুঁজে দেয় বালিশে, আরেকটা বালিশ মাথার উপর দিয়ে এনে দু হাত দিয়ে দুইপাশ থেকে কানের উপর চেপে ধরে যেন কোন শব্দ আর না আসতে পারে। জাগতিক কোন শব্দই আর আসতে পারবে না! কিন্তু তবু কোথা থেকে যেন সে করুন বিলাপ বার বার আসতেই থাকলো থেকে থেকে। এক সময় সে আচ্ছন্ন হয়ে ঘুমিয়ে গেল!
মা’র চিল চ্যাঁচানিতে যখন ঘুম ভাঙ্গল ততক্ষণে বেলা অনেক হয়ে গেছে, প্রথম ক্লাস তো মিস হবেই আজকে, পরের কুইজটা ধরতে পারলে ভাগ্য ভালো বলতে হবে! বিছানা থেকে উঠবার জন্য ডানহাতের তালুতে ভর করে উঠতে যেতেই হাতটা জ্বালা করে উঠলো। উহ্ বলে হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে আরও অনেক গুলো মুখ, না ঠিক মুখ না যেন চামড়া ফুড়ে তোকমার বিচির মত কয়েকটা চোখ গজাচ্ছে, কি বিচ্ছিরি।
হাতে একদম সময় নাই, হাতটা ঢাকতে এক হাতে বাতিল বাইসাইকেলের গ্লভসটা হাতে গলিয়ে কোন মতে ক্লাসের উদ্দেশ্যে ছুট লাগায়।
আবার সেই ক্লাস, কুইজ, সেশনাল, টিউশান। সব সেরে ফিরতে ফিরতে রাত দশটা। শীত শীত রাত্তির, ফাঁকা রাস্তা। ল্যাম্পোস্টের আবছায়া। সারাদিন হাতের জ্বলুনি ছিল, অত পাত্তা দেয়ার সুযোগ পায়নি, নানান ঝামেলায়। নিজেদের বাসার গলিতে ঢুকতেই টন টন করে উঠে হাতের তালু, হাঁটতে হাঁটতেই, গ্লভসটা খুলে প্যান্টের পকেটে ঢুকায়, ল্যাম্পপোষ্ট পিছনে, তার নিজের ছায়া পড়ছে হাতে, ভালো করে দেখতে পায় না তেমন হাতের অবস্থাটা। চুল্কাতে গিয়ে টের পায় পুরোটা তালু ভরে গেছে, নরম নরম, পিছলা পিছলা কিছু একটায়। চুল্কাতে সাহস হয় না। হালকা চাপ দেয়, কিন্তু গলে যায় না চোখের মত যেন। চাপ দিলে একটু দেবে যায়, পানি পানি, কষ কষ লাগে। ওর শরীরটা রি রি করে উঠে।
মুনির নেটে দেখেছে এক রকমের ব্যাঙ্গ আছে, সুরিনাম টোড, সেই প্রজাতির মা ব্যাঙগুলি বাচ্চা দেবার সময় ডিম গুলি পিঠে নিয়ে বেড়ায়, পিঠটা গর্ত গর্ত হয়ে যায়, ডিম ফুটে ব্যাঙ্গাচি গুলি ঐ গর্তেই থাকে, বড় না হওয়া পর্যন্ত। নেটে “ট্রাইপফোবিয়া” টাইপ করলেই এইসব ছবি গুলো আসে। আর মুনির ভয়ংকর ট্রাইপফোবিক। ওর চোখে দৃশ্যটি ভাসতে থাকে, অসংখ্য ব্যাঙ্গাচি মায়ের পিঠে, গর্ত গর্ত পিঠে, জেলির মত অর্ধ তরল, প্লীত প্লীত করে নড়ছে, যেন অসংখ্য চোখ! ওরা সারা শরীর চুল্কাতে থাকে, রি রি করতে থাকে শরীরটা আতংকে। কোন মতে টলতে টলতে বাসার গেইটের কাছে এসে দাঁড়ায়।
গেইটে লাগানো বাতিতে দেখে ঠিক যেমন দেখেছিল সুরিনাম ব্যাঙ্গের পিঠে, তেমন অজস্র ব্যাঙ্গাচির মত নাহ্, নাতো যেন অসংখ্য বোবা কালো কালো ছোট বড় চোখে ভরে গেছে তাঁর হাতের তালু। এতটুকুও বাকী নেই আর, বড় ছোট, উঁচু নিচু ভিজা ভিজা কষ কষ, ঝাপসা কালো কালো চোখে ভরে গেছে পুরো অংশটাই, দেখে বার বার কেঁপে কেঁপে উঠতে থাকে মুনির।
এদিক অদিক তাকায় ও, কেউ নেই ফাঁকা গলি। দারোয়ান চাচাও বুঝি তার ঘরে। পাড়ার কুকুরটা শুধু হেঁটে এগিয়ে আসে, দারোয়ান যার নাম দিয়েছে “জোলেখা”। লালচে রাঙ্গা কুকুর, এসে ঠিক তাঁর পাশে এসে দাঁড়ায়। তারপর নিঃশব্দে পিছের দু’পা ভাঁজ করে সামনের দু’পা সোজা রেখে, হিজ মাষ্টার ভয়েজের কুকুরটার মত ভঙ্গীতে বসে। মুখটা নিচু থাকে প্রথমে, তারপর করুন একটা কান্নার মত উঁ উঁ শব্দ করে মুখটা উপরে তুলে। এক চোখ আগেই কানা ছিল কুকুরটার। তাকিয়ে দেখে দ্বিতীয় চোখটাও গেছে, লালচে কালো কষ বেয়ে বেয়ে পড়ছে নষ্ট চোখটা থেকে।
মুনিরের হাত ভর্তি যেন অসংখ্য কালো কালো চোখ বোবা প্রশ্ন নিয়ে তাকিয়ে আছে, লালচে কষে যেন ক্যাঁতরে উঠছে হাতের চোখ গুলো।
মুনিরের মনে পরে যায় গত শুক্রবার পাড়ার রাস্তায় ক্রিকেট খেলবার সময় তার সুপার ঈগল দিয়ে টিপ সই করেছিলো জোলেখার উপর, একটা হলদে গুলি লেগেছিল মুখের আসে পাশে কোথাও, জোলেখা কেঁউ কেঁউ শব্দে পালিয়ে গিয়েছিল।
নিঃশব্দ চারিদিক। শুধু জোলেখার অসহ্য অপার্থিব কান্না, আর শত শত বোবা চোখের প্রশ্ন! মুনির স্থাণু দাঁড়িয়ে থাকে! যেন সময় এখানে গেছে থেমে।
২৪/০৪/২০২০
২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:২৭
রবাহূত বলেছেন: ধন্যবাদ। এডিটেড। অধিকাংশই টাইপো। শুধু ভুলই ধরলেন গল্পটির ভালো মন্দও তো কিছু বলা উচিৎ!
২| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫২
মা.হাসান বলেছেন: লেখাটা দুবার এসেছে, সামুর একটা বাগের জন্য এরকম হয় মাঝে মাঝে।
নামটা কি টাইপোফোবিয়া হবে নাকি ট্রাইপোফোবিয়া হবে বুঝতে পারলাম না।
লেখা ভালো লেগেছে। নিছক আনন্দের জন্য ফড়িঙের লেজে সুতো ঝুলিয়ে খেলে বড় হওয়া লোকেদের কাছে মানবিকতা আশা করা মুশকিল।
২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:২৮
রবাহূত বলেছেন: ট্রাইপফবিকই হবে ভাই , Trypophobia এটিই ইংরেজি বানান!
৩| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:২৬
নেওয়াজ আলি বলেছেন: উপভোগ্য
২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:২৯
রবাহূত বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই!
৪| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৪১
রাজীব নুর বলেছেন: ঠিক আছে। চলে।
২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৪৮
রবাহূত বলেছেন: বলছেন চলে? থ্যাঙ্ক ইউ!
৫| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৫২
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: ভালই লাগলো।
২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:৩২
রবাহূত বলেছেন: Thanks a lot bhai.
৬| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:০২
ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: এই মুনিরটাকে মেরে ফেলা দরকার ছিলো ভাই। এই শ্রেনীর অসভ্য একদম সহ্য হয়না আমার।
বরাবরের মতোন দারুণ হয়েছে
২৫ শে এপ্রিল, ২০২০ ভোর ৪:২২
রবাহূত বলেছেন: Thank you bhai.
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫০
রাশিয়া বলেছেন: ব্লগের শুরুতেই আম্মা লিখতে তিনবার আকার দিয়ে ফেলেছেন। খাড়া বানানে চন্দ্রবিন্দু নেই। তৃতীয় প্যারায় ৫টা ভুল চোখে পড়ল - নিজ দায়িত্বে শুধরে নেবেন।
ষষ্ঠ প্যারায় শব্দ বানান সব্দ লিখেছেন।
আশ্চর্যবোধক চিহ্ন ব্যবহারে আরও যত্নবান হতে হবে।
পুরো গল্পটা দুবার কপি হয়েছে।