নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এলোমেলো কথাবার্তা, অবাস্তব ভাবনা-চিন্তা

:)

রোবোট

মাথার ঘায়ে কুত্তা পাগল (মাঘাকুপা)- ডগ ম্যাড বাই হেডস ইনফেকশন

রোবোট › বিস্তারিত পোস্টঃ

সব গল্প শুনতে নেই। সব কষ্ট জানতে নেই।

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৫২

গল্প ১

বিপুল ভাই ছিলেন ইউনিভারসিটি বাসের সহযাত্রী। এক ব্যাচ সিনিয়র। অন্য ডিপার্টমেন্টের। ওনার সাথে পরিচয় যখন হয় তখন আমি ইউনিভার্সিটি লাইফের ফার্স্ট ইয়ারে হাবুডুবু খাচ্ছি। নাহ কারো প্রেমে না। ক্যালকুলাস, মেকানিক্স, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রির অথৈ সাগরে। বিপুল ভাই সুদর্শন। সেটা ছাড়াও বেশীর ভাগ মানুষের ওনাকে চোখে পড়ার আরেকটা কারণ ছিলো ওনার সুদর্শনা সংগিনী মানে প্রেমিকা, আজকালকার দিনে যাকে বলে গার্লফ্রেন্ড। আমরা ভুল ইংলিশে যাকে বলতাম এ্যাফেয়ার। একসময় ওনার প্রেমিকা কলি আপার সাথেও পরিচয় হলো। বিপুল ভাই-কলি আপা জুটি হিসাবে আমাদের খুব পছন্দের ছিলেন। প্রায় সমবয়সী (এ্যাকাডেমিক দিকে মাত্র একবছর সিনিয়র) হলেও ওনারা দুজনই খুব স্নেহসূচক অথচ ফ্রেন্ডলি টার্মে আমাদের সাথে কথা বলতেন। ওনাদের দুজনই খুব হাসিমুখে থাকা মানুষ। আমার মত সদা ব্যাজার মানুষও এর প্রশংসা না করে পারতাম না। কলি আপা যেহেতু আমাদের ডিপার্টমেন্টেরই ছিলেন, সেজন্য পরে ওনার সাথেই কথাবার্তা বেশী হত। থার্ড ইয়ারে ওনার ক্লাসনোট/চোথাও নিয়েছিলাম কপি করার জন্য। সেই ক্লাসনোটও একটা দেখার মত জিনিষ ছিলো। এরকম পরিচ্ছন্ন লেখা কমই দেখা যায়। এমনকি ক্লাসনোটে কোনো কাটাকাটি হলেও সেটা ওয়াইট ফ্লুইড দিয়ে মুছে দেয়া। পাশ করার পর কারো সাথেই আর যোগাযোগ থাকলো না। তবে কারো মুখে শুনেছিলাম, পাশ করার পর ওনাদের বিয়ের কথা। প্রবাসী হবার কথা। মাঝখানে শুধু কনভোকেশনের সময় ওনাদের সাথে দেখা হয়েছিলো।



এরপর অনেকদিন পার হয়েছে। আমিও তখন আমেরিকা প্রবাসী। বিয়েও করেছি। একদিন বৌ বললো তার এক বান্ধবীর কাজিনের কথা। টেক্সাসের এক নামী ইউনিভার্সিটির পিএইচডি স্টুডেন্ট। হাজব্যান্ড-ওয়াইফ দুজনই। ইউনিভার্সিটির এ্যাপার্টমেন্টের গ্যাস লাইন এক্সপ্লোড করে ওনাদের বাচ্চা মেয়ে মারা গেসে। ওয়াইফ (তখন প্রেগন্যান্ট), মা-বাবা (বাচ্চার দাদা-দাদি) ক্রিটিকাল কন্ডিশনে হসপিটালাইজড। ওয়াইফের মুখ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত। আরেকটু কথাবার্তা আগানোর পর গা শিউরে উঠলো। এরা আর কেউ না। আমাদের প্রিয় বিপুল ভাই-কলি আপা। বৌর বান্ধবী, অনলাইন থেকে খোঁজখবর নেই। জানলাম পুরো জিনিসটা দুর্ঘটনা হলেও আগে কয়েকবারই ওনাদের মনে হয়েছিলো কোথাও লিক হচ্ছে। ইউনিভারসিটি এ্যাপার্টমেন্টের মেইনটেন্যান্স ডিপার্টমেন্টকে বারবার বলা স্বত্তেও তার কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এর মাঝে হঠাত মাও মারা গেলেন। একসময় বিপুল ভাইর ফোন নাম্বারও নিলাম। ফোন নাম্বারের সব ডিজিটগুলো টিপেও সেন্ড বাটন টিপতে পারতাম না। কিভাবে কি বলবো বুঝতে পারতাম না। কেবল মনে হতো না, পরে কথা বলবো।



তারপর অল্প কিছু দিন গেলো। অল্প কিছু দিন থেকে বেশ কিছু দিন। জানলাম বিপুল ভাইদের সন্তান হয়েছে। তারপর পার হয়েছে বেশ কটা বছর। জানলাম ওনারা পড়াশোনা শেষ করে চাকরি বাকরি করেছেন। অকালমৃত মেয়েটির নামে একটি ফাউন্ডেশন করেছেন, চ্যারিটি ফাউন্ডেশন। যোগাযোগ করতে মন চাইলো খুব। না বিপুল ভাইর ফোন নাম্বার হারালেও ইমেইলতো করা যেত। তবু কেন যেন পারলাম না।



গল্প ২

কিশোর ভাই-সুমির সাথে পরিচয় প্রবাসে এসে। আমি যে শহরে থাকতাম ছাত্রজীবনে সেখানে থাকতেন ওনারা। মাঝে মাঝে দেখা হত। হাসিখুশী মানুষ দুজনই। কিশোর ভাই সুদর্শন। রংগরসিকতা করেন। আদিরসাত্নক কৌতুকেও আপত্তি নাই। সুমি সুন্দরী। সদালাপী। প্রায় জোর করেই ভাবী-আপনি ডাকার বদলে নাম ধরে তুমি করে ডাকিয়ে ছাড়লো। খুব অল্প সময়ের পরিচয় হলেও এমন দম্পতিকে ভালো না লাগার কোন কারণ নাই।

ছাত্রজীবন শেষ করার পর কর্মজীবনের জন্য অনেক দূরের একটা স্টেইটে চলে গেলাম। যোগাযোগ কমে গেলো। চাকরি-সংসার নিয়ে ব্যস্ত। শুনলাম ওনারা সন্তানের বাবামা হচ্ছেন। একসময় আমরা ওই এলাকার পাট চুকিয়ে চলে আসলাম রাজধানীর কাছে। নিজেরাও তখন বাবামা হবো। সেরকম কোন একটা সময়ে শুনলাম ভয়ংকর একটা খবর। ডেলিভারী পরবর্তী একটা জটিলতার সময় সুমিকে স্যালাইন ওভারডোজ বা এজাতীয় কোন একটা মিসট্রিটমেন্টে ম্যাসিভ স্ট্রোক ও অন্যান্য জটিলতায় সুমি কোমায় চলে গেছে। বাচ্চা ভালো আছে। যারা কমন ফ্রেন্ড ছিলো তাঁদের কাছ থেকেই খবর পেতাম। শুনলাম, কিশোর ভাইর বাবা-মা মারা গেছেন কিশোর ভাইর শৈশবে। একটা বোন ছিলো ওনার সেও মারা গেছে মেলা দিন। কিশোর ভাই মানুষ হন মামাদের কাছে। শুনলাম সুমির বাবা-মা এসেছিলেন মেয়ের কাছে।

এরপর শুরু হলো অপেক্ষার পালা। ডাক্তারদের চেষ্টা মানুষটাকে ফিরিয়ে আনার। আজরাইল/প্রকৃতির চেষ্টা সুমিকে নিয়ে যাবার। বেশ অনেকদিন যাবার পর একসময় ডাকতাররাও প্রায় হাল ছেড়ে দিলেন। লাইভ সেভিং মেশিন দিয়ে আর কত দিন। একসময় কিশোর ভাইকে ডিসিশান দিতে বললেন। কিশোর ভাই, সুমির বাবা-মা, কিশোর ভাইর শুভাকাংখীরা যখন ভাবছেন কি করা যায় সেসময়ই মিরাকলের মত সুমির অবস্থা ভালো হওয়া শুরু হলো। কমপ্লিট রিকভারি না, তবে আজরাইল/প্রকৃতি এবারের মত হেরে গেলো সেটা সবচেয়ে নিরাশাবাদীও মানবে। সুমি প্যারালাইজড, বসতে পারে। হাঁটতে পারেনা। কথা বলতে পারেনা। নিজের সন্তানকে কোলে ধরে রাখতে পারেনা।

তবু ডাক্তাররা বললেন এক্সট্রিম ফিজিওথেরাপী করলে অবস্থার উন্নতি ঘটবে।অবস্থার উন্নতি কিছুটা হলো। সুমি হুইল চেয়ারে চলাফেরা করে। কথা ঠিকমত বলতে পারেনা বলে শুনেছি। সুমির বাবা-মা ওদের সংসার আগলে রেখেছেন। মানুষ ভাবে একটা, আর হয় আরেকটা। বছর কয়েক আগে সুমির বাবা মারা গেলেন। হার্ট এ্যাটাকে। নাহ বয়স বেশী হয়নি, ৬০-৬৫ হবে তখন। এর কবছর পর সুমির মার ক্যান্সার ধরা পড়লো। বেশী দিন হবার আগেই উনি চলে গেলেন পরপারে।

সুমিকে শেষ দেখেছি প্রায় ১১ বছর আগে। কিশোর ভাইর সাথে ২/৩ বছরে একবার দেখা হয়। দেখে মনে হয়না, ওনার জীবনে এত ঝড় বয়ে গেছে। দয়েকসময় ফেইসবুকে ওনার স্ট্যাটাস দেখে মনে হয় বাইরে যতই হাসি ঠাট্টা করুন, মাঝে মাঝে মুখোশ খুলে পড়ে।স্ট্যাটাসে কিছু লিখতে চাই। চিনতা করি। ৫ মিনিট-১০ মিনিট-করে ঘন্টা পেরিয়ে যায়। মনে হয় পরেরদিন করবো। সারাদিনই ভাবি কি লিখবো। লিখতে গেলে কিবো্র্ডে হাত চলে না। দিন পেরিয়ে দিন যায়। সপ্তাহ যায়। মাস যায়। কিশোর ভাইকে আর কিছু বলা যায়না। বলতে পারিনা। ওয়ার্ডস ডোন্ট কাম ইজিলি।

*****************************************************************************************************************

বিপুল ভাইকে আমার কখনো ফোন করা হয়নি। ইমেইলও না। শুধু প্রথাগত কুশল জানতে চাওয়া না, সাহস জোগানোর মত কথা, স্বান্তনার কথা বলার কথা ছিলো। শোনার কথা ছিলো ওনার শোকের কথা, দুঃস্বপ্নের মত বাস্তবতার কথা। কিশোর ভাইর মনে নিশ্চয়ই অনেক ক্ষোভ। মানুষের উপর। পৃথিবীর উপর। ঈশ্বরের উপর। ওনাকেও নিশচয়ই আশার কথা শোনানো উচিত। ওনাকে কি বলা উচিত, "কিশোর ভাই, এভরি গুড থিং হ্যাজ এ ব্যাড থিং, ইট এন্ডস। এভরি ব্যাড থিং হ্যাজ এ গুড থিং, ইট এন্ডস ঠু।" কিশোর ভাই কি এমনটা মানেন? জানিনা। আসলে কখনো জানতে চাইনি। জানতে চাইবার সাহস হয়নি। কোনো কোনো মানুষের জীবনের গল্প হরর ফিল্মের চেয়েও ভয়ংকর। জীবন তাঁদের অভিশপ্ত। সেইসব জীবনের গল্প আমি জানিনা। জানতে চাইনা। স্বান্তনা দেই নিজেকেই। সব গল্প শুনতে নাই। সব কষ্ট জানতে নাই।



(এই ঘটনাদুটো যে সত্য ঘটনা সেটা বোধ করি বলে দিতে হবেনা। তবে নামগুলো বদলে দিলাম।)

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৫৩

রোবোট বলেছেন: (চতুরমাত্রিক ব্লগে পূর্বপ্রকাশিত)

২| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:২৩

নতুন বলেছেন: রোবট ভাই.... মানুষের জীবন বড়ই জটিল....আমাদের জীবনে এমন সব ঘটনা ঘটে যাতে খুব সহজেই অস্কারপেতে পারে এমন মুভির কাহিনি বানানো যায়...

আর একটা ভাল দিক হলো মানুষ কেন জানি সব বিপদের মাঝ থেকেই ভাল থাকার একটা পথ খুজে বের করে....

আর যদি তখন তার বন্ধ পাশে দাড়ায় তো আরো ভাল ফিল করে...

আপনি তাদের বলবার মতন কথা পাচ্ছেন না.... ঠিক আছে... সব সময়ে সহানুভুতি শুধু ভাষা/শব্দ দিয়েই বোঝাতে হয়না...

শুধু পাশে থাকলেও অনেক কিছুই করা হয়...

৩| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:২৮

সুমন কর বলেছেন: লেখাটা পড়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল। ভাল লিখেছেন।

৪| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:২১

স্বপনচারিণী বলেছেন: মানুষের জীবনে যে কোন সময় খারাপ পরিস্থিতি আসতেই পারে। সে সময় মানুষ ভীষণ অসহায় হয়ে পরে, কাছের মানুষদের পাশে চায়। আপনার কষ্ট হচ্ছে তবু তাদের সাথে ইচ্ছা করেই যোগাযোগ করছেন না, ভাবছেন কী বলবেন? কী বলে সান্ত্বনা দেবেন? হয়তো আপনার একটা ফোনকল তাদের জন্য মলমের কাজ করবে।ভাল থাকুন। স্বশরীরে না পারলেও ভাললাগার মানুষগুলির পাশে থাকুন।

৫| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৩২

রোবোট বলেছেন: ২ বছর আগের পোস্ট। কমেন্টের উত্তর দেয়া হয়নাই। না দেয়াই থাকুক। নতুন, সুমন ও স্বপনচারিণীর কাছে ক্ষমা চাই।

৬| ১৯ শে মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:৪২

মানবী বলেছেন: বেশ পুরনো ঘটনা হলেও ক্ষতটা পুরনো নয়।
এমন একটা পোস্ট দিয়ে আর খবর নেই!

ভালো আছেন আশা করি।

০৬ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১১:০২

রোবোট বলেছেন: বহু বছর পর লগিন করলাম। আছি ভালোই। আপনি কি এখনও ব্লগিং করেন?

৭| ১৭ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১:২৬

মেহবুবা বলেছেন: এমন ঘটনা খুব কাছ থেকেও দেখেছি; বহমান জীবনে উপরওয়ালার ওপর পুরো ভরসা করে এগিয়ে যাওয়া আমার ব্লগবাড়িতে আপনার বিচরণ দেখে মনে এল আপনার কথা।
ভাল থাকবেন।

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:০৯

রোবোট বলেছেন: ভালো থাকবেন।

৮| ২০ শে জুন, ২০২১ সকাল ১১:০৬

নীল আকাশ বলেছেন: অনেক ভালো লাগলো। মানুষের জীবনে উত্থান পতন স্বাভাবিক নিয়ম।

০৯ ই আগস্ট, ২০২১ সকাল ৯:৪২

রোবোট বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.