নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যা মনে আসে তাই লিখি।

স্বর্ণবন্ধন

একজন শখের লেখক। তাই সাহিত্যগত কোন ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

স্বর্ণবন্ধন › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ লকড ডোর

২৬ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:০৩



রান্নাঘর থেকে রত্না গলা ফাটিয়ে চেঁচাচ্ছে-‘কি হলো! দুইটা বাজে গোসলে যাও!’ এরকম চেঁচামেচি সারাদিনই চলে, তাই গাঁয়ে মাখাই না আর। অবশ্য শোনার মতো অবসর ও ছিলনা বিগত পাঁচ বছর, সময় পার হয়েছে হয় ফাইল ঘেঁটে নয় হাই রিজোলিউশন মনিটরে চোখ রেখে। আর মাঝে মাঝে মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের আয়েশা মেয়েটার সাথে গল্প করে, বন্ধুত্বের মোড়কে নিঃসঙ্গতার ক্ষতকে যত্ন করা, এইতো আধুনিক জীবন! রত্নাকে সত্যি এভাবে লক্ষ্য করা হয়নি বিয়ের পর! সারাদিন এমনভাবে তদারকি করছে যেন আমি একটা কিন্ডারগার্টেনের বাচ্চা! পত্রিকার পাতা ছেড়ে প্যান্ডেমিক যখন এই দেশে ঢুকে পড়লো, তখন হঠাত সবাইকে মৃত্যু ভয় পেয়ে বসলে, শুরু হয়েছিল এই লক ডাউনের কাল। প্রথম প্রথম যদিও কয়েকদিন দমবন্ধ লাগছিল, এখন বেশ লাগছে, সংসারটাই তো করা হলোনা এখনো ভালো করে! এই নিত্যদিনের হাসি কান্না ঝগড়া আর অভিমানের খেলাও যে জীবনের জন্য বড় বেশি দরকারি প্রথম বুঝলাম, বিয়ের দীর্ঘ পাঁচ বছর পর!
রান্নাঘর থেকে ঝাঁঝালো গন্ধ আসছে। লকডাউনের এই সময় রত্নার সারাদিন পার হয় আমার জন্য কোন না কোন নতুন আইটেমের খাবার রান্নার কাজে, সামনের মোবাইলে ইউটিউবের রন্ধন বিষয়ক চ্যানেলের ধারাভাষ্যের কখনো সফল আবার কখনো ব্যর্থ অনুকরণে! এক লাফে বিছানা ছেড়ে রান্নাঘরের দিকে আগালাম। এক অনির্বচনীয় শান্তিতে ভরা মুখ নিয়ে এলোচুলে গ্যাসের চুলার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তার সৌন্দর্য আগে খেয়াল করিনি ভাবতেই নিজের উপর রাগ হলো! চুপ করে গিয়ে আলতো করে জড়িয়ে ধরতেই হেসে বলল-‘আজকে নুডলস খুব স্বাদের হবে! রঙটা দেখো!’ সত্যিই সুন্দর রত্না! রান্নার স্বাদ কি আর সবসময় স্বাদের উপর নির্ভর করে, রাঁধুনির বুক উজাড় করা স্নেহের উপরও নির্ভর করে। রান্নাঘরের জানালার সামনের আকাশে মেঘ জমছে, ঝড়ো হাওয়া ঝাপটা দিচ্ছে মুখে, ভারী বৃষ্টি হবে, তারই আভাস!
আনমনে বললাম-‘কি অদ্ভুত ব্যাপার দেখো রত্না! পাঁচ বছর হয়ে গেলো বিয়ের, অথচ কেউ কারো মনের খবর রাখিনা আজো, কি ভাল লাগা! কি কষ্ট! কিছুর খবর নেবার সময়ই হলোনা!’
রত্না থমকানো বাতাসের মতো একমুহূর্তে থেমে বলল-‘শোন আমাদের মন হলো একটা দুই পাশে তালা দেওয়া দরোজার মতোন, একপাশের চাবি তোমার কাছে, আরেক পাশের চাবি আমার কাছে, খুলতে হলে তো দুজনের একসাথেই খুলতে হবে!’
'ওরে বাপ! এতো কঠিন দার্শনিক কথা কোথায় থেকে শিখলে?’
‘আরে সব শিখতে হয় নাকি, কিছুতো জীবন থেকেও নিতে হয় নাকি!’ এই বলে আমার গালে জোরে টিপে দিয়ে খিলখিল করে দুষ্টামির হাসি হেসে দিল। কি অদ্ভুত সুন্দর হাসি!
বললাম- ‘বৃষ্টিতে বারান্দায় বসে গল্প করবে, মনের দরোজাটা বহুদিন খোলা হয় না! যাবে বারান্দায়?’
তোমাকে তো দেখি বিদ্যাপতিতে পেয়েছে! নাকি কালিদাসে ভর করেছে! বলেই আবার হেসে দিল সে!
-‘আচ্ছা, তুমি গোসল করে এসো আমি বারান্দায় প্লাস্টিকের চেয়ার দুটো নিয়ে যাচ্ছি কেমন। আর একটা কফি বানাই, ঠান্ডা বৃষ্টিতে কফি খেতে খেতে গল্প করব! আজকাল বেশি বেলায় পানি থাকেনা, তাড়াতাড়ি যাও!’ বলে তাড়া দিল সে!
গলায় তোয়ালে জড়িয়ে বাথরুমে ঢোকার সময় স্মার্টফোনটাও সাথে নিলাম! আয়েশার সাথে কথোপকথনের কাহিনীটা আজ থেকেই শেষ করে দিব! মেসেঞ্জার, হোয়াটস আপ, যেখানে যেটুকু আছে রেশ। এমনিতেই আমি তেমন কিছু রাখিনা, তারপরও যেটুকু আছে নিশ্চিহ্ন করব! কি লাভ জীবনকে জটিল বানিয়ে, কোন আনন্দ নেই তাতে!
এইরে, ভুলে রত্নার ফোন নিয়ে চলে এসেছি, নিশ্চয়ই রান্নাঘরে কথা বলার সময় অদল বদল হয়ে গিয়েছে। তা হোক, পরে ডিলিট করলেই হবে, এমন সিরিয়াস কিছু নেই ওখানে। শাওয়ারের ঠাণ্ডা পানি শরীরে পড়তেই বাইরেও ঝুম বৃষ্টি শুরু হল, অদ্ভুত একটা অনুভূতি জানালার ওইপারে বৃষ্টি এইপারে শাওয়ার! রত্নার ফোনটা অনবরত ভাইব্রেট করছে, প্রথমবার ধরিনি, আবার দিয়েছে। বেসিনটা বিশ্রী ভাবে কাঁপছে! ফোনে নাম্বারটা শুধু এস এম নামে সেভ করা, একরকম বাধ্য হয়ে কানে রাখতেই ওপাশ থেকে একটা পুরুষ কন্ঠ ভেসে এলো-‘হ্যালো রত্না! জানি ভাই বাসায় আছে তাই তুমি উত্তর দিতে পারবেনা, শুধু শোন, এই বর্ষায় তোমাকে বলতে ইচ্ছে হল ভালোবাসি! পাশে থাকলে সেবারের মতো জড়িয়ে ধরে ভিজতাম। রাখি, লাভ ইউ!’
আমার মনে হল সারা শরীর অবশ হয়ে গিয়েছে! ভাবতে পারছিনা সত্যি, কি শুনলাম মাত্র! তোয়ালে জড়িয়ে কোনমতে দৌড়ে বের হয়ে আসলাম বারান্দায়! নাহ রত্না এখানে নেই, খানিক দূরে বেডরুমে মাথা নিচু করে বসে আছে! আমি কিছু বলার আগেই ঘাড় উঁচু করে ঠোঁট ভাজ করে বলল- ‘তোমার কলিগ আয়েশা ফোন দিয়েছিল, তুমি বাথরুমে তাই বাধ্য হয়ে ধরেছি, বলল অনেক মিস করছে তোমাকে, এইরকম এক মেঘের দিনে কবে যেন দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরেছিলে অনেকক্ষণ ধরে! ঠিক সেদিনের মতো মিস করছে!’ পরিস্থিতির আকস্মিক নাটকীয়তায় আমারও বোধ বুদ্ধি লোপ পেয়ে গেল জানেন! আমিও বলে ফেললাম মুহূর্তেই- ‘তোমার ফোনেও এস এমের ফোন এসেছিল!’
হতবিহবল রত্নার দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বললাম-‘আয়েশা আমার উদ্দেশ্যে যেমন কথা বলেছে, ওই লোকটাই তোমার উদ্দেশ্যে তেমন কথাই বলেছে!’
একটা নিশ্চল খাটের দুই প্রান্তে স্থাণু হয়ে বসে আছি দুইজন। বাইরে মুষল বৃষ্টির সাথে ঝড়ো বাতাস। মনের লক করে রাখা দরোজা হঠাত অসময়ের ঝড়ে খুলে গিয়েছে!

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ইন্টারনেট

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:৩৫

রাজীব নুর বলেছেন: কিছু বুঝলাম না।

০৮ ই মে, ২০২০ রাত ১২:৪৫

স্বর্ণবন্ধন বলেছেন: হঠাত দুজনের মনের লকড ডোর খুলে গেলে বেশামাল পরিস্থিতি হয়, তা সর্বদা সুখকর নয়।

২| ২৬ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ২:৩১

নেওয়াজ আলি বলেছেন: সুশোভন  লেখা

০৮ ই মে, ২০২০ রাত ১২:৪৫

স্বর্ণবন্ধন বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ২৬ শে এপ্রিল, ২০২০ ভোর ৪:৪৬

মা.হাসান বলেছেন: অসাধারণ। খুলে যাক সব তারা, সব দরজা সব অর্গল । আজ হোক না শুধু ভালোবাসা বাসি।

০৮ ই মে, ২০২০ রাত ১২:৪৬

স্বর্ণবন্ধন বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ২৬ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৯:১০

প্রবাসি সিংগাপুর বলেছেন: আপনাকে আমার শুভেচ্ছা

০৮ ই মে, ২০২০ রাত ১২:৪৬

স্বর্ণবন্ধন বলেছেন: ধন্যবাদ

৫| ২৬ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:৪৩

দজিয়েব বলেছেন: এইতো সেই নাগরিক জীবন

০৮ ই মে, ২০২০ রাত ১২:৪৬

স্বর্ণবন্ধন বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.