![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তখনো সূর্যের আলো ফোটেনি। ভোরের
অস্পুষ্ট সাদা আলোয় রাস্তার ফুটপাত
ধরে হাঁটছি। রাত দুটোর দিকে শহিদ
মিনার
থেকে পুলিশ তাড়া করেছে,
শহিদ মিনারের ওপর ঘুমলে নাকি
শহিদদের
অশ্রদ্ধা করা হয়।
অথচ ঘুমন্ত মানুষ গুলোর ঘুম
ভেঙে যে কত বড় মানব-অধিকার ভঙ
করল তার ঠিক নাই!
যাই হোক আমাদের দেশে এমন অনেক
আইন-কানুন আছে যার গোড়া নাই অথচ
মাথা জাগাইয়ে বসে আছে।
সেই রাত দুটো থেকে চোখে ঘুম
নিয়ে হাঁটছি।
হাঁটতে হাঁটতে কোথা থেকে কোথায়
এসে পৌঁছেছি নিজেও জানি না।
তবে হাঁটছি কোন এক অজানা গন্তব্যে,
বেচে থাকার উদ্দেশ্যে।
কখনো একটি বা দুটি ট্রাকের
হেডলাইটের
আলোয়, চোখের ঘুম চলে যায়। ক্ষনিক
পরে সেই ঘুম চোখে আবার
ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে চলা।
কখনো বা বয়ে বেড়ানো কষ্টের
আঘাতে বুকের(বাঁ) পাশের পাজড়
ভাঙার
আওয়াজ শুনি,কিন্তু হাত
বুলিয়ে ভাঙা পাজড়ের হদিস পাই না।
চলতে চলতে পৌঁছেছি এক
অজানা জায়গায়,একটা লোহার পুল যার
নিচ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে হাজার কিউসেক
নদীর পানি।
একটু ফিলোসফি ভাব নিয়
নদী,পুল,পানি নিয়ে কিছু
একটা চিন্তা করতে চাইলাম,কিন্তু
অর্ধ-
জাগা মস্তিষ্ক সাড়া দিল না।
পুলে পা রাখতেই কিছু একটা দেখলাম,
একটু এগিয়ে যেতেই বুঝলাম পুলের শেষ
প্রান্তে একটা সাদা মাক্রোবাস
থামানো।
একটা লোক ময়লার
ড্রাস্টিতে কি একটা ফেলল,আমাকে
দেখে হতভম্ব
হয়ে একটু দাড়িয়ে দ্রুত
গাড়ি করে চলে গেল। আমার
কি একটা সন্দেহ হল। কৌতুহল মেটাবার
জন্য আমি ময়লার ড্রাস্টির কাছে
গেলাম,
দেকলাম সোনালি পাটের বস্তায় মুখ
বন্ধ
করে কি একটা ফেলেগেছে লোকটা।
তখনো সূর্যের আলো ফোটেনি,
তবে আমার মনে লুকিয়ে থাকা চাপা
লোভ
গুলো তেরে জেগে উঠল!
আমি ভাবছি বস্তা ভর্তি টাকা,স্বর্ণ,
অথবা মূল্যবান কিছু একটা হবে।
যা লোকটা চুরি করে ফেলে গেছে,
পরে নিয়ে যাবে বলে।তাই আমায়
দেখে বিস্মিত হয়েছে লোকটা।
টাকা,স্বর্ণ হলে আমি কিভাবে কি করব
তা ভেবেই আমার দফারফা।
ভাবছি পৃথিবীর সব সুখ
আমি একা কিনে নেব,এতদিনের
অবহেলা অনাদর কড়ায় গন্ডায় আদায়
করব। হ্যাঁ টাকা হলে সব পাওয়া যায়।
সুন্দরি বউও!অথবা পতিতালয়ের সবচেয়
সুন্দর নগ্ন দেহটাকে কিনে নেব আমি।
কল্পনার অন্তসুখে বিভোর
আমি নিজেকে বললাম বস্তা খোল
উন্মাদ।
আবার আমিই প্রতি উওরে; হ্যা এ
বস্তা আমাকে খুলতেই হবে,সম্পূন্ন
একা।
মুনকার-নাকিরও মনে হয় আমার
সাথে নেই। কারন যতদূর মনেপড়ে দু- বছর
আগে শেষবার ঈদের নামাজের জন্য অযু
করেছিলাম! আর গত ঈদে অযু ছাড়াই
নামায পরেছি!!আর গোসল ৯ দিন
আগে বুড়িগঙ্গায় শেষবার !!!
অতঃপর বস্তার মুখের বাঁধন খুলে, বস্তা
সরাতেই" সর্বশক্তি দিয়ে চিৎকার
করে উঠলাম!!
পুলের ওপার থেকে কেউ একজন
বলে উঠল; চিৎকার দিল কে রে??
আকাশের দিকে মুখ তুলে দেখলাম পূর্বা-
আকাশ জুরে সোনালি রোদ্দুর
ডানা মেলেছে।এত সুন্দর রোদ্দুর
কখনো দেখিনি!
মাথাটা চিনচিন করে ব্যাথা করছে।
মাথা ঘুরছে;চোখ দুটো কেন যেন
বুজে এলো! বুঝলাম অঙান হয়ে যাচ্ছি !!
মাটিতে আমার দেহটা লুটিয়ে পরল;
দুটো শব্দ"ধর ধর"
আর কিছু পায়ের আওয়াজ!
এরপর আর কিছুই মনে নেই।
চোখ মেলে; একটা ফ্যান মাথার ওপর
ঘুরছে।একটা টিউব লাইট জ্বলছে।
দিন কি রাত হাসপাতালের বদ্ব
কেবিনে তা কিছুই বোঝা গেল না।
পাসে একজন ডাক্তার; কি এখন কেমন
লাগছে?
আমি এখানে কিভাবে?
দু জন লোক আপনাকে অঙান অবস্থায়
এখানে রেখে গেছে।
আমার কাছে কোন টাকা নাই।
জানি এটা সরকারি হাসপাতাল।
তবে সকালের খাবার?
ডাক্তার নিরব হেসে,এখন সন্ধা।
কিছু খাবেন?
হ্যাঁ।।
একটা বিভৎস চেহারার নার্স
ট্রে করে দুটো রুটি একটি কলা এক
গ্লাস
পানি।
খাবার শেষ" আমি কি যেতে পারি?
হ্যাঁ।।
এখানে একটা স্বাক্ষর দিন।
হাসপাতালের দরজার ঘড়িটায় ৭টা ২৮
মিনিট।
রাস্তায় হাজার মানুষ ছুটছে যার যার মত
করে।কেউ
হেঁটে,গাড়িতে করে অথবা বাসে ঝুলে।
দামি গাড়ি গুলো চুটছে সব তুচ্ছ করে।
কুকুর গুলো ঘেউ ঘেউ করছে রাতের
খাবারের জন্যে। ইদুর গুলো টুকরো
খাবার
নিয়ে ছুটছে,একটা বিড়াল ঠিক তার
পিছনে।
কালো ছেড়া প্যান্ট পরা একটা ছোট্ট
ছেলে ভিক্ষা করছে।
দামি শো-রুম গুলোর লাল-নীল
বাতি জ্বলছে-নিভছে। সবাই যেন
নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। এমন
কি খোলা রেস্তরার খালি চেয়ারটাও
অপেক্ষায়, কখন একজন খরিদ্দার
এসে বসবে।।
আমি বড় দাড়িয়ে; ভাবছি বস্তাটা ??
কিভাবে কি হল-
জানতে চান বস্তায় কি দেখেছি???
হ্যাঁ দেখেছি অনেক দামি কিছু।
স্বর্ণ,রৌপ্য,
হীরা,মনি,মুক্তার চেয়েওঅনেক দামি
কিছু!
যার দাম এই পৃথিবীর কেউ কোন দিন
দিতে পারেনি পারবেনা।
আমি দেখেছি হ্যাঁ আমি দেখেছিএক
নবজাতকের কচি মুখ!!
এত কচি মুখ এর আগে আমি কখন
দেখিনি।
কচি দেহখানি শুকিয়ে যাওয়া বির্যে
আষ্ঠে ছিল,রক্তে রাঙা ছিল
কচি মুখ খানি!!
নিষ্ঠুর মা তার নাভীর নারি টুকো কাটর
সময় পায়নি"
''মা'' শব্দে ঘেন্না ধরে আমার! কেমন
মা রে
তুই প্রসব যন্ত্রনা সইতে পারিস আর
নিজের সন্তানের পরিচয় দিতে পারিস
না।
তবে গর্ভে ধারন করিস কেন??
এ শিশু কি অপরাধ করেছে তোর
কাছে একে জম্নদিয়ে মারলি। সমাজের
সামনে বলতে পারবিনা ও
কে দিতে পরবিনা ওর পরিচয়
তবে জম্নদিলি কেন?
তোর সাময়িক সময়ের সুখের ফসল,
পাপের ফসল!!
আজ সমাজের সামনে,লোকধর্মের
কাছে নিজের কলঙ্ক মুছলি তুই।। নিজের
বিবেকের সামনে কোন দিন দাড়াতে
পারবি
তুই?তোর চোখে, চোখ রেখে তুই
কথা বলতে পারবি? পারবি না,কারন তুই
খুনি!
খুন করে রক্তের পিপাসা মিটিয়েছিস
তুই।
বির্যের সুখে তোর মন ভরেনি।
এবার রক্তে সুখ মিটালি। নতুন কচি চোঁখ
দুটো কে পৃথিবীর রোদ্দুর দেখালি না।
বুঝতে দিলি না পৃথিবীর দুষিত বায়ুর
স্বাদ।
একদিক থেকে ভালই করেছিস "এ দুষিত
বায়ুর নেশা বড়ই মারাত্বক , কারন
বেঁচে থাকার নেশায় একবার
কাউকে পেয়ে বসলে, সে আর
মরতে চায়না"।
আমাকেও হয়ত তোর মতই কেউ
ফেলে গেছে!!
ওর মধ্যে আর আমার মধ্যে পার্থক্য
এতটুকই "ও মরেগিয়ে বেচেঁ গেছে,আর
আমি বেঁচে থেকে মরেগেছি"
আবার রাস্তায় হেঁটে চলছি। চোখে ঘুম
নেই! পেটে ক্ষুধা নেই!!মনে জ্বালা
নেই!!!
তবুও পাঁজর ভাঙার আওয়াজ পাই।
হাত বুলানর সময় নাই! কারন
সামনে আরো একটি মুখবন্ধ বস্তা !!
খোলার সময় নাই!!!
বুঝলাম দূষিত বায়ুর নেশায় ভালভাবেই
পেয়ে বসেছে।।
©somewhere in net ltd.