| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |

যে গল্প কেউ কোনোদিন জানবে না—তার নাম “আমি”।
ঘোর বর্ষায়, ঘন কুয়াশায়, কখনো থামি পথের পাশের বারান্দায়—
নীল গির্জার ঘন্টার তলায়।
মাঝে মাঝে বসি কফিশপের ব্যস্ত চেয়ারটায়।
বৃষ্টি ভাবে, তার জলে ভিজিয়ে আমাকে জেনে গেছে।
কুয়াশা ভাবে, তার রহস্যে আমাকে মিশিয়ে নিয়েছে।
কফির কাপ ভাবে, প্রতিদিনের অভ্যস্ত ছোঁয়ায়
সে আমাকে দেখে ফেলেছে স্বচ্ছ কাঁচের মতো।
অথচ ওরা জানে না—
মানুষ হাসিমুখের ভেতর পুষে রাখে
কৃষ্ণগহ্বরের চেয়েও গভীর ক্ষত;
সেখানে পৌঁছায় না কোনো জলধারা,
ধাক্কা দিতে পারে না কোনো ঝড়।
যে গল্প দেব-দানবের পুরাণেও নেই,
যে গল্প কারও অভিধানে ধরা দেয় না—
তার নাম “আমি”,
তার নাম “তুমি”,
তার নাম “মানুষ”।
আকাশের নীলে হাত বাড়ালে আকাশ ভাবে—
সে বুঝি আমার সব গল্প জেনে গেল।
তার বুকে উড়ানো ফানুস পুড়তে থাকলে
সে হয়তো মুচকি হাসে— “কী দুঃখবিলাস!”
অথচ তখন কিছুটা আনন্দেই ছিলাম।
আমি দুঃখ পোড়াতে আকাশের কাছে যাইনি।
বুঝলাম—আকাশও কখনো যে গল্প বুঝবে না,
তার নাম “আমি”।
সমুদ্রের সফেন ফেনায় পা ডোবালে জলধি ভাবে—
এ বুঝি নিরিবিলি অবকাশের কাহিনি।
অথচ আমি জোয়ারের ঢেউয়ে
পৃথিবীর রক্তে ভেজা পা দুটো ধুতে চেয়েছিলাম।
সমুদ্রও ভাবে— সে আমাকে আদ্যোপান্ত জেনে গেছে।
কিন্তু আমি জানি—
যে কাহিনি সমুদ্র কখনো জানবে না,
তার নাম “আমি”।
পাহাড়ের উপত্যকায় মেঘের দিকে তাকিয়ে ছিলাম অপলক।
তার বুনো অর্কিডে মুগ্ধ হয়ে আলতো ছুঁয়েছিলাম।
পাহাড় ভেবেছিল— আমি বুঝি কেড়ে নিতে এসেছি,
তার শরীরে ভূমিধ্বসের গর্জন উঠেছিল।
আর আমি ভাবছিলাম—
পৃথিবীর সব বন্দী পাখিকে
যদি এই মেঘের নিচে অর্কিডবনে উড়িয়ে দিতে পারতাম!
পাহাড় আমাকে ভুল বুঝেছিল।
বুঝলাম—পাহাড়ও আমার গল্প জানবে না।
শুধু একদিন চিড়িয়াখানায়
মরিচা ধরা লোহার শিকের ফাঁকে
ডোরাকাটা জেব্রার টলমলে চোখ দেখে মনে হলো—
ওর চোখের সাথে আমার চোখের
কোনো মিল আছে কি?
যেন সে বলে—
“আমি তোমাদের খাঁচায় বন্দী,
তুমি পৃথিবীর খাঁচায়।
তফাত নেই তেমন।”
কিন্তু সে মানুষ নয়। তার ভাষা নেই।
জেব্রা মানুষের গল্প জানে না।
প্রাণীরা মানুষের গল্প জানতে পারেনা।
মানুষও মানুষের গল্প জানে না।
সে শুধু অন্যের অবয়ব দেখে অনুমান করে।
কী দুর্বোধ্য দেয়াল নিয়ে বেঁচে আছি আমরা সবাই।
©somewhere in net ltd.