নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইচ্ছামানুষ রনি

ইচ্ছামানুষ রনি

আমি চাই মানুষ বলতে মানুষ বুঝবে মানুষ শুধু।

ইচ্ছামানুষ রনি › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার আর অমিতের কাদের মোল্লার ফাঁসির দঁড়ি টেনে ময়মনসিংহের এক বিকেল।

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:২৫

১। দুপুরে একটা ফোন পেলাম। তখন তড়িঘড়ি করে শহীদ মিনারে যাবো বলে তৈরি হচ্ছি। একজন সিনিয়র ভাইয়ের ফোন। ফোন রাখার জন্য হাঁসফাঁস করতে দেখে জিজ্ঞাসাইলো, আমার ব্যস্ততা কিসের? বললাম, শহীদ মিনারে যাবো। ওপাশ থেকে বললো, 'এসব করে কিচ্ছু হবে না ভাই। ডাক্তারি পড়, এসব করার টাইম পাও কই? দেশ তোমারে কিছু দিছে? কী দিছে বলো তো।' একটা গালি চলে আসছিলো। দেইনি। সম্প্রতি হুট করে মাথা গরম করায় বেশ কয়েকবার বড়সড় মাশুল গুনতে হয়েছে, তাই চেপে গেলাম। রেখে দিলাম সাথে সাথেই। রুম থেকে বের হয়ে দু'বার থু: ফেললাম। আমি জানি ওই থুথুর সাথে কয়েকটা না বলা গালি মিশে ছিলো।



২। অমিতের সাথে যখন বাসে উঠেছি তখন অমিত ফেসবুক বের করে একটা ঘটনা বললো। ও ওর এক ফেসবুক বন্ধুর স্ট্যাটাসে কাদের মোল্লার ফাঁসি নিয়ে একটা কমেন্ট করায় নিচে একজন কমেন্ট লিখে গেছে অনেকটা এরকম, 'দেশে কত সমস্যা। আমিও চাই সব রাজাকারের বিচার হোক। তবে তার সাথে দূর্নীতিরও বিচার হতে হবে। এটাই দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা'। আমাকে লেখাটা দেখালো। বললো, 'রণি, লিখে দেই, যে তোর ব্রেইন অ্যাবসেস হলো আর আঙ্গুলে ইনফেকশন হলো, কোনটা আগে চিকিৎসা করবি?' বললাম, 'দরকার নেই লেখার। বাদ দে। ওয়াশ খেতে খেতে এদের ব্রেইনটাই পঁচে গেছে। রেডিওথেরাপিতেও কাজ হবে না'।



৩। শহীদ মিনারে পৌছুলাম ৩ টার একটু পরেই। অমিত ঢুকেই দাঁড়ি-পাঞ্জাবিওয়ালা এক লোককে শহীদ মিনারের এক কোনায় বসে থাকতে দেখে বলে, 'রণি, এই শালা শিবিরের, শিওর। সংবাদ ট্রান্সফার করার জন্যে বসে আছে'। বললাম, 'সব দাড়িওয়ালা শিবির না। চল'। জনা পঞ্চাশের মত ছিলো শুরুতে। তখন বেশ রোদ। আমি আর অমিত অন্যদের সাথে রোদে পোড়া কিছু স্লোগান আওড়ালাম। আস্তে আস্তে শ' খানেকের মত মানুষ আসলো। মাইকে মানুষ ডাকা হচ্ছিলো। বললাম, যার তাড়না আছে, যার রক্তে ঘৃণা, ক্রোধ আছে সে এমনিই আসবে। ডাকা লাগবে না। হঠাৎ অমিত দেখালো, গোটা দুয়েক মটর সাইকেলে কয়েকজন দাড়িওয়ালা-পাঞ্জাবি পরিহিত লোক শহীদ মিনারের পাশেই। মাইকে তখন স্লোগান চলছে, 'জামাত-শিবির-রাজাকার, এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়'।



৪। বিকেল গড়িয়ে সূর্য যখন প্রায় ঢুলু ঢুলু ভাব, আমি আর অমিত রোদ আর ধুলোয় মাখামাখি করে তৃপ্ত, তখন অমিতকে বললাম, 'চল, রাজাকার এম এ হান্নান আর নিজামির নামে যে দুটো পাবলিক টয়লেট হয়েছে ও দু'টোয় মুতে আসি'। অমিতের ওঠার ইচ্ছে ছিলো না, আমার জন্যে উঠলো। এবং আমরা সার্কিট হাউজ পার্কের টয়লেটে গিয়ে আবিষ্কার করলাম, রাজাকার নিজামী লেখাটা পোষ্টার লাগিয়ে প্রায় মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। এতো যায়গা থাকতে পাবলিক টয়লেটে পোষ্টার লাগানোর অর্থ আমরা বুঝে ফেলি। বুঝে ফেলি, লাখ মানুষের ময়মনসিংহে মাত্র ১০০-১৫০ মানুষ জড় হওয়ার উপাখ্যানও। কেউকে কেউ কিছু বলি না। শুধু মুখ চাওয়াচাওয়ি করি আমরা।



৫। ফিরে আসবো বলে বিদায় যখন নিয়ে নিয়ে দু'পথে চলা শুরু করেছি তখন অমিত ফোন দেয় আবার, 'রণি, অনেক মানুষ গাঙিনাপাড়ের একটা রাস্তা আটকে মোমবাতি আর মশাল জ্বালাইছে। জলদি আয়'। পিছু হাঁটি। এখানেও শ' খানেক মানুষ। অন্য আরেকটা গ্রুপ। মোমবাতি দিয়ে মাঝ রাস্তায় '৭১ লেখাটা দেখি। হাতে মশাল জ্বালিয়ে ছেলে-মেয়েদের গোল হয়ে দাঁড়ানো দেখি। একজন হেঁকে বলে যায়, 'বঙ্গবন্ধুর স্মরণে, ভয় করিনা মরণে। ক্ষুদিরামের স্মরণে, ভয় করিনা মরণে, সূর্যসেনের স্মরণে, ভয় করিনা মরণে, প্রীথিলতার স্মরণে, ভয় করিনা মরণে'। অথবা, 'মৌলোবাদের আস্তানা, ভেঙে দাও, গুড়িয়ে দাও। জামাত-শিবিরের আস্তানা, ভেঙে দাও, গুড়িয়ে দাও'। এরপর শুরু হয় গনসঙ্গীত। সবাই সুর করে গায়, 'মাগো, ভাবনা কেনো?' এগুলো রেখেই ফিরে আসতে হয়। মনে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খায়, '৭১ এর থেকে সুন্দর সংখ্যা কী বাংলাতে আছে?



৬। আসার পথে অটোরিকশায় বসে অমিতকে বলতে থাকি, 'আজ একটা রাস্তা ব্লক করেছে, কাল সারা বাংলাদেশের প্রায় সব রাস্তা ব্লক হবে। যে ছেলেরা এখানে এসেছে তাদের চোখের আগুনও ওই মশালের আগুনের থেকে ঢের বেশি।' পাশের লোকটা মৃদু ঠেলা দিয়ে নড়ে বসে। ওদিকে তাকাই প্রথম বারের মত। খেয়াল করি শিবিরের বেশ ধারী দুজন আমার দিকে বড় বড় চোখে চেয়ে আছে। অমিতও তাকায়। এরপর অন্য দিকে ফিরে হাসতেই থাকে। তারপর ফিরে ফিসফিস করে বলে, 'রণি, ওগো শুকায় গেছে।'



৭। আসার পথেও সিএনজিতে কথা চালাচালি হয়। এক বয়ষ্ক যাত্রী বলতে থাকে, 'বিচার নিয়ে সমস্যা হলে আদালতে যাক। রাস্তা-ঘাট বন্ধ করে তো মানুষের দূর্ভোগ বাড়াচ্ছে'। আরেকজন বলে, 'চেহারা দেখেননি, লাফাঙ্গা পোলাপান। এখন মাল খেয়ে মশাল ধরাইছে। রাত হলে এই মেয়ে গুলোকে নিয়ে ফুর্তি করবে। ভালো ফ্যামিলির মেয়েদের রাতে বেরোতে দেয়?' আরো কী কী যেন বলতে থাকে। কানে যায় না। মাথা ধরে থাকে। মাঝ পথে থামতে বলি সিএনজি। নেমে যাই। পায়ে স্ট্রেচ ফ্রাকচার নিয়েও এদিক ওদিক হাঁটাহাঁটি করি সিএনজির জন্য। পা ব্যথা করে। এতক্ষণ ধরে কানের কষ্টের থেকে তবু পায়ের ব্যথা কম অনুভূত হয়।



৮। শাহবাগ দেখে যত আশান্বিত হই, ময়মনসিংহের মানুষ দেখে সে আশা ততটুকুই চুপসে যায়। মাত্র ৫ বছর ক্ষমতায় থেকে জামাত-শিবির একটা জেনারেশনের ব্রেইন স্রেফ উইপোকার মত খেয়ে দিয়েছে বলে মনে হতে থাকে। খুব কষ্ট নিয়ে কী-প্যাড টিপি। কষ্ট হালকা করার বৃথা চেষ্টা করে যাই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.