নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যা মনে আসে তাই লিখি।

স্বর্ণবন্ধন

একজন শখের লেখক। তাই সাহিত্যগত কোন ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

স্বর্ণবন্ধন › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রেসিডেন্টের মন ভালো নেই!

২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:০১


১৮৬০ সালে আমেরিকার ইলিনয়ে রিপাবলিকান পার্টির কনভেনশনে যখন আব্রাহাম লিংকনকে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য মনোনয়ন দেয়া হলো, তখন সভাস্থল উল্লাসে ফেটে পড়েছিলো। উল্লসিত জনতা শূন্যে ছুড়ে দিচ্ছিলো তাদের হ্যাট, বিয়ারের ক্যান! কিন্ত যাকে নিয়ে এতো উল্লাস, সেই দীর্ঘদেহী মানুষটির মুখে কোন বিজয় বা আনন্দের ছাপ ছিলোনা; দেখে মনে হচ্ছিলো চরমভাবে বিদ্ধ্বস্ত এক মানুষ! তিনি হলরূমের এককোণায় মাথা নীচু করে, সামনে ঝুঁকে হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বসে ছিলেন আর বিড়বিড় করে বলছিলেন-“আমি ভালো নেই!” এটা এমন একজনের গল্প, যিনি ছিলেন একইসাথে বিষণ্ণ কিন্তু মানব ইতিহাসের অন্যতম শক্তিমান একজন মানুষ! আব্রাহাম লিংকন, আমেরিকার ষোড়শ প্রেসিডেন্ট, ১২ই ফেব্রুয়ারী ১৮০৯ সালে কেনটাকিতে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি সারা জীবন বিষণ্ণতার সাথে যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছিলেন। বিষণ্ণতার অধ্যায় বারংবার তার জীবনে হানা দিয়েছে, তারমধ্যেই পড়াশুনা, আইনজীবী হিসেবে পেশাগত কাজ ও সংসারকেও সামলে নিয়েছিলেন! কিন্তু তিনি কখনোই উৎফুল্ল মেজাজের মানুষ ছিলেননা। তবু পাড়ি দিয়েছিলেন অনেক লম্বা পথ। গরীব ঘরের সন্তান, যিনি কিনা পড়াশুনার সুযোগ ও ভালোমতো পাননি, সব বাঁধা সামলে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন! মাত্র নয় বছর বয়সে তার মায়ের মৃত্যুর পর বাবা থমাস লিংকনের দ্বিতীয় বার বিয়ে করেন। এরপর থেকে বাবার সাথে তার সম্পর্ক ক্রমশ খারাপ হতে থাকে। থমাসের শারীরিক স্বাস্থ্য ও দৃষ্টিশক্তি যখন ধীরে ধীরে খারাপ হয়ে পড়ছিলো, তিনি ফার্মে ও প্রতিবেশীদের কাজ করে দিতে আব্রাহামকে বাধ্য করতেন, যাতে করে টাকা উপার্জন হয়। এই প্রসঙ্গে বার্লিনগেম লিখেছেন- “বাবার সাথে আব্রাহামের সম্পর্ক ভৃত্য ও প্রভুর মতো ছিলো!” আব্রাহাম সবসময় অপেক্ষা করতেন, কখন বড় হবেন আর বাবার থেকে অনেক দূরে চলে যেতে পারবেন! তিনি তার নোটবুকে লিখেছিলেন- “Abraham Lincoln, his hand and pen, he will be good but, God knows when!!”সম্ভবত পিতা-পুত্র দুজনেই দুজনকে বুঝতে পারতেন না! থমাস আব্রাহামের জ্ঞানতৃষ্ণাকে বুঝতে চাইতেন না আর আব্রাহাম বুঝতে চাইতেন না বাবার সংগ্রামকে। এমনকি থমাস যখন মৃত্যুশয্যায় আব্রাহাম তার সৎভাইকে চিঠি মারফত জানিয়েছিলেন- এটা নিশ্চিত নয় যে যদি বাবার সাথে দেখা হয়, সেটা তার বাবার জন্য সুখের হবে নাকি কষ্টের! এমনকি বাবার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতেও তিনি অনুপস্থিত ছিলেন! হতে পারে মিডলাইফ ক্রাইসিস এবং বিষণ্ণতার কারণেও এমনটা করে থাকতে পারেন!
লিংকনের শরীরের গঠনপ্রকৃতি যেমন তার জীবদ্দশাতেই মানুষের আগ্রহের বিষয় ছিল, তেমন তার জন্মের দুইশত বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও আজো মেডিকেল রিসার্চারদের জন্য অমীমাংসিত গবেষণার বিষয় হয়েই আছে! আনুমানিক ছয় ফুট চার ইঞ্চি উচ্চতার অনেক লম্বা মানুষটির ওজন প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ছিলো মাত্র ৮১.৫ কিলোগ্রাম। তার প্রতিবেশীরা আড়ালে আবডালে তাকে নিয়ে মজা করে বলতেন-“পাটকাঠির মতো সরূ আর কাকতাড়ুয়ার মতো কুৎসিত!” একসময় গবেষকরা ভাবতেন তিনি সম্ভবত মারফান সিনড্রোমের রোগী ছিলেন! কিন্তু পরবর্তীতে এই দাবির স্বপক্ষ্যে কোন প্রমাণ হাজির করা সম্ভব হয়নি। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তার হয়তো বংশগত ভাবে MEN2B Syndrome ছিলো! উঁচু শরীর, লম্বা হাত পা, পুরুষ্ঠ ঠোঁট, শিথিল মাংসপেশী, কোষ্ঠকাঠিন্য, তিন সন্তানেরই অকাল মৃত্যু হওয়া, অপ্রতিসম মুখ, চওড়া চোয়াল, ঢুলে থাকা চোখের পাতা সবকিছু এরকমই সাক্ষ্য দেয়!

কথিত আছে আব্রাহাম লিংকন বাড়ী ছেড়ে নিউ সালেম যাওয়ার পর প্রথম সত্যিকারের প্রেমে পড়েন অ্যান রুটলেজের সাথে। সম্পর্ক চূড়ান্ত পরিণতি পাবার আগেই রুটলেজ মারা যান সম্ভবত টাইফয়েড জ্বরে। এই ঘটনায় হতবিহ্বল লিংকন ভেংগে পড়েছিলেন পুরোদমেই। নিঃসঙ্গ থাকতেন, পুরানো বন্ধুদের এড়িয়ে চলতেন! হাতে বন্দুক নিয়ে উদ্ভ্রান্তের মতো গভীর জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতেন! অবস্থাটা এমন মনে হচ্ছিলো যে, তিনি হয়তো আত্মহত্যা করে ফেলতে পারেন! হতে পারে এটা তার ডিপ্রেসিভ এপিসোড ছিলো। এর সাড়ে পাঁচ বছর তিনি একইরকম উপসর্গে পুনরায় আক্রান্ত হয়েছিলেন! বারবার ফিরে এসেছিলো ওইসব নীল দিনগুলি। ধারণা করা হয় "The Suicide's Soliloquy" নামের এক কবিতায় তখন লিখেছিলেন-
“জানবেনা কেউই এই পরিণতি আমার! / কোথায় ছড়িয়ে শরীরের অবশিষ্ট ছাই, / যদিনা ক্ষুধার্ত জন্তুরা টেনে আনে হাড়গোড়! / অথবা কাকদের চিৎকার তোমাদের জানায়!” ( ভাবানুবাদ)

তিনি পরবর্তীতে ম্যারী টড এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ও চার সন্তানের বাবা হন, যাদের মধ্যে তিন জনেরই অকালমৃত্যু হয়! লিংকন তার সন্তানদের অত্যধিক স্নেহ করতেন, কখনো তার প্রশ্রয়ে তাদের দুষ্টামি মাত্রা ছাড়া পর্যায়ে চলে যেতো। নিজের শৈশবের দুঃসহ অভিজ্ঞতা থেকে তিনি সম্ভবত তার সন্তানদের কখনো কষ্ট দিতে চাইতেন না! তাদের অকালমৃত্যু আজীবনের জন্য তাকে বিষন্ন করে ফেলেছিলো! হোয়াইট হাউসে মেলানকোলিয়া ছড়িয়ে পড়েছিলো তখন!
ব্যক্তিজীবনের পাশাপাশি রাজনৈতিক জীবনেও অদৃষ্টবাদী ছিলেন লিংকন। তার দর্শন ও ব্যক্তিগত বিষন্নতা তাকে এটা ভাবতে বাধ্য করতো যে তিনি হয়তো মরে যাবেন, অথবা খুন হয়ে যাবেন! আবার সাথে এই বিশ্বাসও ছিলো যে তিনি অনেক বড় কিছু করার জন্য জন্ম নিয়েছিলেন! এবং তাকে তা করতেই হতো! এই দুই বিপরীতমুখী বিশ্বাসের ফলাফল হিসেবেই সম্ভবত ইতিহাসের অন্যতম শক্তিশালী নেতায় পরিণত হয়েছিলেন তিনি। ১৮৪৯ সালে রাজনীতি ছেড়ে চলে আসলেও ক্যানসাস নেব্রাস্কা চুক্তি প্রেইরীতে দাসত্ব প্রথাকে পুনর্বহাল করলে তার প্রতিবাদে ১৮৫৪ সালে আবার রাজনীতিতে ফিরে এসেছিলেন! দাসত্ব প্রথার বিরোধিতা করায় তিনি একইসাথে কট্টর রিপাবলিকান, ডেমোক্রেট ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের চক্ষূশূলে পরিণত হয়েছিলেন। তিনি আমেরিকার রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে তার দেশের অখণ্ডতা রক্ষা করেছিলেন ও সাংবিধানিক ভাবে অমানবিক দাসত্ব প্রথাকে বিলুপ্ত করেছিলেন। তবে মানসিক ভাবে অনেকগুলো পরস্পর বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য কাজ করতো তার ভিতর। দূর্বলতা ও শক্তিমত্তা, সংশয় ও আত্মবিশ্বাস, নৈতিক মূল্যবোধ ও সিদ্ধান্তহীনতা সামগ্রিকভাবে তার রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতো! এই চিন্তাপ্রক্রিয়া গুলোর প্রতিফলন হিসেবেই লিংকন আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে দুর্যোগপূর্ণ অধ্যায়ে সফলতম প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। শৈশবকালে এবং বড় হওয়ার পরেও লিংকনকে পারিবারিক জীবনে এবং ব্যক্তিজীবনে এতো বেশি বিয়োগান্তক ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছিলো, যে তিনি আজন্ম বিষণ্ণ হয়ে পড়েছিলেন। আর এই বিষণ্ণতাই তাকে সৃষ্টিশীল প্রতিভাবান মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছিলো, যিনি কিনা কোন সংঘাতময় পরিস্থিতির দুইদিকই খুব ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারতেন। এই অভূতপূর্ব গুণ এমনকি এখনকার অনেক নেতৃস্থানীয় মানুষের মধ্যেও দেখা যায়না। আর এটাই গৃহযুদ্ধের সংকটকালে লিংকনকে সামরিকভাবে নৈতিকভাবে বিজয়ী হতে সাহায্য করেছিলো!

পরিচিত সব লোকজনেরা জানতো মিস্টার প্রেসিডেন্টের সর্বগ্রাসী এই বিষণ্নতার কথা। মাঝেমধ্যে ভরা মজলিসে কারণ ছাড়াই কাঁদতে শুরু করতেন, কখনো আবার কবিতা আবৃত্তি শুরু করতেন। তিনি নিজের মন ভালো রাখতে খুব গুরুগম্ভীর আলোচনার ভিতরে বেমানান ঠাট্টা তামাশা করতেন, ব্যঙ্গ রসাত্মক গল্প শুরু করতেন, একাই হাসতেন! সবাই বিহ্বল হয়ে বোঝার চেষ্টা করতো তার এই আচরণ! বাঁচার জন্য তার এই হাসির খুব দরকার হতো। নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্যই এসব করতেন হয়তো। আসলে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে বর্ণিত ডায়াগোনস্টিক ক্রাইটেরিয়ায় ফেললে বলতে হবে ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতায় ভুগছিলেন তিনি! মনের ভিতরের বিষণ্ণতা যখন তাকে ক্ষতবিক্ষত করছিলো, তখন বাঁচার আপ্রাণ সংগ্রাম করতে গিয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন অসম্ভব দক্ষ ও কুশলী! ডিপ্রেশনের সুতীক্ষ খোঁচাকে নিজের শক্তিতে পরিণত করেছিলেন। যদিও সবসময় কিছু নেগেটিভ চিন্তা তার মধ্যে কাজ করতো, যেমন- তিনি মারা যাবেন অথবা তাকে মেরে ফেলা হবে! জনশ্রুতি মতে, তিনি একদিন স্বপ্ন দেখলেন হোয়াইট হাউসের করিডোরে, দরোজার আড়ালে কারা যেন কাঁদছে! একটা মৃতদেহকে কফিনে নিয়ে গার্ড অফ অনার দিচ্ছে প্রহরীরা; মৃতদেহটি আর কারো নয়, স্বয়ং প্রেসিডেন্টের! কিছুদিন পর ১৮৬৫ সালের ১৪ এপ্রিল, ফোর্ড থিয়েটারে অভিনয় দেখার সময়, আততায়ী জন উইল্কিস বুথ এর হাতে খুন হন আব্রাহাম লিংকন।
ছবিঃ ইন্টারনেট।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:২১

রাজীব নুর বলেছেন: বেশ কিছু তথ্য দিয়েছেন। আমার মনে হচ্ছে তথ্য আপনার মনগড়া।

২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:২৭

স্বর্ণবন্ধন বলেছেন: কেন বলুন তো? যেসব নিয়ে সংশয় আছে সেগুলো আমি নির্দেশ করে দিয়েছি। কোন কোন বিষয় আপনার মনগড়া মনে হয়েছে?

২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:৩৩

স্বর্ণবন্ধন বলেছেন: খোদ আমেরিকায় হাজার হাজার পাতার গবেষণা হয়েছে এটার উপর! আমি শুধু সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেছি! কাওকে নিয়ে মনগড়া লিখছি, এটা অনেক বড় অভিযোগ! আমি বলেই দিয়েছি, অনেক কিছুই কথিত বা জনশ্রুতি! Lincoln had great depression, এটা নিয়ে সন্দেহ নাই!

২| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:৩৭

শের শায়রী বলেছেন: দারুন পোষ্ট। পোষ্টে ভালো লাগা। উনি যে এত বিষন্ন ছিলেন জানা ছিলনা। পোষ্টে যদি লিনক বা তথ্য সুত্র উল্লেখ্য করতেন তবে কোন প্রশ্ন আসে না। আর শেষের ব্যাপারটামানে মৃত্যু নিয়ে যে ব্যাপারটা লিখছেন ওটা কয়েক জায়গায় পড়ছ।

২৪ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:৫৯

স্বর্ণবন্ধন বলেছেন: আপনার মতামত পেয়ে খুশি হলাম। এরপর থেকে অবশ্যই এ ধরনের লিখা গুলিতে লিংক সংযুক্ত করে দিবো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.