নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুক্ত আকাশ

এমএইচ রনি১৯৭১

আমি মার্কসীয় সমাজতান্ত্রিক আর্দশে বিশ্বাসী একজন মানুষ ।

এমএইচ রনি১৯৭১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অধরাই থেকে গেলে তুমি

২৫ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:২০

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যে প্রেম এসেছিলো তার পরিনতি কি হয়েছিলো , ইনবক্সে অনেকেই তা জানতে চেয়েছেন । সময়াভাবে তা লিখতেও পারিনি। কাউকে কাউকে কথাচ্ছলে সেই কাহিনী বলেছিও । লিখতে ইচ্ছে করে না ,তারপরেও পীড়াপীড়িতে লিখছি ।
কানিজ ছিলো আমার ক্লাসমেট। রাস্ট্রবিজ্ঞানে একসাথেই মাস্টার্স করেছি । আবার ভাষা ইনস্টিটিউটে জার্মান ভাষার উপর দুজনেই ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হয়েছিলাম । এই সময়টাতে আমাদের সম্পর্ক গড়ে উঠে। ভালোলাগা থেকে ভালোবাসার জন্ম । দীর্ঘ চারবছরের সম্পর্ক ।কত গল্প , কত স্মৃতি জমে আছে হৃদয়ের পটে !
এবার বলি আমাদের শেষ দেখা ও বিয়োগান্তর ঘটনা।
১৯৯৯সালের কোরবানীর ঈদের তিনদিন আগে হঠাত একদিন রাতে আমার সেবা টেলিকমে কানিজের ফোন ।
- আমরা বিয়ে করবো । তুমি দ্রুত রেডি করো ।
খানিকটা চুপ থেকে বললাম , ওকে ।
আমার তখন প্রিন্টিং ও গার্মেন্টস এক্সেসোরিজের ব্যবসা। ঈদের আগে ব্যাংক বন্ধ ।আমার হাতে চলার মতন টাকা আছে ,তাও হাজার চল্লিশেক টাকা হবে।। হঠাত পালিয়ে বিয়ের সিদ্ধান্তে রাজি হয়ে মুশকিলেই পরে গেলাম ।এ সময় কোথায় টাকা পাই ?
টাকার জোগাড় করতে সোজা চলে যাই মিশন পাড়ায় আমার বন্ধু সজিবের বাসায় । সজিব আমাদের সম্পর্কের আগাগোড়া সবই জানতো । কিছু বলার আগেই সজীব আমার চেহারা দেখে আঁচ করতে পারে ,কিছু একটা সমস্যায় আমি আছি । বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট খেতে খেতে সব খুলে বলতেই সজিব হো হো হো করে হাসে।
- এটা কোন সমস্যা না রে বন্ধু । টাকা আমি দিচ্ছি ।তুই কানিজকে নিয়ে সোজা টাংগাইল আমার বাসায় গিয়ে উঠবি । যতোদিন ইচ্ছে থাকবি । পুলিশ বা অন্য কেউ তোর ......ছিড়তে পারবে না। মুরাদ সিদ্দীকি তোরে শেল্টার দিবে।
আমি জানি টাংগাইল একবার যেতে পারলে কারো সাধ্য নেই আমাকে সিদ্দী্কি পরিবারের আশ্রয় থেকে টেনে বের করবে ।
সজিব আমার হাতে ত্রিশ হাজার টাকা তুলে দেয় ।
- তুই পরশু কানিজকে নিয়ে সোজা টাঙ্গাইল চলে আয় । আমিও থাকবো । বিয়ে শাদী সেখানেই হবে।
আমি বাসায় ফিরে সজীব ও আমার টাকা পয়সা মিলিয়ে প্রায় একলক্ষ টাকার ব্যবস্থা করে ফেলি। টাকার সমস্যার সমাধান হবার পর রাতেই আবার কানিজের সাথে কথা বলে ঠিক করে ফেলি । আমরা কোথায় দেখা করবো ,কিভাবে কোথায় যাবো।
ঈদের ঠিক আগের দিন আমি খুব ভোরে বেইলী রোডের স্টারডাস্টের সামনে দাঁড়িয়ে থাকি । সকাল সাড়ে সাতটায় কানিজ ওর ছোটখালার বাসা সিদ্ধেশ্বরী থেকে আসবে । গতরাতে কানিজ ধানমন্ডির বাসা ছেড়ে এ বাসায় এসেছে বাবা ও বড় ভাইয়ের সাথে রাগ করে । গত বেশ কিছুদিন যাবত আমাদের সম্পর্ক নিয়ে কানিজের বাসায় চরম উত্তেজনা চলছে।
যাহোক আমি খুব টেনশন নিয়ে স্টার ডাস্টের সামনে পায়চারি করি । সিগারেট খাই। সুনসান নিরবতা বেইলী রোডে । এতো ভোরে কোন গাড়ি নেই । এমনকি কোন রিক্সাও নেই । ঈদের ছুটি বলেই পুরো ঢাকাই যেন খালি হয়ে গেছে ।
মোবাইলে সময় দেখি । সকাল সাতটা বাজে । আর আধা ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে । সময় কিছুতেই যেন কাটে না। আমি হেটে হেটে একবার ভিকারুননেসা স্কুল পর্যন্ত যাই । আবার হেটে স্টারডাস্ট পর্যন্ত আসি । চোখ থাকে হঠাত আসা কোন রিক্সার যাত্রীর দিকে ।
কিন্তু কানিজের দেখা মেলে না।
আমার অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ হতে থাকে।
সময় গড়িয়ে প্রতীক্ষিত সকাল সাড়ে সাত টা বাজে।
কানিজ আসে না।
আমার পায়চারী বেড়ে যায় । ঘন ঘন সিগারেট টানি ।
সকাল আটটা বাজে ।
তাও কানিজের দেখা মেলে না। আমার অস্থিরতা চরমে । অজানা আশংকা বুকের মধ্যে বাসা বাঁধে । বাসায় আবার কিছু হলো নাতো?
কাল বিকেল থেকে ওর হাতে মোবাইল নেই । বাসায় সেটা সীজ করা হয়েছে। কোন মাধ্যম নেই যে যোগাযোগ করবো ।তারপরও আমি অপেক্ষায় থাকি ,কানিজ আসবেই।
সব প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে কানিজ আসে সকাল পৌনে নটায় । মুখ কালো ও গম্ভীর । ইশারায় আমাকে দ্রুত রিক্সায় ঊঠতে বলে। রিক্সায় উঠে খেয়াল করি কানিজের সাথে কোন ব্যাগ বা ল্যাগেজ জাতীয় কিছু নেই । কথা তো ছিলো অন্যরকম ।কানিজ বাড়ি ছেড়ে আসার সময় কিছু কাপড় নিয়ে আসবে বলেছিলো । এখন দেখি কিছুই আনেনি ।
কোন দুর্ঘটনা বা অন্য কিছু হয়নি তো?
আমি জানি না তখনো ,গতরাত থেকে কানিজের উপর কি ঝড় গিয়েছে।
জানি না কিভাবে সে খালার বাসা থেকে বের হয়ে এসেছে ?
আমাদের রিক্সা চলতে থাকে । মহিলা সমিতির সামনে আসতে কানিজ তার ডান হাতে আমার বা হাত শক্ত করে ধরে বলে , আমাকে ছেড়ে যাবে নাতো ?
আমি মুহুর্তকাল চুপ থেকে বলি ,আমাদের এখানে আসা নিশ্চয়ই ছেড়ে যাবার জন্য নয়?
ভিকারুননেসা স্কুলের সামনে রিক্সা বাঁক নিতে হঠাত দুইটি প্রাইভেট কার আমাদের রিক্সার গতিরোধ করে । দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে আসে কানিজের বাবা,খালু, বড় ভাই ও ছোটভাই । আমরা কিছু বুঝে উঠার আগেই কানিজের বড়ভাই এক ঝটকায় কানিজকে নামিয়ে টেনে হিঁচড়ে একটা সাদা কারে তুলে ফেলে । কানিজের চিৎকার ও কান্নার শব্দ ছাপিয়ে সেই গাড়িতে তার বাবা ও খালু নিমিষেই হাওয়া হয়ে যায় । পুরো ঘটনাটি ঘটতে মাত্র ত্রিশ সেকেন্ডেরও কম সময় লেগেছে । আমি নির্বাক ও হতভম্ব দর্শক হয়ে রইলাম পুরো ঘটনার ।
একই সময় রমনা থানার একটা পুলিশ ভ্যান এসে থামে আমাদের সামনে ।
কানিজের বড় ভাই আমার সামনে দাঁড়িয়ে । রুঢ় গলায় বলতে থাকে , তোমাকে বহুবার সরে যেতে বলা হয়েছে । তা তুমি করোনি। আজ যা করছিলে তার পরিনতি তোমার জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না। আমার পরিবারের সম্মানের দিকে তাকিয়ে এতোদিন তোমার কিছুই করিনি ।
পুলিশের একজন সাব ইন্সপেক্টর এগিয়ে আসতে কানিজের বড়ভাই তাকে নিয়ে একটু আড়ালে কথা বলে। আমি তখনো রিক্সায় বসা। বুঝতে পারছিলাম না, কি করা উচিত আমার ?
এক মিনিট পরেই কানিজের বড়ভাই ও ছোটভাই তাদের গাড়িতে ঊঠে চলে যান ।
আমার সামনে তখন সাব ইন্সপেকটর সহ আরো ৩ জন পুলিশ। সাব ইন্সপেক্টর আক্তার আমাকে রিক্সা থেকে নেমে পুলিশ ভ্যানে উঠতে বলেন ।
আমি কোন কথা বাড়াই না। ভদ্র ছেলের মতন ভ্যানে উঠে পড়ি ।
আমি জানি ,আমি কোন অন্যায় করিনি । তাই রমনা থানায় যেতে আমার কোন ভয় ডর কাজ করছিল না। থানায় ডিঊটি অফিসা্রের রুমে ঢুকেই দেখি সমীর দারোগা। তাকে আমি আগে থেকেই চিনতাম । তিনি একসময় নারায়নগঞ্জ ছিলেন । তখন আমি ছাত্র রাজনীতি করি । তাই নানান কারনেই তার সাথে আমার বহুবার দেখা হয়েছে । তিনি আমাকে দেখে বললেন ,আরে সাত সকালে আপনি রমনা থানায় কেন ভাই ?
আমি কোন উত্তর দেয়ার আগে আক্তার দারোগা বললেন , প্রেমের দিওয়ানা । মজনু হতে চাইছিলো । হাতেনাতে ধরা ।
আমি চুপ।
সমীর দারোগা তার সহকর্মীকে উদ্দেশ্য করে বললেন , আক্তারভাই আপনি উনাকে চিনেন নাই? নারায়নগঞ্জে ছাত্র রাজনীতি করে । আপনার তো রনিকে দেখার কথা।জিএম ফারুকের দল করে ।
এবার আক্তার দারোগা ভালো করে আমাকে দেখেন।
তাইতো ভাবছিলাম কোথায় যেন দেখেছি ।
আমিও ভাল করে লক্ষ্য করি ,আরে এ্তো আমাদের আক্তার ভাই । নারায়ণগঞ্জ থানায় ছিলেন । চাষাড়ায় বহুবার দেখা হয়েছে এসপি মালিক খসরু চাচার অফিসে।
সমীর দারোগা পুরো ঘটনা শুনে বললেন , রনি , এসব ক্ষেত্রে মেয়ে পক্ষ মামলা করবে না। কারন এরা সম্মানকে ভয় পায় । আপনাকে আমি ছেড়ে দিচ্ছি ,যদিও ওদের তরফ থেকে অনুরোধ ছিলো অন্যকোন মামলায় ঝুলিয়ে দেয়ার । আপনার একটা মুচলেকা রেখে ছেড়ে দিচ্ছি ।
রমনা থানায় পরিচিত দারোগা এবং এরকম ব্যবহার পাবো আমার কল্পনায় ছিলো না। যাহোক আধাঘন্টার মধ্যেই আমি থানা ছেড়ে চলে আসি ।
এরপরের ঘটনা জানতে পারি মাসখানেক পর লিপি আপার কাছে। প্রভাবশালীমন্ত্রী মামার প্রভাবে দ্রুত কানিজকে কানাডা পাঠিয়ে দেয়া হয়। আমার সাথে কানিজের সেটাই ছিলো শেষ দেখা ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ২:১১

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: দীর্ঘশ্বাস

২৫ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ২:১৭

এমএইচ রনি১৯৭১ বলেছেন: X(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.