নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন আমি

দর্পণের প্রতিবিম্ব

প্রেমিকার চিরশত্রু

দর্পণের প্রতিবিম্ব › বিস্তারিত পোস্টঃ

বেকারত্বের দিনগুলি - তৃতীয় অংশ

১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:১১




জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে আমি চাকরিটায় জয়েন করি। মনে প্রশ্ন জাগতে পারে প্রথম চাকরির দিন তারিখ কিভাবে মানুষ ভুলে যায়? কিন্তু আমি ভুলে গিয়েছি, ইচ্ছা করেই ভুলে গিয়েছি।
সকাল তখন ৯:২৫ মিনিট, ভবনের সামনে দারিয়ে ভাবছি ভিতরে কি ঢুকবো? কোনোভাবে সারাদিন কাটিয়ে দিয়ে বাসায় ফিরে গেলে হয় না? মনের সাথে কঠিন রকমের যুদ্ধ করে চলে গেলাম অফিসে। ঢুকে দেখলাম চার পাঁচ জন সহকর্মী যে যার মত মনিটরের স্ক্রিনে চোখ ডুবিয়ে রেখেছে! ছোট্ট দুইটা রুম, কেউ কারও সাথে কথা বলে না, এদিকে ইন্টারভিউয়ের দিন যেখানে বসে ছিলাম আজও সেখানেই বসা আমি। কোনো ডেস্ক ফাকা নেই! এক ঘন্টার মাঝামাঝি সময়ে এমডি স্যার এলেন। আমার দিকে এক নজর তাকিয়ে চলে গেলেন নিজ রুম। তার ঠিক ২০ মিনিট পর আমাকে ডাকলেন।

স্যার বেশ ফান টাইপ মানুষ। খোঁজখবর নেয়ার পর বললেন, "তুমি আজ থেকে দুইটা পর্যন্ত অফিস করবে যতদিন না পর্যন্ত বসার ব্যবস্থা হচ্ছে। তুমি এখানে ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করবে।" এরমধ্যে একজন এমপ্লয়ি ক্লায়েন্ট সাপোর্টের জন্য বাইরে গেলেন এবং আমাকে তার ডেস্কে বসতে দিলেন। মশা মারা ছাড়া আমার কোনো কাজ নেই প্রথম দিন! সবাই সবার কাযে ব্যস্ত! দুপুর ১২টা বাজতেই ঘুমে চোখের পাতা একে অপরকে শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরছিল। বের হওয়ার একটু আগে স্যার ডেকে বললেন, "আজ কি শিখলে?"
সহজ সরল এবং ভীতু মনে বললাম, "স্যার, কিছুই না। বসে ছিলাম। কি করবো, কেউ ই এসিস্ট করেন নি!"
তিনি হাসলেন এবং আমি কিছুটা অবাক হলাম! তিনি বললেন, "তোমাকে কাজ নিজ তাগিদে শিখে নিতে হবে, হাতে ধরে শিখানোর সময় চলে গেছে, বুঝছো?"
তারপর কোম্পানির একটি নোটপ্যাড, কলম, চাবি রিং দিয়ে বললেন, "এসব তোমার জন্য। আর নিজের ল্যাপটপ আছে? থাকলে নিয়ে এসো আর না থাকলে কিনে নিও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, এই নাও স্পেসিফিকেশন লিস্ট। এরমধ্যে একটা কিনে নিও।"
আমি কিছুটা ভ্যাবাচেকা খেয়া গেলাম কথাটা শুনে! বললাম, "স্যার, অফিস কিছু প্রভাইড করবে না?" তিনি বললেন, "তোমার একার জন্য এত আয়োজন তো করা সম্ভব না, ভবিষ্যতে আরও কোনো ফ্রেশ গ্রাজুয়েট আসলে তখন সকল ব্যবস্থা হবে।"
দুপুর ২:১৯ মিনিট, অফিস থেকে বের আবারও শার্টের ইন ছেড়ে দিলাম। কেমন যেন এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে! ঠিক যেমনটা জোর করে বিয়ে দেয়ার মত! এমন সময় বের হলাম যখন পেটে খিদে! হোটেলে খাওয়ার বিন্দু পরিমাণ ইচ্ছা নাই! আর বাসায় পৌছাতে প্রায় দেড় ঘন্টা!

এমনভাবে চললো প্রথম সপ্তাহ। এরমাঝে বাসায় জানালাম ল্যাপটপের কথা। আব্বু তিনদিনের মাথায় কিনে দিলেন! মনে মনে আমি অফিসকে একেবারেই মেনে নিতে পারছি না! একদিন অফিসে ডেইল টাস্ক লিখার জন্য নোটপ্যাড নিতে ভুলে গিয়েছিলাম যার জন্য সেখানের সবচেয়ে ডোন্ট কেয়ার অ্যাটিটিউড কলিগ বেশ ঝারি দিয়ে বললেন, "সামান্য নোটটাও সাথে আনতে পারেন না আপনি? ফোন, ম্যানিব্যাগ তো ঠিকই এনেছেন?"
উনার কথাটা শুনে আমি বেশ ভীত হয়ে গেলাম। রাগ উঠলেও স্বাভাবিকভাবে বললাম, "সরি ভাইয়া, আপনি মুখেই বলেন আমি ল্যাপটপের নোটে সেভ করে রাখছি।" উনার চেহারার রাগান্বিত ভাবখানা কিছুক্ষণের মধ্যে দূর হয়ে গেল। আমি ডেস্কে ফিরে ভাবতে লাগলাম, "এখানে দুইটা কারণ ঘটতে পারে! এক, উনার ন্যাচারই এমন! দুই, অফিস কালচারের কারণে উনি এমন বিহেইভ করছেন!"
সাধারণত ইন্টার্ন বা ফ্রেশ জয়েনিং এ এমন ব্যবহার পাওয়া কারও কাম্য না। যদিও মাথা থেকে উনার ধমকটা যাচ্ছেই না তবুও অন্যদিকে মনোনিবেশ করার চেষ্টা করলাম। আমার এপাশে ওপাশে রোবটের মত কাজ করতে থাকা দুই ব্যক্তি বসা যারা ওয়াশরুম, লাঞ্চ আর স্যারের ডাক ব্যাতিত তাদের পশ্চাৎদেশ চেয়ার থেকে উঠান না! এদের মাঝে ঘুম আমাকে আরও অঢেল শক্তিতে ঝাপটে ধরে!

এভাবে পার হল এক মাস। আমার সেই কাজিন সাগর ভাইয়ের মাধ্যমে জানতে পারি আমার বেতন নির্ধারণ করা হয় নি। অর্থাৎ বেতন ছাড়া ইন্টার্নশিপ। তিনি বললেন, "কাজ শিখে নাও, টাকা তোমাকে খুঁজবে!"
সঠিক বলেছেন কারণ প্র্যাক্টিকাল এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তি যেহেতু বলেছেন তাহলে ঠিকই বলেছেন! তো সেসব আর কানে নিলাম না। অথচ অফিসের কাজে এদিক সেদিক দৌড়াদৌড়িতে আমার পকেট ফাকা হচ্ছে সেদিকে নজর নেই কারো! আমি তো ভয়েই নজর দিই না! কিসের যে ভয় সেটাই জানি না! এদিকে বিল কিভাবে করতে হয় তাও জানি না! স্যারের পিএ বললেন, "আরে ভাই বিশ তিরিশ টাকাও কি বিল করা লাগে?" কিন্তু এই টাকাই মাস শেষে কি পরিমাণ ক্ষতিটা আমার করে দেয় সে তো আমিই বুঝি! একয়েক মাসে স্যারের মাধ্যমে আমি বুঝছি সময় কি জিনিস এবং টাকার মূল্য এবং গুরুত্ব কি জিনিস। শুধু তিনি বুঝলেন না ভরা কলসির যেকোনো ছোট ছিদ্র কলসিকে ফাঁকা করে দিতে পারে!

ধীরে ধীরে কয়েকজনের সাথে কথাবার্তা শুরু হল। ভবনের কেয়ারটেকারও আমার নাম এবং চেহারা জানলো। সেই ডোন্ট কেয়ার অ্যাটিটিউডের কলিগের নামও মুখস্ত হয়েছে, রনি! আমি মাঝে মাঝে তাকে একসাথে লাঞ্চ অফার করি কিংবা বলি চলেন নিচ থেকে চা খেয়ে আসি! তিনি যেতে রাজি হোন না তবে উনার সেই গম্ভীর ভাবটা আস্তে আস্তে দূর হচ্ছে। উনার কথা বার্তায় এখন কোমলতার জন্ম নিয়েছে! এদিকে একদিন আমার বন্ধু বলল, "দুই দিনের ছুটি জমা দে, টিম লিড বা এইচআর এর কাছে।" আমি জিজ্ঞেস করলাম, "লিড তো বুঝলাম কিন্তু এইচআর টা কি জিনিস?" আমার দোস্ত কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করলো, "তুই কি আসলেই কোনো চাকরিতে জয়েন দিয়েছিস নাকি সারাদিন ঘুরে বাসায় ফিরে যাস?" ওর প্রশ্নে আমি কি জবাব দিব বুঝতে পারছি না! শুধু এটুকু বুঝলাম সে একটি মান-সম্মত প্রতিষ্ঠানে আছে আর আমি কোথায় আছি নিজেই জানি না!

কৌতূহল মন নিয়ে পরেরদিন সেই কলিগ রনিকে জিজ্ঞেস করলাম, "এইচআর কোথায় বসেন, উনাকে একদিনও দেখলাম না যে!"
তিনি তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে নোটপ্যাড এগিয়ে বললেন, "যা যা এই অফিসে দেখেন নি সেসব এখানে লিখেন!"
কাগজ কলম নিয়ে আবারও তাকালাম তার দিকে এবং তিনি বললেন, "আরে ফান না, সিরিয়াস ভাই!!"
আমি লিখলাম, "এইচআর, একাউন্টস, আইটি।" লিখে তাকে দিলাম এবং তিনি বললেন, "এসব কিছুই নেই.." স্যারের চেয়ারের দিকে ইশারা দিয়ে বললেন, "উনি এখানে একেকটা গাধা ম্যানুফ্যাকচার করেন যার প্রতিটাতেই ডিফেক্টে ভরপুর! এখনও বেতন ধরা হয় নি তো তাই জানেন না!!"
আমার মনে হইলো তিনি কোম্পানির উপর কোনো কারণে ক্ষেপে আছেন! আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন নাকি সতর্ক করিতেছেন উহা আমি সেই সময়কালে বুঝিতে পারি নি!


[চলবে...]

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৪১

এইচ এন নার্গিস বলেছেন: অভিজ্ঞতা টি খুব বাস্তবতা পুর্ন । আমার প্রথম দিনের কথা মনে পড়ছে । অবশ্য টা বিদেশের । তাই কিছুটা ভিন্ন। ভালো লাগলো ।

১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:২০

দর্পণের প্রতিবিম্ব বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

২| ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:২৮

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি যে অবস্থার ভেতর দিয়ে গেছেন, অসংখ্য যুবক এরপকম অবস্থার ভেতর দিয়ে গেছে।

১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:২০

দর্পণের প্রতিবিম্ব বলেছেন: জ্বি অবশ্যই, নতুন কিছু না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.