![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
করোনার সময়টা খুবই কষ্টের ছিল দেশের সিংহভাগ মানুষের জন্য। আব্বা সরকারি চাকরি করতেন বিধায় সেসময়ের লকডাউন আমাদের তেমন আঘাত করে নি। মাস শেষে বেতন ঠিকই এসেছে। কিন্তু এর বাহিরে যারা চাকরি করেন তাদের জীবন কেমন কেটেছে সেটা আমি নাই বলি। যাক সেসব কথা, একটা কঠিন সময় পেরিয়ে গেলে সেটার অনেকটা স্মৃতি আমরা ভুলে যাই। তো, আমার ঘটনায় ফেরা যাক।
পরেরদিন রাস্তায় বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। যতদূর চোখ যায় শুধু মানুষের মাথা! একটা বাস আসলেই তাতে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পরে! বাস কোন রুটের সেটা পরের কথা, আগে উঠতে হবে আর যতদুর যাওয়া যায়! বাসের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে অফিসের লেট কাউন্ট শুরু হয়ে গেল তবুও বাসে উঠতে পারলাম না! একটা নির্দিষ্ট সীমানা টার্গেট করে হাটা শুরু করলাম এবং হাটতে হাটতে দেখি গাবতলিগামী বাস থেকে একজন যাত্রী নেমে গেলেন। এই সুযোগে আমিও উঠে গেলাম এবং উঠেই দেখি আট জনের মত মানুষ দাঁড়ানো! তবে গাবতলি পর্যন্ত যেতে পারলাম না, আমিনবাজার এসে সমস্ত লোকাল বাস ঘুরিয়ে নিচ্ছে! মনে পরলো গতকালের নিউজ। যাই হোক বাস থেকে নেমে হাটা দিলাম পরের গন্তব্যের বাসের দিকে। প্রচুর মানুষ এভাবে হেটে হেটে করোনাকে মোকাবেলা করে নিজ নিজ কর্মস্থলে যাচ্ছেন যেটা শুধু পেরেশানি ছাড়া আর কিছু না! এভাবেই যদি করোনা মোকাবেলা করা লাগে তবে দুরপাল্লার বাসগুলো কি অপরাধ করেছে?
প্রায় দুই ঘন্টা লেটে অফিসে পৌছালাম। তবে আমি পূর্বেই জানিয়ে দিয়েছি লেট হবে যার ফলে কোনো কৈফিয়ত চায় নি অফিস। মানবতা নাকি বোধগম্যতা নাকি অন্যকিছুর কারণে জানতে চায় নি সে বিষয়ে মাথা ঘামাই নি।
আমি অফিসে পুরোপুরি চুপচাপ হয়ে গেলাম। কারণ ছাড়া কোনো কথা নয় এবং অজ্ঞাত কাজে নিজেকে মনোযোগী রাখার আপ্রাণ ব্যর্থ চেষ্টা। এদিকে খরচের সাথে পেরে উঠতে পারছি না তাই বাসা থেকে খাবার নেয়া শুরু করলাম। প্রতিদিনই দুপুরে বাইরের খাবার খাই। উহু, মাছ-মাংস না, সকালে অফিসে ঢুকার পূর্বে পরোটা আর সবজি কিনে সেটা দুপুরে গরম করে খেতাম। আমি যাদের নিয়ে মজা করতাম, যেমন রিক্সাওয়ালা বা দিনমজুর, বিশ্বাস করেন সেসব দিনের পর আমি তাদের নিয়ে মজা করা ছেড়ে দিয়েছি। আমার বুঝতে পেরেছি জীবন এমন কেন। এটাই সেই বাস্তবতা যা আমাদের সকলকে অক্ষরে অক্ষরে বুঝিয়ে দেয় জীবন কি! এভাবেই যাচ্ছিল সময়। লেট করে অফিসে ঢুকা এবং নির্দিষ্ট সময়ে অফিস থেকে বের হওয়া। একদিন সাইন করতে এসে সিনিয়র অ্যাকাউন্টস অফিসারের সাথে দেখা। তিনি ডেকে বললেন, "তুমি লেটে এসেছো না? এখন বের হচ্ছো যে?কয়টা বাজে?" প্রথমত এদের তো সহ্য হয়ই না এবং গতকাল আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কাউকে ছাড় দিয়ে কথা বলবো না, যা হওয়ার দেখা যাবে। তো তাকে বললাম, "যেদিন স্যালারি শীটে আমার নাম উঠবে সেদিন এই প্রশ্নটা করবেন, ঠিক আছে? এবং এখন সময় ৬:০৫ মিনিট!" তিনি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন এবং আমি বললাম, "আর কিছু জানবেন? আমার বাসা আছে, বাসায় যেতে হবে।"
উনি কি বলবেন বা ভাববেন সেসব আমি তোয়াক্কা করলাম না। ডেস্কে ব্যাগ গোছানোর সময় সেই ডোন্ট কেয়ার রনি ভাই এসে বললেন, "বাহ ভাই! আপনি তো লা জবাব উত্তর দিয়ে এলেন!" আমি বললাম, "যে যা ডিসার্ভ করে ভাই।"
উনি বললেন, "অফিসের সবচেয়ে জলি মানুষটাও আজ পুরানো রনি হয়েছে! একমাত্র আপনার সাথে তো এখন ভালভাবে কথা হয় আমার আর আপনিই আমার মত হয়ে গেলেন?" আমি মৃদু হেসে বললাম, "বের হবেন না? চলেন বের হই।"
ব্যস, আমি বুঝতে পেরেছি অফিস কালচার একজন মানুষকে কিভাবে প্রভাবিত করে। এই রনি প্রয়োজন ছাড়া কারো সাথে কথা বলতো না অথচ আমিই তাকে সেসব থেকে বাহিরে এনেছি! অথচ আজ আমিই তার স্থানে! রনি ভাইয়ের এই পরিবর্তন গতমাস থেকে লক্ষ করছি এবং উনি আমাকে অফিসের অনেক কিছু ভালভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন।
এভাবেই চলতে লাগলো কয়েক সপ্তাহে এবং শুরু হল রোজা। আমার শিডিউলে কোন পরিবর্তন এল না। রোজকার মত বাস পাল্টে তারপর হেটে অন্য বাসে অফিসে যাওয়া, লেট এন্ট্রি এবং টাইম মত বের হওয়া। সেদিনের সে জবাবের পর কোনো সিনিয়র আমার ধারে কাছে আসে নি বা ডাকে নি। সেই রিমোট কলিগের কথা আপনাদের হয়তো মনে আছে? যিনি সারাদিনই রোবটের মত কাজ করতেই থাকেন আর টাকা ইনকাম করতেই থাকেন?
হ্যাঁ, উনিই আবদেল এবং আজ আমাকে ডেকেছেন।
আমি গেলাম তার ডেস্কে এবং তিনি তার ভাষণ শুরু করলেন, "বাসায় গিয়ে কি করো?" আমি বললাম, "আড্ডা দিই, মা বাবা, ভাই বোন এদের সাথে।"
তিনি উপদেশ দিলেন, "এসব না করে তুমি স্কিল ডেভেলপ করলেই পারো! এই যেমন আমি, সারাদিন মার্কেট রিসার্চ করি, তারপর বিকেলে অফিসে আসি, ৮টা সাড়ে ৮টা পর্যন্ত কোডিং তারপর বাসায় গিয়ে দুইটা টিউশনিই করাই! কত কাজ একসাথে করি আর তুমি বাসায় ফাউ সময় নষ্ট কর!"
এসব শুনে মেজাজ আর কন্ট্রোলে রাখতে পারলাম না। চেয়ার টেনে বসে জিজ্ঞেস করলাম,
"ভাই কি এখানে মেস মানে রুম ভাড়া করে থাকেন?"
"হ্যা"
"আম্মা আব্বা আর ভাই বোন কি আছেন? আর আপনি কততম তাদের মাঝে?"
"আল্লাহর রহমতে তারা ভালই আছেন এবং ভাই বোনের মাঝে আমি মেজ।"
"মাশাল্লাহ! ভাই তো বিয়ে করেন নি?"
একটু হতাশ এড়িয়ে বললেন, "এইতো সামনের বছর করবো।" এবার আমি বললাম, "ভাই, আমি আপনার মত লাইফলেস কর্পোরেট মিডেলম্যান নই!"
"এক্সকিউজ মি!" "আহা, শোনেন। আমার মা বাবা ভাই বোন, তারা আমার প্রেরণা, আমার স্ট্রেন্থ। আপনার আপনার পরিজনদের প্রতি টান বা মায়া নাই থাকতে পারে কিংবা আপনি খুবই প্র্যাক্টিকাল মানুষ যার জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হল টাকা কামানো! আপনি যেই কাঠালের মোটিভ নিয়ে চলাচল করেন সেটা প্লিজ আমার মাথায় ভেঙে খাবেন না।"
"তুমি লিমিট ছারিয়ে যাচ্ছো, যেটা একদমই ভাল হবে না!"
উনার সতর্ক বার্তায় আমি বললাম, "আপনার জীবনে দুইটা কাজ। এক, টাকা কামানো এবং দ্বিতীয়টা অফিসের স্টাফদের কথাবার্তা এমডি স্যারের কানে পৌছে দেয়া। আপনাকে স্যার নিশ্চয়ই একাজের জন্য হায়ার করে নি?" উনি কিছু বলতে যাবেন আমি আবার বললাম, "এমডি স্যার সেদিন বললেন আপনার বয়স বর্তমানে ৩৩ বছর, সামনের বছর হবে ৩৪! চেহারার মাধুর্য আস্তে আস্তে বয়সের ছাপে ঢাকা পরছে তবুও আপনার আক্কেল হল না! তাই ভাই, সময় থাকতে ভাল হয়ে যান, বিয়ে করেন। নিজেও সুখে থাকেন এবং অন্যদেরও সুখে থাকতে দিন। এবার এই কথোপকথন আপনি চাইলে আপনার বসের কাছে নালিশ দিতে পারেন। আমি অবাক হবো না।"
আমি উঠে চলে এলাম। একজন ইন্টার্নের কাছে এমন সব কথা কেউই আশা করে না। কোনো মুভি হলে এসব শুনে হয়তো করতালি পেতাম কিংবা অফিসের বাকি স্টাফরাও হাততালি দিতেন। কিন্তু বাস্তবতা বলেই সবাই শুনে মিটিমিটি হাসছিল এবং আমি অনেকটা হালকা হলাম। এখন অপেক্ষায় আছি এমডি স্যারের দাওয়াতে। যেকোনো মুহুর্তে খবর আসবে আমাকে ডেকেছেন তিনি।
এন্ট্রি খাতায় সাইন করে বের হবো এমন সময় স্যারের পিএ এল আমার কাছে। আমিই তাকে জিজ্ঞেস করলাম, "কি, স্যার ডেকেছেন?"
সে অবাক হয়ে গেল এবং কিছু বলল না! আমি বললাম যাচ্ছি।
রুমে ঢুকতেই দেখি আবদেল ভাই আছেন। স্যার তাকে বললেন, "যাও কাজ করো।"
তিনি চলে গেলেন এবং স্যার আমাকে বললেন, "খুব ডেস্পারেট দেখাচ্ছে তোমায়? এত রাগ থাকলে হবে?" আমি খুব শান্তভাবে বললাম, "স্যার আমি রিজাইন দিবো। আমার কোনো ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে না।"
স্যার হেসে বললেন, "আরে বোকা ছেলে, ডেভেলপমেন্ট কি একদিনের বিষয়? করতে থাকো, দেখবা তুমিও শিখে গেছো! আর তোমার বেতন ধরেছি তো। সামনের মাস থেকে বেতন পাবে তুমি। তুমি আমার ম্যানপাওয়ারের একটা অংশ, কেন আমি আমার ম্যানপাওয়ার নষ্ট করবো?"
উনার সেসব কথা শুনে আমি জানালার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সূর্যটা কোনদিকে ডুবছে। শেষে তিনি বললেন, "এত অধৈর্য্য হইয়ো না, সাফল্য আসতে বাধ্য। বাসায় যাও আর কাল রেস্ট করো। তোমাকে একদিন ছুটি দিলাম। শনিবার আমার সাথে নরসিংদী এবং রবিবার এলজিইডির অফিসে যেতে হবে তোমাকে। নিজেকে গুছিয়ে নাও আস্তে আস্তে।"
"জ্বি স্যার, গেলাম আমি।" সালাম দিয়ে বের হয়ে গেলাম। অফিস থেকে বের হয়েই শার্টের ইন ছেড়ে দিলাম। বেতনের কাছে কিভাবে নত হয়ে গেলাম বুঝতেই পারলাম না! ছয় মাসের ইন্টার্নিশিপ কিভাবে নয় মাসে রুপ নিল সেটা আমি ধরতেই পারলাম না। সিদ্ধান্ত নিলাম নিজেকে দক্ষ করার। এখানে যা করছি সেটাতে নয়, ডিমান্ডিং কোনো স্কিলে নিজেকে দক্ষ করতে হবে।
চলবে...
১৮ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৫
দর্পণের প্রতিবিম্ব বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
২| ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:১৪
রাজীব নুর বলেছেন: জীবনের গল্প।
জীবনের গল্প গুলোই আসল গল্প। বাস্তব গল্প।
১৮ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:৪৯
দর্পণের প্রতিবিম্ব বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:০৭
রাজীব নুর বলেছেন: আমি নিজে দীর্ঘদিন বেকার ছিলাম।
২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১২
দর্পণের প্রতিবিম্ব বলেছেন: আমারও একই অবস্থা।
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১:২৭
এইচ এন নার্গিস বলেছেন: খুব ভালো লাগলো । জীবন নিয়ে গল্প যা বাস্তব।