| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |

আমার সেই বসন্তবৌরি পাখিটার কথা মনে পড়ে যে খাঁচায় ছটফট করেছিল। সুস্বাদু খাবার মুখে নেয় নাই।সে উড়তে চেয়েছিল। তারপর রাতের অন্ধকারে মারা গিয়েছিল।
সবাই বলেছিল ধরা পড়ার সময় হয়ত আহত হয়েছিল।
কিন্তু আমার কেবলই মনে হয় আকাশ হারানোর শোকে সে মরে গিয়েছিল, কোন শারীরিক আঘাতে নয়।
এখনো ঝিঁঝিঁ ডাকা গভীর রাতে তার পাখার ঝটফটানি শুনতে পাই। একটা অস্পষ্ট সবুজ অবয়ব চোখের সামনে দেখি।
রাতের বাতাসে তার দীর্ঘশ্বাস।
প্রথম প্রথম খুব ভড়কে যেতাম। একসময় জানলাম জীবন এমনই হয়। কিন্তু সেই বুকের ভিতর মোচড়ানো ভাব থেকেই গেলো।
থেকে গেলো আটকা পড়ার ভয়। আকাশ হারানোর ভয়।
নামহীন কুকুরটার কথা মনে পড়ে। যে ঠিক পোষাও ছিলনা আবার পথের ও ছিলনা। মন চাইলে মাঝে মাঝে আসত। খেয়ে যেত লেজ নাড়িয়ে। আবার কখনো দিনের পর দিন লাপাত্তা। সে আমাদের কেউ ছিলোনা।আবার অচেনা ছিলো এমনো না।
এটা এক অদ্ভুত রকমের সম্পর্ক। হয়ত সব সম্পর্কগুলোই এরকম কে জানে!
একদিন সে রক্তাক্ত হয়ে এলো। কেউ আঘাত করেছে ধারালো কিছু দিয়ে। কয়েকদিন সবুজ ঘাসের উপর পড়ে থেকে মরে গেলো।
সেই সবুজ ঘাস, চারিপাশের শিশির বিন্দু এক তীব্র বিষণ্ণতা ছড়িয়ে দিল।
আর্দ্র কান্নার মতো নীল আকাশের ছোপ ছোপ দাগ হয়ত কিছুক্ষণ বসে নীরবতা পালন করেছিল তার জন্য।
পরে জানলাম জীবন এমনই হয়। শেষ হয়ে গেলে তার শোক আশেপাশের সমস্ত সুখকে অসুখ বানিয়ে দেয় কিছু সময়ের জন্য।
কিন্তু এখনো সবুজ ঘাসের বুকে প্রথম শিশির দেখলে তার কথা মনে হয়। বুক চিনচিন করে।
মনে হয় তার অর্ধমৃত কুন্ডলী পাকানো শরীরটা বলছে- "সবাই সবার যেমন চেনা নয়, তেমনি অচেনাও নয়। শুধু শোক সার্বজনীন!"
হুট করে বারান্দায় এসে পড়েছিল যে অবুঝ চড়ুইছানা, তাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করেও বাঁচানো গেলোনা। সেদিন সম্ভবত অগ্রহায়ণের পড়ন্ত বিকেল ছিল। শেষ বিকালের হালকা রোদ।
তাতে হুট করে নিভে গেলো তার জীবন। পাখিটার শেষ চিৎকার এখনো কানে বাজে। মনে হয়েছিল মহাবিশ্বে সবচেয়ে তীব্র সেই বাঁচার আকুতি।
জীবনানন্দ লিখেছিলেন- "নক্ষত্রেরো মরে যেতে হয়", নক্ষত্রের মৃত্যুকালের আর্তনাদ কি এই চড়ুইছানার কন্ঠস্বরের চেয়ে তীব্র! আমার কাছে তা মনে হয় না।
ততোদিনে জেনে গিয়েছি জীবন এমনই হয়।
তবু হেমন্তের মিষ্টি রোদে শস্যক্ষেতের দিকে তাকালে আমার সেই চড়ুইছানার কথা মনে পড়ে।
সে কি মরে যেতে যেতে পুরো অস্তিত্ব হেমন্তে মিশিয়ে দিয়েছে!
তার বাঁচার আর্তনাদ কি সবখানে বাজে? বাজে ছত্রাকে, শৈবালে, বুনোঘাসে, পাগলা হাওয়ার কাশ বনে, এমনকি স্তব্ধ পাথুরে দেয়ালে।
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৩৫
মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: চমৎকার লিখন শৈলী। শুভ কামনা রইলো।